STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Inspirational

4  

Manab Mondal

Abstract Inspirational

চুক্তি ভঙ্গ

চুক্তি ভঙ্গ

4 mins
466

শরীরটা কয়েকটি দিন ভালো যাচ্ছে না। শুয়ে শুয়ে লক্ষ্য রাখলাম ওর দিকে।সাদা কাগজ থেকে কথা কমপিউটারে টাইপ করতে থাকল হরিপ্রিয়া ওরফে মৌ। আশ্রমের প্রকাশনার কাজটা ও সামলায়।

খুব তারাতারি কাজ শিখে নিয়েছে ও।


"সামনে রথ যাত্রা। মানে রথে দড়িটানার স্মৃতি। আর জগন্নাথ কথা মনে আসে।     আমার অল্প সল্প পড়াশুনায় বুঝেছি যে শ্রীচৈতন্য দেবের আবির্ভাবের আগে এই বাংলায় বা ওপার বাংলাতে জগন্নাথ, ও রাধাকৃষ্ণের পুজো প্রায় দেখা যেতোনা। এই পুজো একদমই অপ্রচলিত ছিল। তখন বৌদ্ধ জৈন প্রভাব মুক্ত হয়ে বঙ্গভূমি শাক্ত সাধনার তীর্থক্ষেত্র পরিণত হচ্ছে, বৌদ্ধ জৈনদের পুজিত দেবতারা হিন্দু দেবতা হিসাবে পুজিত হতে শুরু হয়েছে। এ দিকে ইসলাম ধর্মলম্বীরা ক্ষমতা দখল করায় হিন্দুরা নতুন এক চ‍্যালেঞ্জের মুখে পরলো।এই সময়  চৈতন্য দেব নতুন যুগের শুরু করলেন। আমদানি করলেন নতুন ধর্ম সংস্কৃতি। তাই  এ বাংলায় রাধা কৃষ্ণ বা জগন্নাথদেবের মন্দির দেখা যায় না যা ৫০০ বছর বা তার বেশী প্রাচীন । চৈতন্যদেবই প্রথম এদেশে প্রেম, ভক্তির সাধনার পথ প্রবর্তন করেন । কিন্তু তখন শাক্ত ,তন্ত্র ছাড়াও বৈষ্ণবও ছিলেন, তাঁদের আরাধ্য দেবতা, চতুর্ভুজ বিষ্ণু ও রঘুবীর অর্থাত রাম । রাধাকৃষ্ণের প্রেম সাধনা বা মধুররসের সাধনা, মহাপ্রভু চৈতন্যদেবই এই অখণ্ড বঙ্গদেশে প্রবর্তন করেন । এবং বলা ভালো জঙ্গলবাসী আদিবাসীদের দেবতা জগন্নাথ, তার প্রভাবই সারা বাংলা তথা ভারতের হিন্দুদের দেবতা পরিনত হলেন। সময়টা বেশ কঠিন ছিলো। মুঘলদের পতণ আসন্ন। বাংলার মানুষ এই সময় কাঠ দিয়ে বিগ্রহ তৈরী করা শুরু করলা। রথ যাত্রা মতো উৎসবকে সর্বজনীন করে তুললো। অসলে মানুষের বিশ্বাস এর উপরে ঈশ্বরে অস্তিত্ব আর বাজার টিকে থাকে তাই চৈতন্য প্রভাবে বৈষ্ণব জনপ্রিয় হলো। আজ তার প্রভাবে সারা বিশ্বে আজ রাধা কৃষ্ণ জনপ্রিয়। অথচ সব হিন্দুর ইষ্ট দেবতা হিসাবে  এনারা পূজা পায় না। পৃথিবীতে বহুদেবতা আছেন যারা এক সময় পূজা পেতে , সময়ের সাথে সাথে মানুষের বিশ্বাস প্রয়োজনও বদলে গেছে তাই তারা  হারিয়ে গেছেন। ইতিহাস প্রচীন সভ‍্যতা গুলো দেখুন প্রকৃতি বিভিন্ন শক্তি  বৃষ্টি জল আগুন পূজা করতো। কিন্তু পরে এরা অচল হতেই একটা শক্তিশালী ঈশ্বর এর আমদানি করা হলো এলো এক ঈশ্বরবাদ। মানুষ তার নিজের সমস্যা তখন নিজেই মিটিয়ে নিয়েছে ফলে ঈশ্বর এর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। তখনই অদৃষ্টবাদের আমদানি হলো। এলো স্বর্গ, জন্নত নিয়ে করবার। মানুষ জীবিত অবস্থায় সুখ দুখে থাকার অধিকার আদায়ের কথা ভুলে গেলো। মৃত্যুর পর সুখের খোঁজে সে মন্দির মসজিদ গীর্জায় ছুটলো প্রার্থনা করতে। পাপ ধুতে ছুটলো তীর্থে হজ্জে। আজ কয়েক শতাব্দীর পরেও ধর্ম রাজার প্রধান অস্ত্র ধর্ম। ইরেজরা এই ধর্মকে ব‍্যবহার দেশটাকে ভাগ করলো। দুখ একটাই তবুও ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশে মানুষের মূল শত্রু দারিদ্র্যতা নয় হিন্দু, মুসলমান , শিখ। তিন দেশেই হঠাৎ করে ক্ষমতায় চলে আসে মাঝে মাঝে সৎজিত রায়ের হীরক রাজা দেশের সেই রাজা যে চায় ধমের নামে ভাষার নামে  তোমার আমার  মগজ ধোলাই করতে। কিন্তু উদয় পন্ডিত কোথায় যে বলবে

 " দড়ি ধরে মারো টান

 রাজা হবে খান খান"....

টাইপ শেষ লেখাটা ইমেইল করে দিলো কলকাতা একটা সংবাদ পত্র । মৌ আমার দিক তাকালো। বললো " ছোট্ট ঠাকুর তোমার কলমে তো এখনো ধার কমে নি। কিন্তু তুমি তো খুব দুষ্টু লোক। ভক্তদের সামনে ইশ্বর নিয়ে কত ভালো কথা বলল অথচ ঈশ্বরকে তুমি মানো না।"

আমি বললাম " একজন লেখক হিসাবে আমি একটি সুস্থ সমাজ গঠনের জন্য দায়বদ্ধ। কোনো ধমকে আমি প্রতিনিধিত্ব করে। অন্ধভক্তদের উত্তেজিত করা আমার কাজ না। অন্যের ধর্মকে গালি দিয়ে আমরা আসল সমস্যাগুলো ভুলে যাই। ঠিক একটা নারী জন্য পুরুষ বিশ্বমিত্ররা যুগ যুগ ধরে তাদের সাধনা মর্গ থেকে বিচ্যুত হয়। তেমন ধর্মের নেশা কোনদিন মানুষকে প্রকৃত সমাজতান্ত্রের স্বাদ নিতে দেবে না। যাইহোক এসব দীর্ঘ আলোচনার বিষয়। তুমি অন্তত বন্ধ ঘরে আমাকে নাম ধরেই ডেকো। ছোট মহারাজ কিংবা ছোট ঠাকুর বলে ডেকো সেটা চাই না।" 

মৌ ছোট্ট উত্তর " ও তাই "।

ওর মুখে চোখে একটা দুষ্টু হাসি খেলে। ও ওর শরীরের জরানো শাড়িটা খুলে ফেললো। স্বামীর ঘর ও বেশি দিন করে নি। এক বছরের মধ্যে বিধবা হলো। ভাইয়েরা দ্বিতীয় বিবাহের চেষ্টা করে নি। আর দায়ভারও নেয়নি। ওর শরীরে যৌবন জোয়ার বয়ে চলছে এখনো। সে জোয়ারে আমাকে ভাসাতে চায় ও আমাকেও। টান টান ওর যৌবন। লোভনীয় গোপন নেশা ও। চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিলো আমার শরীরময়। ওর ঠোঁটের কাছে বন্দী আমার ঠৌট। শরীরময় আমার তীব্র উত্তেজনা। অন্তিম মিলনের আপেক্ষায়। হঠাৎ ওর ছেয়ায় আমি নীলাঞ্জনার আদরটাকে খুজে পেলাম। সেই মিলনের আকাঙ্ক্ষায় ছটফট করা , সেই আঁকড়ে ধরা। 

বছর পাচেক আমাদের সম্পর্কে নেই। তবুও ওকে ভুলতে পারি নি। কোনো মেয়েকে আপন করত পারি নি। অথচ ও আমার বিশ্বাস ভঙ্গ করেছিলো অনায়াসে। আমার বিবাহিত স্ত্রী হয়েও ও শারীরিক সম্পর্ক রেখেছিলো ওর অফিস কলিগের সাথে। ঘটনা জানাজানি হতে ও নিজে থাকে সরে গেছিলো আমার জীবন থেকে। বন্ধুরা বলতো ওকে ঘৃণা করতে শিখতে। কিন্তু চেষ্টা করেও পারি নি। মনে হয়েছে বারবার হয়তো আমি প্রেমে চুক্তিভঙ্গ করেছি। শারীরিক ভাবে অথবা অর্থনৈতিক ভাবে হয়তো ওর অভাব আমি দূরকরতে পারে নি। তাই ও চলে গেছে নিরাপত্তার খোঁজে প্রেমের চুক্তি ভেঙে। দুই চুটকি সিঁদুর দিয়ে পুরুষ কোনোদিন একটি নারীর মালিক হতে পারে না।

একটি নারী জন্য আমি আমার জীবনটা বদলে ফেলাম। অনেক অর্থ উপার্জন করলাম জীবনের সব আনন্দ সব আরাম কেনা মতো পয়সা আয় করলাম। কিন্তু অন্তর থেকে সুখী হতে পারলাম না। তাই ঈশ্বরের সেবা আর মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করলাম।

ওর শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বড়ে গেলো। অন্তিম মিলনের জন্য তৈরী। আমি বাধ সাধলাম ওর ব‍্যকুলতা কাছে হার মানলাম না আমি। ওকে ভুল করের বলে ফেলাম যত টাকা চায় ও পেয়ে যাবে কিন্তু ও জেনে ওর শরীরের মায়া জালে না ফাঁসায়।

ও বললো " শরীর বিক্রি করবো যদি আশ্রম বাসী হলাম কেন? ভালো বেসেছি তোমাকে ছোট ঠাকুর সেটা তুমি বুঝতে পারলে না।"

আমি ওর চোখে জল দেখেছিলাম। আমি ওকে অনেক বেশি আঘাত দিয়েছি। কিন্তু সব কিছু ওকে বোঝানোর আগেই দরজা মেজো গোসাই এসে হাজির। ও কোন ক্রমে কাপড় পরে দরজা খুলো। কোনো কথাই আর বলার সুযোগ পেলাম না আমি।

ও গোটা তিন দিন এলো না আমার ঘরে। স্নান করে নীচে যাবো ঠিক করেছি। এমন সময় বিষ্ণুচরন এসে বললো " গুরু মা আপনাকে ডাকছে তারাতারি। শেঠজীরাও এসেছে আসুন তারাতারি।"

আমি জিজ্ঞাসা করলাম " হঠাৎ কি ব‍্যাপার জরুরি তলব কেন?"

বিষ্ণুচরন বললো " বৈষ্ণব নিন্দা মহাপাপ কিন্তু তবুও বলছি। মেজো গোসাই দুই তিন  ধরে হরিপ্রিয়া দিদির ওপরে কুনজরে দেখছিলো সে বিষয়ে সবার নজরে এসেছে। কাল রাতে হরিপ্রিয়াদির কুঠির গিয়ে জোর জবদ্বস্তি করার চেষ্টা করেছে। ঘটনা জানা জানি হওয়ায় মা উনাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন।"

সবার গুরু মা সম্পর্কে আমার মাসিমা। তাই উনার সিদ্ধান্ত সব সময় আমার পক্ষে যায়। উনি বলেন " মেজো গোসাই যে অপরাধ করেছেন তা ক্ষমার অযোগ্য। তাই মহারাজজী ছোট মহারাজজীর ওপর সব দায়িত্ব হস্তান্তর করতে চায়। এ বিষয়ে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। আর হরি প্রিয়া বিষয় সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।যদিও জানি সব অভিযোগ ভিত্তিহীন তবুও ছোট মহারাজজীকে নিয়ে যখন কথা উঠেছে তখন হরি প্রিয়া রাধা কুন্ডের আশ্রম পাঠানো হোক।"

আমি বললাম " রাধাকুন্ড নিরাপদ নয় হরিপ্রিয়া জন্য। মেজো গোসাইয়ের তো ভক্তদের সংখ্যা কম নয়। ওকে কোলকাতা পাঠানো হোক। কমপিউটারটা উনি ভালোই শিখেছেন। চাকরির পেয়ে যাবেন আমার চেনা জানা প্রকাশনা কিংবা পত্রিকা দপ্তরে। ওখানে থেকে নবদ্বীপে মন্দির বানানোর কাজ তত্ত্বাবধায়ক করবে।"

সবাই আমার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে বিদায় নিলেন। আমি হরিপ্রিয়াকে থাকতে বললাম মাসির ঘরে। আমি মাসিমাকে বললাম " আমার কিছু স্বীকারোক্তি আছে , সে গুলো আমি বলতে চাই।"

গুরু মা বলেন " হরি প্রিয়া আমাকে সব কিছু বলেছে। আমি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সব গুরু মা হিসাবে। তোমার সিদ্ধান্ত কোন ছল কপটতা আছে কিনা আমার জানা নেই তবে। পৃথিবীর প্রাচীন মহাকাব‍্য গুলো দেখো। সব ক্ষমতা দখলের লড়াই। কিন্তু দোষ হয় নারীদের। দেখানো হয় এমন ভাবে যেনো একটি নারী জন্য লড়াই গুলো হয়েছে। আমার বিশ্বাস কোনো নারীকে তুমি ঠকাতে পারো না। তাই কথা না বাড়িয়ে বিশ্রাম করো। আর মন্থন বাবা হরিপ্রিয়া আজ থেকে তোমার নিচের ঘরে থাকুক তোমার দেখা শোনার জন্য তো লোক দরকার।"

রাত একটু গভীর সবাই বোধহয় ঘুমিয়ে পরেছে। হরিপ্রিয়া আমার ঘরে এলো। খুব আসতে আসতে বলল " আমাকে দূরে পাঠানোর এতো তার কেন?"

আমি বললাম " দূরে কোথায়? পাঠাছি তো আমার শহরে। হতে পরে মনের ভিতরে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখছি আমিও। দেখি বিধাতা কি চায়। তুমি নিরাপত্তা খুঁজছো না ভালোবাসা খুঁজছো সেটা দেখার। আসলে নীলাঞ্জনার আঘাতের ক্ষত শোকাইনি এখনো। "

ও আমাকে জরিয়ে ধরলো। ওর চোখে জল। নীলাঞ্জনার চোখেও একদিন আমার জন্য জল থাকতো এখন আছে শুধু ঘৃণা।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract