একটি ক্ষমাপ্রার্থী মেয়ের চিঠি
একটি ক্ষমাপ্রার্থী মেয়ের চিঠি
প্রিয় মা ,
আজ এতটাই দূরে আমি আর তুমি আজ যে মনের কথা গুলো বলতে জীবনে প্রথমবারের মতো তোমাকে চিঠি লিখছি। আমার হৃদয়ের অলিগলিতে অসংখ্য অব্যক্ত অক্ষরগুলো প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে তোমার কাছে পৌঁছাবে বলে। আজ মনটা বড্ড এলোমেলো। ছোটতে যখন মন খারাপ হত তোমাকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকতাম ঘন্টার পর ঘন্টা । তোমার শাড়ির আঁচলের রান্নার মশলা মাখা সেই সুন্দর ঘ্রাণ তো কোথাও আর পাই না । তোমার আদরমাখা নামটা ধরেও কেউ ডাকার নেই আর ।
জানো মা, আমি প্রমোশন পাচ্ছি । হ্যাঁ আমিও আজ থেকে আট মাস পর একটি কচি মানুষের মা হব । খবর পেয়ে থেকে পৃথিবীটা যেন আবার সুন্দর লাগছে । তবু সবার মাঝে থেকেও আজ বড় একা লাগছে । এক এক সময় পৃথিবীটা আরও বেশি ধূসর লাগে তুমি কাছে নেই বলে। কেন যে জেদ করে পারি দিলাম প্রবাসে ? এখন বুঝতে পারছি যেদিন চলে এলাম তোমাকে ছেড়ে কতটা বুক ফেটে ছিল তোমার । মা গো তোমার কাছে আমার অনেক অনেক অভিযোগ। কেন জন্মের পর থেকে এত ভালোবাসা আর স্বাধীনতা দিয়ে বড় করেছিলে? কোনদিন কেন তুমি নির্দয়, পাষণ্ড হওনি ? কেন আঙ্গুল তুলে আমার ভুল গুলি দেখিয়ে দাওনি মা ? কেন বলোনি যে আমাকে একা ছেড়ে স্বার্থপর হয়ে চলে যাস না ? আজ শরীরে যে ভ্রূণ বেড়ে উঠছে ধীরে ধীরে তাকে এখনো কোলেও পেলাম না তবুও ভাবি একে চোখের আড়াল করলে কি করে বাঁচব আমি ? তাহলে তোমার কত কষ্ট হয়েছিল যখন তিলে তিলে মানুষ করা ত্রিশ বছরের মেয়ে তোমাকে ছেড়ে হাসিমুখে প্লেনে চড়ে বসেছিল ?
নিজের করা অন্যায় গুলো মনে করে আমি মানসিক যন্ত্রনা পাই আর আমার নির্ঘুম রাত্রিগুলো কাটে বিবেকের কাছে ক্ষতবিক্ষত হতে হতে! সাফল্য চেয়েছিলাম আমি , পেয়েওছি সাফল্য নামক মরীচিকাকে । এখন মনে হয় আমার সব আছে, শুধু মা তোমার স্নেহমাখা হাতটা আজ আমার মাথার ওপরে নেই। আর কেউ ভাত মেখে আমাকে খাইয়ে দেয় না। খুব ইচ্ছা করে আলু ভাতে ফ্যান ভাত খেতে তোমার হাতে । আজ আর অসুখ হলে কেউ রাতভর মাথার কাছে জেগে বসে থাকে না। কেই বা জাগবে ? কারোর কাছে সে সময় কই ? চিঠিতে স্বার্থপর হয়ে নিজের কথা গুলো লিখে গেলাম একবারের জন্য জিজ্ঞাসা করছি না তুমি কেমন আছো ? দূর জিজ্ঞাসা করেই কি হবে ? তুমি তো আর ভালো মন্দের ঘেরাটোপে বন্দি নেই ।
কবেই তোমার সব যন্ত্রণার উপশম হয়ে গেছে । তুমি চলে গেছ না ফেরার দেশে । আমার এই চিঠি খামে ভরে ফেলে দেব টেমসের জলে । রাতের আকাশের ঝিকিমিকি তারা গুলো যদি পারে আমার অনুভূতি গুলো তোমার কাছে পৌঁছে দিতে । মা শেষ একটা আবদার রাখবে ? প্লিস ফিরে আসবে আমার কাছে ? না হয় আট মাস পরেই দেখা হবে তোমার আর আমার । তুমিও একদিন আমাকে কাঁদিয়ে চলে যেও । যেমন আমি গেছিলাম তোমাকে ক্যান্সার জর্জরিত অবস্থায় ফেলে । প্রতিশোধ পূরণ হলে আমিও শান্তি পাব । মনে মনে এত কষ্ট নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে না হয়ত । অপেক্ষা করছি তোমার , ফিরে এসো ।
ইতি ,
তোমার স্বার্থপর মেয়ে টুকটুকি