STORYMIRROR

SHUBHAMOY MONDAL

Horror

5.0  

SHUBHAMOY MONDAL

Horror

ছুঁয়ে গেল যে

ছুঁয়ে গেল যে

3 mins
282


ঘটনাটা ঘটেছিল আমার সাথে প্রায় দেড় যুগ আগে। তখন আমরা অনার্স পার্ট-টু পরীক্ষা দেবো। একটা পেপারের দুর্বলতা দূর করার জন্য, স্পেশালি গাইড নিতাম বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনস্টাইন হোস্টেলের বাসিন্দা, এক রিসার্চ স্কলারের থেকে।


হোস্টেলটা বিজ্ঞান কেন্দ্রের ঠিক পরেই রাস্তার বাঁদিকে পড়ে। রাস্তা থেকে অনেকটা ভিতরে গিয়ে বাঁদিকে হোস্টেলটা। একমাত্র ওই হোস্টেলেই একটা গেট এবং গেটকিপার ছিল তখন। দাদা, যিনি পড়াতেন আমাদের, তিনি তাঁর নিজের রিসার্চ এবং পড়াশোনার পর অবসর সময়ে টাইম পাস করার জন্য আমাদের গাইড করতেন। আর সেই টাইমটা ছিল রাত এগারোটা থেকে সাড়ে বারোটা একটা পর্যন্ত!


আমার এক সহপাঠী ও প্রাণের বন্ধুও আমার সঙ্গে ঐ দাদার কাছে পড়তে আসতো, যার বাড়িটা কাছেই টিকরহাটে। সে আমার খুব কাছের বন্ধু, তাই কাকিমা মানে ওর মা স্ট্রিক্ট অর্ডার দিয়েছিলেন- রাতে পড়াশোনার পর যেন আমরা দুজনেই তার বাড়িতে ফিরে যাই। বাকি অন্যান্য সতীর্থরা সেই রাতে হোস্টেলে দাদার ঘরেই থেকে যেত এবং সকালবেলা ওখান থেকেই কলেজ চলে যেত।


বর্ধমান শহরে সম্পর্কে যাঁদের একটু ধারণা আছে, তাঁরা জানেন গোলাপবাগ থেকে টিকরহাট যাওয়ার জন্য সব থেকে সহজ রুট হল- মোহনবাগান মাঠের পাশ দিয়ে গিয়ে বি-এড কলেজের সামনের রাস্তা ধরে সোজা চলে যাওয়া। আমরাও প্রথম রাতে সেই রাস্তাই নিয়েছিলাম। তারপর যা হলো সেদিন, পরবর্তীকালে আর কখনই রাতে ওই রাস্তা ধরে যাওয়ার দুঃসাহস করিনি।


আমার বন্ধুর নাম বিপ্লব, সে তার সাইকেল নিয়ে আসতো। প্রথম রাতে প্রায় দেড়টা নাগাদ আমরা বের হলাম আইনস্টাইন হোস্টেল থেকে। তখন শীতকাল, বাইরে ঠাণ্ডা বেশ ভালই। সে বলল, চল, বিএড কলেজের রাস্তাটা ধরে চটপট সাইকেল চালিয়ে বাড়ি চলে যাই। নর্ম্যালি যতবারই আমি ওদিকে গেছি, অমন সুন্দর পরিবেশের জন্য বরাবরই আমরা পায়ে হেঁটেই গোলাপবাগ থেকে বোরহাট হয়ে ওদের বাড়ি যেতাম।


বিএড কলেজের রাস্তা সম্পর্কে তখনও আমার কোন অভিজ্ঞতা ছিলনা, যদিও দিনের বেলায় অনেকবার ওই পথে যাতায়াত করেছি। বিপ্লব হয়তো কিছু শুনেছিল, কিন্তু সে বিশেষ পাত্তা দেয়নি। যাই হোক আমরা সাইকেলে চড়ে ঐপথ ধরেই ওদের বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।


মোহনবাগান মাঠ পার হয়ে যাওয়া অবধি কোন অসুবিধা হয়নি, তারপর বাঁদিকে ঘুরে ধরলাম সেই বি-এড কলেজের সামনের রাস্তাটা। ঐ এলাকাটা ছিল এমনিই জনবসতিহীন, চারপাশ ভর্তি বড় বড় সব প্রাচীন গাছে। ডানদিকে রাজার আমলের কোন বাড়ির ধ্বংসাবশেষ ঢাকা পড়ে আছে বনজঙ্গল আর বড় বড় গাছের আড়ালে।


দিনের বেলাতেই ঐ পথে যেতে গা ছমছম করে আর তখন তো রাত দেড়টা। বিপ্লবই সাইকেলটা চালাচ্ছে, আমি চেপে আছি সামনের রডে। সেই প্রাচীন বাড়ির ধ্বংসাবশেষের সামনে আমরা পৌঁছাতেই, একটা কনকনানি ঠান্ডা, তীব্র শৈত্য যেন গ্রাস করল আমাদের। যেন একটা বরফ শীতল পূর্ণভেদ্য কোন বস্তু বা ব্যক্তি বা অশরীরী বাধাকে ভেদ করলাম আমরা!


বিপ্লবের হাতদু'টো ঝাঁকুনি দিয়ে কেঁপে উঠলো, আমি সাইকেলের রড থেকে পড়ে যেতে যেতে কোনরকমে হ্যান্ডেলটা ধরে নিজের পতন রোধ করলাম। একটা খস খস আওয়াজ শুনতে পেলাম দু'জনেই, ডানদিক পানে কেউ যেন রাস্তা পার হয়ে ধ্বংসস্তূপের দিকে চলে গেল! তার পায়ের চাপেই যেন, শুকনো পাতায় ঐ খসখস শব্দ উৎপন্ন হচ্ছিল।


সেই রাত ছিল পূর্ণিমার, আকাশের পূর্ণ চাঁদের আলোয় চারপাশ তখন প্রায় দিনের বেলার মতই পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল। সেই অশরীরীর প্রতিটি পদক্ষেপে ওখানে সেই শুকনো পাতার সরণ এবং উৎপন্ন শব্দ আমরা চোখ এবং কান দিয়ে অনুভব করতে পেরেছিলাম। শব্দটা মিলিয়ে যাবার কিছুক্ষণের মধ্যেই হুঁশ ফিরল আমাদের দুজনেরই।


কেউই কোনো কথা বলতে পারলাম না, জাস্ট নিঃশব্দে সে সাইকেলে প্যাডেল করা শুরু করল, আর আমি হ্যান্ডেলটা চেপে ধরে বসে রইলাম। ওই জায়গাটুকু অতিক্রম করতেই বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা আবার স্বাভাবিক মনে হল, পরিবেশ ও যেমন ছিল তেমনই! শুধু শরীরে আমরা দুজন অনুভব করতে পারছিলাম - সেই অশরীরীকে ছুঁয়ে ফেলার তীব্র শৈত্যের কাঁপুনি।


সেই রাতে আমরা ওদের বাড়িতে ফেরার পর, প্রায় নীরবে খাওয়া-দাওয়া সেরে শুতে গিয়েও বহুক্ষণ কথা বলতে পারিনি। শুধু বুঝেছিলাম যে, অস্বস্তিটুকু থেকে দুজনের কেউই তখনও মুক্ত হতে পারিনি। যাক গে, পরদিন স্থির করলাম - দরকার হলে রাজবাড়ী দিয়ে ঘুরে আসব, কিন্তু অত রাতে ওই রাস্তা দিয়ে ফেরা আর নয়। আজ দেড় যুগ পরেও, সেই রাতের ঐ শিহরণ অনুভব করতে পারি স্পষ্ট, এখনও।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror