ঠাকুরমাহমুদ thakurmahmud

Tragedy Action Thriller

3  

ঠাকুরমাহমুদ thakurmahmud

Tragedy Action Thriller

১৯৭১ এর একদিন

১৯৭১ এর একদিন

2 mins
320


- গল্ফ আলফা, গল্ফ আলফা - চার্লি সিয়েরা ওভার।

ঝিঝি পোকার শব্দ সহ টুট টুট টু - - - শব্দ ছাড়া রেডিওতে অপর প্রান্তে কারো জবাব না পেয়ে মাইক্রোফোনে অন্ধকার নিঃশব্দ রাত চিরে আবারও শোনা যায়

- গল্ফ আলফা, গল্ফ আলফা - চার্লি সিয়েরা ওভার। অপর প্রান্ত থেকে এবার ভারি কন্ঠে উত্তর আসে -

- চার্লি সিয়েরা, রজার।

- গল্ফ আলফা নোট টু দ্য লোকেশান প্লিজ -

- গো অ্যাহেড চার্লি সিয়েরা।

- ফ্রম আশুগঞ্জ মেঘনা রেলওয়ে ব্রিজ। ইস্ট। থ্রি নট মাইল। সাউথ ইস্ট বাঙ্ক। লালপুর।

- কপিড। ওভার এন্ড আউট।

- রজার। “চার্লি সিয়েরা যেই লোকেশান দিলেন এটি মেঘনা নদীর পাড়ে একটি অন্ধগ্রাম। লালপুর”।


গভীর কালো রাত আর মেঘনা নদীর গভীর ঘন কালো পানি চিরে খুবই ধির স্থির ভাবে অন্ধগ্রাম লালপুর নাওঘাটে যে বোটটি ভিড়ে এটি কোনো সাধারণ বোট না, একটি সুসজ্জিত গানবোট। বোটে লাকি সেভেন নামে চার্লি সিয়েরা সহ সাত জনের একটি টিম। সাথে আরোও দুইজন আছেন, তাদের নাম নুরুদ্দি আর আরজুদ্দি।


জুম্মা ঘরের ইমাম আবুল কাশেম হুজুরকে ভোর সকালে উঠতে হয়, ফজরের নামাজের জন্যও কাজের জন্যও। মসজিদে ইমামতি করে পরিবারের আট সদস্য নিয়ে চলতে তাঁর বেশ কষ্ট হয় বিধায়, ঘরে চিড়া মুড়ি খই তৈরি করে বিক্রি করেন। একই সাথে ভোর সকালে উঠতে হয় নারায়ণ ঘোষকেও। তিনি পূজার কাজ শেষ করেই তাঁর দুই পুত্র নিয়ে এলুমিনিয়ামের ছোট টোপা বালতি আর কলস নিয়ে গ্রামের কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দুধ সংগ্রহ করেন। গরুর দুধ থেকে তৈরি করেন দই। লালপুরের নারায়ণ দা’র দই। কৃষক জেলে নিয়ে নিতান্ত সাধারণ ও নিরহ মানুষজনের বসবাস অন্ধগ্রাম লালপুর। সপ্তাহে একদিন মাত্র বাজার বসে - শুক্রবার হাটবার। এছাড়া আর কোনো বাজার নেই।


ফজরের সময় সাধারণত কোনো মুসল্লি আসেন না। প্রায় প্রতিদিন জুম্মাঘরে ইমাম আবুল কাশেম একা ফজরের নামাজ শেষ করেন। আজ ইমাম সাহেব তাঁর দুই পুত্র জালাল আর আলাল’কে নিয়ে ফজরের নামাজে জুম্মাঘরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে উঠোনে নামেন - এদিকে নারায়ণ ঘোষও তাঁর দুই পুত্র শিবু আর কার্তিক’কে নিয়ে উঠোনে নামেন - এখনও অন্ধকার ফজরের আজান হয়নি। দুই পরিবারের সামনেই খাকি পোশাকে চকচকে কালো শীতল সাব মেশিনগান আর চোখ ধাঁধানো আলোর এভারেডি টর্চ হাতে পাকিস্তান মিলিটারি! চার্লি সিয়েরা দিয়াশলাই জ্বালিয়ে সিগারেট ধরাতে খানিক সময়ের জন্য তার মুখ পরিস্কার দেখা যায়। ***ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ - রেডিও কোড চার্লি সিয়েরা। ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ হাসি মুখে পরিস্কার বাংলায় বলে উঠেন - “কেমন আছো নারায়ণ? খাকি পোষাকে পাকিস্তান মিলিটারির সাথে বেমানান দুইজন সহচর, লোভাতুর চোখে লুঙ্গি পরিহিত নুরুদ্দি আর আরজুদ্দি।


সেদিনের ভোর হবার আগেই দুঃখিনী মা বাংলাদেশের দুঃখিনী আঁচল মেঘনায় পনেরোটি ক্ষত বিক্ষত লাশ ভাসতে থাকে, অবহেলায়। কে হিন্দু কে মুসলমান তাঁর বিবেচনা না করেই মেঘনা তাঁর বুকে পরম মমতার লাশগুলো আকড়ে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। লালপুরের নিরহ মানুষ জানতেও পারেনি দেশে যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। নারায়ণ ঘোষ আর ইমাম আবুল কাশেমের পরিবার হত্যা দিয়ে লালপুরে হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়। সময় ২৫শে মার্চ ১৯৭১।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy