ডাক্তারবাবু
ডাক্তারবাবু
ডক্টর আকাশ ল্যান্ডফোনে হেলো বলতেই ওপাশ থেকে কাপা কাপা নারী কন্ঠের অনুরোধ শুনতে পেলো। সে বলল, "ডাক্তারবাবু একটিবার এলে খুব উপকার হয়, এই মহামারী কালে বৃষ্টিভেজা রাতে ভীষণ বিপদে পড়েছি, দয়া করে একটিবার সাহায্য করুন"।
সদ্য পাস করা চব্বিশ বছরের তরুণ ডাক্তার আকাশের মনে মায়া হলো ফোনের অপর-পারের বেক্তিটির জন্যে। সে তখন বিপদের কারণ বিষদে জানতে চাইলো। উত্তরে সেই নারী কন্ঠ তাকে একটি ঠিকানা বললো, তারপরই ফোনটা কেটে গেলো। আকাশ পেশায় ডাক্তার তাই রোগীর খবর পেলে তাকে যেতেই হবে। তাই সে একটুও বিলম্ব না করে ঠিকানাটা লিখে নিয়ে, ল্যান্ডফোনটা কান থেকে নামিয়ে রেখে, রেনকোট্টা পরে বেরোলো। তারপর দরজায় তলা দিয়ে গারেজ থেকে রেপিডোটা বের করে, তাড়াতাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
তিন মাইলটাক পেরোনোর পর প্রকৃতির ক্রোধ আরও বেড়ে গেলো। শুরু হলো আরও জোর বৃষ্টি, এবার তার সাথে ভয়ানক গর্জন করে বাজ পড়াও শুরু হলো। আকাশের বুক কেপে উঠলো, কিন্তু কিছু করার নেই, রোগীর ডাকে সাড়া না দিলে তার যে শিক্ষায় বৃথা। তাই নিজের বিপদের কথা না ভেবে বাইকের গতি বাড়িয়ে দিলো।
তার বেশ ভয়-ভয় করছিল গাছগুলোর নিচ দিয়ে যাওয়ার সময়, কারণ গাছে বাজ পড়লে তার আর রক্ষে থাকবে না। তারপর আরও মাইলটাক বাইক চালিয়ে সে গন্তব্যে পৌঁছলো।
বাইকে সিঙ্গেল স্ট্যান্ড দিয়ে সে যখন একতলা বাড়িটার সামনে এসে দাড়ালো তখনও ঘনো-ঘনো বাজ পড়ছিলো। হাওয়ার দাপটে চামড়া ভেদ করে হাড় কেপে যাচ্ছিলো। এমন সময় কেচ করে দরজাটা খুলে গেলো, আর আকাশেরও চোখ পড়লো সেই অপরিচিত বেক্তিতির দিকে। অন্ধকারেও বোঝা যাচ্ছিল যে সেটা একটা নারির অবয়ব। মুখটা ভালো বোঝা না গেলেও ফর্সা দেহটা আকর্ষণীয়। খোলা চুলগুলো এলোমেলো ভাবে কাধ চাপিয়ে বুকের উপর দিয়ে নেমে গেছে। আর ঝড়ে সেগুলো মেয়েটার মুখে এসে লাগতেই সে ডান হাতের সরু-সুঠাম তর্জনী দিয়ে চুলগুলো কানের পিছনে রাখার চেষ্টা করলো। তরুণীর আকর্ষণীয় শরীরটার দিকে চেয়ে থাকতে-থাকতে আকাশের কেমন যেনো তাকে পেতে ইচ্ছা করলো। ইচ্ছা করলো তাকে ছুয়ে দেখতে। এমন মসৃণ যৌবনভরা শরীর দেখলে যেকোনো পুরুষের চরিত্র স্খলন হতে দেরি হয়না। লোভে আকাশের চোখ দুটো চিকচিক করে উঠলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই নিজেকে সামলে নিয়ে আকাশ বললো, "আমিতো দরজায় কড়া নারিনি বা ডোরবেল বাজেনি, আপনি কিকোরে বুঝলেন আমি এসেছি"। আকাশের বিস্ময়ভরা মুখটা দেখে মেয়েটা বললো, "আমি জানতাম আপনি আসবেন আমার টানে"। মেয়েটির কথাএ হতভম্ব হয়ে গেলো আকাশ। তাই দেখে মেয়েটা পরিবেশ সাভাবিক করতে বললো, "রোগীর ডাকে ডাক্তার আসবে এতে আর নতুন কি, তা ছাড়া আপনাকে আমি ছাদ থেকে আসতে দেখছিলাম, তাই তাড়াতাড়ি এসে দরজাটা খুলে দিলাম"। আকাশ আরো বিস্মিত হয়ে গেলো। সে বললো, "এই অন্ধকারের চাদরে মোড়া নিশুতি রাতে আপনি আমায় দেখতে পেলেন কীকরে"। প্রথমে মিহি কন্ঠের হাসি বাতাসে খেলে গেলো, তারপর উত্তর এলো, "আপনি প্রশ্ন বড্ডো করেন ডাক্তারবাবু, আপনার মোটরে সাইলেন্সার লাগানো নেই, খুব আওয়াজ, ওটাই কানে আসছিল, তাতেই বুঝলাম আপনি এসেছেন, তাছাড়া এই ভয়ঙ্কর রাত্রে অন্য কারোর অপেক্ষায় তো ছিলাম না"।
কথাটা বলেই সে আস্তে-আস্তে ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়ল। আকাশও তাকে অনুসরণ করল। দুজনেই থামলো রোগীর কামরার সামনে এসে। ক্ষনিকের জন্য আকাশের চোখ দুটোয় আবার কেমন যেনো লোভ ফুটে উঠলো। মেয়েটি তার চুলের গোছা বাঁকিয়ে বাম কাধের উপর রেখেছিলো, তাই সেদিকে আকাশ তাকালও না। ডানদিকের নোগ্ন কাধের উপর ঝুঁকে পড়তেই মেয়েটি বলে উঠলো, "রোগী দেখার পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক আপনি পেয়ে যাবেন, সেটা নিয়ে এতো ভাববেনা"। তরুণ ডাক্তার নিজেকে আবার সামলে নিলো। মেয়েটা কামরার দরজা খুলতেই আকাশ ঢুকে সোজা সর্বাঙ্গ চাদরে মুড়ি দেওয়া রোগীর সামনে রাখা মোড়াটা টেনে বসে পড়লো। মেয়েটি তখনও কামরার দরজায়ে দাড়িয়ে ছিল। আকাশ একবার পেছন ঘুরে আজ রাতে তার পেতে চলা সুখের কথা চিন্তা করে হাসলো। তারপর মুখ ঘুরিয়ে রোগীর দিকে ফিরে চাদর সরাতেই এক লাফে তিন হাত পিছিয়ে গেলো।
পরমুহূর্তেই খলখলে হাসি সারা ঘরে খেলে গেলো। আকাশ অনুভব করলো নরম দুটো হাত তাকে পিছন থেকে আলিঙ্গন করলো। আকাশ বেশ গম্ভীর গলায় বলে উঠলো, "এভাবে কেউ ভয় দেখায় নাকি, আমার হার্ট এ্যাটাক হতে পারত বুঝলে, তখন কি করতে অন্য ডাক্তারকে ফোন করে ডেকে আনতে"। আকাশের রাগ দেখে মেয়েটার হাসি আরো বেড়ে গেল। সে কোনোমতে হাসি থামিয়ে বললো, "যে নিজের লোককে চিনতে পারেনা তার সাথে এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক"। আকাশ তার দিকে ফিরে দু-বাহুতে তাকে ভরে নিয়ে বললো, "সরি, আমারি ভুল, আসলে মাথায় বাজ পড়েছিল তাই লাশটা গাছতলাতেই পরে আছে, তোমার মতো বিছানায় পরে নিমনিয়াতে আমার উইকেট পরেনিতো, তাই একটু চিন্তে দেরি হয়ে গেল"।


