এক কাপ কফি
এক কাপ কফি
ধরে নেন চরিত্র নাম সিমিরন আয়সান । পরিচিত নাম । স্থান আবুধাবি এয়ারপোর্ট । বাঙলায় কথা বলতে দেখে যেচেই আলাপটা করে ছিলাম আমি। পোশাক আশাক দেখে বুঝতে পারছিলাম, মানুষটার সাথে আলাপ জমাতে পারলে কাজে আসবে। কারণ আবুধাবিতে বাঙালি কিংবা ভারতীয় মানে সবাই কাজের মানুষ। আমদের মতো মানুষ হলে কাজের খবর দেয়। আর ভালো পোশাক পরা মানুষ মানে কাজ দেয়। পেটের দায়ে দেশের বাইরে এসেছে তাই সার্থ ছাড়া কথা বলি না।
অহংকারীহীন সুন্দরী মহিলা তাই কফি খাওয়ানোর লোভ সামলাতে পারলাম না, যদি উনি নিজেই কফি খেতে চাইলেন। উনি সুন্দরী আর একটু গল্প করতে চাইছিলাম। কারণ অফিসের গাড়ি আসতে অনেক দেরি করবে। তাই ও রাজি হয়ে গেলাম। তাছাড়া খুব সহজ সরল মহিলা। কোনো আরাষ্ঠা নেই। প্রাথমিক খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলাম উনি এখানকার নাগরিক না।উনি দুবাই এসেছেন ছুটি কাটাতে। তবে আবুধাবিতে এক পুরানো বান্ধবির কাছ এসেছে তারপর উনি দুবাই যাবেন। ওনার সাথে আলাপ হলো কিভাবে সে গল্পটা তো বলা হলো না আপানাদের।
আমার ভাগ্য প্রসন্ন ছিলো তাই বিমানে উনি আমার সহ যাত্রী ছিলেন। মানে একেবারে পাশের সিটে। বিমানে এয়ারপোর্ট লাগেজ ব্যাগ নেবার সময় উনাকে হেল্প করতে গিয়ে আমি উনাকে জানিয়ে দিলাম আমিও বাঙালি । তারপর সরাসরি বলেই দিলাম যেটা মনের মধ্যে খচখচ করছিলো অনেকক্ষন ধরে। বললাম " আমার নাম মানব মন্ডল, কলকাতায় বাড়ি, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র। আপনার পরিচয়টা জানতে পারলে ভালো হয়। খুব কাছে থেকে আপনাকে দেখেছি। আসলে পেটের দায়ে। বছর পাঁচেক শহর ছাড়া। তাই অনেক কাছের মানুষকে ভুলে গেছি। মন মধ্যে খচখচ করছে একটা কথাই আপনি আমার খুব পরিচিত।"
উনি হেসে বললেন " তাই বুঝি। ও আপনকে আমিও চিনি। আপানার সব খোজ খবর আপনি জানি। আপানার সাথে ফোনেও কথা হয়েছিল আমার। তবে আপনি আমাকে চিনতে পারলেন এটা আমার দূর্ভাগ্য। "
আমি বললাম " বুঝেছি, আসলে মা বাবা, আমার বিয়ে দেবার জন্য পাগলামি করছে। তাই আপানার কাছে হয়তো আমার ছবি পাঠিয়েছে, আমি আপনার ছবি দেখেছিলাম হয়তো, তবে আপানার ছবিতে হয়তো ভালো দেখতে লাগেনি, কিন্তু আপনি খুব সুন্দর। নিশ্চিত ভাবে বিবাহ প্রস্তাব দিয়েছিলো বোধহয় আপানাকে আমার বাবা মা, আর আমি না করে দিয়েছি।"
আমার না থেমে নিজের মতো বেসামাল বকবক শুনে হেসে হো হো করে উনি বললেন প্রথম "না না তেমন কিছু না, কফি খাও যাক তারপর বলছি। আপনি আসলে মানুষটাতো বেশ মজাদার সহজ সরল, চলুন কফি খেতে খেতে কথা বলি। আপনার সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগবে।"
আমি রাজি হয়ে গেলাম এক পায়ে সত্যি কথা বলতে, রূপকথার রাজকন্যা মতো সুন্দরী মহিলা। একেবারে সিনামার নায়িকা। কিন্তু উনি যখন উনার পরিচয় দিলো তখন সত্যিই লজ্জায় পরে গেলাম।
উনি বললেন " ২০১১ ফেব্রুয়ারি বাংলা স্ট্রীটে আপনি যে শুকনো লঙ্কার কথা বলেছিলেন আমি সেই সিমিরন আসরান "
হঠাৎ আমার হৃদপিন্ডটা বেলুনের মতো ফেটে গেলো। সিমিরন আসরান বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতের সিনামা জগতে ঢোকার চেষ্টা করছে। তখন বাংলা স্টিটের গরম মসলা পাতা আমি দেখি। প্রথম সারির লাইফ স্টাইল পত্রিকা। বলিউড গসিপ নিয়ে চটপটি লেখা লেখি থাকতো।সিমিরন আসরান ১৩ বছরের দাম্পত্য জীবনের ভবিষ্যৎ তখন ভাঙ্গা পথে। তাই সে ক্যারিয়ারে নতুন কিছু করতে চাইছে। তাই একটু বোল্ট দৃশ্যেও অভিনয় করলেন। বাংলা ছবি যতোই ভালো হোক। গল্প ভালো হোক আমরা তার প্রশংসা করি না কখনো। কিন্তু আমার কাছের বন্ধু বিশ্বজিৎ দা এসিস্টেন্ট ডিরেকটর তাই সিনামা নিয়ে একটু কিছু লিখতে হলো। তখন সিমিরন আয়সান কে আমি শুকনো লঙ্কা বলেছিলাম। দেখতে চকচকে হলেও ঝালহীন মানে উষ্ণতা হীন মহিলা বলেছিলাম। এই কথা পড়ে বেশে চেটে গিয়ে ছিলাম উনি। যাইহোক শেষ মেশ ক্ষমা চেয়ে নিয়ে। বললাম " কিছু পয়সা করি সঞ্চয় করেছি। বাংলা দুই একটা ছোট ছবি তৈরি করেছি। আরো করার ইচ্ছা আছে। করবেন আমাদের ছবিতে কাজ?"
উনি বললেন " বাজারে আমার চাহিদা কম এখন। তাই যে কোন ভালো গল্প পেলেই করবো।"
আমি বললাম " না না, আসলে আপনি খুব ভেজাল মানুষ, আমাকে বেশ ঠকালেন । আপনি একজন নক্ষত্র মানুষ , সাধারণ মানুষ মতো কথাবার্তা বলছিলেন। স্ক্রিপ্ট রেডি। আর একদিন দেখা হোক কফি আর গল্প হবে তাহলে।"। উনি হেসে সম্মতি দিলেন, গল্প টি অন্যদিকে ঘুরতে পারে এই আশায় বুক বেঁধে বিদায় নিলাম।

