Pronab Das

Classics

3  

Pronab Das

Classics

দিদিমা ।

দিদিমা ।

3 mins
765


কখনো কখনো কিছু ঘটনা থাকে যা কোনো বিজ্ঞান বা যুক্তি দ্বারা এর কারণ জানা অসম্ভব ।


        নিজের চোখে দেখা একটা ঘটনা বলি । আমার দিদিমার। তিনি গত হয়েছেন বছর তের আগে। দিদা এমনিতে খুব হাসি খুশি ছিলেন, সাধারণত বৃদ্ধা দিদিমা যেমন হয়। দিদার অদ্ভুত সেটা সমস্যা ছিল সেটা হলো বছরের মধ্যে তিন মাস করে দুবার অর্থাৎ ছ মাস নিজেকে ঘরে বন্ধী করে রাখতেন। নিজের আলাদা ঘরে সব দরজা জানালা বন্ধ করে রাখতেন। কারো সাথে কথা বলতেন না। হাজার প্রশ্ন করলে কখনো সখনো প্রচন্ড প্রচন্ড বিরক্তি প্রকাশ করে ঘাড় নেড়ে উত্তর দিতেন। ওই সময়ে দিদাকে জলপান বা বাথরুম ব্যাবহারে খুব কম দেখা যেত।


       মামা বা নিকট পরিবারের লোকজন অনেক ডাক্তার দেখিয়ে কোনো লাভ হয়নি। মামা ছোট থেকে এগুলো দেখে অভ্যস্থ ছিল। মামা, মামি মা জানতেন ঠিক কখন বা কবে দিদিমার এই সমস্যা সাময়িক শুরু হবে বা শেষ হবে। ওই সময়ে যদি অমাবস্যা বা পূর্ণিমা থাকতো তাহলে দিদা আরো চঞ্চল হয়ে উঠতো। বন্ধ ঘরে বিড়বিড় করে কি সব বলতেন।


       এবারে আমার অভিজ্ঞতা বলি। কোনো এক গরমের সন্ধ্যায় মামার বাড়ি যাই সাওকেল চেপে। বাড়ি থেকে কয়েক কিঃমিঃ দূরে মামার বাড়ি। কোনো এক কাজে যাওয়া , কয়েক ঘন্টায় আবার ফিরে যাবো।বাড়ির সবার সাথে দেখা করার পর দিদিমার ওই সাময়িক অসুস্থতার কথা জানতে পারি। ভেবে খারাপ লাগলো যে আজ আর দিদার সাথে কথা হবে না। মনে মনে ভাবলাম একবার একটা চেষ্টা করেই দেখা যাক কথা বলা যায় কিনা। দিদার জন্য একটা নস্যির কৌটো এনেছিলাম। ভাবতে ভাবতে দিদার ঘরের দিকে এগোতে লাগলাম। যতই এগোচ্ছি আশেপাশের বাতাস যেন ততই ভারী হয়ে উঠছে। করা যেন লুকিয়ে আমায় দেখেছে। খানিকটা অস্বস্তি গায়ে মেখে ধীরে ধীরে দিদিমার বন্ধ ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালাম। বন্ধ দরজাতে চার, পাঁচ বার টোকা দিয়েও কোন সারা পেলাম না। শেষে কি মনে হল দরজায় কান পাটতেই ঘরের ভেতর থেকে অদ্ভুতবিড়বিড় আওয়াজ পেলাম, কারা যেন ওই ঘরের ভেতর অস্তে আস্তে গল্প করছেন। ভেতরে ওরা কারা? কার সাথে আমার দিদিমা কথা বলছেন?


      অনেকবার ডাকাডাকির পরে নিতান্তই হতাশ হয়ে ফিরে যাওয়ার আগে শেষবারের মতো ডাকলাম..........


"ও দিদা …..দরজা খোলা …...আমি গো ……...তুমি নস্যি চেয়েছিলে এনেছি ।"


      একটা অদ্ভুত নিস্তাবতা গ্রাস করেছিল আশেপাশের পরিবেশটাকে। কেমন যেন অপরিচিত অস্বস্তি হচ্ছিল সমস্ত শরীর জুড়ে। মিনিট দেড়েকের মধ্যেই দরজার ভেতর থেকে খুট করে ছিটকিনি খোলার শব্দ পেলাম। তারপর যে দৃশ্য আমি দেখলাম তা অন্য কোনো অপরিচিত ব্যাক্তি দেখলে তার হৃদপিন্ড যে স্থির হয়ে যেত ......... তা আমি নিশ্চিত।

ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘর থেকে ধীরে ধীরে একটা কঙ্কালসার সাদা ধবধবে হাত আমার দিকে একটু একটু করে এগিয়ে এসে আমার বুকের কাছে এসে থামলো। ওটা সত্যি কি দিদার হাত, না অন্য কারো ছিল ………..বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, সে প্রশ্নের উত্তর আমি আজও পাইনি।


     কৌটোটা হাতে দিতেই নিমেষে সশব্দে দরজা বন্ধ হয়ে যায়। আর সেই দরজা বন্ধের শব্দে আমি সম্বিৎ ফিরে পেয়েছিলাম ।


     পরে সুস্থ দিদিমার সাথে কথা বলার সময় অনেকবারই তার হাতের দিকে দেখেছি, কিন্তু কোনো মিলই খুঁজে পাইনি সেদিনের সেই দিদিমার হাতের সাথে। তাকে সুস্থ অবস্থায় ওই বিষয়ে প্রশ্ন করলে অবাক হয়ে স্থির চোখে তাকিয়ে থাকে, আর বলে বলে, কিছুই নাকি তার মনে পড়েনা । বলেই খুনসুটি ইয়ার্কি মারতে থাকে আর পাঁচটা দিদার মতোই ।।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics