STORYMIRROR

Ankita Mukherjee

Horror Fantasy Thriller

4  

Ankita Mukherjee

Horror Fantasy Thriller

ধূঁ ধূঁ ধূমাবতী স্বাহা

ধূঁ ধূঁ ধূমাবতী স্বাহা

9 mins
422

কুলকুল করে গঙ্গা বইছে সেতুর নিচে। স্কুল বাসটা ছুটে চলেছে সেতুর উপর দিয়ে। মাঘের হিমেল আবহাওয়ায় স্কুল বাসটার এক ধারের শেষের জানলার কাঁচটা খুলে গেলো। একজোড়া কোমল হাত দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটি একটি শিশুর হাত। কিন্তু হতের অস্ত্রটি একটি নিপুণ ধ্নুরবিদের মতো তাক করে ধরা আছে। অস্ত্রটি একটি গুলতি মাত্র। তেমন ক্ষুরধার অস্ত্র না হলেও কিছু অসহায় নিম্নজিভের প্রাণহানি নিশ্চিত। এক হাতে নিপুণ হস্তে গুলতি ধরে অপর হস্তে ছিলায় বড়ো একটা ঢিল টেনে ধরে ছেড়ে দিলো। চলন্ত বাস থেকে ছুঁড়লেও ঢিলটা সোজা দিয়ে লাগলো ট্রামের তারের উপর বসা কাকটার মাথায়। কৃষ্ণ পাখিটা পাখা মেলার সুযোগই পেলো না। টপ করে পাকা ফলটির মত ট্রামলাইনের উপর পড়লো। কৃষ্ণবর্ণ বিহঙ্গের মাথাটা থেতলে গেলো।

তিনতলায় উঠে সামনেই ফ্ল্যাটের দরজা খোলা দেখে রাজু আর বিজু দৌড়ে ঢুকে পড়লো। কাজু পিঠে ব্যাগ, হতে ওয়াটার্বটল নিয়ে আস্তে-আস্তে ঢুকলো।ছেলে দুটো ঘরে ঢুকেই হুল্লোড় শুরু করেছে। লাথি মেরে জুতো জোড়া অগোছালো ভাবে খুলেই বেডরুমে গিয়ে কাধ থেকে ব্যাগ প্রাই আছার মারার ভঙ্গিতে খুলে খাটের ওপর ফেলে দিলো। রান্নাঘর থেকে রমলার গলা পাওয়া গেলো, "ওই শুরু হলো তাণ্ডব। শয়েতানগুলো আমার গুছানো বিছানা তছনছ করবে আর রোজ বৌদির কাছে শুনতে হবে তোকে ছাড়িয়ে দেবো রমলা। আজকাল তোর কাজে মন থাকেনা"। মুখ বেকিয়ে আবার নিজেই নিজেকে বললো রমলা, "ছাড়াক দেখি, কম টাকায় আমার মত অন্য কাজের লোক কত আসবে আমিও দেখবো। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে দুজনে সারাদিনের নামে বেরিয়ে পরে, বাচ্চাগুলো মরলো কি বাঁচলো সে চিন্তা নেই এদিকে তিনটে বাচ্চা বের করে দিয়েছে। এদিক নেই ওদিক আছে, যত্তসব"। রমলার চিৎকারে রাজু-বিজু চুপচাপ খাওয়ায় টেবিলে গিয়ে বসে। সেখানে আগে থেকেই মুখ-হাত ধুয়ে কাজু বসেছিল। রমলা তাদের সামনে ডালের বাটি ক্ষত শব্দ করে টেবিলে রেখে বললো, "হয়েছে তান্ডব, না আরো কিছু বাকি আছে?" কাজু বিজুর দিকে একবার তাকিয়ে, রমলার দিকে তাকিয়ে বললো, "ছোড়দা আজকে একটা ক্রো কে গুলতি দিয়ে মেরে স্পট ডেড করে দিয়েছে"। বিজু নিজের চেয়ার থেকে একটু উঠে কাজুর মাথায় একটা চাপর মেরে বললো, "বদমাইশ মেয়ে, তোকে আমার ব্যাপারে সবসময় কমপ্লেইন করতে হয় তাইনা। কখনো মায়ের কাছে, কখনো রমলা মাসীর কাছে"। রাজু বললো, "বোনিকে মারলি কেনো বিজু, ও তো ঠিকই বলেছে। তুই আজকে বাসে লস্ট সিটে বসে একটা ক্রো কে গুলতি দিয়ে ফিনিশ করে দিয়েছিস আমিও দেখেছি"। রমলা অজগ্রামের আধবুড়ি মহিলা। সারাজীবন লোকের বাড়ি কাজ করেই তার সংসার চলে। ছেলে নিবারুন কিছুদিন হলো বাইক কিনেছে। তাই রমলা কাজের মাসী কথাটা একদম পছন্দ করেনা। সে এখন মেইড সার্ভেন্ট কথাটাই বলা পছন্দ করে। তবে কাজু আর রাজুর কথা শুনে আস্তিক রমলা বিজুর উদ্দেশ্যে বলে, "কাক কেনো মেরেছো বিজুবাবা। কাক অতি ভালো পাখি। নোংরা খেয়ে আমাদের পরিবেশ পরিষ্কার রাখে"। বিজু বললো, "নো রমলা মাসী, ক্রো ইজ ভেরি ডার্টি বার্ড। ভেরি উন্টিডি। এত নোংরা ঘাটে। এত ডার্টি। ব্ল্যাক পুরো। কীকরে ভালো পাখি হতে পারে। আমিতো সব ডার্টি ক্রো মেরেই ফেলবো। জানো রমলা মাসী ব্যালকনির সামনের পোলে যে ক্যাবল লাইনের তার গুলো বাধা আছে ওখানে একটা ক্র নেস্ট বানিয়েছে। ওটা ভেঙে দেবো আমি। যেখানে সেখানে ওরা হোম সুইট হোম বানায়। আনঅর্গানাইজড বার্ড"। কাজু হেসে বলে, "ইয়েস, তোরই মতো উন্টিডি অ্যান্ড আনঅর্গানাইজড"। বিজু কাজুকে আবার মারবে ভাবছিল। রাজু বললো, "ফালতু কথা সব। আমার অনেক হোমওয়ার্ক আছে আমি তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠবো আজ"। রাজুর কথা শেষ হলে রমলা বললো, "ও আবার কিকথা বিজুবাবা। কাক হলো ধুমাবতি দেবীর বাহন। তাকে কেউ মারে নাকি। আর তার বাসায় তার বাচ্চারা থাকে, বাসা ভাঙলে বাচ্চাগুলো মরে যাবে। কাককে কষ্ট দিলে ধূমাবতি দেবী ক্ষুণ্ণ হবেন। কাক মেরে প্রলয় ডেকে এনো না বাবা"। তিনজনে হা করে রমলার কথা শুনছিল। রাজু প্রলয় কে, আর সে কেনো আসবে জিজ্ঞেস করতেই রমলা বললো, "কাককে কষ্ট দিলে সে তার মালকিন অর্থাৎ ধূমাবতি দেবীর কাছে গিয়ে কাদবে। তখন দেবী তার বাহণকে যে বা যারা কষ্ট দিয়েছে তাদের ক্ষতি করবে। সেটাই তাদের জীবনের প্রলয়"। কাজু বিজুকে রাগানোর জন্যে বললো, "রমলা মাসী, তার মানে বিসম্বর ঘোষের জীবনে প্রলয়"। রাজু বললো, " আর এইটা বলার জন্য বিশম্বর ঘোষ তোকে মারবে কাজু"। বিজু কিছু বলছে না দেখে ওরা ভাবলো সে বোধয় ভয় পেয়েছে। রমলা তাদের তারা দিতে থাকলো তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করার জন্য। কারণ নবারুণ কিছুক্ষনের মধ্যেই তাকে নিয়ে আসবে। সে সকালে এই ঘোষেদের বাড়ি গিয়ে রাত আর দুপুরের রান্না একবারে করে। দুপুরে বাচ্চাগুলো খাওয়া বাসনগুলো মেজে সে ছেলের বাইকে উঠে বাড়ি চলে যায়। আবার পরেরদিন সকালে আসে। মোটর মেকানিক ছেলে বাইক কেনার পরে সে লোকের বাড়ি কাজ করা প্রাই কমিয়ে দিয়েছে। বিজু জিজ্ঞেস করলো, "এই ধূমাবতি দেবীটা কে বলো তো? আগে তো কখনো এই গড-টার নাম শুনিনি। আর মা-ও-তো কখনো এই গড-টার গল্পঃ করেনি আমার সাথে"। রাজু বিরক্ত হয়ে বলল, "কেনো মম কি কখনো কোনও গল্পঃ করে নাকি যে বলসিশ। গল্পঃ তো দিদুন বলতো। এখন তো দিদুন নেই যে গল্পঃ শুনবো"। দিদুন নেই কথাটা শুনে কাজুর চোখে জল এসে গেল। সে মুখ বেজার করে খাবার খেতে লাগলো। বিজু আবার বললো, "ও রমলা মাসী বলনা কে ওই ধূমাবতি দেবী?" রমলা বলতে আরম্ভ করলো, "কৃষ্ণবর্ণা দেবী। অশ্ব্যহীন রথে আরোহণ করে, কখনো বা কাকের পিঠে"। বিজু প্রশ্ন করলো, "এই অশ্ব্যহীন আর কৃষ্ণবর্ণা মনে কি গো?" রাজু বললো, "কৃষ্ণবর্ণা মানে যার বডি ব্ল্যাক কালারের, মানে ডার্ক স্কিন্ড বডি, কিন্তু আর একটা ওয়ার্ড আমি জানিনা। কি গো ওটার মানে রমলা মাসী?" রমলা বললো, "ঘোড়াহীন রথ। দেবীর রথ ঘোরা চালায়না"। "তাহলে কে চালায় গো মাসী ড্রাইভার আছে নাকি"। তিন বছরের কাজুর এই প্রশ্নের উত্তরে বিজু বললো, "হা তোকে ড্রাইভার করে রাখবে। তখন তুই চালাবি। এবার চুপ কর তো, আমায় গল্পটা শুনতে দে"। বকুনি খেয়ে কাজু চুপ করলো। রমলা বললো, "আমি গল্পঃ নাকি। এ সকল কথা রাত-দিনের মতো সত্য। নাও তো বাবারা এখন চটপট খেয়ে উঠে পরো"। তারপর রমলা রান্না ঘরে গেলে বিজু কাজুকে বললো, "বোকা মেয়ে, এত ভুলভাল কথা বলিস কেন রে তুই। দেখলিতো তোর জন্যে রমলা মাসী আর গল্পটা কন্টিনিউ করলো না"। কাজু মুখ বেজার করে বললো, "ওটা গল্পঃ নয় ফুলিশ বয়, ওটা ট্রু স্টোরি। রমলা মাসী কি বললো শুনিসনি"। রাজু ওদের কোথায় বিরক্ত হয়ে বলল, "আমার তো হয়ে গেছে, তোদের পাগলের প্রলাপ তোরাই বক। ডিসগ্যাসটিং সিবলিংস"। রাজু হাত ধুতে উঠে গেলে কাজুও খাওয়া শেষ করে তাকে অনুসরণ করে কারণ তার ছোড়দার কাছে আর বকা খাওয়ায় ইচ্ছা ছিলোনা। কিন্তু বিজু রমলার পিছন ছাড়েনা। একনাগাড়ে জ্বালাতনে অতিষ্ঠ হয়ে রমলা বললো, "জানতো বিজুবাবা, ধূমাবতি দেবীর একহাতে কুলো ও অপর হাতে ঝাঁটা থেকে। দুষ্টু ছেলেদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করার জন্য, যারা তার বাহনকে কষ্ট দেয়। যখন তিনি আসেন, তখন চারিদিকে ধোঁয়াশা হয়ে যায়। আশপাশটা ঢেকে যায় ধূসর কুয়াশায়। খোলা চুল, আধ ফোকলা দাঁত, কোটরে ঢোকা চোখ, কৃষ্ণবর্ণা এই দেবীকে ডাইনির মতো দেখায়। তোমরা যাকে চুড়েইল বলো"। এতো কথা বলে বিজুর ফ্যাকাশে মুখটা দেখে রমলা মনেমনে বলে, ' ভালই হয়েছে বেটা ভয় পেয়েছে। আর জলাবেনা আমায় '। এই ভেবে নিবারুনকে ফোন করে বলে, "তুই কোথায় আছিশরে নবু?" তারপর ওপাশের উত্তর পেয়ে ফোন কেটে দিয়ে রাজুর কাছে গিয়ে বলে, "রাজুবাবা আমি এলাম, দরজাটা ভিতর থেকে ছিটকিনি দিয়ে দাও"।

ঘন্টাখানেক কেটেছে, কিন্তু রাজু আর কাজুই আজকে হোমওয়ার্ক করছে। বিজু হতে গুলতি আর ঢিল নিয়ে ব্যালকনিতেই দাড়িয়ে আছে। কিন্তু সে ধূমাবতি দেবীকে এখনও দেখতে পেলনা কেনো সেটাই ভাবে পাচ্ছে না। সে ভাবছে সেতো আজ অপদী গুলতি দিয়ে অনেক ক্রোই মেরেছে, তাহলে কেনো ধূমাবতি দেবী তার থেকে রিভেঞ্জ নিলোনা। এসব ভাবতে-ভাবতে গুলতির ছিলায় ঢিল তাক করে লক্ষ্যভেদ করলো কাকের বাসাটায়, যেটা ঠিক ব্যালকনির সামনের পোলেই ক্যাবল লাইনের বাধা তার গুলোয় আছে। ছেলেটা একটু ডিঙি মেরে ব্যালকনি দিয়ে ঝুঁকে দেখলো কাকের বাসাটা নিচে পড়ে আছে, আর দুটো ডিম ফেটেফুটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে একাকার। ছেলেটা একবার ব্যালকনি দিয়ে সোজা তাকালো যতদুর তার দুচোখ যায়। তারপর নীল দিগন্তে হালকা সূর্য রশ্মিতে ভিজে কতকগুলি পাখি দল বেধে উড়ে গেলো দেখে বিজু নিজেই নিজেকে বললো, "রমলা মাসি মিথ্যে বলে। ওসব ধূমাবতি দেবী-টেবি কিছু হয়না। আমি যাতে কাক না মারি তাই এই গল্পটা শুনিয়ে আমায় ভয় দেখাচ্ছিল, কারণ রমলা মাসির ফেভারিট বার্ডকে মেরেছি বলে ওর ভালো লাগেনি। বাট কাক কীকরে কারোর ফেভারিট বার্ড হতে পারে। সো ডার্টি"। এত কিছু নিজেকে বলে ব্যালকনি থেকে ঘরে এসে দেখলো রাজু আর কাজু আর হোমওয়ার্ক করছেনা। রাজু কম্পিউটারে রোড রাস খেলছে আর কাজু ওর পাশে বসে আছে। বিজু আর কি করে। তাই সে ব্যালকনির লাগোয়া ঘরেই সুতে চলে গেলো।

কতক্ষন ঘুমিয়েছে সে খেয়াল নেই ছেলেটার, কিন্তু কি একটা একটানা শব্দে তার ঘুমটা হটাৎ ভেঙে গেলো। অসহ্যভাবে বিছানায় উঠে বসে মাথাটা দুহাতে ধরে রেখেছে বিজু। তার মনে হতে লাগলো এই দামামা যদি বন্ধ না হয় তার মাথা ফেটে যাবে। রাগে, বিরক্তিতে বিছানা ছেড়ে নেমে পড়লো সে। রাজু আর কাজুকে পাসের ঘরে ডাকতে গিয়ে অবাক হলো। পাসের ঘরে তারা নেই। কি ব্যাপার বুঝতে না পেরে ব্যালকনির লাগোয়া ঘরে ফিরে গেলো সে। ব্যালকনিতে দাড়াতেই বুঝতে পারলো পরিবেশটা একটু-একটু করে কেমন যেনো ধূসর হয়ে যাচ্ছে। দামামার শব্দটাও যেনো ক্রমশই বাড়ছে। দূর দিগন্তে সূর্য অস্ত যাচ্ছে, আর হটাৎ তখনই নীল আকাশ তার রং হারাচ্ছে। ফ্যাকাশে কুয়াশার বুক চিরে দূরে একটা ভাসমান ফুটকি নজর এড়ালোনা বিজুর। ফুটকিটার দুদিকে কি যেনো নড়ছে। জিনিসটা কি বুঝতে না পারলেও সাত বছরের বিচ্ছু ছেলেটা এটা ভালই বুঝতে পারছে যে ফুটকিটা তাদের অ্যাপার্টমেন্টের দিকেই এগোচ্ছে। হঠাৎ তার চোখ আকাশ থেকে সোজা মাটিতে গেলো। সেখানে একটা ছোট ছেলে মাথা নিচু করে বসে কীযেনো ছিঁড়ে-ছিঁড়ে খাচ্ছে। ছেলেটা মুখ তুলতেই বিজুর মনে হলো তার শরীর রক্তের সর্বত্র নির্যাস যেনো কেউ নিংড়ে নিচ্ছে। সে দেখলো নিচের বাচ্চাটা আর কেউই নয়, স্বয়ং সে নিজে। ঠিক তারই মত দেখতে যে কোনো ছেলে সেই পারায় থাকতে পারে সেটা সে আগে কখনো দেখেনি। ছেলেটার দুহাতে একটা মরা কাক ধরা ছিল। কাকটার অর্ধেকটা ছেলেটাই খুবলে খেয়েছে। তার মুখটা বিভৎসভাবে কাকের রক্তে ভরে আছে। এই দৃশ্যের আকর্শিকতায়ে বিজু চিৎকার করতে গিয়ে বুঝতে পারলো তার বাকশক্তি লোপ না পেলেও সে মানবকণ্ঠে আর কথা বলতে পারছেনা। নিজের গলার সরে নিজেই ভয় পেলো। বুঝতে পারলনা মানবকণ্ঠে কি ' কা কা ' শব্দ বেরোয়। আকস্মিক ভয় চোখ তুলতেই দেখলো দুর দিগন্তের সেই ফুটকিটা এখন আকার ধারন করেছে। একটা বৃহৎ কুচকুচে কালো দারকাক ডানা ঝাপটাতে ঝাঁপটাতে তার ফুট তিরিশের মধ্যে এসে গেছে। এতবড় কাক বিজু আজ পর্যন্ত দেখেনি। কিন্তু তার পিঠে ও কে বসে আছে। খোলা ধূসর চুল, ময়লা গায়ের রং, কোটরে ঢোকা চোখ, ডাইনির মতো বড়ো ঝোলা নাক ও পুরু কালচে ঠোঁট। পরক্ষনেই তার হাতের মুঠোয় ধরা কুলো ও ঝাঁটার দিকে নজর যেতেই বিজুর মুখে অস্ফুটে একটা শব্দ বেরোয়, ' ধূ ধূ ধূমাবতি '। যদিও শব্দ বলতে তার মুখ দিয়ে কা কা আওয়াজটাই তার কানে বাঁধলো। অবশেষে বৃহৎ কাকটি ও আরহনকারিনি ছেলেটার সামনে ভাসমান অবস্থায় স্থির হলো। দামামাও তখন আর বাজচ্ছেনা। কাকে অধিষ্ঠিতা দেবী এবার কর্কশ শব্দে চিৎকার করে হেসে উঠলো। সে হাসি প্রলয় ঘণ্টার থেকেও তীব্র ও ভয়ংকর। বিজু কান চেপে ব্যালকনিতে লুটিয়ে পড়লো। জ্ঞান হারানোর আগের মুহূর্তে দেখলো কৃষ্ণাদেবি হাত লম্বা করে খাটের পাস থেকে তার গুলতিটা তুলে নিচ্ছে। বিজু ব্যালকনিতে পরেই জ্ঞান হারালো।

চোখে মুখে জলের ঝাপটা অনুভব করে ধড়মড়িয়ে খাটে উঠে বসতেই বাবা, মা, রাজু আর কাজুকে দেখতে পেলো। ঈশানি শিবুকে বলল, "কি ব্যাপার বলতো, ছেলেটা ঘুমের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল কেনো। এও কি কোনো রোগের সিম্পটম নাকি"। শিব রঞ্জন স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললো, "তোমার যেমন বুদ্ধি। কাজ ঘরে না আনলেই কি নয়। এখন এসব না বলে ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলেই তো হয় ওর কি হইছিলো হটাৎ করে"। দশ বছরের বড়ো ছেলে আর তিন বছরের মেয়েকে সরিয়ে ঈশানি বিজুকে কোলে নিয়ে কি হইছিলো জিজ্ঞেস করতেই বিজু সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা বলে। সে বলে সে একটা বাজে স্বপ্ন দেখেছে যেখানে তাকে স্কুলে বুলি করা হচ্ছিল। কিন্তু ঈশানি ও শিবুর কথোপকথনে সে বুঝেছিল যে তারা বাড়ি ঢোকার সময় মাইন গেটের সামনে একটা অর্ধেক খুবলে খাওয়া কাকের মৃত দেহ দেখেছিল। আর সারা ঘর খুঁজেও বিজু তার প্রিয় গুলতি খুঁজে পায়নি। অথচ তার মনে আছে সে গুলতিটা রাস্তায় ফেলে আসেনি। সেটিকে সে বাড়ি অপদি এনেছিল। সে আরো ভাবলো যে তার বাবা, মা, দাদা আর বোন তাকে ব্যালকনিতে সোয়া নিয়ে কিছু বলেনি। তার মানে তারা তাকে খাটেই শুয়ে থাকতে দেখেছে। তাই যদি হয় তাহলে, ওই খদলানো মরা কাক তাদের মেইন গেটের সামনে পড়ে আছে কেনো যেটা তার বাবা, মা দেখেছে আর অতি যত্নে রাখা গুলতিটা সারা ঘরে খুঁজেও সে আর পেলনা কেনো সেটাকে। এসবের অর্থ কি? কিসের প্রমাণ দেয় মৃত কাকের চিন্হ। আর কিসেরই বা প্রমাণ দেয় প্রিয় গুলতির নিশ্চিহ্নতা।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror