STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Inspirational Others

3  

Manab Mondal

Abstract Inspirational Others

ঘূর্ণীর পুতুল

ঘূর্ণীর পুতুল

2 mins
210

বাংলার মৃৎশিল্প ভারতের অহংকার।মৃৎশিল্পীরা এ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকলেও কৃষ্ণনগর সুনাম হবে বেশী । কৃষ্ণনগর , পার্শ্ববর্তী ঘূর্ণি অঞ্চল পুতুলের চাহিদা বিশ্বজোড়া। দেশের বাইরে প্রধানত ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকাতে পুতুল রপ্তানি করা হয়।

লোকমুখে শোনা যায় নদীয়া রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় (১৭১০-১৭৮৩)  , মাটির মূর্তি তৈরি জন্য নাটোর থেকে শিল্পীদের নিয়ে আসেন এ অঞ্চলে। প্রথমদিকে এরা দেবদেবীর মূর্তি গড়তেন।খ্রিস্টান মিশনারি ও ইংরেজদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই অঞ্চলে যখন প্রভাব বিস্তার করলো তখন । এই অঞ্চলে শিল্পীরা ঘূর্ণি এলাকায় স্থায়ি বসতি শুরু করলো । জলঙ্গী নদীর পাড় থেকে দোআঁশ মাটি সংগ্রহ করেতে থাকলো তাঁরা। পুতুল নির্মাণের উপযোগী মাটি এটা , যদিও মৃৎশিল্প যারা জরিত আছে তারা জানান মাটি তৈরি করতে হয়। 

উপযুক্ত মাটি নিপুণ হাতের গুণ তৈরি করতে থাকে এরা পুতুল। পুতুল শিল্পের সুনামের আসল হকদার এই জলঙ্গীর মাটি। গুণগত মানে ভারতের অন্যান্য জায়গার তুলনায় এই মাটি পুতুল তৈরির উপযুক্ত । সূক্ষ্ম কারুকার্য অনেক সহজে ফুটিয়ে তোলা যায় এই মাটিতে।

তবে এই পুতুল শিল্পের সফলতা প্রথম চাবি কাঠি ছিলো দুই ধর্মীয় সংস্কৃতি , নদিয়া বৈষ্ণব প্রভাবিত হওয়ায় ঝুলন ও রাসের জন্য পুতুলের চাহিদা ছিলো। পাশাপাশি খ্রীষ্ট পুতুল এর চাহিদা এই অঞ্চলের পুতুল শিল্পের প্রাথমিক অনুপ্রেরনা ছিলো।

১৮৫১ সালে ঘূর্ণির শিল্পী শ্রীরাম পালের তৈরি পুতুল লন্ডনের এক প্রদর্শনীতে জায়গা করে নেয়। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়ে দিনে দিনে কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল সুখ্যাতি ছড়িয়ে পরে। ১৯৪০ সালে কৃষ্ণনগরের কার্তিকচন্দ্র পাল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সামনে বসে কবির একটি মূর্তি তৈরি করে, কবিগুরু প্রশংসা পেয়েছেন। এইভাবে পুতুলপট্টির মৃৎশিল্পীরা আশ্চর্য দক্ষতা এবং সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন না না সময়ে।

কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণি, নতুনবাজার এবং ষষ্ঠীতলা এই তিনটে জায়গায় মূলত মৃৎশিল্পের চর্চা হয় । এর পাশাপাশি অন্যান্য পাড়াতেও অল্প কিছু মৃৎশিল্পী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। তবে কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পে বদল এসেছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে৷ বাণিজ্যিক কারণে ঘূর্ণির পুতুলপট্টির শিল্পীরা মাটির বদলে অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে মূর্তি তৈরি করছেন, সেটাও আবার বড় আকারের৷ ৷ বাণিজ্যিক কারণেই বড় মূর্তির দিকে শিল্পীরা ঝুঁকছেন৷'

ছোট পুতুল তৈরির জন্য পরিশ্রমও অনেকটা বেশি৷ ঘূর্ণির মৃৎ শিল্পীদের আঙুলের ছোঁয়ায় জীবন্ত হয়ে ওঠে মাটির পুতুল। পুরো বিশ্ব অবাক হয়ে দেখে মাত্র তিন ইঞ্চির মাটির পুতুলের মুখের চামড়ার ভাঁজ কিংবা চোখের মণি যেভাবে ফুটিয়ে তোলেন শিল্পীরা।চরম দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে না পেরে পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন ঘূর্ণির মৃৎশিল্পীদের বংশধররা। সারা বিশ্ব কৃষ্ণনগরের পুতুলশিল্পের সুনাম আছে কিন্তু বানিজ্যিকরনের কোন উদ্যোগ নেই।জলঙ্গী নদীর পাড় কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্প হারিয়ে যাবে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract