STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Inspirational

4  

Manab Mondal

Abstract Inspirational

চলো যাই

চলো যাই

5 mins
385

মৃদু দরজার কড়া নাড়ার শব্দে দুপুরের ভাত ঘুমটা ভেঙে গেল মনির, পুরনো দোতলা বাড়ির একমাত্র বাসিন্দা সে... কাছের মানুষ বলতে একমাত্র মেয়ে রিয়া, সব হতাশার মধ্যে একটা প্রদীপের মতো জ্বলছে।

      রবির হাত ধরে বিয়ে হয়ে এ-বাড়িতে এসেছিলো ও। ও আসার ক-বছরের মধ্যে শ্বশুর- শ্বাশুড়ি ওনাদের একমাত্র সন্তান রবিকে রেখে একবছরের মধ্যে পরপর দুজনে না চলে গেলেন । তখনও সংসারটাকে ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেনি মনি।

     এটা ঝড় উঠেছিল ওদের জীবনে তখন অভিভাবকদের অভাবটা ও বুঝতে পেরেছিলো ভালোই।সব থিতিয়ে গেলে দুজনের সংসার যখন আবার খিলখিলিয়ে উঠছে ফুলের মতো মেয়ে রিয়াকে নিয়ে। ঠিক তখনই রবি ওদের দুজনকে একা ফেলে চলে গেল একটা বাস দূর্ঘটনায় । রিয়া তখন ক্লাস টেন-এ পড়ছে। 

একা এতবড় বাড়িতে মেয়েকে নিয়ে কিভাবে থাকবে ? কিভাবে যে দিন কেটেছে শুধু সে-ই জানে। বাজারের নামী কাপড়ের চালু দোকান দেখাশোনার লোকের অভাবে বিক্রি করে দিলো। কেননা যেখানেই বিশ্বাস করেছে সেখানেই ওকে ঠকতে হয়েছে। দোকান বিক্রি করে সব টাকা ব্যাংকে রেখে দিল, মাসিক সুদের বিনিময়ে। মাসে বেশ ভালো টাকা পায়।

        রিয়াকে পড়াশোনা, নাচ-গান, চারিদিকে চৌখস করেছে মনি। কোথায় কি করলে মেয়ের ভবিষ্যত ভালো হবে, খোঁজ খবর নিয়ে সেখানে ভর্তি করেছে। মাথার ওপর কেউ নেই, একা সবকিছু করতে হয়েছে।

     সংসারে এখন আর কেউ নেই, একার এমনকি খরচ ? তবে বয়স হয়েছে ওষুধের খরচ বেড়েছে। মালতি সকালে এসে রান্না আর কাজ করে চলে যায়, আবার বিকেলে আসে। বাড়ির টুকটাক ফাই-ফরমাস খাটে মালতির ছেলে পল্টু, ও উচ্চমাধ্যমিক দেবে এবার। পল্টুর পড়াশোনার জন্য টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করে মনি। আসলে মালতিকে হাতে রাখতে চায় মনি, টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করে। একা থাকে কখন কি কাজে লাগবে বলা যায়না, নিজের কাছের মানুষ বলতে তো রিয়া, নিজের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করে ভালোই আছে। মায়ের কথা এখন তার খুব কম মনে পড়ে, মনি সেটা ভাবে। প্রায় দিন পার্টি নিয়ে ব্যস্ত থাকে, সেসব পার্টি আবার মাঝরাত কাবার করে শেষ হয়। মনির ওসব পছন্দ না। ওই ছেলেকে বিয়ে করতে অনেক বারণ করেছে। ওর কথা শোনেনি রিয়া , আসলে একটা অজানা কারণে ও ওর মাকে ঘৃণা করে। মাকে ফেলে চলে গ্যাছে একা।

      আগের সব স্মৃতি ভেসে ওঠে মনির চোখে... রিয়া ওকে ছেড়ে একা কোথাও যেতনা, মাঝে মাঝেই জড়িয়ে ধরে আদর করতো, আমার সোনামা বলে গালে চুমু দিতো। সেই মেয়ের এতো পরিবর্তন হবে ভাবিনি মনি। একটা ছোট ভুল বোঝাবুঝির। মনি ভেবেছিল বাকি জীবনটা মেয়েকে নিয়ে কাটাবে, কোথাও যেতে দেবেনা। কিন্তু সেটা হলো কোথায়।

       জোরে জোরে বাইরের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হচ্ছে, তার সাথে দরজা ধাক্কানোর শব্দ। ধড়ফড় করে উঠে বসে মনি, দরজা খুলতেই খুশির হাওয়া এলো…

– "কখন থেকে কড়া নাড়ছি আর দরজায় ধাক্কা দিচ্ছি; খুব ঘুমাচ্ছিলে মনে হচ্ছে…"

– "ওমা, তুই, আমার কি ভাগ্য… এতদিন পর মায়ের কথা মনে পড়লো ?"

– "সরে দাঁড়াও, ট্রলিব্যাগটা ঢোকাতে দাও"

– "ওরে বাবা, এতবড় ব্যাগ নিয়ে তুইতো আগে কোনোদিন আসিস নি ? কিসে এলি রিয়া...মুখটা কেমন শুকনো শুকনো লাগছে ?"

– "আমাদের গাড়ির ড্রাইভার অমলদা নামিয়ে দিয়ে চলে গেল, ওর অন্য কাজ আছে।"

– "ওওও...অমল এতবড় ব্যাগ দিয়ে নামিয়েই চলে গেল ? বাড়ির ভেতরে ঢুকলো না।"

– "এবার দরজায় একটা কলিংবেল লাগাতে হবে, ডেকে ডেকে সাড়া পাওয়া যায় না। তুমি সেই মান্ধাতার আমলেই থেকে গেলে। গরমে দাঁড়িয়ে আমার শরীর হাঁসফাঁস করছে। একটু স্নান করে আসি।"

–" এবার তুই যা বলবি সব করবো , হাতমুখ ধুয়ে বোস।"

    রিয়া ফ্রেশ হয়ে একটা গাউন জড়িয়ে নিয়েছে। রিয়ার পাশে বসে বললো– "তোমার কাছে থাকবো বলে এলাম মা…"

–" খুব ভালো করেছিস, এতদিন পর আমার কথা বুঝেছিস। মা মেয়েতে মিলে আবার আগের মতো থাকবো, মনি হাসিমুখে বললো।"

–" থাকবোই তো, কদিন জমিয়ে তোমার হাতের চিংড়ি মাছ দিয়ে মোচার ঘন্ট, ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে কচুরশাক খাবো...আঃ… কতদিন খাইনি

– কদিন খাবি মানে ?"

–" রূপম সাতদিনের জন্য সিঙ্গাপুর গ্যাছে। এবার ওর সাথে আমি গেলাম না, এর আগে তো দু-দুবার ঘুরে এসেছি। তাছাড়া ও কদিন মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকবে, কোথাও ঘোরা হবেনা। তাই ভাবলাম তোমার কাছে কদিন ঘুরে যায়। আমার শ্বাশুড়ি-মাও বললো – অনেকদিন মায়ের কাছে যাওনা, এখন রূপম নেই, কদিন মায়ের কাছ থেকে আদর খেয়ে এসো।"

     রিয়াকে বড় ট্রলিব্যাগ নিয়ে বাড়ি ঢুকতে দেখে মনির মনে যতটা উচ্ছাস এসেছিল একথা শুনে সব বাতাস বেরিয়ে বেলুনের মতো চুপসে গেল। মনির অবচেতন মন কি তবে চায় মেয়ের সুখের সংসার ভেঙে যাক । কি ভাবছিল ও, ছিঃ- ছিঃ ...ও না মা, মা কি কখনো সন্তানের অকল্যাণ চাইতে পারে ? নাইবা মেয়ে কাছে থাকলো, দূরে থেকেই ভালো থাকুক ও, সুখে থাকুক ওরা দুজন। ওর অবচেতন মনের ভাবনা যেন কখনো পূর্ণ না হয়, তুমি দেখো ঠাকুর, এই বলে নিজের অজান্তে জোড় হাতে ঠাকুরের উদ্দেশ্যে প্রনাম করলো ও।

– "মা, ওমা, তুমি আমার কোনো কথা শুনছো না মনে হচ্ছে, আবার হাত জোড় করে কাকে প্রনাম করছো ?"

মনি হেসে বললো – "তোর সংসার যেন এভাবেই হেসে খেলে ভরিয়ে রাখে ঠাকুর, ঈশ্বরকে প্রার্থনা জানালাম।"

রিয়া মনিকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বললো –"আমার সোনামা, এবার ভাবছি মাঝে মাঝে তোমার কাছে এসে থাকবো।"

   মনির মুখ হাসিতে ভরে উঠলো, চোখে খুশির ঝিলিক। এ সময়টা এ বাড়ির দরজা খোলা থাকে আমার জন্য। রিয়া এসেছে জানতাম না। রিয়া আমার খুব ঘৃণা করে। জানি না কেন? অথচ একটা সময় আমাকে খুব ভালোবাসতো। ওর বাবা আমাকে কিছু টাকা ধার দিয়েছিলো অসময়ে। আসলটা আমি ওর বাবাকে শোধ দিয়ে দিয়েছিলাম। তবু ওদের পরিবারটা যাতে ভেসে না যায় তাই প্রতি মাসে কিছু করে টাকা দিয়ে আসি। রিয়াকে দেখে আমি বললাম " এ মাসের টাকা দিতে এলাম..."

রিয়া হঠাৎ করে বললো " কাকু দাঁড়াও। কত টাকা পেতো বাবা তোমার কাছে? "

আমি আমতা আমতা করতে থাকলাম। ও বললো "কাকু তুমি ঠিক বলেছিলে রূপম বাবা মা আমাদের বিয়েটা মনে নিয়েছিলো কারণ ওরা জানতো বাবা প্রতিটা কানা কড়ি হিসাবে রেখে দিয়েছে। আমি জানি আজ বাবা কোথায় কতো জমি কিনে রেখেছিলো। যে গুলোর মালিক হতেই ওরা আমাকে ওদের বৌ করতে চেয়েছিল। তাই আমি দেখেছি কতো টাকা ধার আছে। আসলে আমি এসেছি তোমাদের জন্য। তুমি মনিকে নিয়ে কয়েক দিন বৃন্দাবন থেকে ঘুরে আসো। আমি এ বাড়ি পাহারা দেবো।"

মনি বলে ওঠলো " উঃ আমি অতো বুড়ো হয়ে গেছি নাকি পাকা বুড়ি। তুই যাবি আমাদের সাথে। মন্দামনি যাবি নিয়ে আমায় তোরা। আমি তো কোন দিন সমুদ্র দেখি নি।,,,, "

চলো না একবার নিজেকে ভালোবাসা তুমি এবার ,,,,


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract