দেবদাস ও পার্বতী
দেবদাস ও পার্বতী
আজ মনটা বেশ হালকা লাগছে। জীবনের গোপন কথা গুলো বলে ফেললাম সৌমিলিকে। ও রিপ্লাই দিলো " তোমার জীবন গল্পটা তাহলে কিছুটা দেবদাসের মতো। যাইহোক শুভরাত্রি , সেভ জার্নি।"
টেকআফের ঘোষণা হতেই সিট ব্যেল্টটা বেঁধালাম ভালো করে। দেশে ফিরেছি সাত বছর পর। আমি শরৎচন্দ্রের দেবদাস সাথে নিজের মিলে খোঁজার চেষ্টা করলাম না। কারণ দুইজন দর্শন বোধহয় দুই রকম। আমি মনে করি পুরুষের মদ পান আর টাকা ইনকামের কোন লিমিট থাকা উচিত নয়। আর টাকা চাই জীবন সব সুখ উপভোগ করতে। আমার ভালোবাসা আবেগ কোন অনুভূতি নেই। থাকার কথা নেই।
সেই ছোট্ট বেলায় থেকে ছুটকি আমার বাড়িতে আসতো। রান্না বাটি খেলার সময় শুধু বর বৌ হতাম সেটা নয়। যখন ও বড় হয়ে গেলো তখন ও আমার মায়ের হাতে হাতে সব কাজ করে দিতো। আমার ঘর গোছানোর কাজ টা ও নিজের হাতেই করতো। দুই জনে হয়তো কখনো কাউকে ভালোবাসার কথা মুখে বলি নি। কিন্তু ও আমার রোজকার একটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ছোট খোট ওর কর খুনসুটি , আবদার, দুষ্টুমি নিয়ে আমাদের দিন গুলো বেশ কাটছিল।
আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। খুব বেশি মেধাবী না। তবে একটা চাকরি জোগাড় করতে পারবো আত্মবিশ্বাস ছিলো। চাকুরী পেলাম ও। কিন্তু সরকারে থাকা দলটি ভিতর থেকে চড়া দামে বিক্রি করে দিলো আমাদের পাওনা চাকুরী গুলো। আমি আমার মতো চাকুরী প্রার্থীদের সাথে যখন রাস্তায় বসে আন্দোলন করছি। তখন ও পাড়া সেন্টুদা মানে কাউন্সিলর ভাই ছুটকির সাথে আংটি বদল করে নিলো। সাথে ওর বৌদিকে হেল্থ সেন্টারে চাকুরী দিলো।
ছুটকি আমার সাথে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল, বলেছিলো ব্যাঙ্গালোর কিংবা মুম্বাই গিয়ে দুই জনে মিলে চাকুরী করে ঠিক একটা সংসার গুছিয়ে নেবো। কিন্তু কাকিমার কথাটা মনে পরে গেল। মিষ্টি নিয়ে এসেছিল ওর বিয়ে কথা পাকা হতে। চোখ ভর্তি জল বলেছিলো " কাকু তো বিছানায় শুয়ে। দাদার পাশে থেকে কাজটা উদ্ধার করে দিস আমাদের । বৌদির চাকুরীটা পেয়েছে নয়তো সংসার আর চলছিলো না।ছুটুকির মত নেই , ওকে একটু বোঝা , তোর কথা ঠিক মেনে নেবে ও।"
দাঁড়িয়ে থেকে ছুটুকির বিয়ে দেবো এমন মনের জোর আমার ছিলো না। বিয়ের আগের দিন শহর শুধু নয় দেশ ছাড়লাম। বাড়ির সাথেও যোগাযোগ রাখতাম তেমন। সাত বছর কেটে গেলো। টুকিটাকি কথা হয়েছিল বাবা মায়ের সঙ্গে । কিন্তু আমার জন্মদিন দিন বেশ অনেক্ষণ কথা বললো মা। বললো বাবা খুব অসুস্থ। আমার চিন্তায়। বিয়ে দিতে চায় আমার।চুলেও পাকা ধরছে একটু আধটু। তাই মন বললো চলো যাই ফেরা যাক।
চোখ খুলতে গিয়ে মুখ থেকে আচমকা বেড়িয়ে গেল " ছুটুকি শুতে দে বাড়াবাড়ি করিস না।"
তার মধ্যেই জলে ঝাপটা পড়লো মুখের ওপর। চোখ খুলতেই সেই সাত বছর আগেকার দৃশ্য। তবে ছুটুকির চোখে একটা চসমা।বিয়ের দিন ও পালিয়ে গেছিলো। হোস্টেলে থেকে সরকারি চাকরি জোগাড় পকরে, দুটো সংসারকে সামলেছে এতোদিন। এবার ওকে ছুটি দিতে হবে আমাকে। ভালো লাগলো এটা ভেবেই। বুবাইরা দেবদাস হলেও ছুটুকিরা পার্বতী হয়না আজকাল। তাই প্রেমের গল্প গুলো দীর্ঘশ্বাস ফেলেও এখন পর্বতীরা আগের মতো অসহায় নয়। তবে দেবদাসরা বোধহয় এখনো তাদের ভালোবাসা নিয়ে উদাসীন।

