STORYMIRROR

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Horror Romance Thriller

3  

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Horror Romance Thriller

একটি মেয়ে.... (পর্ব- আট)

একটি মেয়ে.... (পর্ব- আট)

5 mins
152


চঞ্চলের ঘুম ভেঙে সরাসরি চোখ পড়লো খেয়ার দিকে, প্রথমে ভয়ে চমকে উঠলেও পরে চিনতে পেরে চুপ করে রইলো সে। ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়া।চঞ্চলের বুঝতে পারলো সারারাত জেগে জলপটি দিয়েছে আর হাতে পায়ে মালিশ করেছে। কৃতজ্ঞতায় চঞ্চলের চোখে জল চলে এলো, আর এই ভেবে খারাপ লাগলো, আর সেই কিনা এই মেয়েকে এতো কথা শুনিয়েছে।

কিন্তু ও কি করে, কখন ঘরে এলো তার কিছুই মনে নেই,এতোটুকু মনে আছে সে ভোরে বাইরে গিয়েছিল। চঞ্চল বুঝতে পারেনি একটা দিন কেটে গিয়েছে, সে ধীরে ধীরে বিছানা ছেড়ে উঠলো, যাতে খেয়ার ঘুম না ভেঙ্গে যায়। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে চার্জ নেই, সেটাতে চার্জ দিয়ে মোবাইল খুলতেই অবাক হয়ে গেল, তারিখটা একদিন বেশী দেখাচ্ছে। কি বার আজকে সেটা দেখেও অবাক হয়ে গেল, মনে হলো ওর অজান্তেই একটা দিন ওর জীবন থেকে চলে গিয়েছে।

বারান্দায় বেড়িয়ে দেখলো সুবলা দেবী উঠে গিয়েছেন, দরজায় গোবর লেপন দিচ্ছে। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো, আজকের দিনে এসব তো চোখেই পড়ে না। পেছন ঘুরে চঞ্চলকে দেখে স্বাভাবিক সুরে প্রশ্ন করলেন " আজ শরীর আছে কেমন? জ্বর কমেছে? "

চঞ্চল উত্তর দিলো " ভালো আছি, তা আমার জ্বর এসেছিলো বুঝি?"

" হু, জ্বর বলে জ্বর, সারা বাড়ির লোককে ভাবিয়ে তুলেছিলে, পরের ছেলে তুমি, এখানে এসে কিছু হয়ে গেলে কি করে তোমার পরিবারের সামনে মুখ দেখাতাম আমরা?"

চঞ্চল কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো " মাসিমা ক্ষমা করবেন আমায়, আমি দোষ করেছি জানি, তবে সেটার জন্য আমি সম্পূর্ণ দায়ী না।"

সুবলা দেবী কেমন একটা ব্যঙ্গ মিশ্রিত অবিশ্বাসের চোখে তাকালো, চঞ্চল কথার খেই হারিয়ে ফেললো। চঞ্চলকে চুপ থাকতে দেখে সুবলা দেবী বললেন, " কি চুপ করে গেলে কেন কথা বলতে বলতে?"

সুবলা দেবীর দিকে তাকিয়ে বললো " বিশ্বাস করেন মাসিমা আমার সাথে কিছুদিন ধরে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটছে। রাত করে কে যেন আমার ঘরে আসতো, আমি আমি.." বলে শিউরে উঠলো চঞ্চল সেদিনের দৃশ্যের কথা মনে পড়তে। সুবলা দেবী চঞ্চলকে বসার ঘরে নিয়ে গেলো,এক গ্লাস জল এগিয়ে দিলো তার দিকে।চঞ্চল এক চুমুকে সম্পূর্ণ জল শেষ করে দিলো। ততক্ষণে হরকিশোর বাবু বাইরে বেড়িয়ে এসেছে, চঞ্চলকে দেখে বললো "আছো কেমন তুমি?"

চঞ্চলকে উত্তর দিতে হলোনা সুবলা দেবী বললেন "তা জ্বর নেই দেখছি, তবে কি একটা বলতে গিয়ে শরীরটা খারাপ লাগাতে ঘরে নিয়ে এসেছি। "

" সে ভালো করছিস, কাল দিনটা যা গেলো।"

খেয়াকে দেখলো একটা বাচ্চাকে দাঁত মাজাতে। ঘরের বাইরে আসতে দেখে। চঞ্চল মুখ তুলে চাইতে পারলো না। কেমন একটা সংকোচ তাকে ঘিরে ধরেছে।

কিছুক্ষণ পরে চঞ্চল মুখ খুললো, " কাকাবাবু আমি সেদিন খুব ভুল করে ফেলেছি খেয়াদেবীর মতো মানুষকে ভুল বুঝে, খারাপ কথা বলে। "

হরকিশোর বাবু কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, উনাকে থামিয়ে চঞ্চল বললো " কাকাবাবু আজকে আমাকে বলতে দিন সব কথাটা।"

তারপর স্বল্প দম নিয়ে বলতে শুরু করে চঞ্চল, "আমি এখানে চাকরি পেয়েই আপনার বাড়িতে ভাড়া নিই একটাই কারণে ফাঁকা পরিবেশ আর সামনে জঙ্গল, যখন তখন ঘুরতে পারবো তাই। আমার কলিগরা বারবার বলেছিল শিলিগুড়ির মাঝেই কোথাও থাকতে, আমি রাজি হয়নি, কারণ আমি ঘুরতে বড্ড ভালোবাসি। আপনারাও লক্ষ্য করবেন ছুটি পেলেই বাইক নিয়ে বেড়িয়ে যেতাম। এমন করেই বেশ কাটছিলো, সারাদিন ক্লান্তিতে ঘুম বেশ হতো। আমার আসলে খুব গভীর ঘুম, সহজে ঘুম ভাঙ্গেনা। রাতে শুয়ে একদম সকালে ঘুম ভাঙ্গাত। কিন্তু একদিন কি একটা কারণে বিকেলেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, ঘুম ঠিক রাত এগারোটার দিকে ভাঙ্গে। আমার চোখেমুখে জল দিয়ে ঢাকা রাখা খাবারটা খেয়ে শুতে শুতে পৌনে বারোটা বেজে যায়, ঘুম আসছিলো না। হঠাৎ যেন কার একটা স্পর্শ অনুভব করি" তারপরের বিষয়টা সংকোচে বলতে পারে না চঞ্চল, গুরুজনেদের সামনে এসব কথা বলা সম্ভব না।তাই সে ওই অংশটা বাকি রেখে আবার বলতে শুরু করে "আমি ভেবেছিলাম আমার মনের ভুল, তাই পাত্তা দিইনি। তারপর বেশ কয়েকবার একই সময় আমি একজনকে মেয়েকে অনুভব করি...."এরপর যা যা ঘটনা ঘটেছে সবটাই খুলে বলে ওদের।

সুবলা দেবী বললেন " ও তুমি ভেবেছিলে মেয়েটি খেয়া তাইনা? ছিঃ ছিঃ ছিঃ কি করে ভাবলে.. একটা মেয়ের সম্বন্ধে এমন কথা?"

চঞ্চল লজ্জিত হয়ে বললো " বিশ্বাস করেন মাসিমা আমি সেসময় কেমন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম, খেয়া দেবীর সাথে একদিন কথা বলতে গিয়ে উনি কথা না বলে চলে যাওয়ায় খুব আত্মসম্মানে লেগেছিল, তাছাড়া আরও একদিন উনি আমাকে দেখে কিছু না বলে চলে যাওয়ায়, আমি নিজেকে সংযত রাখতে পারিনি। "

হরকিশোর বাবু এতোক্ষণ চুপ করে শুনছিলেন তিনি অস্ফুটে স্বরে বললেন " চাইলেও বলতে পারতো না.."

চঞ্চলের কানে কথাটা পৌঁছালেও মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারলোনা, সে আবার বলতে শুরু করলো, " আমি সেদিন রাতে ইচ্ছে করে দরজা খুলে রাখি, হাতেনাতে ধরতে মানুষটাকে, আগের দিন আমি সামনে থেকে দেখেছি, তবে মুখটা দেখতে পাইনি। " তার আগেরদিনের জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো সে কথাটি বলতে পারলোনা চঞ্চল। সে বললো " আমি আগেই টর্চের ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম, কারণ আমি লক্ষ্য করেছি সেই মেয়েটি আসে আলো নিভিয়ে। মেয়েটি ঠিক আসলো,আমার বুকের উপর উঠে বসতেই আমি মুখে আলো ফেললাম, "

চঞ্চল এবারে আগের মতোই কেঁপে উঠে বললো " কি বিভৎস, সারা মুখখানা পোড়া আর জিভটা বেড়িয়ে এসেছে, চোখটা ঠিকরে বেড়িয়ে আসছে। আ..আমি মানে আ..আমমার আর কিচ্ছুটি মনে নেই, কিচ্ছুটি মনে নেই।"

হরকিশোর বাবুর স্ত্রী কেমন একটা আর্তনাদ করে "কেয়া " বলে জ্ঞান হারালো।

সবাই ছুটে গেল সেদিকে। উনাকে উনার ঘরে নিয়ে গিয়ে শোয়ানো হলো। বাড়ির পরিবেশ কেমন একটা থমথমে, চঞ্চল কিছুক্ষণ কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে বসে থেকে ডাক্তার ডাকতে ছুটলো। ডাক্তার বাবুকে দরজার কাছে দেখে সুবলা দেবী বললেন "ডাক্তার ডাকার প্রয়োজন ছিলো না,বৌদি এখন অনেকটা সুস্থ।"

চঞ্চল সংকোচে বললো " আমি দোষ করেছি জানি মাসিমা, ডাক্তার যখন এসেছেন কাকিমাকে দেখতে দিন,এই অনুরোধ রাখুন। "

সুবলা দেবী আর কিছু বললেন না, পথ দেখিয়ে ডাক্তারকে নিয়ে গেলেন, ডাক্তার বাবু দেখে শুনে কিছু ওষুধ লিখে দিলেন। আর বললেন সাবধানে রাখতে। চঞ্চল ডাক্তার বাবুকে এগিয়ে দিয়ে কিছু ওষুধ আর ফল কিনবার জন্য বাজারের দিকে গেল। পথে অর্জুনের সাথে দেখা, সে চঞ্চলকে দেখে এগিয়ে এসে বলল " কি দাদাবাবু আছেন কেমন, আপনার খোঁজ নিতেই যাচ্ছিলাম? "

চঞ্চল অবাক, অর্জুন কি করে জানল ওর অসুস্থতার কথা। চঞ্চল বললো " সে ভালো আছি, তা তুমি কি করে জানলে আমি অসুস্থ? "

" আমি জানব না কেন? আমি তো আপনাকে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে বাড়ি নিয়ে যাই, তাছাড়া আমার ভাই ডাক্তার নিয়ে গিয়েছিল আমার নির্দেশে, অবশ্য বড়বাবু, মানে হরকিশোর বাবুই ডাক্তারের খরচ দেন।"

চঞ্চল এতো কথা জানতো না, তেমন কিছুই মনে ছিলো না, আর থাকার কথাও না। চঞ্চল অর্জুনের হাতে টাকা দিতে যেতে কিছুতেই নেমে না।অর্জুন বললো " যাই বলো নিতে পারবো না টাকাটা।"

" অর্জুন তুমি খুব ভালো মানুষ, পরোপকারী। এ টাকাটা তুমি কারো সাহায্যার্থে ব্যবহার করো,না বলবে না।"

অর্জুন বাধ্য হলো টাকাটা নিতে।বাড়িতে এসে যখন ওষুধ আর ফলগুলো খেয়ার হাতে দেওয়ার জন্য ডাকলো, খেয়া সেদিকে না তাকিয়ে সোজা ঘরের মধ্যে চলে গেল। চঞ্চলের মনটা খারাপ হয়ে গেল, সে বুঝতে পারলো খেয়া ওকে ক্ষমা করেনি। সুবলা দেবী এগিয়ে এসে বললো " কি দরকার তোমার? "

চঞ্চল মুখ তুলে দেখলো সুবলা দেবী সামনে দাঁড়িয়ে, সে ফল আর ওষুধ এগিয়ে দিয়ে বললো "এগুলো।.."

" তোমাকে এসব কে করতে বললো? "

" না সামান্য, তাছাড়া আপনারাও কি কম করেছেন।"

চঞ্চল চুপ করে তবুও দাঁড়িয়েছিল, সুবলা দেবী বললেন " কিছু বলবে?"

চঞ্চল অসহায় ভাবে তাকিয়ে রইলো..

চলবে...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror