STORYMIRROR

Sayandipa সায়নদীপা

Classics

2  

Sayandipa সায়নদীপা

Classics

ডাক্তারখানা

ডাক্তারখানা

8 mins
842


বছর পাঁচেক আগে আমার সাথে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল, সেই ঘটনার সূত্র যে ধরে অভিজ্ঞতাটা হয়েছিল তা আজও আমার স্পষ্ট মনে আছে। আজ সেই গল্পই আপনাদের সাথে ভাগ করে নেব।


                 ★★★★★


উচ্চমাধ্যমিক শেষ। তাতাইয়ের মনটা তাই উড়ু উড়ু। বাড়িতে যেন মন টিকতে চাইছে না। বন্ধুবান্ধবরা সবাই কোথাও না কোথাও বেড়াতে যাচ্ছে, কিন্তু তাতাইয়ের সে উপায় নেই। বাবা অফিসে ছুটি পাবেনা এই সময়। বাড়িতে গল্পের বই পড়ে আর সিনেমা দেখেই যখন দিন কাটছিল তাতাইয়ের ঠিক তখনই এলো ধেনু দার ফোন। ধেনু দা, তাতাইয়ের মায়ের খুড়তুতো বোনে মিনু মাসির ছেলে। ভালো নাম ধৃষ্টদ্যুম্ন। মেসোমশাই বাংলার প্রফেসার, মহাভারত নিয়ে গবেষণা করেছেন, তাই ছেলের নাম রেখেছিলেন মহাভারতের চরিত্রের সাথে মিলিয়ে। ধৃষ্টদ্যুম্ন, এতো কঠিন নাম কেউ উচ্চারণ করতে চায় না, তাই ধৃষ্টদ্যুম্ন হয়ে গেছে ধেনু। ধেনু দাদাদের বাড়ি বাঁকুড়াতে। মিনু মাসি অনেক দিন ধরেই ফোন করত যাওয়ার জন্য, কিন্তু যাওয়া আর হয়ে ওঠেনি কোনোদিন। সেদিন ফোনে তাই ধেনু দা আবার যাওয়ার প্রস্তাবটা দিতে রাজি হয়ে গিয়েছিল তাতাই। মা বাবা যদিও ওকে একা ছাড়তে দোনামনা করছিলেন, কিন্তু ধেনু দা আর মাসিমণির জোরাজুরিতে রাজি হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। এদিকে তাতাইয়ের তো উত্তেজনা চরমে, এই প্রথম একা একা এতদূরে কোথাও যাচ্ছে সে, নিজেকে বেশ এডাল্ট এডাল্ট মনে হচ্ছে। 


   তাতাইয়ের যাওয়ার দিনক্ষণ ফোনে আগেই জানিয়ে রেখেছিল মা, সেই মতো ধেনু দা স্টেশনেই ছিল অপেক্ষাতে, তাই স্টেশনে নেমে কোনো অসুবিধা হয়নি তাতাইয়ের। এরপর মাসির বাড়ি পৌঁছে দেদার আড্ডা আর খাওয়া দাওয়ায় দুটো দিন বেশ কেটে গিয়েছিল তাতাইয়ের। তারপর ধেনু দাই প্রস্তাবটা দিলো, "বিষ্ণুপুর যাবি তাতাই?" 

মনে মনে তাতাইয়ের যে একটুও ইচ্ছে হয়নি না তা নয়, কিন্তু চক্ষুলজ্জার খাতিরে মুখ ফুটে বলতে পারেনি। এবার ধেনু দা নিজ থেকেই যখন প্রস্তাবটা দিল তখন তো না বলার প্রশ্নই আসে না। ঠিক হল পরের দিন ভোর ভোর ধেনু দা, তাতাই আর ধেনু দার পিসতুতো বোন মুন দি এই তিনজন মিলে যাবে বিষ্ণুপুর। আসলে মুন দি বিষ্ণুপুরে মেসে থেকে পড়াশুনো করে তাই ওকে ছাড়তে যাওয়াই মূল লক্ষ্য, সেই সাথে ঘোরাটাও হয়ে যাবে। 


   প্ল্যান মাফিক সারাদিন ওরা তিনজন বিষ্ণুপুরের টেরাকোটার মন্দির ঘুরল, দলমাদল কামান, রাসমঞ্চ দেখে, ছিন্নমস্তার মন্দির দর্শন করে মুনদিকে ওর মেসে পৌঁছে দিলো বিকেল বেলা। তারপর তাতাই আর ধেনু দা বাইকে করে বাড়ির দিকে যাত্রা করল,কিন্তু ফেরার পথেই ঘটল বিপত্তিটা। ফেরার সময় ওরা দেখল যে রাস্তায় এসেছিল সেই রাস্তাটা বন্ধ, কোনো একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। অগত্যা অন্যপথ ধরতে হবে ওদের। তাতাই নিশ্চিত ছিল যে বাঁকুড়ার পথ ঘাট নিশ্চয় ধেনুদার কাছে হাতের তালুর মত চেনা হবে কিন্তু বেশ কিছুটা যাওয়ার পরেই কেমন যেন সন্দেহ হল তাতাইয়ের, "কি হল ধেনু দা? তোমাকে অন্যমনস্ক লাগছে…"

"হেঁ হেঁ বললে ভয় পাবি না তো?" 

"কি?"

"আসলে আমি না বোধহয় ভুল রাস্তায় চলে এসেছি, তবে চিন্তা করিস না এগোতে এগোতে ঠিক মেন রোড পেয়েই যাবো হেঁ হেঁ।"

 আঁতকে উঠল তাতাই। রাস্তা হারালে তো মুশকিল, তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাসিমণির বাড়ি পৌঁছাতে হবে। আসলে দুপুরে হোটেলে মাছ ভাতটা খাওয়ার পর থেকে বিশ্রী রকমের ঢেকুর দিচ্ছিল, এখন আবার পেটটাও কেমন যেন মোচড় দিচ্ছে। গতিক ঠিক সুবিধের লাগছে না তাতাইয়ের।এতক্ষণ রাস্তায় আছে বলে কিছু বলেনি ধেনুদাকে, কিন্তু এবার তো বলতেই হবে। পেটটা বেশ গন্ডগোল লাগছে।

"ধেনু দা"

"কিরে?"

"একটা কথা বলবো?"

"বলে ফেল।"

"দুপুরে হোটেলে ওই মাছ ভাতটা খাওয়ার পর থেকে কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছিল, এখন পেটটা ব্যাথা ব্যথা করছে।"

"যাহ বাবা! বাথরুম যাওয়ার দরকার নাকি রে?"

"নাহ এখনও ততটা নয়, তবে…"

"মুশকিল হল রে, বাজার এলাকা পেরিয়ে এটা তো পাড়া মতো একটা জায়গা, এখানে ওষুধ দোকানও পাওয়া যাবে। কি করি বলতো! খুব কষ্ট হচ্ছে?"

"না না ঠিক আছে তুমি চলো।" 


   কিছুদূর এগিয়েই আচমকা ক্যাঁচ করে ব্রেক কষল ধেনু দা। তাতাই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, "কি হল?"

"ওই দেখ।" 

তাতাই ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল সামনেই একটা বাড়ি। বাড়ির গায়ে সাঁটানো একটা রং চটা সাইনবোর্ড, আর সাইনবোর্ডের ওপর জ্বলতে থাকা টিমটিমে অলোটায় মুহূর্তের মধ্যে পড়ে ফেলল নীচের দুটো লাইন---


"ডাঃ অনিমেষ ত্রিপাঠি

এমবিবিএস…"


আরও অনেক কিছু লেখা ছিল সঙ্গে, আরও কার একটা নাম আর ডিগ্রি লেখা ছিল, কিন্তু সেসবের দিকে আর ভ্রূক্ষেপ না করে চটজলদি গেটটা খুলে ভেতরে ঢুকে গেল তাতাই আর ধেনু দা। বাইকটা পাঁচিলের গায়ে স্ট্যান্ড করে রেখে কলিং বেলে চাপ দিল ধেনু দা। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেতর থেকে এক বয়স্ক মহিলা কন্ঠ ভেসে এলো, "কে?"

"ডাক্তার বাবু আছেন?"

"ভেতরে আসুন।" দরজা খুলে দিলেন এক বৃদ্ধা মহিলা। ভেতরে ঢুকেই একটু থতমত খেয়ে গেলাম ওরা। ঘরটা ডাক্তারের চেম্বার তো বটে কিন্তু কেমন যেন একটা পুরোনো পুরোনো গন্ধ ঘরটা জুড়ে। ধেনু দা বৃদ্ধাকে আবার জিজ্ঞেস করল, "ডাক্তার বাবু আছেন?"

"আছেন। বাথরুমে গেছেন। তোমরা একটু অপেক্ষা করো এখানে।"

ওরা মাথা নেড়ে সামনে থাকা বেঞ্চটাতে বসে পড়ল। বৃদ্ধা জিজ্ঞেস করলেন, "কার সমস্যা হচ্ছে?"

তাতাইকে দেখিয়ে দিল ধেনু দা। বৃদ্ধা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আরও কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করলেন একেবারে পাক্কা ডাক্তারের মত। মনে মনে হাসল তাতাই, ডাক্তারের সঙ্গে থাকতে থাকতে ইনিও ডাক্তার হয়ে উঠেছেন। ইনি ডাক্তার অনিমেষ ত্রিপাঠির কে হন কে জানে! বৃদ্ধা তাতাইয়ের কাছে সবটুকু খুঁটিয়ে জেনে উঠে গেলেন সেখান থেকে। একটু পরে একটা কালো শিশি হাতে ফিরে এলেন ওই ঘরে, "একটু হাঁ করো তো দেখি মা।"

থতমত খেয়ে গেল তাতাই। ওর অবস্থা দেখে বৃদ্ধা হেসে বললেন, "ভয় পেয়োনা, বিষ নয়। একটা হোমিওপ্যাথি ওষুধ। ডাক্তারবাবুর আরেকটু সময় লাগবে, ততক্ষণ এটা যদি খাও আরাম পাবে।"

বৃদ্ধার কথার জবাবে কি বলবো বুঝতে পারছিল না তাতাই, তবে আড় চোখে দেখে নিয়েছিল বোতলটার গায়ে লাগানো ওষুধের নামটা। হোমিওপ্যাথি ওষুধ সম্পর্কে অল্পস্বল্প ধারণা ওর ছিলই তাই সাহস করে তাঁর থ

েকে নিয়ে খেয়ে ফেলল দু'ফোঁটা। তিনি এবার একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লেন ওদের সামনে। তারপর এক এক করে জিজ্ঞেস করলেন ওদের নাম। বলল ওরা। তারপর কোথায় থাকে কি করে ইত্যাদি অনেক রকম প্রশ্ন করতে লাগলেন। এদিকে তাতাই টের পেল হোমিওপ্যাথি ওষুধ তার কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। ওদের প্রশ্ন করা শেষ করে সেই প্রশ্নের রেশ টেনেই বৃদ্ধা এবার শুরু করলেন তাঁর গল্প। তাঁর ছেলেবেলার কথা, যৌবনকালের কথা এইসব। কথায় কথায় জানালেন বৃদ্ধা নিজেও ছিলেন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। কত লড়াই করে পড়াশুনো করেছিলেন সেই কথা বলতে বলতে চোখ দুটো চকচক করে উঠল ওনার। এদিকে তাতাইরা যে অধৈর্য হয়ে উঠেছে সেদিকে ওনার কোনো ভ্রূক্ষেপই নেই। এমন সময় আচমকা কারেন্টটা চলে গেল। সেই সাথে এতক্ষণে চুপ করলেন বৃদ্ধাও। ফোনের টর্চে ঘড়ি দেখল ধেনু দা। পাক্কা এক ঘন্টা কেটে গেছে। এবার প্রচন্ড বিরক্ত লাগলো তার। বেশ একটু রাগত স্বরেই ধেনু দা বলল, "আচ্ছা ডাক্তারবাবু কি আদৌ বাড়িতে আছেন?" 

উত্তর দিলেন না বৃদ্ধা। এদিকে তখনই তাতাই টের পেল পেটের ভেতর কিছু একটা পাক দিয়ে উঠছে, বাথরুম যেতে হবে। উপায় নেই। যথাসম্ভব গলা নামিয়ে সে বলল, "দিদা…"

"বাথরুমে যাবে?"

"হ্যাঁ, মানে আপনি…"

"ওষুধটা কাজ করছে।

তুমি টর্চটা নিয়ে চলে যাও ওই দরজা দিয়ে, সামনেই বাঁ দিকে বাথরুম।"

"আচ্ছা, আর আপনি কিছু আলোটালো…"

"ও আমি ঠিক জ্বালিয়ে নেব।"

মাথা গরম হয়ে আছে তাতাইয়েরও, তাই আর কথা না বাড়িয়ে মোবাইলে টর্চ জ্বেলে তাতাই এগিয়ে গেল দরজার দিকে। যেতে যেতে মনটা খচখচ করছিল, টর্চের আলোয় বৃদ্ধার মুখের অভিব্যক্তিটা কেমন যেন রহস্যময় ঠেকছিল। সত্যিই কি ওনার মুখের কোনো পরিবর্তন হয়েছে নাকি পুরোটাই তাতাইয়ের মনের ভুল! বাথরুমটা অতি সহজেই খুঁজে পেয়ে গেল তাতাই কিন্তু খটকা লাগলো অন্য জায়গায়। ঘরের ভেতরের দিকে আরেকটু যেতেই বেশ ভালো মতো টের পেল যে এই বাড়িতে ওরা দুজন আর বৃদ্ধা ছাড়া আর চতুর্থ কোনো ব্যক্তি নেই। বুকটা ধক করে উঠল তাতাইয়ের, কি চান এই বৃদ্ধা! কি উদ্দেশ্য ওনার! কেন মিথ্যে কথা বলে ওদের আটকে রাখলেন উনি!!! একটা ঢোঁক গিলল তাতাই। এদিকে তার তখন এমন অবস্থা যে পালাতেও পারবে না, বাথরুম যেতেই হবে।"


  কিছুক্ষণের মধ্যে কাজ সেরে তাতাই বেরিয়ে এলো বাইরে। টের পেলো বাইরের ঘরটায় হ্যারিকেন বা লণ্ঠন কিছু জ্বালানো হয়েছে। ততক্ষণে ওর মাথাতে আগুন জ্বলে গেছে। পৃথিবীর যত রাগ গিয়ে জমছে ওই বৃদ্ধার ওপর। কি ভেবেছেনটা কি উনি! এভাবে ওদের হ্যারাস করার কি মানে হয়!

 হনহন করে বাইরের ঘরে এলো তাতাই। দেখল ধেনু দা দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে, আর বৃদ্ধা বসে আছেন একদম স্থির হয়ে। তাতাইকে দেখেও ওনার মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া হলনা। শুধু শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলেন, "খুব রাগ উঠছে না আমার ওপর?" 

বৃদ্ধার গলায় অদ্ভুত শীতলতা। থতমতো খেয়ে গেল তাতাই, ধেনু দারও ভ্রু দুটো কুঁচকে গেল। রাগী রাগী স্বরে তাতাই বলতে গেল, "কেন এরকম মিথ্যে বলে আটকে রাখলেন আমাকে?"

কিন্তু টের পেল রাগী গলাটা ঠিক যেন বের করা হলোনা। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন বৃদ্ধা, "আমাকে হয়তো তুমি কোনোদিনও ক্ষমা করবে না। পাপের ঘড়া বাড়ছে আমার, তাও ঈশ্বর আমাকে কেন যে তুলে নেন না কে জানে!"

বৃদ্ধার কথায় কি প্রতিক্রিয়া জানাবে ভেবে পেলোনা তাতাই। একটু চুপ করে থেকে বৃদ্ধা বললেন, "ডাক্তারবাবু চলে গেছেন বছর দুয়েক হল। সেই থেকে আমি একা। পায়ে একটা সমস্যা আছে তাই বাইরে বেরোতে পারিনা। একজন লোক রাখা আছে সেই রান্না করা থেকে শুরু করে বাইরের কাজ সবই করে দেয়।" 

চমকে উঠল ওরা, কি সাংঘাতিক! একজন মৃত মানুষের সাইনবোর্ড লাগিয়ে…

একটু দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন বৃদ্ধা, " আমাদের একটিই ছেলে। দুজনেরই স্বপ্ন ছেলে ডাক্তার হবে আমাদের মতো। ছেলে বললো নাহ, আমি ইতিহাস নিয়ে পড়ব। আমরা ভাবলাম ছেলে ডাক্তার বা বিজ্ঞানী কিছু না হলে আমাদের মান থাকে না। কম বয়েস তখন আমাদের, জেদ ভীষণ। জোর করে ছেলেকে সায়েন্স পড়ালাম, ডাক্তারও হয়ে গেল ছেলে। মান রইল আমাদের কিন্তু ছেলে আর আমাদের রইল না। আমাদের স্বপ্নপূরণের আনন্দে আমরা খেয়ালই করলাম না চাপে থেকে থেকে ছেলেটার মনে কেমন অভিমানের পাহাড় জমেছে।" 

দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল বৃদ্ধার চোখ দিয়ে। হতভম্বের মত তাতাই জিজ্ঞেস করল, "আপনার ছেলে এখন কোথায়?"

"থাকে নিজের মতো। সেই যে হোস্টেলে গিয়েছিল তখন থেকে আলেকালে বাড়ি আসতো, তারপর ধীরে ধীরে ওর বাড়ি আসাও বন্ধ হয়ে গেল। এখন শুধু মাসে মাসে আমার খরচ, ওষুধ এসব পাঠিয়ে দেয়। ব্যাস…"

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন বৃদ্ধা, "একদিন আমরা ওকে বুঝিনি, নিজের সঙ্গে লড়াই করার জন্য একলা করে দিয়েছিলাম আর আজ ও আমাকে একলা করে দিয়েছে।" 

এতদূর বলে থামলেন বৃদ্ধা। ঘনঘন নিশ্বাস পড়তে লাগলো ওনার।

ধেনু দা চোখ তুলে বলল, "এতদিন পর আপনি কি করে জানলেন ছেলের নিস্পৃহতার কারণ?"

বৃদ্ধা জানালেন, "কয়েক বছর আগে হঠাৎ ঘরের পুরোনো জিনিসপত্রের মধ্যে ছেলের একটা ডায়েরী পাই। তাতেই লেখা ছিল এইসব।"

"ওহ।"


  বৃদ্ধা তারপর বললেন ওনার স্বামী মারা যাওয়ার পরও উনি সাইনবোর্ডটা খোলেননি। মাঝেমাঝে অনেকেই নাকি আমাদের মত কেউ কেউ ভুল করে ঢুকে যায়, তখন যদি বোঝে আগন্তুকের শরীর খারাপ তেমন সিরিয়াস নয়, তাহলে তাকে মিথ্যে বলে আটকে রেখে তার সঙ্গে গল্প করেন বৃদ্ধা। আশ্চর্য হয়ে গেল তাতাইরা। এমনও হয়!!!


বৃদ্ধাকে ধেনু দা জিজ্ঞেস করল, "ছেলের কাছে গিয়েছিলেন কখনও?"

"নাহ... "

"একবার ছেলের কাছে যান, নিজের ভুল স্বীকার করুন।"

"আমি! ক্ষমা চাইবো ছেলের কাছে?"

"ক্ষতি কি? ক্ষমা চাইলে কেউ ছোটো হয়না, আর আপনি তো মা। আপনি এক পা এগিয়ে দেখুন আগে, দেখবেন ছেলেও ঠিক এগিয়ে আসবে।"

"এমনটা হবে আদৌ!" বৃদ্ধার গলার ধন্দ্ব।

"চেষ্টা করতে ক্ষতি কি!"

এই বলে ধেনু দা পা বাড়ালাম বাইরে, মুখে বলল, "আয় তাতাই।" 

তাতাই বেরোতে যেতেই বৃদ্ধা হঠাৎ ডেকে উঠলেন, "মা শোনো।"

ঘুরে তাকাল তাতাই। একটা কাগজের খাম হাতে গুঁজে দিলেন বৃদ্ধা, "ওষুধগুলো খেয়ে নিও নির্দেশমত।"

বুকের ভেতরটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠল তাতাইয়ের। চুপচাপ বাইরে বেরিয়ে এলো ওরা। 

  বাইরে এসে তাতাই দেখল দুটো মানুষের অহং এর চিহ্ন বহনকারী সাইনবোর্ডটা এখন অন্ধকারের সমুদ্রে ডুবে গেছে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics