STORYMIRROR

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Horror Action Thriller

3  

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Horror Action Thriller

একটি মেয়ে.. (পর্ব -সাত)

একটি মেয়ে.. (পর্ব -সাত)

5 mins
193


সকাল বেলা বাড়ির দরজায় সোরগোল দেখে হরকিশোর বাবু বাইরে বেড়িয়ে দেখে একজন ডাকাডাকি করছে। কাছে গিয়ে তিনি অর্জুনকে চিনতে পারে, উনার পূর্ব পরিচিত, এই বাড়িতে পাহারার কাজ করত।

" কি রে এতো সকালে তুই? "

" দাদাবাবু একটু এদিকটায় আসবেন.." ততক্ষণে সুবলা দেবী এসে দাঁড়িয়েছে। সে অর্জুনকে চিনতো, তাই কিছু বললো না।

হরকিশোর বাবু অবাক হলেন অর্জুনের ব্যবহার দেখে, তবুও এগিয়ে গেলেন বাইরে। অর্জুন চঞ্চলের দিকে হাত দেখিয়ে বললো " উনি অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়েছিলেন, কি করব বুঝতে না পেরে নিয়ে এলাম।"

হরকিশোর বাবু বললেন " কে ও?"

চঞ্চলের মুখ উল্টো দিকে ঘোরানো ছিল, তাই তিনি চিনতে পারেন নি, তাছাড়া চঞ্চলের সারা শরীরে ধুলোবালি মাখা।

অর্জুন রিকশায় উঠে মুখ ঘোরাতেই চিনতে পারে হরকিশোর বাবু, তিনি বলে উঠেন " চঞ্চল.. "

কিন্তু কি করবেন প্রথমে বুঝতে পারেন না তিনি। কাল রাতের ঘটনা নিয়ে সুবলা ক্ষেপে রয়েছে তিনি জানেন, আর উনার রাগের কারণও রয়েছে। চিন্তায় চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন।

চঞ্চলের ঘুম আসছিল দেখে ভোরবেলায় হাঁটতে হাঁটতে বাজারের দিকে চলে গিয়েছিলো ওর অজান্তেই। সূর্যের আলো একটু ফুটতেই বিক্রেতারা নিজের পসরা বসানোর জন্য আসতে থাকে। তারা জ্ঞানহীন চঞ্চলকে সেখানে দেখে ভীড় জমিয়ে ফেলে,এমন করেই কতক্ষণ যে পড়েছিল, তা জানা মুস্কিল। তবে ভাগ্যবলে সেইসময় মেষপালক অর্জুন তার ভাইকে সাথে নিয়ে সেখানে এসেছিল দোকানের জন্য সওদা কিনতে, ভীড় দেখে এগিয়ে এসে চঞ্চলকে চিনতে পেরে চোখেমুখে জল দিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। লক্ষ্য করে দেখে বেশ জ্বর, কি করবে বুঝতে না পেরে একটা রিকশা নিয়ে সকলের সাহায্যে চঞ্চলকে উঠায়, ওর সাথে একজনকে যেতে বললেও কেউ রাজি হয়না ওই বাড়িতে যেতে। অগত্যা সে একাই যায় আর ওর ভাইকে বলে ডাক্তার নিয়ে ওই বাড়িতে আসতে। নেপালীরা খুব সরল ও কর্তব্যপরায়ণ হয়।

এমন সময় একটা ডাকে সম্বিত ফেরে হরকিশোর বাবুর,পেছনে তাকিয়ে দেখে সুবলা এসে দাঁড়িয়েছে।দিনের শেষে তো মানুষ তিনি, তাই তিনি ওদের পথ দেখিয়ে চঞ্চলকে ওর ঘরে এসে শুইয়ে দিলেন। ডাক্তারের কথা বলতে অর্জুন বললো সে তার ভাইকে ডাক্তার ডাকতে পাঠিয়েছে, চলে আসলো বলে। বলতে বলতে অর্জুনের ভাই ডাক্তার নিয়ে ঘরে এলো। তিনি সব দেখে কিছু ওষুধ লিখে দিলেন, আর বললেন ভালো করে লক্ষ্য রাখতে। আজকের মধ্যে জ্বর না কমলে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। এবারে সবাই বাইরে এসে দাঁড়ালো। এমন সময় কেয়াও এসে দাঁড়িয়েছে, সে সবই লক্ষ্য করেছে। তাই কাউকে কিছু না বলে হাতে করে আনা গরম দুধটা নিয়ে চলে গেল ঘরে।সুবলা কিছু বলে বাঁধা দিতে পারলো না, তিনি ভালো করেই জানেন খেয়া কারো কথা শুনবে না এখন, কারো বিপদে ওকে আটকান বড় কঠিন। চঞ্চলের তখনও জ্ঞান ফেরেনি ঠিক করে, ডাক্তার মিনিট তিরিশেক আগে জ্বরের ইনজেকশন দিয়েছে। খেয়া মাথাটা উঁচু করে ধরে খুব যত্ন করে গরম দুধটা খাইয়ে দিলো। চঞ্চল হঠাৎ ওর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো, দেখে মনে হলো ঘুমের মধ্যে কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছে, আর ঘুমের ঘোরে কি সব বলছে। খেয়া হাত সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। তখনকার মতো চুপ করে পাশে বসে রইলো। বেশ কিছুক্ষণ কেটে গিয়েছে দোরের কাছে একটা বাচ্চাকে দেখা গেল, হাত নাড়িয়ে খেয়াকে ডাকতে, খেয়া জোর করে হাতটা ছাড়িয়ে দিতেই চঞ্চল চিৎকার করে বিছানায় উঠে বসলো, কেমন একটা উদভ্রান্ত দৃষ্টি। সুবলা ছুটে এলো, সে খেয়াকে ঘরে যেতে বলে জোর করে শুইয়ে দিলো চঞ্চলকে। বলতে থাকলো "আছি তো আমরা চিন্তা করোনা।" চঞ্চল বিড়বিড় করতে করতে শুয়ে পড়লো।

সেদিন বিকেলে ডাক্তার এসে এখন পর্যন্ত সবকিছু শুনলো। চঞ্চলকে ভালো করে দেখে জিজ্ঞেস করলেন চঞ্চলের কি জ্ঞান ফিরেছে।

সুবলাই জানালো একবারই ফিরেছিলো, তবে বারবার চমকে চমকে উঠছে চঞ্চল আর বিড়বিড় করে সারাদিন ধরে কিসব বলেছে সে।

সব দেখে শুনে ডাক্তার জানালো তিনি সকালে একটা কথা মনে হয় ভুল আন্দাজ করেছিলেন, তার রোগীর জ্বরের কারণ আবহাওয়া পরিবর্তন নয়, কোনো মারাত্মক ভয়ের জন্য জ্বরটা এসেছে। সংজ্ঞাহীন ছিল দেখে সকালে তিনি ধরতে পারেন নি।আর চঞ্চলকে একা রাখা যাবেনা।

এমন সময় চঞ্চলের ফোনে ওর বাড়ি থেকে ফোন এলো, সারাদিনে একবারও ফোন করেনি। একবার ফোন হয়ে কেটে গেল, সুবলা সঙ্কোচে ফোনটা ধরতে পারলোনা। কিন্তু বারবার ফোন আসায় শেষে ধরতে বাধ্য হলো। ফোনের ওপারে চঞ্চলের মা ছিলেন, তিনি চিন্তায় চিৎকার করে বলে উঠলেন "কি রে বাবু ফোন করার কথা একবারও মনে পড়ে না তাই না? বাড়িতে আমরা চিন্তায় রয়েছি।"

সুবলা একজন মায়ের কষ্ট ভালোই বোঝেন তিনি বললেন " আমি সুবলা, আমাদের বাড়িতে চঞ্চল বাবু থাকেন.."

" আপনি... ?"

" আমি ফোন ধরলাম কিছু মনে করবেন না, আপনার ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাই আমরা সবাই উনার দেখভাল করছি। এখানে একা থাকে ছেলেটা। "

চঞ্চলের মা উৎকন্ঠায় বলে উঠলেন, " কি হয়েছে আমার বাবুর?"

" না তেমন কিছু নয় দিদি, জ্বর এসেছে, আমরা আছি চিন্তা করবেন না।"

ভদ্রমহিলা তবুও কাঁদতে থাকলেন, আর বলতে থাকলেন " অনেক অনেক ধন্যবাদ দিদি, অনেক ধন্যবাদ। "

সুবলা বিপদে পড়ে গেলেন, এমন করে কাঁদলে কেউ কি নিজেকে সামলাতে পারে? তার তিনি বললেন " কাঁদবেন না, আমার আছি তো।"

" বাবু আমার বাবু কি করছে?"

" সে এখন ঘুমোচ্ছে, এখনি ডাক্তার দেখে গেলেন। "

ওপাশে ভদ্রমহিলার কাছে থেকে একজন ভদ্রলোক ফোনটা নিয়ে বললেন " দিদি আমি চঞ্চলের বাবা বলছি, ওকে একটু দেখবেন, আমরাও যাওয়ার চেষ্টা করছি, কাছে তো নয় চট করে যাওয়াও সম্ভব না।"

" চিন্তা করবেন না, ধীরে সুস্থে আসুন।" বলে ফোনটা রেখে দিলেন সুবলা।

আজকে ওকে রাত জাগতে হবে বুঝতে পারলেন মনে।

বারবার এসে খেয়া আর সুবলা দেবী ওষুধ খাইয়ে দিয়ে যাচ্ছিলেন। হরকিশোর বাবু অনেকক্ষণ পাশে বসে ছিলেন। রাত বাড়তে খেয়া বাবাকে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিলো। সুবলা দেবী রাত সোয়া এগারোটা পর্যন্ত বসে রইলেন, সারাদিনের পরিশ্রমে চোখ দুখানি বুজে আসছিলো উনার। খেয়া জোর করে পাঠালেন উনাকে, ভোরে চলে আসতে।

রাত বারোটার পরে চঞ্চল অদ্ভুত ব্যবহার করতে লাগলো, ছটফট করতে শুরু করলো। তার সাথে জ্বরটা বেড়ে যেতে লাগলো। খেয়া একা ছাড়তেও সাহস পারছিল না,আর বুঝতে পারছিলো না হঠাৎ করে এমন জ্বর বাড়ার কারণ। তবুও ছুটে গিয়ে ফ্রীজ খুলে বরফ জল নিতে গেলো। এসে দেখে দরজা এটে গিয়েছে, খেয়া অবাক হয়ে গেল, কারণ উঠে দরজা বন্ধ করার ক্ষমতা চঞ্চলের ছিলো না, অনেক ধাক্কা দিলো দরজাটা। তাতেও কাজ না হওয়াতে জানালায় চোখ রেখে দেখলো ঘরে কোনো আলো নেই, বাতি বন্ধ। কিন্তু ওর ঠিক মনে আছে ও বাতি জ্বালিয়ে গিয়েছিল। ভালো করে চোখ রাখতে আঁধারে কিছুটা চোখ সহে আসতে মনে হলো চঞ্চল ঘরে একা নেই, কেউ রয়েছে ওর সাথে। খেয়া এবারে আরও জোরে দরজা ধাক্কা দিতে শুরু করলো, এমন সময় খেয়াকে চমকে দিয়ে জানালা দিয়ে একটা কালো বিড়াল পালিয়ে গেলো, হঠাৎ করে দরজাটা খুলে গেলো। খেয়া তাড়াতাড়ি করে ঢুকে বাতি জ্বালাতেই দেখলো চঞ্চল বিছানার উঠে বসে উদ্ভ্রান্তের মতো করছে আর ভয়ে কাঁপছে। খেয়া কাছে যেতেই ওকে আঁকড়ে ধরলো। খেয়া ভ্যাবাচেকা খেলো বটে, তবে স্বাভাবিক হওয়ার জন্য কিছুটা সময় দিলো। তারপর জোর করে শুইয়ে দিলো চঞ্চলকে,চঞ্চল শক্ত করে খেয়ার একটা হাত ধরে রাখলো।খেয়া লক্ষ্য করলো চঞ্চল থরথর করে কাঁপছে। খেয়া চঞ্চলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। কিছুক্ষণ পরে চঞ্চল কিছুটা শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো, তবে সেটা ক্লান্ত হয়ে, নাকি জ্বরের কারণে তা বলা কঠিন, কারণ তখন চঞ্চলের জ্বর প্রায় ১০৪ ছুঁয়েছে। খেয়ার একটা হাত চঞ্চল শক্ত করে ধরে রেখেছে, তাই একটা হাতেই জলপটি দিতে শুরু করলো সে।

চলবে...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror