STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Fantasy Inspirational

4  

Manab Mondal

Abstract Fantasy Inspirational

দানবের দেশে পটলা কোম্পানী

দানবের দেশে পটলা কোম্পানী

4 mins
374

পড়াশোনা চাপে আমার সিলেবাসের বাইরে কিছুই নিয়ে আর আলোচনা করতে পারি না। কিন্তু আপু পড়াশোনা ফাঁকেই ভুত নিয়ে একটা গবেষণা করে ফেলেছে । একটা লিস্ট তৈরি করে ফেলছে ভারতের কোথায় কোথায় ভুত আছে। তাতে রাজস্হানে ভানগড় থেকে পশ্চিম বঙ্গের পুরুলিয়ার বেগুনকোদরের নামও আছে। শুধু গল্প শুনে কাজ নেই। ভুতের অস্থিত্বের প্রমান চাই। ভানগড় রাতে থাকতে দেওয়া হয় না। গুজরাটের ডুমস সমুদ্র সৈকত বা মহারাষ্ট্রের ডিসাজা চৌলে এখনো লোকে ভুত দেখেনি। আসামের জটিঙ্গা গ্রামে পাখিদের আত্মহত্যা করার ব্যপারটা ভৌতিক হলেও ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে জায়গাটা আসলে অভিশপ্ত। কারিসিং ডো হিলের নাম শুনে ভীতু্রাম বাপি তো পালিয়ে যাচ্ছিলো। ওখানে নাকি অনেক মারা গেছে‌ । তাই মাধ্যমিক শেষ হলে ভুত আবিস্কার করতে আমরা পুরলিয়া যাবো ঠিক করলাম।

ভুত নিয়ে আপনারা ঠাট্টা তামাশা করলেও ভুত কিন্তু আছে।বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও লোকবিশ্বাসে ভূত বা আত্মা হলো একজন মৃত ব্যক্তি, যিনি সজীব বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। বিভিন্ন গল্পে ভূত ফিসফিস করে বা কান্নাকাটি করতে পারে, জিনিসপত্র নাড়াচড়া করতে বা ফেলে দিতে পারে, ইলেকট্রনিকস সামগ্রীতে গণ্ডগোল বাধাতে পারে; এমনকি একটি ঝাপসা অবয়ব নিয়ে দৃশ্যমান হতে পারে।

২০১৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ চ্যাপম্যান পরিচালিত একটি সমীক্ষায় অতীন্দ্রিয় বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিশ্বাস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। জরিপে অংশ নেয়া ৫৮ শতাংশ মানুষ বলেছেন, বিশেষ কোনো স্থান বিদেহী আত্মার মাধ্যমে ‘ভুতুড়ে’ হয়ে যেতে পারে।

ওয়াশিংটন ডিসির পিউ রিসার্চ সেন্টার পরিচালিত আরেক জরিপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে প্রায় একজন বলেছেন, তারা ভূত দেখেছেন বা ভুতুড়ে পরিবেশে ছিলেন।

ভূতবিষয়ক টেলিভিশন শোতে অনেকে আত্মার কার্যকলাপ রেকর্ড বা পরিমাপের জন্য বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম ব্যবহার করেন। সেই সঙ্গে অসংখ্য ভয়ংকর ছবি ও ভিডিও দেখে মনে হয় সত্যিই যেন ভূত আছে।

যাইহোক আমি বাড়িতে জানলাম আমারা পুরুলিয়া  পিসির বাড়িতে যাবো ছুটি কাটাতে । ঠাকুর দা তো খুশি। বললো "দেখে আয় ছৌ নাচ, রঙবেরঙের মুখোশ পরে কেমন করে নাচে মানুষ গুলো। পুরুলিয়া মানুষ গুলো বাংলা ভাষার জন্য অনেক লড়াই করছে। পুরুলিয়া না দেখলে বাংলাকে দেখা হয়না। জয়ন্তি পাহাড়, অযোধ্যা পাহাড় পঞ্চকোট।"

দাদু একটা দীর্ঘ বক্তিতা শুনে। আমরা তিন জন আরো উৎসাহিত হলাম।

এর মধ্যে পিসি আবার বললো নতুন গল্প বেগুনকোদরের ওদের বাড়ি থেকে কত দূর জিজ্ঞেস করতে বললো " তোরা কি ভুত দেখতে চাস , আমাদের এখানে তো দানব ও দেখা যায়।"

দানবের কথা শুনে আতংকে উঠলেন মনে হয়। বাপি কিন্তু খুশি হয়েছিলো দৈত্য দানবরা তো রাজকন্যা দের আটকে রাখে।

দানব মানে খারাপ হয় এমনটা নয়। ভুত হয় সাধারণত যখন তার কোন কাজ বাকি থাকে পৃথিবীতে। কিন্তু দানব হয় অভিশাপের ফলে।যেমন গ্রীক উপকথায় পসিফাই ষাঁড়ের মাথাওয়ালা মানব সন্তান মাইনোটোর জন্ম দিয়েছিল। মডুসার অভিশাপের ফলেই চুলের বদলে মাথায় সাপ নিয়ে ঘুরতো। অভিশাপের ফলেই এদের চেহারা বিকৃতি হতো। ভারতীয় পুরাণে কথা অনুযায়ী দানব কথা অর্থ হলো কশ্যপের পত্নী দনুর পুত্র; অসুর, দৈত্য।

বিভিন্ন সাহিত্যে গ্রন্থ পড়ে দানবের কথা আমরা জানতে পারি।মহাকাব্য বেউলফে পানির দানব গ্রেনডেল একজন বিকৃত, নৃশংস, প্রচন্ড শক্তিশালী এক আদিম দানব। এটি শিকার ধরা ও খাওয়ার জন্য রাত্রীবেলা মানব বসতিতে হামলা চালাত। আধুনিক সাহিত্যের দানবও তার আদি ভিত্তির উপরই আছে, ম্যারি শেলির ফ্রাঙ্কেনস্টাইন দৈত্য, এবং ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলা জনপ্রিয় দানব।

দানবরা হলো অলীক কল্পকাহিনী, লোমহর্ষক কল্পকাহিনী এবং বিজ্ঞান কল্পকাহিনী ,যেখানে দানবরা প্রায়শই স্বভাবত পৃথিবীর বাইরের প্রাণী হয়ে থাকে । তবে এরা কখনো কখনো নিষ্ঠুর হয়। মালদ্বীপের উপকথা রান্নামারি নামে এক সামুদ্রিক দানব কথা আমরা জানতে পারি ।প্রতিদিন রাতের বেলা এই দানব সমুদ্রের তলদেশ থেকে উঠে এসে মালদ্বীপের লোকালয়ে পা আসতো। বিকট আওয়াজের পাশাপাশি তার বিশালাকৃতির শরীর জ্বলজ্বল করত, যেন তার পুরো শরীরে রেডিয়াম দেয়া হয়েছে। এই দানবের লোকালয়ের এসে কুমারী মেয়েদের হত্যা করতো। সে হিসেবে আমরা নিরাপদ দানবরা খালি মেয়েদের আটকে রাখে মেয়েদের হত্যা করে।

পুরুলিয়া পৌঁছাতে গাছপালা ঘেরা সুন্দর পরিবেশ মন ভালো হয়ে গেলেও পিসি এবং পিসতুতো দাদাদের ব্যাবহারটা ভালো ঠেকলো না।তারা দানব দেখাতে নিয়ে গেলো না আমাদের মজা করে বললো। " তোদের শহরের মানুষেরাই তো আসল দানবরে। গ্রামের সহজ সরল মানুষ গুলোর হাড় মাস খায়।" পিসি আবার বললো বড়ো হলে ঠিক দানব দের চিনতে পেরে যাবি।

দাদাদের ভরসায় না থেকে আমরা বেড়িয়ে পরলাম , বাড়ি থেকে একা একা। পথ টা বেশ কঠিনই হলো। কারণ পথঘাট নেই এখানে ভালো। পথে জল পেলাম না। খিদে পেলো বিকালেই অথচ কোন দোকানপাট কোন নেই। জঙ্গল ভিতরে ঢোকার সাহস পেলাম না। অনেক কষ্ট করে একটা কুড়ে ঘরে দেখা মিললো। আমরা ছুটলাম সেখানে। দিনের আলো নিভে গেলে বিপদে পড়ে যাবো সেটা আমরা ভালো করে জানি।কুঁড়ে ঘর থেকে যে মানুষটা বেড়ালো সে মানুষের মতো কথা বললেও মানুষের মতো দেখতে নয় কঙ্কালের ওপর একটা কালো চামড়া পরানো। খিদে পেয়েছে শুনু আমাদের কুড়িয়ে কাচিয়ে একমুঠো মুড়ি দিলো । বললো "ওর ছেলে এলে ভালো। খাবার দেবে আমাদের।"

ওর ছেলে আসলে যে খাবার আনলো তা দেখে আমার জিভ জল আসার বদলে চোখে জল এলো। ভাগ্যিস আমার পিসতুতো দাদা এসে পরেছিলো নয়তো ওর ছেলে আর ছেলের খাবার দেখে আপ্পু অসুস্থ হয়ে পরেছিল।ছেলেটার নাক আর কান নেই। হায়নার দল পাল্লায় পরে ওটাকে ওরা হারিয়েছে। সেই দিন রাতে খাবার হিসেবে ওরা চারটে ধেড়ে ইঁদুর ধরে এনে ছিলো। আমি বুঝতে পারলাম সভ্য সমাজ এদেরকে তাহলে দানব বলে । দারিদ্রতার অভাবে যারা সব কিছু খেয়ে ফেলে। নানা দানব সেই সব মানুষেরা যাদের জন্য এরা আজো সভ্যতার আলো দেখেনি?

কিছু কিছু সময় আমরা আমাদের মানবিকতা ধরে রাখতে পারছি না। আমাদের মনে দানব জেগে উঠছে। দানব মানে আমাদের ঘাড় মটকে রক্ত মাংস খাবে এরকম দানব নয়। আমাদের সহজ-স্বাভাবিক মনের ভেতর বিষ ঢুকে পড়ে আমরা যেন ভিন্ন একটা কিছু হয়ে উঠছি। একেই আমি দানব বলতে চাই। সভ্য মানুষরা যখন স্বার্থপর হয় তখন তারাও তো দানবের সমান।

,,,,



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract