একটি হত্যার পর..
একটি হত্যার পর..


মোবাইলের রিংটোনের শব্দে ঘুমটা ভাঙল তনুজার। রাত্রি তিনটে পনেরোয় চৈতির ফোন! ঘুমচোখে রিসিভ করল, “কী রে! এত রাতে ফোন কেন?” বিপরীতে ভেসে আসা কথাগুলো শুনে মুহূর্তের জন্য ওর পায়ের তলার মাটিটা যেন সরে গেল! সেদিন ছিল রবিবার। চৈতি ও তনুজা একসাথে কলেজ শেষে রোজকার মত টিউশন পড়ে বাড়ি ফিরছে। শীতের রাত। ঘড়িতে তখন দশটা। প্রতিদিনই তারা ওই সময় টিউশন থেকে বাড়ি ফেরে। কিন্তু রবিবারে রাতটা ছিল একেবারে অন্যরকম। তারা দুজনে একটা গলি দিয়ে যেতে গিয়ে দেখে হঠাৎ ৬-৭ জন ছেলে তাদের পথ আটকে দাঁড়িয়ে পড়ে। তখন তারা পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলেও পারেনা। ওই ৬-৭টা ক্ষুধার্ত নেকড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে চৈতির ওপর। কিন্তু তনুজাকে ওরা ছেড়ে দেয়। কারণ, তনুজার সাথে ওই ছেলেগুলোর আগেই কথা হয়েছিল," তুই চৈতিকে নিয়ে গলি দিয়ে রবিবার টিউশন পড়ে ফিরবি। তারপর যা ঘটার ঘটবে। সঙ্গে সঙ্গে ওখান থেকে পালিয়ে যাবি। আর এর অন্যথা হলে...........।" তনুজাও নিজ প্রাণ ভয়ে তাই করলো। চৈতি চিৎকার করে উঠল," তনুজা! আমাকে বাঁচা, আমাকে ছেড়ে যাস না। এরা আমাকে শেষ করে দেবে।" কিন্তু তনুজা কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে চলে গেল। এরপর ওই নরখাদকের দল চৈতিকে গণধর্ষণ করে ছিঁড়ে খেলো। পরনের সাদা চুরিদার রক্তে লাল হয়ে উঠলো। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকলো। তনুজা বাড়ি চলে এসে বসে পড়ল। দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরতে থাকলো আর বলে উঠলো,"
ক্ষমা করে দিস চৈতি! ক্ষমা করে দিস!" ঠিক তার দুদিন পর চৈতির নিথর রক্তাক্ত দেহ রাস্তার ধারে পাওয়া গেল। সেদিনের পর থেকেই তনুজা সব সময় এক অজানা ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে। বন্ধুরা জিজ্ঞেস করলেও সে চুপচাপ চলে যায়। মাঝেমধ্যেই নিজেই বিড় বিড় করে ওঠে," আমি এত স্বার্থপর! আমার বেঁচে থাকারই অধিকার নেই।" যত দিন যেতে লাগলো তনুজা তত মানসিক কষ্টে ভুগতে শুরু করলো। পড়াশোনায় মন বসে না। খালি চৈতির কথা মনে পড়ে। সেই রবিবারের রাতের বীভৎস ঘটনা সব সময় তাকে তাড়া করে বেড়ায়। হঠাৎ মোবাইলের টুংটাং শব্দ-- মেসেজ ঢুকছে। হুঁশ ফেরে তনুজার। মনে পড়ে গেল প্রথম ফোনটির ওপারের কথাগুলি," আমাকে বাঁচালি না কেন তুই? এত স্বার্থপর তুই? এই ছিলো তোর বন্ধুত্ব? কেন করলি এইরকম?" ফোনের শেষ কথাটি কেন করলি এইরকম?............. কেন করলি এইরকম? চারিদিক থেকে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। ঘরের দেওয়াল, ফার্নিচার সমস্ত কিছু থেকে এই কথাটি তীরের মতো ধেয়ে আসতে লাগলো। তনুজা হাত চাপা দিয়ে ঘরের মধ্যে পাগলের মত ছোটাছুটি করতে লাগলো। সারাঘর যেন কাঁপতে লাগলো। মাথা ঘুরতে শুরু করলো, নাড়ি দপদপ করতে লাগলো। যেদিকেই তাকাচ্ছে সেদিকেই চৈতি দাঁড়িয়ে আছে। কপাল চেপে ধরে আর্তচিৎকার করে তনুজা মেঝেতে পড়ে গেল। পরদিন সকাল। ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হল তনুজার প্রাণহীন দেহ। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট-- প্রচন্ড মানসিক চাপে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক।