STORYMIRROR

ঠাকুরমাহমুদ thakurmahmud

Abstract Inspirational Others

3  

ঠাকুরমাহমুদ thakurmahmud

Abstract Inspirational Others

একজন চাঁদগাজী

একজন চাঁদগাজী

3 mins
331

আজ দশ-বারো দিন যাবত লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে। শেষ রাত হতে অঝর বৃষ্টি শুরু হয় ভোর ছয়টা সাতটা পর্যন্ত বৃষ্টি ঝরে তারপর থেমে থেমে সারা দিন বৃষ্টি। বৃষ্টির ধরন দেখে মনে হতে পারে আল্লাহমাবুদ চাটগাঁ’য়ের আকাশে মাটির কলসি উপুর করে ধরে আছেন আর তাই এই বৃষ্টির কারণ। খোলা ছোট জানালায় রাতের মেঘলা আকাশে কখনো কখনো ঘোলা চাঁদ দেখা যায়। ঘরে সাদা চাল ডাল লবন ছাড়া আর কিছুই নেই। ক্ষুধার্ত চাঁদগাজী শেষ বিকেলে কেরোসিনের স্টোভে সারাদিনে একবেলা চাল ডাল দিয়ে সামান্য খিচুড়ির মতো রান্না করেন, গরম গরম খিচুড়ি এতোটাই তৃপ্তি করে খান যে, দেখে মনে হতে পারে তিনি সরাসরি বেহেস্তী খাবার খাচ্ছেন। সময় জুন, ১৯৭০।


চাঁদগাজী যে বাড়িটিতে থাকেন এটি লালখান বাজারে বিদ্যুৎ বিহীন কাঠের তৈরি দোতলা একটি বাড়ি। নিচের তলাতে আড়তদারি ঘর আর দোতলায় ছোট ছোট খুপড়ি মতো রুম করে থাকার ব্যবস্থা, উপরে টিনের চালা। শীত বৃষ্টির দিনে মোটামোটি ভালো যায় যদিও টিনের চালার পেরেকের ছিদ্র দিয়ে অনবরত পানি পরে আর রাস্তায় হাটু পর্যন্ত পানি। তবে গরমকালে তালপাতা আর নারকেলপাতার হাতপাখা ছাড়া উপায়ান্ত থাকে না।


চাঁদগাজী সকালে গুড় চিড়া খেয়ে আড়তে খতিয়ান লেখার কাজ করেন, তাতে সামান্য কিছু টাকা পান এতে করে তাঁর পড়ালেখা থাকা-খাওয়া টানাটানি করে চলে যায়। আড়তে কয়াল হিসেবে ছানু আর আনু নামে দুইভাই কাজ করেন। চাঁদগাজী ছানু আনুকে কুড়ি টাকা ধার দিয়েছেন - দুইভাই এই টাকা কোনোভাবেই ফেরত দিতে পারছে না। তাতে করে চাঁদগাজীর চলতে বেশ কষ্টই হচ্ছে। ছানু আনুর তেমন দোষও নেই। আড়তে তেমন কাজ নেই তাই চাঁদগাজী সহ ছানু আনুর বেতনও হচ্ছে না। আড়তদার রাধানাথ বাবু গালে হাত দিয়ে আজাদ পত্রিকা পড়েন। এছাড়া তাঁরও কোনো কাজ নেই।


আজ বৃহস্পতিবার। যথারিতি শেষরাত হতে বৃস্টি হচ্ছে, আজ আর বৃষ্টি থামার নাম নেই। চাঁদগাজী বালিশের ভেতর থেকে খুচরা পয়সা বার করেন। ডাল ভাত খিচুড়ি আর পেটে যায় না। এক খাবার প্রতিদিন আর কতো ভালো লাগে! তিনি ভোরে বৃৃষ্টিতে ভিঁজেই বাজারে যাচ্ছেন। উদ্দেশ্য লইট্টা মাছ কিনবেন। লইট্টা মাছের ঝাল ঝাল ঝোল আর গরম গরম আতপ চালের সাদা ভাত! - ভাবতেই চোখমুখ ঝিমমিক করছে। চাঁদগাজী বাজারের দিকে দ্রুত হাটেন। মনে হতে পারে, তারাতারি বাজারে যেতে না পারলে বাজারের সব মাছ হয়তো শেষ হয়ে যাবে।


বাজারে ঢুকতেই এক লোককে দেখা গেলো জনে জনে জিগ্যাসা করছেন - কুলি লাগবে? কুলি? দেখতে ভদ্রঘরের কেউ মনে হয়। তাঁর কথা কেউ শোনেও শোনেন না - সবাই ব্যস্ত। খুব সম্ভব এটিই বাজারের নিয়ম “সবাই ব্যস্ত” চাঁদগাজী থমকে দাড়ান! তাঁর কুলি নিয়ে বাজার করার মতো বাজার নেই। এতো পয়শাও নেই। তারপরও তিনি লোকটির কাছে গিয়ে বলেন - আমার কুলি লাগবে। আমার সাথে আসুন। মাছ বাজারে ঢুকে এক সের লইট্টা মাছ আর তিন সের আতপ চাল কিনে ছালার ব্যাগে ভরে লোকটির হাতে দিয়ে বলেন “ঘরে যান, আপনার জন্য আপনার ছেলেমেয়ে অপেক্ষা করছে”। চাঁদগাজী বাজার ছেড়ে বাইরে এসে আবার দ্রুত হাটা ধরেন আড়তের দিকে। পুরুষ মানুষের কখনো কাঁদতে নেই। চাঁদগাজী পেছনে একবার তাকালে হয়তো দেখতে পেতেন অশ্রুসজল চোখে পাথর হয়ে একজন তাঁর দিকে তাকিয়ে আছেন।




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract