এ দেশ তোমার আমার
এ দেশ তোমার আমার


ফুচকা কাকুটা আজও আসেনি স্কুলের গেটে। মিলুর মনটা খারাপ হয়ে যায়। ছুটির পর অথবা টিফিনে কাকুর হাতের আলুকাবলি, চুরমুর অথবা ফুচকা না খেলে কেমন যেন লাগে। কয়েক বছর ধরে এটা অভ্যাস হয়ে গেছে ওদের। কাকু খুব পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, হাতে পাতলা গ্লাভস পরে পরিস্কার জলে ফুচকা বানায়। কিন্তু গত পাঁচ দিন কাকুর দেখা নেই। ঋতা বলছিল বিকেলে ওদের পাড়াতেও যাচ্ছে না কাকুটা। কদিন আগে পাড়ার কিছু ছেলেরা এসে কাকুর দোকান ভাঙচুর করেছিল। তখনি ওরা জানতে পেরেছিল ফুচকা কাকু নাকি মুসলিম। এদেশটা নাকি ওদের নয়। ওদের নাকি তারিয়ে দেওয়া হবে পাকিস্থানে। পরেরদিন মিন্টু খবর নিয়ে আসে, কাকুর ছেলে হাসপাতালে। মেরে হাত পা ভেঙে দিয়েছে ক্লাবের ছেলেরা। ওরা বোধহয় চলেই যাবে এ শহর ছেড়ে। পরাগ বলল -'' আমার যখন ডেঙ্গু হয়েছিল কাকু আমায় র
ক্ত দিয়েছিল , জানিস।
-''আমার পরীক্ষার ফিএর টাকা চুরি হয়ে গেছিল গতবার। টিফিনে কাকু শুনে টাকাটা দিয়েছিল আমায়। '' স্বপ্নিল বলে।
-''কতদিন ফাউয়ের ফুচকার পর টক জল চেয়ে খেয়েছি । কখনো বিরক্ত হয়নি লোকটা। '' মলি বলে ।
বিষন্ন মুখে ছেলে মেয়েগুলো কিছু একটা সমাধানে পৌঁছতে চায়।
হাসপাতাল থেকে ওষুধ কিনবে বলে বার হতেই ইকবাল অবাক হয়ে দেখে পুরো স্কুলটাই চলে এসেছে ওখানে। ছোটছোট ছেলে মেয়েগুলো নিজেদের টিফিনের পয়সায় ফল কিনে এনেছে জুনেদের জন্য। একটু বড়রা প্রেসকিপশনটা টেনে নিয়ে চলে যায় ওষুধ আনতে। একে একে সবাই জুনেদকে দেখতে চাইছে। তিনজনের বাবাও খবর পেয়ে চলে এসেছে। ভরসার কচি হাতগুলো ঘিরে ধরেছে ইকবালের ভেঙ্গে পড়া কাঁধকে। কে বলে এ দেশটা ওদের নয় !! এতো ভালোবাসা দেখে চোখ দিয়ে নোনা জল গড়িয়ে নামে ইকবালের।