চোর
চোর
একটা জায়গায় অনেকদিন ধরে চুরি চলছে। কিন্তু চোরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দিনের পর দিন চুরির কমপ্লেন আসছিল। তাও কোন ইশারা পাওয়া যাচ্ছিল না যে কে চুরি করছে।
সবকিছু শুনে পুলিশ হেড অফিসার চটে বোম হয়ে গিয়ে বলে--" তোমরা এতবড় অপদার্থ যে একটা চোরকে ধরতে পারছ না?? কি করতে পুলিশের এই পোশাক পড়েছ তাহলে? শুধু দেখাতে আমি পুলিশ??"
এসিসটেন্ট অফিসার --" কিন্তু স্যার আমরা প্রচন্ড তল্লাশি করেছি,, কিন্তু চোরটা কে বুঝতে পারছি না। আর ওখানে কোন সি সি টি ভি ক্যামেরাও নেই। "
হেড অফিসার-- " জাস্ট ষাট আপ!! একটা চোরকে ধরতে সি সি টি ভি ক্যামেরা লাগবে?? এতো তল্লাশি করেছ যে একটা চোরকে ধরতে পারনি।গোবরগনেশ।
চোরটাকে যদি না ধরতে পাড়,, তাহলে তোমার সম্মানটা কোথায় যাবে একবারও ভেবে দেখেছ?? কোথায় চুরি হচ্ছে স্পষ্ট করে "
এসিসটেন্ট অফিসার--" স্যার, কালীঘাট শ্মশানের কাছে।"
হেড অফিসার--" What??? শ্মশানের কাছে?? এর মানে রাত্রি বেলা হচ্ছে,, যাতে মানুষ দেখতে না পায় চোরটাকে।
এক্ষুনি কিছু অফিসারকে ওখানে আজ বিকেল থেকে রাত অব্দি থাকতে বল,, কিন্তু সাধারণ জামা পড়ে।"
এসিসটেন্ট অফিসার-- " তোমাদের তিনজনকে ওই শ্মশানের কাছে থাকতে হবে কিছুদিন। "
সেই তিনজন পুলিশ ঢোক গিলতে গিলতে বলে-- স্যার,,, এই শীতের রাতে শ্মশানের কাছ কি করে বসব? আমাদের তো হার হিম হয়ে যাবে।"
এসিসটেন্ট অফিসার--" তাহলে এক কাজ কর, হাতে চুরি পড়ে ঘরে বসে থাক। তোমাদের জন্যই আমার নাম বদনাম হচ্ছে। হর্ষবোর্ধন গোবর্ধন এর মতন ভুতের ভয় না পেয়ে চোরকে খোঁজ। "
তিনজন পুলিশ অফিসারকে ওখানে পাঠান হয়।
রাতের দিকে তিনজন ই বলতে থাকে " ভুত আমার পুত, পেতনী আমার ঝি,, রাম লক্ষণ বুকে আছে, ভয়টি আমার কি।"
একদিন হেড অফিসারের কাছে ফোন আসে-- " স্যার চোরটাকে পেয়েছি। আপনি তারাতারি আসুন। "
চোর দুটোকে ধরে পুলিশ স্টেশনে ঢোকান হয়।
হেড অফিসার চটে বোম হয়ে চোরের মুখে একটা থাপ্পড় মারে।
হেড অফিসার --" কি ভেবেছিলিস তুই? খালি চুরি করবি আর আমরা কেউ জানতে পারব না?? লোকের জিনিস, লোকের টাকা চুরি করে কি আনন্দ পাস?? নিজের পায়ে দাড়িয়ে টাকা কামাতে পারিস না?? পড়াশোনা না করে চাকরি পায়না বলে লোকের থেকে টাকা চুরি করে। জঘন্য। "
পুরুষ চোর--" স্যার, আমি পড়াশোনা করেছি। আমি শিক্ষিত। "
হেড অফিসার--" কি শিখেছিস?? চুরি কি করে করতে হয়?? ফাইজলামি মারছে,, শয়তান। "
চোর--" স্যার আমি ইংলিশে মাস্টার্স পড়েছি। "
হেড অফিসার আর সকল পুলিশ চোরের কথাটা শুনে হাসতে থাকে।
--" শুনলি কি বলল?? ইংলিশে মাস্টার্স পড়েছে। আর কত মিথ্যে বলবি?? ধরা পড়ে গেছে বলে নাটক করছে। ওর বাড়িতে গিয়ে লোকের যা জিনিস পাবে নিয়ে আন। তোদের কাজ দেখেই বোঝা যায় কাউকে বোকার মতন বিশ্বাস করে নিজের ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, এটিএম এর নাম্বার দেওয়া কত বড় ভুল। কিন্তু সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে নেয়।"
এসিসটেন্ট অফিসারকে চুপচাপ ভাবে আসতে দেখে হেড অফিসারের অবাক লাগে।
--" এরম ভ্যাবাচ্যকার মতন কি দেখছে??"
--" স্যার ও সত্যিই ইংলিশে মাস্টার্স পড়েছে, এমনকি ও পড়াশোনায় ও ভাল। ওর রেজাল্ট পেলাম। "
--" তোমায় কি আমি ওর বাড়িতে ওর রেজাল্ট দেখতে বলেছিলাম? এক্সামিনারের দায়িত্ব দিয়েছিলাম??"
--" স্যার নিয়ে এনেছি লোকের জিনিস। এই নিন।"
--" কোথায় রেজাল্ট?? আমায় দাও। "
চোরের রেজাল্ট, সার্টিফিকেট দেখে হেড অফিসারের চক্ষু চরক গাছে উঠে গেছিল।
হেড অফিসার--" তুমি কলেজে ইলিশের প্রফেসর ছিলে?? এই যাও তো গিয়ে খোঁজ নাও তো ও সত্যিই এই কলেজের প্রফেসর ছিল কিনা।"
খোঁজ নিয়ে এসে, এসিসটেন্ট অফিসার বলে--" হ্যা স্যার,,, ও কলেজের প্রফেসর ছিল। তবে অনেকদিন আগে ছেড়ে দিয়েছে পড়ানো। "
--" What??? কি বলছ?? চোরটা প্রফেসর?? এ হয় নাকি?"
চোর--" বিশ্বাস করলেন না তো আমি শিক্ষিত। "
হেড অফিসার--" একজন প্রফেসর হয়ে তুমি চুরি কর?? চাকরী ছেড়ে দিয়েছ কেন এইভাবে??"
চোর--" কারণ স্যার, কলেজে একজন প্রফেসরের উন্নতি হলে বাকি প্রফেসর সহ্য করতে পারে না। তাই তিরস্কার করত, আর পলিটিক্সে তো ভর্তি। হাজার ও কাজ করলে ভাল সম্মান পাওয়া যায় না। ওদিকে মাইনে কমিয়ে দিয়েছে করোনা রোগের জন্য স্টুডেন্ট খুব কম আসছে বলে,, কিন্তু খাটিয়ে শেষ করে দেয়।
আমার একদিন একটা চোরের সাথে দেখা হয়। দেখলাম চুরি করে যতটুকু পেয়েছে, বেশ আনন্দেতেই আছে। চিন্তা, অপমান ওর জীবন শেষ করছে না। তখন থেকে আমার চুরি করতেই ইচ্ছা হল। জীবনটা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে। "
হেড অফিসার--" বেশ তো এখন জেলে গিয়ে থাক। pschyo পেশেন্ট।
তবে তোমার কথাটা,,, খুব একটা ভুল ও বলিসনি সত্যিই যতই কাজ করনা কেন, সম্মান আর শান্তি পাওয়া যায় না। কেউ না কেউ জ্বলবেই। "
