Sumalika Bhattacharya

Inspirational

4.0  

Sumalika Bhattacharya

Inspirational

অনুভূতি :শরৎকাল

অনুভূতি :শরৎকাল

3 mins
1.6K


পূজো প্রায় এসেই গেল। আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। মহালয়ার দিন থেকেই সোমার মনটা বড্ড খারাপ লাগছিল। 

     এবার পুজোর কেনাকাটা কিছুই করা হয়নি। ওদের বাড়ির সবার মন মেজাজ খুবই খারাপ। কিছু যে আলোচনা করবে, তাতে ও ঠিক সাহসই পাচ্ছে না। বেশ কয়েকটি মাস যাবৎ ওর শ্বশুর মশাইয়ের শারীরিক অবস্থা একদমই ভালো না। খুবই মানসিক অসুবিধার মধ্যেই চলছে ওরা।

বাড়ির বড়োদের জন্য না হোক, অন্তত বাচ্চা দুটোর জন্য তো কিছু কিনতে হবে। দুটো নতুন জামা যেমন করেই হোক আজ কিনতেই হবে।

      সোমা তাই বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে আজ একাই গরিয়া যাবে ঠিক করলো। । স্কুল থেকে বেরিয়েই সামনে যে অটোটা পাবে তাতে উঠে পরবে, তারপর মিনিট দশেকের মধ্যেই পৌঁছে যাবে গরিয়া।রাজপুর থেকে গরিয়া, রাস্তা ফাঁকা থাকলে, এর বেশী সময় লাগার কথা নয়। হাতে অনেকটা সময় পাবে, মনে মনে এই হিসেব কষে রওনা দিলো। কিন্তু সব কটা অটোই যে একেবারে ভরে ভরে আসছে। বার বার ঘড়ি দেখতে লাগলো সোমা। সময়টা যে কমে আসছে! আধঘণ্টা বোধহয় কেটে গেল এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে থেকে। স্কুল ছুটির আগে তো ওকে ফিরেও আসতে হবে! মনে মনে এসব ই ভাবছিল।

      হঠাৎ নিজের ডাকনাম 'মাম্পী' ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেল। তাকিয়ে দেখে, একজন ভদ্রলোক ওর দিকেই এগিয়ে আসছে। এক্কেবারে সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লেন যে!

বেশ ঘাবড়ে গেল সোমা এবার। মাম্পী নামে ডাকছেন, মানে তো খুবই পরিচিত কেউ! অথচ একদমই চিনতে পারছে না! কি যে অস্বস্তি লাগছে! অথচ ভদ্রলোকের মুখ চোখ দেখে তো মনে হচ্ছে সোমার সাথে দেখা হয়ে অত্যন্ত খুশী অনুভব করছেন। এতে সোমা আরও বেশী বিব্রত বোধ করতে লাগল।

       ভদ্রলোক বোধহয় এইবার ঠিক বুঝে গেলেন, সোমার চিন্তিত মুখ দেখে, যে সোমা ওনাকে চিনতে পারছে না।

      আরে আমি জয়!!চিনতে পারছো না !!!!

জয়!! মানে স্কুলের বন্ধু, !!

সোমা যেন মূহুর্তে পৌঁছে গেল, তার স্কুল জীবনে। মাধ্যমিকের পর যখন নতূন স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হল, তখন প্রথম দিকে খুবই আরষ্ট থাকতো সোমা। আগের স্কুল থেকে আসা বন্ধুদের সঙ্গেই শুধু স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করত। রণজয়ই নতুন স্কুলে ওর প্রথম বন্ধু। তারপর দুবছরের বন্ধুত্বে কখন রণজয়কে জয় ডাকতে শুরু করেছিল,তার সঠিক দিনক্ষণ মনে করতে পারবে না। সম্পর্কটা বোধহয় বন্ধুত্বের চাইতে ও আরো বেশি কিছুরদিকেই এগোচ্ছিল!

দ্বাদশের রেজাল্টের দিন শেষবার দেখা হয়েছিল দুজনের। দুজনেই খুবই ভালো নম্বর পেয়ে পাশ করেছিল। অথচ পরে শুনেছিল , স্থানীয় কলেজে জয় ভর্তি হয়েছিলো। এর কি কারণ, তা আর জানা হলো না।

       সোমা ভিনরাজ্যে চলে গেল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। যোগাযোগ ব্যবস্থা তখন ভালো ছিল না। তাছাড়া,নতুন কলেজ, নতুন বন্ধু বান্ধব, নিয়ে মেতে উঠলো সোমা। জয়ের সাথে আর সোমার বন্ধুত্ব দীর্ঘস্থায়ী হল না।

            তারপর কলেজ শেষে চাকরি, বিয়ে, সংসার, ধীরে ধীরে জয় নামটা মন থেকে ও হারিয়ে গেল সোমার।

    আজ এতো বছর পর, এভাবে দেখা হল!!!

কিছুটা সময় নিয়ে নিজেকে সামলে বলল,

হ্যা, তাইতো, আরে মাথার চুল এতো পরে গেছে, আর বাকি যে কটা আছে, সেগুলোর বেশিরভাগই সাদা হয়ে গেছে। বলে ছেলেবেলার মতো হেসে উঠল। দুজনেই সময়ের ব্যবধান, সম্পর্কের দূরত্ব ভুলে গল্পে

মেতে উঠল।

     বেশ খানিকক্ষণ কথা বলার পর ঘড়ি দেখে চমকে উঠলো সোমা, আর তো গরিয়া যাওয়া হলো না আজ! স্কুল ছুটির সময় যে প্রায় হয়ে এলো!

রণজয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে, একরাশ ভালোলাগা মনে সঞ্চিত করে সোমা ওর বাচ্চাদের স্কুলের দিকে এগিয়ে চলল।

      জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পথের বাঁকে কখনো কখনো রয়ে যায় আমাদের অনেক আপনজন, অনেক ভালো লাগার মুহুর্ত। সাফল্য, নতুন সম্পর্ক ,কখনো ভুলিয়ে দেয় অনেক পুরানো স্মৃতি। এগিয়ে যাওয়ার নামই জীবন, তবে, অতীতকে ভুলে নয়, অতীতকে সাথে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।জীবনের ব্যস্ততায় নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল ,আজ যেন নিজেকে খুঁজে পেল সোমা, রণজয় যেন ঠিক আয়নারই মতো সোমাকে দেখিয়ে দিয়ে গেল, জীবনের এই ধূসর দিকটিকে!!!

    রাস্তার দুধারে শিউলি গাছ, রাশি রাশি। শরতের নীল আকাশের গায়ে ভেসে বেড়াচ্ছে  সাদা মেঘের ভেলা! কলো

মেঘের চাদর সরিয়ে, শরতের আগমনে আকাশ যেমন নিজের রূপ ফিরে পায়, আজ ঠিক তেমনি ব্যস্ত জীবনের মাঝে, এই ভালো লাগার অনুভূতি একান্তই নিজস্ব, অপরের বোঝার নয়! দূরে কাশবনের গায়ে তখন দিচ্ছে দোলা।

সোমার মনেও তখন জেগে উঠেছে একরাশ ভালো লাগা!

        

    


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational