মাস্ক
মাস্ক
হাজী আব্দুর রহিম সাহেব নিতান্ত ভালো মানুষ, বয়স আনুমানিক ষাট। ঢাকা - সিলেট হাইওয়েতে তার একটি মটর কার ওয়াশিং গ্যারেজ আছে। মটর সাইকেল, কার, মাইক্রো, পিকআপ, সিএনজি সাবান পানি দিয়ে ধোয়া থেকে শুরু করে ইঞ্জিন অয়েল, টায়ার সহ গ্যারেজের আনুসঙ্গিক কাজ কারবার করেন। গ্যারেজে হাজী সাহেব সহ মোট ছয়জন প্রচন্ড পরিশ্রমের সাথে ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করেন। গ্যারেজের সকল কর্মীকে তিনি নিজের পরিবারের সদস্য মনে করেন তাতে করে বলা যায় হাজী সাহেবের পরিবার বেশ বড় পরিবার।
হাজী সাহেব খুব চেষ্টা তদবির করছেন কোনো একটি ইঞ্জিন অয়েলের ডিলারশিপ নিতে তাতে করে ব্যবসা প্রসার হবে - সবাই হয়তো স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারবেন। একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে বেশ ভালো সম্পর্কও আছে। লক ডাউন শেষ হবার সাথে সাথে তিনি ঢাকা ছুটেছেন পকেটে মাত্র ৬০০ টাকা ক্যাশ, এটিএম কার্ড আর ব্যাংকের চেক বই সহ মান্ধাতা আমলের একটি স্যামসাং সেলফোন।
একই রঙ একই ডিজাইনের টি শার্ট পরা চারজন ছেলেমেয়ের একটি হাসি খুশি দল হাজী সাহেবকে পেয়ে ফ্রি মাস্ক উপহার দিলেন - তারা কোনো একটি এনজিওর হয়ে কাজ করছেন। হাতে ব্যাগ ভর্তি মাস্ক। হাজী সাহেব পুরাতন মাস্ক খুলে হাসি মুখে সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে নতুন মাস্ক পরেই অজ্ঞান হয়ে পরে গেলেন। দলটি হাজী সাহেবকে নিয়ে একটি গাড়িতে তুলে পকেট হাতড়ে! যা পেলেন তাতে হয়তো হতাশ হয়েছেন। অজ্ঞান অসহায় হাজী সাহেবকে ফেলে চলে গেলেন ৩০০ ফিট সড়কের খালের পাশে। তখন বেলা আনুমানিক সকাল ১০:৩০ - ১১:০০।
সড়কের পাশ হতে তাকে তোলার বা দেখার কেউ রইলো না। বিকালে পূর্বাচলে বেড়াতে যাওয়া একদল তাকে উদ্ধার করেন এবং নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাজী সাহেবের বয়স ও শারীরিক অবস্থা এই দখল সইবার মতো ছিলো না, তার মাত্র একবার জ্ঞান ফেরে, অশ্রুসজল চোখে তিনি ব্যাকুল হয়ে তার সন্তানদের খোঁজ করেন। এবং হাসপাতালে নিজের অবস্থার বর্ণনা কর্তব্যরত নার্সদের বলে যেতে পেরেছেন মাত্র।
আমাদের দেশে কেয়ামত শুরু হয়ে গেলেও সেই সময়ে একদল লোক থাকবেন যারা লুটপাট চুরি ডাকাতি ছিনতাই সহ নানান অপরাধমূলক কাজে লেগে যাবেন - এই সুযোগ কোনোভাবেই হাত ছাড়া করবেন না। তাই দেশের প্রতিটি নাগরিক নিজ দায়িত্বে সাবধান থাকতে হবে। এছাড়া আর কিছু করার আছে বলে আমার ব্যক্তিগতভাবে জানা নেই।
