STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract

4  

Manab Mondal

Abstract

ডেলিভারী বয়

ডেলিভারী বয়

3 mins
415

একটা ছেলের পাশে যদি একটা মেয়ে ভালোবেসে থাকে তাহলে নাকি জীবনটা অনেকটা রঙীন হয়। তবে জীবনের রঙটা ফিকে হয়ে গেলো কত তাড়াতাড়ি ওর। বুবাই একটা সময় অনেক রঙীন স্বপ্ন দেখতো। দেখবেই বা না কেন ? পড়াশোনা তো ভালোই ছিলো। ইন্জিনিয়ারিং সুযোগ পেয়েছিলো। ও যখন ইঞ্জিনিয়ারিং সুযোগ পেলে তখন ওর বাবা একটা বাইক কিনে দিয়েছিলো। বেশ খুশি ছিলো সে কারণ ও জীবনে সুপ্রান্তিকার মতো একটা মিষ্টি প্রেম আসলো।মনে পরে সুপ্রান্তিকা ছিলো বলেই বোধহয়, বিকাল গুলো গোলাপী আর রাত গুলো সব নীল দিন গুলো রঙীন মনে হতো। বাইকের পিছনে চেপে যখন, ওরা শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে ঘুরতে যেতো ওর মন গুনগুন করে উঠতো। এই পথ যদি না শেষ হয়। হারিয়ে যেতে চাইতো ও প্রতিদিন সুপ্রান্তিকাকে নিয়ে , কারন শহরের ব্যস্ততা আর কোলাহলে রোজ হারিয়ে ফেলে ওরা নিজেদের।

বুবাই সত্যি হারিয়ে গেলে, চতুর্থ বর্ষ পরীক্ষা দিতে যাবার সময় , একটা রোড এক্সিডেন্ট হলো ওর চোখের সামনে। সবাই ফোট তুলতে আর লাইভ করতে ব্যাস্ত। বুবাই ওদের মতো নয়। আহত মানুষটা নিয়ে ছুটলো হাসপাতালে। ওর বছরটা নষ্ট হলো একটা জীবন বাঁচাতে গিয়ে। কিছু মানুষ প্রশংসা করলো, কিছু মানুষ ওর ভালো মানুষীতে হাসলো। কারণ আজ কলকাতা শহরে চাকুরী থাকলেও ইঞ্জিনিয়ারদের ভালো মাইনের চাকরি নেই, তার ওপর একটি বছর নষ্ট। সার্টিফিকেট কোথাও তো লেখা থাকবে না। একটা ভালো কাজ করতে গিয়ে ও পরীক্ষা দিতে পারে নি।

যাইহোক চাকুরী পেতে যখন ও রাজ্যের বাইরে যাবে বলে ঠিক করে নিয়েছে। তখন এক দালাল এর খপ্পরে পড়লো। অনেক রঙীন স্বপ্ন দেখালো। জীবনের রঙ বদলে দিতে পারে এমন স্বপ্ন দেখালো। গ্লাফে চাকুরী করতে গেলো ও ঐ দালালকে মোটা টাকা দিয়ে কিন্তু ওখানে গিয়ে ফেসে গেলো ওর পাসপোর্ট নিয়ে নেওয়া হয়েছিল। প্রথম ছয় মাস নিজের ইচ্ছায় কারণ দালালকে দেওয়া টাকাটাতো ফিরত পাবে না মাইনে পেয়ে উসুল করতে হবে। কিন্তু পরে পুরো চার বছর ওখানে কাজ করতে বাধ্য হলো না না আইনি জটিলতায়। কিন্তু ইঞ্জিয়ারিং নয় অন্য কাজে । দেশে ফিরে চাকুরী পেলো না আর , সবাই তখন এক্সপিরিয়েন্স খুঁজছে। ও বিদেশে ফিরে যাবে ভাবছিলো। কিন্তু সুপ্রান্তিকা রাজী হলো না। ব্যবসা করতে গিয়ে আরো কিছু সময় আর অর্থ নষ্ট করলো।

তবে সুপ্রান্তিকা ভালো মেয়ে ওরে জীবনের স্বপ্ন রঙ হারাতে দেয় না। ওদের প্রিয় বাইকটাই আজ ওদের শেষ আশার আলো। যানযট কাটিয়ে বাইকটা ছোটাচ্ছে বুবাই। হোম ডেলিভারী বয় এখন ও মোটামুটি ভালো টাকা রোজগার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু দেড়ি হলে অনেক সময় একটু গালাগালি খেতে হয় এই যা। তবে সবকিছু গায়ে সয়া হয়ে গেছে। আজো হয়তো অনেক গালিগালাজ খেতে হবে এই ডেলিভারীটা দেরি হয়ে গেছে বলে।

কলিং বেল টিপতে একজন মহিলা চওড়া হাসি হেসে ওকে জোর করে ঘরে ঢোকালো।ও বাড়ির বৃদ্ধ বৃদ্ধার আজ বিয়ে বার্ষিকী । তাই বাইরে দামী রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার ওর্ডার দিয়েছে। তবে তিনটে , একটা খেতে হবে বুবাইকে ওদের সাথে এমনটাই ওদের ইচ্ছে। ইচ্ছেটাকে প্রশয় দিতে হলো বুবাইকে। ওনাদের এক মাত্র ছেলে ইংরেজি এমে, কিন্তু ভালো চাকরি না পেয়ে কুয়েতে গিয়ে হোম ডেলিভারী বয়ের কাজ করছে। ওর চোখে জল এসে গেলো। ভাবলো জীবনের রঙ এখন তাহলে ফিকে হয়ে যায়নি। আর হবে না। কারণ ওকে যে মেয়েটা ভালোবাসে সে কখনো ওকে ছেড়ে যাবে না। তাই ছেলেটার স্বপ্নের রঙ ফিকে হবে না কখনো।

,,,,,



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract