STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Inspirational

4  

Manab Mondal

Abstract Inspirational

ঢাকি

ঢাকি

4 mins
350

বিলের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে পটলা । ফাড়িংটাও কখনো থেকে পাহারা দিচ্ছে ফাতানাটায়। কিন্তু ফাতানা একবার নড়লো না। গোটা এক মাস হয়ে গেলো ওদের ঘরে মাছ হয়নি। এবার বর্ষায় বৃষ্টি হলো না এবার ভালো ভাবে। তাই মাছ পাই নি ও তেমন।

"কিরে কালা নাকি?কত বেলা হল, মা কখন থেকে ডাকছে খেতে চল।" ওর ছয় বছরের ছোট ভাই উচ্ছে হাত দিয়ে কাঁধ ধরে ঝাকুনি দিয়ে ডাকলো ওকে । মাঠ দিয়ে ভাইকে নিয়ে ওদের ছোট্ট কুঁড়ের দিকে এগাতে । রাস্তায় আসতেই নদী দেখা যায় । মাঠের শেষ যেখানে সেখানে কাশবন। সাদা কাশবনের ওপর দিয়ে বয়ে টুকরো টুকরো শরতের সাদা মেঘ। হাওয়ায় দুলছে কাঁশবন , যেনো তারা খুশি তে মাথা কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে নাচছে।ওদের শিশুমনকে নাড়া দিয়ছে অনবরত খুশি। রাস্তায় ছাতিম ফুল ফুটেছে আকাশে-বাতাসে পুজো পুজো গন্ধ জানান দিচ্ছে দুর্গাপুজোর আর মাত্র কয়েক'দিন বাকি। এ কয়েক সব অন্যরকম। করোনা ভীষন ছোঁয়াচে অসুখ কোথা থেকে এসেছে কে জানে? অনেক জায়গায় পুজো হয়নি গত দুই বছর । তবে আসে পাশের আশেপাশের গাঁয়ে এবারে চারটের জায়গায় একটা পুজো হচ্ছে এবার। পুকুরে হাত-পা ধুতে ধুতেই পটলা বাবার গলা শুনতে পেল ।বাবা মা কে বলছে,"ধানের বেঁচে কটা টাকা পেয়েছিরে , এ অসুখে সব কেড়ে নিল রে লক্ষ্মী, কারখানাটাও বন্ধ ।সারের দোকানের মুদির দোকানের ধার ক্যামনে শুধবো কে জানে? সারা বছর এই সময়টার জন্য মুখিয়ে থাকি,আমরা যে রক্তে ঢাকি। কিন্তু দুগ্গামা মনে হয় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে রে লক্ষ্মী, ছেলেদুটোর মুখের দিকে আর চাইতে পারিনা। দেড় বছর ধরে এক জামা প্যান্ট পরে ঘুরে বাড়াচ্ছে , স্কুলে যাচ্ছে , হাটে যাচ্ছে পটলা। একটা নতুন বই কিনে দিতে পারলাম না কোনদিন"

মা তালিমারা শতচ্ছিন্ন শাড়ীর আঁচলটা মুখে চাপা দিল কান্না লুকোনোর জন্য। উঠোনে ওদের দেখে বাবা মা দুজনেই চুপ করে গেল। কচুশাক সেদ্ধ দিয়ে দুটো পান্তা ভাত খেয়ে নিলো ওরা।কিছুপরে অভ্যাস মত বাবা ঢাক নিয়ে বসল । ততক্ষণে ভাই ঘুমিয়ে পড়েছে মায়ের পাশে রূপকথার রাজকন্যার গল্প শুনতে শুনতে।

পটলা কাঁসিটা হাতে নিয়ে বাবার পাশে বসে বলে, "বাবা এবছরও কলকাতা যাবনা আমরা?"

বাবা ঢাকে পালক লাগাতে লাগাতে তার মুখের পরে চাইল, বলল,"আর ছদিন বাকি মা আসতে, এখনো অবধি বায়না করতে কেউ যখন আসেনি আর মনে হয় না কলকাতা যাওয়া হবে রে খোকা।"

পটলা "তবে তুমি এটা বার করলে কেন?

বাবার চোখে যেন একটা ছোট্ট আশা কোথাও চলকে উঠল, সস্নেহে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, "বায়না না'ই হল সাজিয়ে রাখি যদি মা মুখ তুলে চায়।"

চুপ করে সে মনে মনে ভাবে, গ্রামের কালু জ্যাঠা, নরেন কাকাদের বায়না হল আমাদেরই কেউ ডাকল না এবছর। না নতুন জামা হল, না শহরে যাওয়া হল । দুই টো বছর আগে পাঁচটা দিন বাবার সাথে শহরে কাটিয়েছিল। ফেরার দিন কত কিছু দিয়েছিল যারা পুজো করেছিল। উৎসবের আলোয় সাজানো রাতের শহরকে দেখে ধাঁধা লেগে যাচ্ছিল ওর চোখে। কতো রঙের কত ধরণের খাবার পাওয়া যায় ওখানে। নানা রকম গন্ধের খাবার।

মনে পড়ে হালকা হিম পড়া মেঠো পথ ধরে শেষরাতে বাবা ছেলের ঘরে ফেরার পরে তার মা রান্না চাপিয়েছিল তখনি। বাবা পোঁটলা থেকে এক এক করে মাকে নতুন কাপড় ,ভাইয়ের জামা বার করে দেখাচ্ছিল। গরম গরম ভাত খেতে খেতে বাবা শোনাচ্ছিল শহরের গল্প তখন মা চুপ করে শুনে যাচ্ছিল। ছোট্ট বুকটা ঠেলে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। গোধূলির লাল রঙে রাঙানো আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে ওঠে," মাষ্টার মশাই তাহলে কি ঠিক বলে? আল্লাহ, god , ভগবান বলে কিছু নেই। ও সব মানুষের বানানো। গুনা ,পাপ ,পুণ্য কর্মফল ভয়। মৃত্যু পর জন্নত - স্বর্গ লাভের লোভ মানুষকে নিজের অধিকারকে বুঝে নিতে দেয় না। যদি দূর্গা সবার মা হতো তাহলে ওদের ঘরে এতো কষ্ট আর গোপাল দের ঘরে অতো সুখ কেন থাকতো? আর দুর্গা তুই যদি সত্যি আমাদের মা হস। তাহলে ডাকলিনা কেন আমাদের? বাবার হাতে একটাও পয়সা নেই যে,এরপরে খাওয়া হবেনা আমাদের। আমার মা বলে তুই নাকি দুঃখ দূর করিস কই করিস?ভাইটা কাল অবধি পটার নতুন জামা দেখে কাঁদছিল, ওর একটাও জামা নেই গায়ে দেওয়ার মতো,তুই দেখতে পাসনা দুর্গা মা ?"

সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ওর চোখে জল ভোরে উঠছে মন মানতে চাইছে না ওর ইশ্বর আল্লাহ এর অস্তিত্বকে।

উঠোনের বাইরে হইচই শুনে ও ঘাবড়ে গেলো। উঠোনের বাইরে বাবার সঙ্গে কারা জোরে জোরে কথা বলছে। তবে কী গোপাল বাবার লোকজন মানে মহাজনের লোক বাবাকে শাসাতে এসেছে? সেদিকে সন্ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে উঁকি দিতে মনে আনন্দের হাজার সূর্যের আলো ঝিলিক দিলো হালকা অন্ধকারে। বাবার হাসিমুখ আর লোকগুলোর পোশাক বলে দিচ্ছে দুর্গা মা শহরে ডেকেছে তাদের। মন্ডপে বাবা আবারো বাজাবে ঢাক আর সে কাঁসি। অসুখকে হারিয়ে আবারো সবার কন্ঠে ধ্বনিত হবে,"বলো দুগ্গা মাইকি……"



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract