গিমিক - ১
গিমিক - ১
পরিচয় পর্ব :
" হ্যালো , সুমন ; বলছি কাল ফার্স্ট জানুয়ারি কী প্ল্যান ? "
" কিচ্ছু নয় ভাই। অফিস যাওয়া, বাড়ি আসা।"
"ভাই একটা এমন খবর দেবো যে তুই কাল অফিস নয় সোজা হলে গিয়ে প্রিয়তমা সিনেমার ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো দেখতে যাবি।"
" কী খবর ? প্রিয়তমা রিলিজ করছে জানি কিন্তু ওই অভিনেতা হেম সেনকে ভালো লাগে না ভাই । আর তীর্থঙ্করের চলে যাওয়ার পর কোনো সিনেমা ... " থামতে হলো কারণ ফোনের উল্টোদিকে অমিয় বলতে লাগলো ।
" তবে আর বলছি কি ভাই , তীর্থঙ্কর বিশ্বাস ফিরে এসেছে , নেটে একটা লিকড সিনে ওকে ক্যামিও করতে দেখা গেছে । "
" ওয়াট ? তোর নিশ্চয়ই ভুল হচ্ছে । "
" ফেবু , ট্যুইটার তো ঘাঁটিস না আমাদের মতো প্রচুর পোস্ট আছে। একটা লিঙ্ক দিচ্ছি দেখ । "
ভিডিও দেখে সুমন চমকে উঠলো । সিনেমার শেষ সিনে অ্যাকশনে তীর্থঙ্কর। কিছুতেই বিশ্বাস হয় না তার। এই প্রিয়তমার শ্যুটিং শুরুই হয়েছে এই পুজোর পর। তবে কি ডিরেক্টর তীর্থঙ্করের বেঁচে থাকা অবস্থায় শ্যুট করেছিলেন ?
টলিপাড়ায় গীতিকার হিসেবে সুমন সরকারের মোটামুটি নাম আছে। সেই সুবাদে কয়েকজন ডিরেক্টরকে নিজে থেকে চেনে। উমেশ চ্যাটার্জী এই সিনেমায় অবশ্য গান লেখানোর দায়িত্ব সুপম রায়কে দিয়েছেন। কিন্তু উমেশকে সুমন চেনে। ফোন করে।
" হ্যালো উমেশ, হ্যাঁরে তীর্থ প্রিয়তমায় অভিনয় করেছে ? "
" সব তো জেনেইছিস। "
" কিন্তু তুই কখন করালি ওকে দিয়ে শ্যুট। লিভারের ক্যান্সার ধরা পড়তে শেষ একবছর তো ও ঘর ছেড়ে বেরোয়নি। আমরা ছিলাম সর্বদা ওর সাথে। করালি কখন শ্যুট? "
" সব সময় হলে জানতে পারবি। আপাতত সিনেমা দেখে আয়। "
"কিন্তু ... হ্যালো হ্যালো।" ফোন কেটে যায়।
তীর্থঙ্কর, অমিয় ও সুমন একে অপরের অন্তরঙ্গ বন্ধু। তীর্থঙ্কর অভিনয় জগতে , সুমন লেখার জগতে আর অমিয় মিউজিক জগতে নাম করে। মাঝেমধ্যেই কোনো ছবির দ্বারা এই তিনজগৎ একাকার হয়ে যেত। টলিপাড়ায় তীর্থের নতুন বন্ধু ছিলো ডিরেক্টর উমেশ চ্যাটার্জী। একের পর এক সিনেমা তীর্থঙ্কর উমেশ জুটিতে সুপারহিট হতে লাগলো। সাথে অন্য পরিচালকরাও কন্ট্র্যাক্ট সাইন করালেন।
২০১৮ সাল। ইংরাজী নববর্ষের প্রথম দিন। কেরিয়ারের ৫ বছর পূর্ণ করেছেন তীর্থঙ্কর বোস। অমিয় আর সুমনের সাথে পার্টিতে গেছে তীর্থ। মদ্যপান বা কোনো নেশা সে করতো না। পার্টিতে নাচ গান চলছে। জুসের গেলাস শেষ করতেই চক্কর দিলো মাথায়। অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা করলে চৈতন্য এলো কিন্তু তার মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়লো যখন ডাক্তারের পরামর্শে লিভারের টেস্ট করালো। লিভারের ক্যান্সার, তাও শেষ পর্যায়। মাঝেমধ্যে ব্যাথা হতো পেটে কিন্তু তা যে এই মারণব্যাধির আকার নেবে তা কে জানতো।
ফার্স্ট কেমো নিয়েছে টাটা হসপিটালে দেখা করতে এসেছে তারই সহকর্মী মৃণ্ময় হালদার।
" কী স্যার, ফিট হোন জলদি! আশুতোষ বাবু তো আপনাকে আমাকে একসঙ্গে কাস্ট করাবেন ভাবছেন। "
" ছবি আমার আর করা হবে না । " বলেই দেওয়ালে মুখ ফিরিয়ে নিলো তীর্থ।