Sumalika Bhattacharya

Horror Tragedy

4.0  

Sumalika Bhattacharya

Horror Tragedy

একটি ভুল ও তার ভয়ঙ্কর পরিনাম

একটি ভুল ও তার ভয়ঙ্কর পরিনাম

3 mins
790


আমি আজ, আমার জীবনের একটি ঘটনা সবার সঙ্গে ভাগ করে নেব। 

এটা হরর স্টোরি, মানে ভুতের গল্প কিনা জানি না। কারন আমার গল্পে নেই কোন ভৌতিক মুখ বা ভুতুড়ে পাহাড়ের বাড়ি, তবে হয়তো এই গল্পটি একটি ভীতি জনক কাহিনী মনে হতে পারে, পাঠকদের!!!!!!!! 

      আমি তখন কলেজে থার্ড ইয়ারে। খুবই সাহসী ও ডানপিটে স্বভাবের মেয়ে ছিলাম আমি। ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকায় বেশ খানিকটা পরিচিতি ও ছিল আমার। পড়াশোনায় ভালোই ছিলাম। ইতিহাস বিভাগে অনার্স পার্ট ওয়ানে সর্বোচ্চ নম্বর আমিই পেয়ে ছিলাম। তাই ক্লাশ কামাই করে মিটিং মিছিলে যেতে চাইতাম না। 

            সামনেই ছিল কলেজের ইলেকশন,গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তাই সবার অনুরোধে ক্লাশ শেষে রয়ে গেলাম,। মিটিং বেশ কিছুক্ষণ সময় ধরেই চলল, অবশেষে সবাই কলেজ থেকে যখন বেরোলাম, তখন প্রায় সন্ধ্যা হয় হয়। 

    কলেজ থেকে আমার বাড়ি অনেকটাই দূরে। বাসে আধঘণ্টা, তারপর অটোতে

 দশ- পনের মিনিট, তারপর আবার প্রায়

 মিনিট দশেকের হাঁটা পথ, সরু গলি রাস্তা সেটা। 

     একসাথে বাসের পথটা হৈ হৈ করে চলে এলাম। তারপর যে যার মতো বাড়ির রাস্তা ধরল। বাস থেকে নেমে অটোর জন্য লাইনে দাঁড়াতে হল, বেশ লম্বা লাইন। খুবই ক্লান্ত লাগছিল আমার। আকাশটা ও গুরু গুরু ডাক ছিল তখন। ব্যাগে ছাতা একটা ছিল বটে, তবে খুব জোড়ে বৃষ্টি পড়লে,এ ছাতায় কিছুই হবে না, ভিজতেই হবে,আমার ! 

    এসব ভাবনার মধ্যেই খেয়াল হলো, সামনে আর মাত্র দুজন মহিলা দাঁড়িয়ে, এরপরের অটোতেই আমি উঠতে পারবো,। 

অটোতে উঠে দেখলাম, ঘড়ি আবার অচল হয়ে আছে, ! কি বিরক্তিকর!! অগত্যা পাশের

যাত্রীর কাছ থেকে সময় জানলাম, প্রায় আটটা বাজে তখন। 

   তখন মোবাইল ফোন নামক এই অতি প্রয়োজনীয় বস্তুটি আমাদের কাছে অজানাই ছিল। তাই আমার বাড়ি ফিরতে দেরী হচ্ছে দেখে মা বাবা নিশ্চয়ই খুবই চিন্তা করছে, সকালে বাড়ি থেকে বেরনোর সময় তো ফিরতে দেরী হবে বলা হয়নি, ! আসলে মিটিং এর কথা তো আগে থেকে জানা ছিল না আমার, ! 

 ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো, গলির মুখে অটো থেকে নেমে ছাতা খুলে জোরে জোরে পা চালিয়ে চলে যাবো ভাবলাম, আর তখনই কারেন্টটা চলে গেল! 

 বিরক্তিকর!!

কয়েকটা কুকুর দূরে কোথাও তারস্বরে ডাকছে।রাস্তায় আমি ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন প্রাণী আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। অন্ধকারে পা টিপে টিপে হাটতে হচ্ছে। 

  সোমা! 

হঠাৎ আমার নাম ধরে কেউ ডাকলো যেন! 

থমকে দাঁড়ালাম। ভালোই হলো, এই অন্ধকারে কাউকে সাথে পেলে, একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি যাওয়া যাবে, এটা ভেবে মনটা খুশী হলো তখন। অন্ধকার চিড়ে আমার

সামনে দাঁড়িয়ে আছে, বিমল! আমার কলেজের সহপাঠী! 

   সেকি, বিমল, তুমি এখানে !! তোমার বাড়ি তো কলেজের কাছে? 

    বিমল:সোমা, আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। 

আমি: ওহ! আসলে কলেজে মিটিং ছিল, বাড়ি ফিরতে তাই আজ একটু দেরী হচ্ছে। আর তুমি বলো, অনেক দিন তো কলেজ আসছো না, কি ব্যপার বলো তো? 

বিমল: আজ থেকে ঠিক একমাস আগে, তুমি, তোমার মা বাবার সঙ্গে বাজারের ওদিক থেকে হেঁটে আসছিলে, হয়তো কিছু কেনাকাটা করেছিলে। হাতে তোমাদের কয়েকটা প্যাকেট দেখতে পেয়েছিলাম, তাই বলছি। 

আমি: হ্যা, বেশ ঘাবড়ে গেলাম। কেমন আছো বিমল! 

বিমল: হেসে বলল, সেদিন দূর থেকে তোমাকে আসতে দেখে হাত নাড়লাম। হয়তো কিছুটা অন্যমনস্ক ও হয়ে পড়েছিলাম, কারণ, হঠাৎ সামনে চলে আসা বাইকটা খেয়াল করতে পারলাম না। আর এক হাতে সাইকেলটাকেও সামলানো গেল না। তারপর অন্ধকার হয়ে গেল চারিদিক। আর কিছু মনে নেই আমার। একটা কথা জিজ্ঞেস করতে এলাম শুধু। তুমি কি আমায় সত্যিই দেখতে পাওনি সেদিন! কিসের ভয়ে তুমি সেদিন আমাকে একা ফেলে চলে গেলে! 

  আমি: থাক না এসব কথা। কখন কোন্ পরিস্থিতিতে কি করেছিলাম, এখন কি দরকার এসবের। তুমি ঠিক আছো, এটাই তো বড় কথা। 

বিমল: নাহ! আমি ঠিক নেই,আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে নাকি অনেকটাই দেরী হয়ে গেছিল। আর টাকার অভাবে আমার চিকিৎসা ও হয়নি। কয়েকদিন হাসপাতালে রেখে, আমার অসহায় বাবা মা, আমায় বাড়ি নিয়ে গেছিল। 

হঠাৎ রাস্তার আলো গুলো জ্বলে উঠল। কিন্তু বিমল কোথায়!! 

বিমলের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বাড়ির কাছেই চলে এসেছিলাম। 

  বাড়ি ঢোকার পর, বাবা মা খুবই বকাবকি করলেন, সেটাই স্বাভাবিক, আমি ও এর জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুতই ছিলাম। কিন্তু বিমলের ব্যপারটা কেমন যেন অদ্ভুত মনে হল। সারা দিন অনেক ধকল গেছে শরীরের উপর দিয়ে,। তাই স্নান করে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। 

ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখলাম। 

   বিমলের এক্সিডেন্ট হলো, আমি ছুটে গিয়ে ওকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। 

   পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে শরীরটা একদমই ভালো লাগছিল না। মা বলল কাল রাতে বৃষ্টিতে ভিজে শরীর খারাপ করেছি। কলেজ যেতে বারন করলো। আমি তো কামাই করবো না, তাই আজ আর দেরী হবে না এই কথা বলে কলেজ রওনা দিলাম। কলেজে ঢুকতেই আমার প্রিয় বান্ধবী রমা হাত ধরে টেনে নিয়ে বলল, কাল দুপুরে বিমল মারা গেছে!! 

আমার চোখে অন্ধকার হয়ে এলো, মাথা ঘুরতে লাগলো, মাটিতে পড়ে গেলাম অচেতন হয়ে!!  

          সব সময় নিজেকে অপরাধি মনে হয়, প্রতি মূহুর্তে অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে চলেছি আমি, আমার একটা ভুলের এতো ভয়ঙ্কর পরিনতি হলো!!!!!! 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror