দরিদ্র:-
দরিদ্র:-




বড় হাইওয়ে ধরে কত শত গাড়ি পার হচ্ছে তখন। কোলাহল পূর্ণ পরিবেশ। সবাই ছুটছে যে যার গন্তব্যের অভিমুখে। কারোর কাছে সময় নেই এই গতিময় শহরে দুই দণ্ড থমকে দাঁড়াবার। এগিয়ে যাওয়ার পিপাসা শুধু। থামলেই পিছিয়ে যেতে হবে। এ শহর যে থামেনা, থামতে চায় না। লক্ষ্য একটাই অমুকের আগে আমায় যেতে হবে, তমুকের আগে আমায় পৌঁছতে হবে। রাস্তায় চলাচল করা যানবাহন গুলির দিকে তাকালে এই অভিব্যাক্তিটাই সুস্পষ্ট রূপে ধরা দেয়। এই শহর এক চলমান শহর শুধু।
হাইওয়ের ফুটপাথের ধার ঘেঁষে জরাজীর্ণ ময়লা কাপড় পরিহিত একটা লোক বসে আছে সেখানে। তার উস্কোখুস্কো চুল, সর্বাঙ্গে দীনতার ছাপ স্পষ্ট। দীন দুঃখী বলেই প্রতীত হচ্ছে লোকটি। হয়ত ভিক্ষা করেই পেটের দায়ভার মেটায় সে। এই কাঠফাটা রোদ্দুরে এভাবে উদাসীন অবস্থায় বসে থাকতে কেউ পারে কি? কিন্তু এই লোকটা তো বসে আছে। উদাস নেত্রে চেয়ে আসছে বড় রাস্তা ধরে শা শা করে ছুটে চলে যাওয়া বড় বড় গাড়ি গুলির দিকে। গাড়ি গুলির দিকে চেয়ে হারিয়ে যায় স্মৃতির অতলে। তার কৈশোর বয়সে এত বড় বড় সড়ক বা এতো যানবাহন ছিল না, ছিল না এত অট্টালিকাও। রাস্তার ওই পাশের ঘিঞ্জি বস্তিটায় থাকতো মায়ের সঙ্গে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে যৌবনে উপনীত হবার আগেই মা কে হারায় সে। কিছুদিন এইকাজ সেইকাজ করে চললেও ক্ষু-নিব্বৃত্তির টাকাও রোজগার হতো না ঠিক ভাবে। এখন এ শহর বড় হয়েছে, চওড়া হয়েছে, এই শহরের হাবভাব পাল্টানো দেখতে দেখতে বয়স হয়েছে তার নিজেরও। এখন এই বড় রাস্তায় বসে থাকে সে এই আশায় যে চলে যাওয়া বাহন গুলির মধ্যে থেকে এই হতদরিদ্র কে কেউ যদি পাঁচ দশ টাকা দিয়ে সাহায্য করে। আশায় বুক বেঁধে সে আজও এসে বসেছে বড় রাস্তাতে.....