The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Sonali Basu

Tragedy Inspirational

1  

Sonali Basu

Tragedy Inspirational

ছোট্ট নীড়

ছোট্ট নীড়

7 mins
1.4K


আজ আষাঢ়ের চার মানে জুন মাসের কুড়ি। এর মধ্যে বর্ষা রানীর এসে যাওয়ার কথা পশ্চিমবঙ্গে কিন্তু এখনো আসেনি। কিন্তু জলীয় বাষ্পের কারণে গরম ভীষণ পড়েছে। এই ভ্যাপসা গরমে তিতিবিরক্ত কল্যাণী রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাতের রুটি বানাচ্ছে। তরকারি রান্না হয়ে গেছে শুধু রুটি কটা সেঁকে নিলেই এখান থেকে বেরতে পারবে। রুটি করে সব গুছিয়ে তুলতে তুলতেই কারেন্ট চলে গেলো।


“যাহ্‌, এই গরমে আবার কারেন্ট অফ!”


বিড়বিড় করলো ও তারপর হাতড়ে তাক থেকে মোমবাতি পেড়ে প্রথমে সেটা জ্বালালো। তারপর মোম হাতে নিয়ে চলে এলো ঘরে। ঘরে এসে দেখলো মা ঘুমোচ্ছে। কারেন্ট চলে গিয়ে পাখা যে বন্ধ হয়ে গেছে তাতেও ঘুম ভাঙেনি মায়ের। ও মোমের আলোয় ইমার্জেন্সি আলোটা খুঁজে বার করলো তারপর টেবিলের ওপর রেখে সুইচ টিপে জ্বালালো। ওটা জ্বলে উঠতে মোমটা ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিলো ও। ইমার্জেন্সির উজ্জ্বল আলোর দিকে তাকিয়ে আরেকবার মনে মনে প্রশংসা করলো ও সুকান্ত'র। সুকান্ত ওদের পাড়ার ছেলে বাজারের এক প্রান্তে ছোট ইলেকট্রিক সামগ্রীর দোকান দিয়েছে। দরকার মতো ওই দোকান থেকেই ইলেকট্রিকের জিনিস কিনে নিয়ে আসে। সুকান্ত অবশ্য শুধু জিনিস বেচে না সারায়ও। অবসর সময়ে ফ্যান সারায় ইমার্জেন্সি সারায়। সেদিন মায়ের জন্য ওষুধ আনতে গিয়েছিল যখন তখন কল্যাণী ওর দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল,

"কে ভালো ইমার্জেন্সি সারাতে পারে?"

তখন ওই বলেছিল,

“আমাকে দিয়ে যাবেন দিদি আমি সারিয়ে দেবো।”


হঠাৎ মা একটু কাতরোক্তি করে উঠলো, গরমে নাকি ব্যাথায়, কে জানে! ও টেবিলের কাছ থেকে সরে মায়ের মাথার কাছে বসলো। কপালে হাত দিতেই ছ্যাঁক করে উঠলো, তার মানে জ্বর বেড়েছে। দিব্যি সুস্থসবল মানুষটা পরশু সকালে পুজো শেষে দোতলা থেকে নেমে আসতে গিয়ে কি ভাবে যে পা হড়কে পড়লো, কে জানে! ভাগ্যিস পাড়ায় এক ডাক্তারের বাড়ি আছে। তাই মাকে কোনোমতে উঠিয়ে বসিয়ে রেখে ডাক্তারের কাছে দৌড়েছিল ও। এমনিতে ডাক্তারবাবু কারো বাড়ি যান না কিন্তু পরিস্থিতি গম্ভীর বলে এসে দেখে গেছেন। হাড় ভাঙেনি তবে মাথার পেছনে চোট পেয়েছে কোমরে আর শিরদাঁড়াতে। ডাক্তারবাবু ওষুধ লিখে দিয়েছেন সেইমতো খাওয়াতে হবে। ডাক্তার অবশ্য বলেই দিয়েছেন ব্যথার কারণে জ্বর আসতে পারে। কল্যাণী জ্বরের ওষুধ বার করে মাকে কোনমতে খাইয়ে দিলো। এতে না কমলে জলপট্টি দিতে হবে।


মায়ের বিছানা থেকে সরে ও গেলো জানলার পাশে। অল্প অল্প হাওয়া দেওয়া শুরু হয়েছে তাহলে কি বৃষ্টি হবে, ভাবলো ও। হলে ভালো হয়, রাতে তাহলে একটু আরামে ঘুমানো যাবে।

ফোনটা বেজে উঠলো। কল্যাণী উঠে গিয়ে দেখলো ঝুমা করেছে। ও ফোন তুলতে ও বলল,


“কেমন আছ মা?”

“ভালো তবে তোর দিদু ভালো নেই। পরশু সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় কোমরে চোট পেয়েছে”

“সে কি! কি করে হল”

“পা পিছলে পড়ে গিয়েছিল।”

“ডাক্তার কি বলল?”

“আর কি! ওষুধ দিলো বলল সাবধানে রাখবেন, অনেক বয়েস হল তো।”

“তা হল। আমি কাল কলেজ ফেরত যাবো।”

“আসিস, দেখে যাস তোর দিদুকে।”

“আজ রাখছি তাহলে।”


'রাখ' বলার আগেই ঝুমার পাশে থেকে কেউ কিছু বলছে মনে হল ওর। ওপাশ থেকে কি প্রদীপের আওয়াজ শোনা গেলো, মনে তো তাই হল।কিন্তু আর একটু ভালো করে শোনার আগেই লাইন কেটে গেলো। ফোনটা বন্ধ হতেই কানে এলো বৃষ্টির শব্দ। বৃষ্টি নামলো তাহলে! ও জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো, মুহূর্তে ভিজে গেলো হাত।


মনে পড়ে গেলো এক বর্ষা-ভেজা দিনের কথা। কলেজ ফেরত কল্যাণী গিয়েছিল শ্যামবাজারে ওর ছোট মাসির বাড়ি। মাসতুতো বোন সুজাতার বিয়ে ঠিক হয়েছে। ওদের সাথে গল্পগুজব করে যখন উঠলো তখন বিকেলের আলোই মুছে গিয়ে অন্ধকার নেমে এসেছে। খুব তাড়াতাড়িই বৃষ্টি নামবে ঠাণ্ডা বাতাসের চলন সেই আভাসই দিচ্ছে। মাসি অনেক করে বারণ করেছিল কিন্তু ও বারণ না শুনে বেরিয়ে পড়েছিল। মাসির বাড়ি থেকে ট্রাম স্টপ বেশি দূরে নয়।তাই বৃষ্টির কবলে পড়ার আগেই ট্রামে চেপে যেতে পারবে এই আশা ছিল কিন্তু বৃষ্টি ওকে টেক্কা দিয়ে আগেই নামলো। বাধ্য হয়ে ও ছুটে সামনের এক বন্ধ দোকানের শেডের তলায় দাঁড়ালো। বৃষ্টি নেমেছিল বড় বড় ফোঁটায় আর খুব তাড়াতাড়িই জোর বেড়ে গেলো। রাস্তায় থাকুক বা বাড়িতে কল্যাণীর বৃষ্টি পড়া দেখতে খুব ভালো লাগে,সুযোগ পেলে ভিজতেও। ও হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি উপভোগ করছিল এমন সময় একজন দৌড়ে এসে ওর পাশেই দাঁড়ালো। ও মুখ ঘুরিয়ে পুরুষটিকে দেখলো। বৃষ্টিতে প্রায় ভিজেই গেছে তবু রুমাল দিয়ে তাড়াতাড়ি মাথা মুখ মুছছে। ওর তাকিয়ে থাকা দেখে বিড়বিড় করলো,

“গরমে ঘেমে অস্থির হচ্ছিলাম তার ওপর বৃষ্টির জল পড়লো!এবার নির্ঘাত সর্দি হবে।”


কল্যাণী চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। অচেনা মানুষের কথার নাকি স্বগোতক্তির কি উত্তর দেবে? বেশ অনেকক্ষণ পর যখন বৃষ্টি থামলো ওরা দুজনেই এগিয়ে গেলো ট্রাম স্টপের দিকে। কিন্তু ট্রাম আর আসে না, বাসও চোখে পড়ছে না সেরকম, যে দু একটা এলো তাদের গন্তব্য আর ওর গন্তব্যস্থল আলাদা; ওদিকে রাত বাড়ছে। ওই ভদ্রলোক একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন,

“আপনি কোনদিকে যাবেন?”

“ঢাকুরিয়া।”


কল্যাণী একবার তাকিয়ে দেখেছে ভদ্রলোকটি এখনো যাননি তবে এগিয়ে এক ট্যাক্সিওয়ালার সাথে কথা বলছেন। এমন সময় ওই ভদ্রলোক এগিয়ে এসে বললেন,

“যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলবো?”


ও কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে রইলো।


“আমি গরফা যাবো। ট্রাম বা বাসের তো দেখা নেই তাই আমি একটা ট্যাক্সির সাথে কথা বললাম। ও একজন যাত্রী নিয়ে অতদুর যেতে ইচ্ছুক নয়। তা আপনিও তো ঐদিকেই যাবেন যদি আপত্তি না থাকে এক ট্যাক্সিতে যাবেন, তাহলে হয়তো ও যেতে রাজি হবে।”


অচেনা লোকের সাথে রাতে ট্যাক্সিতে যাওয়া উচিত হবে কিনা একবার ভাবলো কল্যাণী। মাসির বাড়িতে ফিরে যাওয়া যায় কিন্তু মা অস্থির হবে বাবা মুখে কিছু না বললেও চিন্তায় পায়চারী করবে। তারপর ভাবলো অত চিন্তা করে লাভ নেই! বরং চলে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ও বলল,

“হ্যাঁ যাবো।”


ট্যাক্সি সঠিক সময়েই পৌঁছে গেলো তার গন্তব্যে। গাড়ি থেকে নামার সময় ওই ভদ্রলোককে ও ধন্যবাদ জানালো।  

বাড়ি এসে সব জানাতে মা বলেছিল,

“নামটা জেনেছিস?”


কল্যাণী মনে মনে জিভ কাটলো, নামটা তো জানাই হয়নি। এরপর আর কি কোনদিন দেখা হবে? বোধহয় ঠাকুরের ইচ্ছেই ছিল তাই আবার দেখা হল ওদের, সুজাতার বিয়েতে গিয়ে। সুজাতার বরের বন্ধু সে, নাম প্রদীপ নাগ। এবার আলাপ পরিচয় হল, গল্পও হল। মাসি একসময় মায়ের কানে কানে বোধহয় কিছু বলেছিল, খেয়াল করেও করেনি কল্যাণী। বিয়ের পর বাড়ি ফিরে মা বাবাকে একটা ভালো পাত্রের কথা জানায়। বাবা এমনিতেই পাত্রের সন্ধানে ঘটক লাগিয়েছিল তাই পাত্রের খবর পেতে তাদেরকে চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ করলো। কিছুদিন পর তারা খবর পাঠালেন তারা মেয়ে দেখতে আসবেন।


এক রবিবার ওরা এলেন। কল্যাণী অবাক হয়ে দেখলো প্রদীপ এসেছে পাত্র হয়ে। লাখ কথা খরচ না করেই বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো। বিয়ের পর কল্যাণীর নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হয়েছিল। সবাই কত খেয়াল রাখছে। ওর মনে হল যে ও বাপেরবাড়িতেই আছে নতুন কোন বাড়িতে আসেনি। মধুচন্দ্রিমায় ওরা গোয়া বেড়াতে গেলো। ওরা বেরিয়ে ফিরে আসার কিছুদিন পর কল্যাণীর বাবা হঠাৎই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। সব পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানা গেলো কিডনির সমস্যা আর তা খুব খারাপ অবস্থায় চলে গেছে। জলের মতো টাকা খরচ করেও বাবাকে ধরে রাখতে পারলো না ও। বাবা মারা যাওয়ার পরই আসল সমস্যা শুরু হল। মা একা হয়ে গেছে তাই কল্যাণী চাইলো মাকে কাছে এনে রাখতে, প্রদীপ রাজি হল। কিন্তু দিন কতক পর ওর শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা আপত্তি করলো। অনেকদিন তো হয়েছে তাই কল্যাণীর মায়ের উচিত বাড়ি ফিরে যাওয়া। ওর মাও থাকতে চাইলো না ঠারেঠোরে বাঁকা কথা শোনার পর। চলে এলো ফিরে ওদের ফাঁকা ঢাকুরিয়ার বাড়িতে। কিন্তু বয়স্ক মানুষ একলা ফাঁকা বাড়িতে থাকে, তাই সমস্যা তৈরি হয়ই আর হলেই কল্যাণী ছুটে আসে মায়ের সাহায্য হবে ভেবে। আর এখান থেকেই শুরু হয় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব। অমিল চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে----একদিন বেরিয়ে আসে বাইরে। কল্যাণী অবাক হয়ে দেখে শ্বশুরবাড়ির সবাই সেই বিষয়ে মতামত দিচ্ছে তাও আবার প্রদীপের পক্ষেই। শেষে ও একদিন প্রদীপকে বলে বসে,


“আমাদের মধ্যে এতটাই দূরত্ব চলে এসেছে যে আমরা এখন দরকার না পড়লে মুখদর্শন করি না, কথা বলা তো দূর অস্ত!এইভাবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না। আমি ফিরে যেতে চাই মায়ের কাছে।”

প্রদীপের উত্তর ছিল,

“একবার বেরিয়ে যখন যাচ্ছ আর ফিরে এসো না।”


তারপর সময়ের নদী দিয়ে কত জল বয়ে গেছে। কল্যাণী ও বাড়ি ছাড়ার সময় গর্ভবতী ছিল, এখানে এসে এক কন্যার জন্ম দিয়েছে, তাকে বড় করেছে। তবে ও ঠিক করেই নিয়েছিল মেয়ে বুঝতে শিখলে তাকে তার বাবার কাছে পাঠিয়ে দেবে। তাই দিয়েছেও।


“উঁ!”

চিন্তার জাল ছিঁড়ে গেলো। মায়ের দিকে তাড়াতাড়ি এলো ও, কপালে হাত দিয়ে দেখল জ্বর কমেছে। কিন্তু কারেন্ট ফিরলো না তাই ও মাকে অল্প একটু দুধ খাইয়ে দিয়ে নিজে রুটি খেয়ে শুয়ে পড়লো।


পরেরদিন বিকেলে মা আগের তুলনায় সুস্থ, কল্যাণী মাকে হরলিক্স খাইয়ে সবে চায়ের কাপে চুমুক দিয়েছে দরজার বেল বাজলো। দরজা খুলেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো ও, সামনে মেয়ে ঝুমা কিন্তু ওর পেছনে, প্রদীপ, যাকে ও আশাই করেনি।


“এসো” বলে দরজা ছেড়ে দাঁড়াতে ওরা ভেতরে এলো। মায়ের ঘরে ওদের নিয়ে গিয়ে বলল,

“মা দেখো তোমাকে দেখতে কে এসেছে!”


মায়ের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ওদের মায়ের সাথে ব্যস্ত রেখে ও পায়ে-পায়ে চলে এলো রান্নাঘরে। এত বছর পর প্রদীপ আবার এ বাড়িতে! কি দিয়ে কি ভাবে আপ্যায়ন করবে বুঝতে পারলো না ও। আপাতত চা বানানো যাক ভেবে চায়ের জল বসালো গ্যাসে।


“একটা কথা বলতে পারি?” ভীষণ চমকে ও তাকালো বক্তার দিকে। প্রদীপ কখন এসে দাঁড়িয়েছে ও বুঝতেই পারেনি। ফ্যাসফ্যাসে স্বরে বলল,

“বলো।”

“আমার অগোছালো জীবনটা আবার গুছিয়ে দেবে?”    


কল্যাণীর কাছে প্রশ্নটা কেমন ধাঁধা মনে হল। প্রদীপ বোধহয় বুঝলো, বলল,

“আমারই সব দোষ। নিজের মন দিয়ে না ভেবে পরের বুদ্ধিতে চলতে গিয়েছিলাম। আমার যা সর্বনাশ হওয়ার হয়েছে কিন্তু বাকি যেটুকু রয়েছে আমি তা সযত্নে সামলে রাখতে চাই। তুমি কি সেই সুযোগটুকু দেবে আমাকে?”

“কিন্তু আমি তো মাকে ফেলে চলে যেতে পারবো না। তবে তুমি চাইলে যে কোন সময় যে কোন দিন চলে আসতে পারো। আমি সাদরে গ্রহণ করবো।”

“শুভস্য শীঘ্রম!"


Rate this content
Log in

More bengali story from Sonali Basu

Similar bengali story from Tragedy