একটি শোক সংবাদ - কিংবদন্তি গণসংগীত শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা ফকির আলমগীর আমাদের মাঝে আর নেই
একটি শোক সংবাদ - কিংবদন্তি গণসংগীত শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা ফকির আলমগীর আমাদের মাঝে আর নেই
-:একটি শোক সংবাদ:-
কিংবদন্তি গণসংগীত শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা ফকির আলমগীর গতকাল শুক্রবার ২৩শে জুলাই ২০২১ইং রাত ১০ টা ৫৬ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। পরম করুণাময় আল্লাহপাকের কাছে উনার আত্মার মাগফিরাত প্রার্থনা করছি। ৭১এর মুক্তিযোদ্ধা ৭১ বছর বয়সে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া তাঁর উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ ডায়াবেটিস ছিলো বলে জানা যায়।
ফকির আলমগীর ষাটের দশক থেকে সংগীতচর্চা শুরু করেন। তিনি বাঁশীবাদকও ছিলেন। দেশের আন্দোলন-সংগ্রামে গান দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন। ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী ও গণশিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে এবং ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে গণসংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৭১ সালে তিনি যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে এবং ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে তিনি একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন।
ফকির আলমগীর ২১শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৫০ সালে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা মো. হাচেন উদ্দিন ফকির ও মাতা বেগম হাবিবুন্নেসা। ফকির আলমগীর ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। গানের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখিও করতেন তিনি। ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান, গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান, আমার কথা, যাঁরা আছেন হৃদয়পটে’ সহ বেশ কয়েকটি বই রয়েছে তাঁর।
ফকির আলমগীর ও তাঁর সময়ের কয়েকজন শিল্পী শুরু করেছিলেন প্রথম বাংলা পপ ধারার গান। তাঁর কণ্ঠের প্রায় সবগুলো গান জনপ্রিয় এবং কিছু গান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বিপুল জনপ্রিয় হিসেবে গণ্য হয়। তাঁরমধ্যে ‘সখিনা, শান্তাহার, জুলেখা অন্যতম।
বাংলার আকাশের এক চিরো উজ্জল নক্ষত্রের চিরো বিদায়ে আমরা মর্মাহত ও গভীর শোকাহত। আমৃত্যু বঞ্চিত মানুষের পক্ষে গান গেয়েছেন এই গণসংগীত শিল্পী। ভূবন ভুলানো দরাজ কন্ঠের শিল্পী - শত সহস্র মানুষের ভীরে যার কন্ঠ শোনে বলে দেয়া যেতো এটি ফকির আলমগীরের কণ্ঠ! চলার পথে আর কোনো দিন তাঁর সাথে দেখা হবে না! আর কোনো দিন তিনি গান গাইবেন না! গভীর ঘন কালো চোখে দূর দিগন্তে তাকিয়ে আর কখনো বলবেন না - শান্তাহার! ফকির আলমগীরের মতো আরেকটি শিল্পী বাংলার মাটিতে না কখনো আর জন্ম নিয়েছেন - না কখনো আর জন্ম নিবেন! তাঁর শূন্যস্থান চিরোকাল শূন্যই থেকে যাবে।
(সূত্র: দৈনিক কালের কণ্ঠ।
গণসংগীতের মঞ্চ ছেড়ে চলে গেলেন ফকির আলমগীর।)