STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Fantasy

4  

Manab Mondal

Abstract Fantasy

গোটা সেদ্ধ

গোটা সেদ্ধ

3 mins
414

গোটা সেদ্ধ কি বা শেতল ষষ্ঠী কি?

শীতলা ষষ্ঠী কথাটা অপভ্রংশে শেতল ষষ্ঠী হয়েছে।তবে গোটা সেদ্ধ নামে এটি জনপ্রিয়। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের এও এক পার্বণ। মিশ্র সংস্কৃতির গ্রাসে বিলীন হয়ে যায় নি একান্ত আপনার কিছু সনাতনি প্রথা । জাতির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে তবে সেগুলো যে দিন হারিয়ে যাবে সেদিনই সেই জাতি তার নিজস্বতা হারাবে।

ভজন রসিক বাঙালির শীতল ষষ্ঠীর আসলে অরন্ধন উৎসব। উপাদান গোট মুগ, , গোট মাখন সিম, গোটা বেগুনগোটা কড়াইশুঁটি, , টোপা কুল,শিস পালং, সজনে ফুল, ওলকপি, বাঁধাকপি। সরস্বতী পুজোর সন্ধ্যে নামলে উনুন বা গ্যাস ওভেন পরিস্কার করে, বিশাল হাঁড়িতে বসে গোটা সেদ্ধ শুরু হয় রান্না।

গোটা সেদ্ধ, নামকরণ থেকে বুঝতে পারছেন‌গোটা কড়াইশুঁটি, গোটা বেগুন, গোটা সিম সব গোটা সেদ্ধ হলে হাঁড়ি করতে হয় । তারপর হয় ভাতে পরে একে একে আলু-সজনে ফুল ভাজা, টোপা কুলের চাটনি। সারারাত সেসব রান্না রাখা থাকে।

সরস্বতী পুজোর পর দিন সকালে তিথিগতভাবে ষষ্ঠীপুজো। প্রথা অনুযায়ী বাড়ির শীল, নোড়ার পুজো হয় ফুল, প্রসাদ দিয়ে এই দিন । শীল-নোড়া দইয়ের ফোঁটা দেওয়া হয় শীল-নোড়ার গায়ে। পুজোর শেষে সেই দই রান্না করা খাবারে ছিটিয়ে দেওয়া নিয়ম আছে।

শীত বিদায় নিয়ে বসন্ত আসে এই সময়ে । তাই গোটা সেদ্ধর ভূমিকা অনেক খানি দেশীয় উপায় রোগ প্রতিরোধকের মতো।

মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে অর্থাৎ সরস্বতী পূজার পরেরদিন, সকল মেয়েদের এই শীতল ষষ্ঠী ব্রত পালন করে ।

শীতল ষষ্ঠীর ব্রতের দ্রব্য ও বিধান- দই, হলুদ, কড়াই, ফল ,মিষ্টান্ন ইত্যাদি পুজোয় প্রয়োজন হয়। দই ও হলুদে সাদা সুতো ছুটিয়ে ছেলে – মেয়েদের হাতে বেঁধে দিতে হয়।

ষষ্ঠী পুজোর দিন ,আগের দিনে ভাত আর গোটা সেদ্ধ করে রেখে দিয়ে ,সেই ভাত আর গোটা সেদ্ধ খাওয়ার নিয়ম।

লোক কথা অনুযায়ী বৃদ্ধা বামুন পরিবারের বাস ছিলো এ বাংলায় । বামুনের স্ত্রীর , বিন্দি ঠাকরুনের ঠাকুর দেবতার উপর খুব নিষ্ঠা ছিল। সে ছেলে, বউ নাতি- নাতনীদের নিয়ে খুব আনন্দের দিন কাটছিল।

এক মাঘ মাসের শীতল ষষ্ঠীর দিন খুব ঠান্ডা পড়ায় বিন্দি ঠাকরুণ ব্রত করতে পারলো না।

আর উপরন্তু বৌমাদের বললেন " আমার জন্য একটু গরম ভাত রান্না করো আর স্নান করার জন্য গরম জল করো । এই শীতে শীতল ষষ্ঠী ব্রত কি করে করব?”

বউয়েরা তাদের শ্বাশুড়ীর কথামত কাজ করলো।এইদিন ঘরে উনুন জ্বালাতে নেই তবুও বিন্দি ঠাকুরণ গরম জলে স্নান করল ও গরম ভাত খেলো। তারপর ই তার ঘরে আগুন লেগে মেয়ে জামাই পুড়ে মারা গেলো।

মেয়ে-জামাইয়ের শোকে বিন্দি ঠাকুরানী করে কাঁদতে লাগলো। তারই মধ্যে শুনতে পেল কে যেন বলছে,”তোর বড় অহংকার হয়েছে, তাকে সেই অবজ্ঞা করার পাপেই আজ তোর এই দুর্দশা। তাকে যেমন অবহেলা করেছিস, তেমনি এখন তার ফল ভোগ কর”।

বিন্দি ঠাকুরণ মা ষষ্ঠীর কাছে কাঁদতে কাঁদতে বারবার ক্ষমা চাইতে লাগল – বলল ,”দোহাই মা ষষ্ঠী ,এ বারে আমায় ক্ষমা করো মা , এমন কাজ

আমি আর কখনো করবো না।”

বিন্দি ঠাকুরুণ অনেক কাকুতি-মিনতি করলো।

মা ষষ্ঠীর দয়া হল। মা ষষ্ঠীর কাছে সে তুই মানত করলো , পরের বছর মাঘ মাসের শুক্লা ষষ্ঠীর দিনে সে মেয়ে জামাইয়ের কল্যাণের জন্য উপোস করবে, আর মায়ের পুজো দিবি- সারা জীবন ।

এদিকে বিন্দি ঠাকুরণমেয়ে জামাইকে দাহ করা হয়নি।যারা মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছিল তারা দেবীর মায়ায় বনের ধারে মৃতদেহ ফেলে সবাই পালিয়ে গেছিলো। দেবীর আদেশ অনুযায়ী বিন্দি ঠাকুরণ দেবীর পুজো করে ঘরের জল আর নির্মাল্য নিয়ে, লোকজন ওঠার আগেই ভোরবেলা সেই বনের ধারে গিয়ে দেবীর নাম করে মৃতদেহের উপর জল ছিটিয়ে নির্মাল্য ছড়িয়ে দিলো, বিন্দি ঠাকুরণমেয়ে জামাই বেঁচে উঠলো।পরের বছরে আবার বিন্দি ঠাকুরণ, মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠীর দিন উপোস করে মেয়ে-জামাইয়ের মঙ্গলের জন্য শীতল ষষ্ঠী পুজো দিল। বামনির মেয়ে জামাইকে বেঁচে উঠতে দেখার পর থেকে সকলেই শীতল ষষ্ঠী ব্রত পালন করতে লাগলো। এই ভাবেই এই ব্রতের কথা ছড়িয়ে পরলো ।

শীতল ষষ্ঠী ব্রতের ফল- মাঘ মাসে শুক্লপক্ষে শীতল ষষ্ঠী ব্রত পালন করলে সংসারের মধ্যে থেকেও শোক তাপ পেতে হয় না।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract