Shwagota Sayeed

Abstract Drama Others

3  

Shwagota Sayeed

Abstract Drama Others

ছেঁড়া ঘুড়ির লাটাই সুতো (২)

ছেঁড়া ঘুড়ির লাটাই সুতো (২)

16 mins
198


প্রথম অংশের পর...

শুভমিতা নিজের মতো বলে গেলো, “এগুলোকে আমি তাও সেভাবে কোনও অফেন্স ধরিনি। মেয়েদের ক্যারিয়ার করা উচিৎ না, আমারও উচিৎ সংসারের ব্যাপারে মনোযোগী হওয়া এখন থেকেই, এই সমস্ত কথাও আমি চুপ করেই শুনেছি... আমাদের কেন ঢাকায় বাড়ি নেই... বাড়ি না থাকলে আমার বিয়ে হবে না এগুলো সবই আমি স্রেফ শুনে গেছি... কিন্তু উনি লিমিট ক্রস করেছিলেন তখন যখন আমার বাবা-মায়ের সম্পর্ক এবং তাঁদের চরিত্র নিয়ে কথা বললেন... আমার বাবা-মা কেন দু’জন দুই দেশে থাকেন এতোদিন ধরে, একথা বলতে বলতে উনি বললেন, ‘দেইখো, আবার ওই দেশে গিয়ে তোমার বাপ না আরেক সংসার পাতে তোমরা যাইতে বেশি দেরী করলে! পুরুষ মানুষ বেশিদিন একা থাকতে দিতে নাই’... আর অন্যদিকে আমার মামা-খালা কয়জন, বাসায় আত্মীয়-স্বজন আসা-যাওয়া করে কিনা এসব জিজ্ঞেস করতে করতে আমার বাবার অবর্তমানে মায়ের বন্ধুবান্ধব কারা কারা আসা-যাওয়া করে একথা জিজ্ঞেস করতেও উনার বাধেনি ... সেদিন আমি আর কথা বাড়তে দেইনি... ফিরে এসেছিলাম... এবং তোকে না জানিয়েই... তবে আসার আগে বলে এসেছিলাম আন্টিকে, আমার বাবা-মায়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং পারিবারিক শিক্ষা, কোনটারই অভাব নেই কোনও দিক দিয়ে... সেই কারণেই উনারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুনামের সাথে কাজ করতে পারছেন... আমার অনেক কিছুই বলার ছিলো আসলে উনাকে রণ... তুই খুব ভালো করেই জানিস, সত্যি কথা, এবং উচিৎ কথা মুখের উপর বলতে আমার বাধে না। সেদিন যে এটুকু বলেই থেমেছিলাম, তার একমাত্র কারণ উনি তোর মা...”

রঞ্জনের গলা খুব মৃদু হয়ে ভেসে এলো প্রিয়ার কানে, “মা তোকে এসব বলেছিলো, মিতা?... কিন্তু কেন?”

এবার যেন শুভমিতার কণ্ঠে ব্যঙ্গ ঝরে পড়তে শুনলো প্রিয়া, “রণ, ঠিক এই প্রশ্নটা তুই করবি জেনেই আমি বলেছি যে কোনও এক্সপ্লেনেশন তুই ডিজার্ভ করিস না... তোর ব্যবসায়িক বুদ্ধি খুব ভালো, হয়তো সেটা পারিবারিক ভাবেই... কিন্তু ব্যবসায়িক সম্পর্কের বাইরে আবেগের যে সম্পর্কগুলো, সেগুলোর ক্ষেত্রে তুই উদাসীন শুধু না... অনেকটাই একচোখো...” থামলো শুভমিতা সামান্য সময়ের জন্য। তারপর বললো, “সেদিনের পর একটা জিনিস আমি খুব ভালো করে টের পেয়েছিলাম, আজকে তোর এই ‘কেন’ শুনে সেটাই আবার মনে হলো... তোকে যেভাবে বড় করা হয়েছে, তাতে তুই মনের দিক থেকে ভালো মানুষ হলেও, অনেকটাই স্বার্থপর হয়ে বড় হয়েছিস... তোর মা জানতেন, তুই যদি জেদ করিস আমার ব্যাপারে, উনি ফেরাতে পারবেন না... তুই যেভাবে হোক তোর ইচ্ছা পূরণ করে ছাড়বিই... সুতরাং উনি সেদিকে না গিয়ে আমাকে বুঝে দিয়েছেন আমার কেন তোর দিকে আগানো উচিৎ না... আরেকটা কথা বলি রণ... মা সবকিছুর উপরে ঠিকই... কিন্তু তিনিও মানুষ... সমস্ত দোষের উপরে কোনও মানুষ উঠতে কখনও পারে না... নিজের মাকে নিঃশর্তে ভালো যেমন বাসা উচিৎ, ঠিক তেমনই... তাঁর দোষ-গুণের ব্যাপারে সম্পূর্ণ অন্ধ হওয়াটাও কোনও কাজের কথা না... আর তাছাড়া তুই এতোটা অবাকই বা হচ্ছিস কেন? মনে করে দ্যাখ... শেষের দিকে আমি যখন আমাদের ভবিষ্যতের কথা বলতাম, জানতে চাইতাম... তুই কিন্তু বারবারই আমাকে উত্তর দিয়েছিস, ‘মা যা চাইবে, তাই হবে...’, ভেবে দ্যাখ... অতোগুলো দিনের সম্পর্কের পরে তুই যদি পুরো বিষয়টাতে কোনও দায়িত্ব না নিয়ে স্রেফ মায়ের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর ছেড়ে দিস, আমার কেমন লাগতে পারে? আজকে সত্যি করে বল তো রণ, আন্টি তোকে আগেই আমার ব্যাপারে উনার আপত্তি জানিয়েছিলো, তাই না? আমার সাথে দেখা হওয়ার আগেই?”

মাথা নিচু করে রঞ্জনের চুপ করে বসে থাকা দেখেই যা বোঝার বোঝা হয়ে গেলো শুভমিতার। আর উত্তর না শুনতে পেয়ে বুঝলো প্রিয়া। কিন্তু তাচ্ছিল্যের যে হাসিটা শুভমিতার ঠোঁট ছুঁয়ে গেলো, সেটা চোখে পড়লো না ওর। শুভমিতা বলে চললো, “ যাই হোক... সেদিন তোদের বাসা থেকে হলে ফিরে আমার নিজের সাথে কিছু বোঝাপড়া করার ছিলো। আর সেটা হতে খুব বেশি সময় লাগে নি। আমার মা অনেক আগে থেকেই আমাকে বলেছেন, তোর আর আমার আপব্রিঙ্গিং যথেষ্ট ভিন্ন... তোর সাথে আমার ম্যাচ করা যথেষ্ট কঠিন হবে... আবেগে মায়ের কথাগুলোকে গুরুত্ব দেই নি সেদিনের আগে... কিন্তু আন্টির সাথে কথা বলার পর আমি বুঝে গেলাম, আমি যেরকম জীবনের স্বপ্ন দেখি, তার সাথে তোর জীবনবোধের কোনও সম্পর্ক নেই আসলে... তোরা টাকা বলতে বুঝিস শুধুই টাকা... জীবনধারণের জন্য এবং জীবনের সব আয়েশ আর সখ পূরণের জন্য যার প্রয়োজন... অথচ আমি জেনে বড় হয়েছি... টাকা উপার্জন করার পদ্ধতিটার গুরুত্ব বেশি উপার্জিত অর্থের চেয়েও... শিক্ষক পরিবারের সন্তান আমি... প্রাচুর্য্যের চাইতে সম্মানের মূল্য অনেক বেশি আমার চোখে... আমি এও বুঝলাম সেদিন যে, তোর সাথে সংসার করলে আমার নিজের স্বাধীন জীবনের আশা ছাড়তে হবে... সংসারবিহীন স্বাধীনের কথা বলছি না... বলছি নিজের পরিচয়ে সমাজে বাঁচার কথা... আমার উচ্চশিক্ষা, চাকরি, এসমস্ত কোনও কিছুই যে তোর ফ্যামিলি এ্যাপ্রুভ করবে না সেটা আমি বুঝেছিলাম... আর সেই সাথে ছিলো তোর উদাসীনতা... ভেবে দেখলাম, তোর যদি আমার প্রতি ইন্টারেস্টই শেষ হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে আর এতো রকম সমস্ত প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করার কি প্রয়োজন আমার!... আর আমি তো শুরু থেকেই জানি, তুই মাম্মা’স বয়... সেটাতে আমার কোনও প্রব্লেম ছিলো না জানিস, রণ? কিন্তু সেটা যদি আমার স্বাধীনতা আর নিজস্বতার জন্য ক্ষতিকারক হয়, সেটা আমার পক্ষে মানা সম্ভব ছিলো না... সেদিনও না... আজও না... অনেক হাজার বার আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করেছি... আমি কি প্রিয়ার মতো জীবনে অভ্যস্ত হতে পারবো কিনা... সেদিন নিজেকে প্রশ্নটা করেছিলাম... আর এখন করেছি প্রিয়ার সাথে তুলনা করে... প্রতিবারই উত্তর এসেছে, না... কখনোই সেটা সম্ভব হতো না... খুব অল্পদিনেই আমি তোদের চাপিয়ে দেয়া একটা ক্যারেক্টার রোল প্লে করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যেতাম... আর তারপরেই শুরু হতো ঝড়... সেকারণেই আমি সেদিন সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম... আর তোকে কিছু জানাই নি... কারণ তুই তো চাইলেই আর আমার মতো হয়ে যেতি না, তাই না? নিজের পরিবারে যা শিখেছিস, তার বাইরে গিয়ে আমার মত করে ভাবতে পারতি? আমার কথাগুলো মানতে পারতি? নিজের মা’কে পরিষ্কার চোখে দেখতে পারতি? পারতি না... তাই খামোখা পানি ঘোলা করিনি...”

অভিমানে, ক্ষোভে চাপা গর্জন করে উঠলো রঞ্জন, “একটাবার আমাকে জিজ্ঞেস না করেই ধরে নিলি আমি মানতে পারবো না?”

হালকা হাসির আওয়াজ পেলো প্রিয়া, শুভমিতার কণ্ঠ বললো, “এখন পারছিস মানতে? নিজের মায়ের কথাগুলো... আমার জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গীগুলো? রণ, তুই ঘাগু ব্যবসায়ী হতে পারিস... কিন্তু এইদিকে খুব কাঁচা... মুখে বলা খুব সহজ যে আমি তোমার সাথে থাকবো, থাকতে পারবো যে কোনও পরিস্থিতিতে... কিন্তু কাজে সেটা যতখানি কম্প্রোমাইজ করা ডিমান্ড করে, সেটার মুখোমুখি হলেও তোর দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাবে... “

রঞ্জনের তড়িৎ জবাব এলো, “কেন? আমি কি সংসার করছি না? প্রিয়ার সাথে?”

নিজের নামটা প্রথমবার শুনেছিলো এই কথোপকথনে শুভমিতার মুখে, চমকেছিলো প্রিয়া, এবার রঞ্জনের মুখে শুনে ও নড়াচড়ার শক্তি হারিয়ে ফেললো। কি পেয়েছে এরা ওকে নিয়ে? শুভমিতার তুলনাটা তাও বুঝেছিলো ও, কিন্তু রঞ্জন? এটা কী বললো ওর স্বামী? প্রাক্তন প্রেমিকার কাছে নিজের কম্প্রোমাইজ করার যোগ্যতার প্রমাণ টানছে ওর সাথে সংসারের উদাহরণ দিয়ে? সংসার?! প্রায় অবশ মস্তিষ্কে ঠিক তখনই ঢুকলো শুভমিতার কঠিন স্বর, “সংসার? সংসার করছিস তুই প্রিয়ার সাথে রণ? ঠিক বলছিস তুই?”

বিস্মিত হবার ক্ষমতা লোপ পেয়েছে প্রিয়ার আরও আগেই, কিন্তু শুভমিতার প্রশ্নে আরও একবার স্তম্ভিত হলো প্রিয়া। ওর প্রশ্ন শুভমিতার ঠোঁটে কেন? হতভম্ব হয়েছে রঞ্জনও, কিন্তু সেটা দেখতে পেলো না প্রিয়া। বলতে শুনলো রঞ্জনকে, “মানে কি? সংসার করছি না? কি বলতে চাস তুই?” কথাটা চ্যালেঞ্জের উদ্দেশ্যে বলা হলেও ওর স্বরে দ্বিধা বেশি প্রকাশ পেলো বলে মনে হলো প্রিয়ার। বিস্ময়ের উপর বিস্ময় নিয়ে ও খেয়াল করলো, অপেক্ষা করছে ও শুভমিতার উত্তরের।

কথা বললো শুভমিতা, “তিন কবুল বলে বিয়ে করলে আর সন্তানের বাবা হলেই প্রমাণ হয় যে সংসার করছিস? সত্যিই রণ... তোকে এবার যত দেখছি তত আমি নিজেই বুঝে পাচ্ছি না আমি আসলে কি ভেবেছিলাম তোকে! এও ভেবে পাচ্ছি না, তুই কি বরাবরই এমনই ছিলি, নাকি বদলে এমন হয়েছিস!...”

রঞ্জনের কণ্ঠে স্পষ্ট বিরক্তি প্রকাশ পেলো এবার, “তুই ঠিক কি বলবি সোজাসুজি বল তো মিতা! এতো ঘোরানো প্যাঁচানো আলাপ আর ভাল্লাগতেসে না আমার...”

শুভমিতার স্বর দৃঢ়, “বেশ... তাই বলছি... তার আগে আমার কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দে তো... বিয়ে করেছিস ৩ বছরের বেশি... প্রিয়ার পছন্দের খাবার কি বলতে পারবি? কোন মাছ বেশি পছন্দ ওর? নাকি মাছের চাইতে মাংস বেশি ভালো লাগে ওর? মুরগী, নাকি বিফ? কোন রঙ ওর সব চাইতে বেশি পছন্দের? বা কোন রঙে ওকে মানায়? কি ধরণের মুভি বা টিভি প্রোগ্রাম দেখতে ও পছন্দ করে? ও কি আরও পড়তে চেয়েছিলো? কার সিদ্ধান্তে পড়া ছেড়েছে? ওর নিজের? ওর কি ক্যারিয়ারের কোনও স্বপ্ন ছিলো?”

আমতা আমতা করে উত্তর দিলো রঞ্জন, “ও তো সবই খায় দেখি... তবে মুরগীটা বোধহয় বেশি পছন্দ করে...রঙের মধ্যে নীল মনে হয়... আর... আর টিভি প্রোগ্রাম বলতে... হিন্দি কিছু? আর…”

শুভমিতা উত্তর দিলো, “ভুল... ও সবই খায় না... ইন ফ্যাক্ট, এ বাসায় আসার আগে ও মাছ খেতোই না... এখানে কাউকে ওর বলারও নেই যে ও কি খেতে পছন্দ করে... ওর পছন্দ অনুযায়ী বাজার করার মতো কেউ নেই এ বাসায় ওর... মুরগী ওর পছন্দ, ঠিক... কিন্তু সেটা ওর পছন্দে তো আর কেনা হয় না! যেদিন হয় সেদিন ও ঠিকমতো কয়েকটা ভাত খেতে পারে বলে তোর চোখে পড়েছে। ও মিষ্টি পছন্দ করে... কিন্তু তুই বা আঙ্কেল, কেউই মিষ্টি পছন্দ করিস না আর আন্টির ডায়াবেটিস... সুতরাং ওর জন্য বাড়ি বয়ে মিষ্টি নিয়ে আসার মতো কেউ নেই... এমনকি মেয়ে পছন্দ করে বলে ওর বাবা এ বাসায় আসার সময় হাত ভরে মিষ্টি আনতেন... তোর মা সেটাও না করে দিয়েছেন এ বাড়িতে মিষ্টি খাওয়ার মতো কেউ নেই বলে... আসলেও কি নেই, রণ? ওর পছন্দের রঙ ম্যাজেন্টা... আর হিন্দি যেকোনো কিছু ওর পছন্দ কথাটা একেবারেই ভুল... ওর পছন্দ থ্রিলার এবং রোমান্টিক মুভি... হিন্দি, বাংলা কিংবা ইংলিশ... ও ভালো নাচ করতো বিয়ের আগে... কবিতা পড়তে এবং আবৃতি করতে ভালবাসে... প্রিয় শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য... ও পড়তে চেয়েছিলো আরও… কিন্তু তোদের বাসা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসার পরে ওর বাপের বাড়ি থেকেই পড়া বন্ধ করে দিয়েছে… আর সেই সিদ্ধান্তটা ছিলো তোর মায়ের…”

আরও কি কি বলে যেতো শুভমিতা কে জানে, থামিয়ে দিলো রঞ্জন, “তু...তুই কিভাবে জানলি এগুলা?”

“আমি কিভাবে জেনেছি সেটা বিষয় না রণ... কথা হচ্ছে তোর সংসার করা নিয়ে... কি কম্প্রোমাইজ করেছিস ওর জন্য একটু ভেবে বলিস তো আমাকে? আমিও শোনার অপেক্ষায় থাকবো... হাতে করে কয়বার ঘরের বাজার করেছিস তুই? ওর পছন্দ-অপছন্দ মাথায় রেখে কবে কি কিনেছিস? আঙ্কেল বাজার করেন... না করলে বাড়ির ড্রাইভার করে... মাসের বাজার আন্টি গিয়ে করে নিয়ে আসেন... তোর বিন্দুমাত্র কোনও ধারণা আছে বাসায় মাসে কত কেজি চাল লাগে? নাই... বিয়ে একটা করে এনে বউটাকে ঘরের কোণায় ফেলে রেখেছিস... কি খায় কি পরে সব তোর মায়ের দায়িত্বে... কিসের সংসার তোর? ঘরের কোন দায়িত্বটা পালন করিস তুই? ব্যবসা দেখিস? খুব ভালো কথা... ব্যবসা তোর... কামাই করা টাকাগুলাও তোর... বউটা কি পাশের বাড়ির যে তোর কোনও হুঁশ করা লাগে না? কোন অধিকারটা দিয়েছিস ওকে? খালি বিজনেস ডীল করতে বাইরে গেলে ফেরার সময় এক সেট গয়না বা ব্রান্ডের ভ্যানিটি ব্যাগ এনে ধরিয়ে দিলে দায়িত্ব শেষ? মেয়েটাকে ওর নিজের পছন্দে কোনদিন একটা কাপড় কিনে দিয়েছিস সাথে নিয়ে গিয়ে? এই এতো বড় তোদের বাড়িতে খাওয়া-পরার কোনও অভাব তো নেই!... কিন্তু ওই মেয়েটাকে… যে কিনা তোর ঔরসজাত সন্তানের মা, তাকে একবেলা যত্ন করে খাওয়ানোর কেউ নেই…”

নিজের ডিফেন্স না থাকায় এবার অফেন্সে গেলো রঞ্জন, “বাহ! আমি এতো বছরে কিছু জানতে পারলাম না তুই এক মাস এসেই আমার বউ সম্পর্কে এতো কিছু জেনে ফেললি! কে বললো তোকে এগুলা?”

“চোখ-কান খোলা থাকলেই এগুলা জানা যায় রণ... বিরক্তিকর কথা বলবি না... এই একমাসে তোর বউ তো দূরের কথা... তোর নিজের মেয়েদের সাথেই তোকে সময় স্পেন্ড করতে দেখি নাই আমি কয়েক মিনিট... টেল মি... দুই মেয়ের একজনেরও ডায়াপার চেঞ্জ করেছিস তুই একবারের জন্যেও? এই জীবনে? বাপ হওয়ার পরে? বউ বাদ, জাস্ট টেল মি দিস... তোর মেয়েদের জীবনে তোর ওদের জন্ম দেয়া ছাড়া এখন পর্যন্ত আর ভূমিকাটা কিসের?”

মরিয়া হয়ে রঞ্জন বলে, “ওদের জন্য প্রিয়া আছে, ওদের ন্যানি আছে, আম্মু আছে! ...”

ওর কথা শেষ করতে না দিয়ে শুভমিতা বলে, “ঠিক... থাকার মধ্যে যেটা নেই সেটা হলো ওদের বাবা... নিজের বাচ্চা নিজে কাঁধে করে ঘুম না পাড়ালে, নিজের হাতে ডায়াপার চেঞ্জ করে না দিলে, বেসুরো সুরে ঘুমের গান না শোনালে আর বানিয়ে বানিয়ে গল্প না শোনালে, ওদের সাথে কথা না বললে, তুই সারাজীবন ওদের জীবনে টাকার জোগানের সোর্স হিসেবে আর শুধু কাগজে কলমে নাম সইয়ের জন্যই রয়ে যাবি রণ... পিতা-সন্তানের বন্ডিং কোনও মুখের কথায় হয় না মনে রাখিস... বাচ্চা নিজের হাতে নিয়ে কচলাতে হয়... ওদের গায়ের গন্ধ নিতে হয়... নিজের হার্টবিটের মতো করে যত্ন নিতে হয় নিজের বাচ্চার... সিরিয়াসলি রণ!... আই কান্ট বিলিভ আমি পাখি পড়ার মতো করে এখন তোকে বাচ্চাকাচ্চার ব্যাপারে জ্ঞান দিচ্ছি... বাট ইউ নোউ হোয়াট!... আই থিঙ্ক ইউ নিড দিস লেসন... তোর মা তোকে শিখিয়ে দিয়েছেন যে বাচ্চাকাচ্চা বড় করা বউয়ের কাজ... তোর পৌরুষ কমে যাবে বাচ্চার কাজ করলে... আর তুইও সেটা শিখে বসে আছিস... লেট মি টেল ইউ সামথিং... তোর সাথে যদি আমার বিয়ে শাদী হতো, তোর দায়িত্বের এই বয়ান আমাকে দিলে, যে বাচ্চার জন্য ওদের মা আছে, ন্যানি আছে... খুনোখুনি হয়ে যেতো রণ! শোকর কর যে আমরা একসাথে হই নাই!... সত্যি করে বল তো... তোর কি আসলেও ইচ্ছাও করে না বউ বাচ্চার সাথে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে?...”

উদ্ভ্রান্তের মতো মাথা নাড়তে বললো রঞ্জন, “জানি না... আমি কিচ্ছু জানি নাহ... আমার কিছুই ভালো লাগে না... প্রিয়া আমার জন্য না! আম্মু জোর করসিলো... তাই বিয়ে করসি... আমার বউ-বাচ্চা কিচ্ছু ভাল্লাগে না! আমি এখনও তোর থেকে বের হতে পারি নাই মিতা! তুই বুঝিস না মিতা? কি করলে বুঝবি তুই?”

অনেক কষ্টে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠা থেকে নিজেকে ঠেকালো প্রিয়া। সত্যটা বোঝার পরেও মেনে নেয়া কি এতোটাই সোজা? আকাশের দিকে তাকিয়ে দুই হাতে নিজের মুখ চেপে ধরে চেষ্টা করছে যাতে গোঙানির আওয়াজ ওদের কান পর্যন্ত না যায়। ঠিক সেই সময় প্রথমবারের মতো শুনলো ঘরের ভেতর ক্ষেপে উঠেছে শুভমিতা, স্বর চড়ে নি, কিন্তু কথাগুলো রূপ নিয়েছে গর্জনে, “ফাজলামো পেয়েছিস রণ? মা বললো আমাকে বিয়ে করা যাবে না, তাই আমার প্রতি আবেগ কমে গেলো। মা বললো প্রিয়াকে বিয়ে কর, বাচ্চা জন্ম দে... দিয়ে ফেললি... এখন আবার প্রিয়া, বাচ্চা কাউকেই ভালো লাগছে না... সেটাও কি মা বলেছে বলেই নাকি?”

শুভমিতার স্বর না চড়লেও রঞ্জনের গলা দিয়ে চিৎকার বেরোলো, “কি আবোলতাবোল বলতিসিস মিতা? সবকিছুর মধ্যে আম্মুকে টানতিসিস কেন?”

সপাটে উত্তর দিলো শুভমিতা, “আমি টানছি না উনাকে... উনি নিজেই ঢুকে বসে আছেন তোর সবকিছুর মধ্যে... তার থেকেও বড় কথা তুই নিজে উনাকে টেনে নিয়ে এসেছিস... উনি বললো আর তুই প্রিয়াকে বিয়ে করলি মানেটা কি? প্রিয়াকে মানুষ মনে হয় না তোর? তোর আমার সাথে ইস্যু ছিলো, তুই আমার সাথেই কি সেগুলো সল্ভ করার চেষ্টা করেছিস? আমি স্বীকার করছি যে আমিই সম্পর্কের ইতি টেনেছি... তুই কি তখন বাধা দিয়েছিলি? আমি দেশ ছাড়ার দিনেও তোকে জানিয়েছিলাম... তুই একটাবারও কি দেখা করতে চেয়েছিলি সেই সময়? চাস নি তো! সম্ভব না বলে দেয়ার পরেও তোর পথ চেয়ে বসে থেকেছি আমি রণ... ভেবেছি তুই আসবি... আসিস নি তো! সব কিছুতে নিজের দায় অন্যের উপর চাপাবি না রণ... একবার আমাকে দোষ দিচ্ছিস, এখন আবার মায়ের উপর দোষ চাপাচ্ছিস... আম্মু জোর করলো!... তুই একটা ৩০ বছর বয়স্ক পুরুষ মানুষ... তোর নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, বিচার-বিবেচনা বলে কিছু নেই? যদি আমিই তোর মনে থাকবো, তাহলে প্রিয়াকে বিয়ে করলি কেন? করলি ভালো কথা... দুই দুইটা বাচ্চা জন্ম দিয়েছিস ওর সাথে... এখন তোর মনে পড়লো যে ওর সাথে তোর যাচ্ছে না? আর যাচ্ছে না মানেটাই বা কি? ওকে চেনার চেষ্টা করেছিস তুই এখন পর্যন্ত? বলে যে দিলি যে প্রিয়া আমার জন্য না! এতোই সোজা সবকিছু?”

চড়া গলাতেই উত্তর দিলো রঞ্জনও, “আমার বউয়ের জন্য এতো দরদ তোর আসছে কোত্থেকে বল তো মিতা? আমি তো এটাই ভেবে পাচ্ছি না যে আমার এক্স-এর আমার ওয়াইফের জন্য এতো পুড়ে কেন? তোর সমস্যাটা কি? তুই কি খালি আমার আর আমার মায়ের দোষ খোঁজার জন্য প্রিয়ার জন্য এতো টান দেখাচ্ছিস? ঘটনাটা কি বল তো?”

রাগের মধ্যেও হেসে ফেললো শুভমিতা। প্রিয়া শুনলো ওর প্রাণখোলা হাসি। ও নিজেও পুরোপুরি বিভ্রান্ত। কি শুনবে বলে আশা করে এসেছিলো সেটা ও জানে না, তবে এতোক্ষণ ধরে যা শুনছে, তার বেশিরভাগটাই ওর কল্পনাতীত। ও এটাও ভেবে পাচ্ছে না যে ওর পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে এতো খবর শুভমিতা কিভাবে পেয়েছে। ওর সাথে আলাপ হয়েছে শুভমিতার, কিন্তু সখ্যতা গড়ে ওঠার পর্যায়ে তো তা যায় নি! তাহলে?

প্রিয়া জানে না যতটা সময় ও শুভমিতার সামনে কাটিয়েছে, ওর অজ্ঞাতে গভীর মনোযোগে শুভমিতা ওকে পর্যবেক্ষণ করেছে, ও টের পায় নি। প্রাক্তনের বর্তমান স্ত্রী বলেই হোক, অল্পবয়সী দুই বাচ্চার মা এক তরুণী বলেই হোক, বা সার্বক্ষণিক ওর চেহারায় লেপ্টে থাকা দুশ্চিন্তা আর সব কিছু নিখুঁতভাবে করবার আপ্রাণ হতাশাকর চেষ্টার কারণেই হোক, অথবা ওর শাশুড়ির আলাপ-অভিযোগ-আক্ষেপ-অবজ্ঞার একটা বিরাট অংশ জুড়ে ও থাকে বলেই হোক, মনোবিজ্ঞানী শুভমিতার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে প্রিয়া। বাড়ির কর্মী, ওর শাশুড়ি, বাচ্চাদের আয়া, রঞ্জন এবং ওর নিজের সাথে নিতান্ত সংক্ষিপ্ত আলাপন থেকে শুভমিতার সামনে ওর ব্যক্তিত্ব, ব্যক্তিজীবন আর ব্যক্তিসত্তার একটা সুস্পষ্ট চিত্র ফুটে উঠতে মোটেও সময় লাগে নি।

হাসিটাকে সংক্ষেপে ছেঁটে ফেললো শুভমিতা। হাসি থামতে শুনলো প্রিয়া, কিন্তু ওর গম্ভীর হয়ে যাওয়া মুখটা দেখতে পেলো না। গভীর দৃষ্টিতে রঞ্জনকে দেখছে শুভমিতা। দেখছে ওর হারিয়ে ফেলা ভালবাসাকে, অন্যের হয়ে যাওয়া মানুষটাকে, কিন্তু সেই সাথে আরও দেখছে সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি না জানা, মনের গভীরে ডুব দিতে না জানা প্রেমিক হতে চাওয়া এবং সাথী হতে না পারা এক পুরুষকে। এই পুরুষ শুধু জলটুকু ছেঁকে নিয়ে স্বচ্ছ জল দেখেই ভেবেছে তেষ্টা মিটবে, সমুদ্রের জলের গভীরে বালু-পাথরের আস্তর ভেদ করে অমূল্য খনিজ তুলে আনতে শেখে নি।

দীর্ঘশ্বাস পড়লো শুভমিতার, “রণ, বিষয়টা দরদের না। যা বলছি সেগুলো সিম্পল অবজারভেশন থেকে বলছি। প্রিয়ার জন্য আমার পোড়ার কিছু নেই। ও কোনদিনও আমার প্রতিদ্বন্দী ছিলো না যে ওকে সুখে দেখলে আমার বুক জ্বলবে, বা এখনও ওর প্রতি আমার কোনও আলগা ভালবাসা জন্মানোরও কোনও কারণ ঘটে নি। আমি যা বলছি, তা সম্পূর্ণ অবজেক্টিভ পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে বলছি। আমি যা দেখছি তা তোর চোখে পড়ছে না, অথবা কোনদিন পড়েনি বলেই দেখানোর চেষ্টা করছি। তোর দোষ ধরারও কোনও ইচ্ছা আমার নেই। কারণ তুই এমনই। এটাই তুই। ১০ বছর আগে তোর অনেক কিছুই ইগ্নোর করতাম, করেছি ইমোশনের কারণে... ১০ বছর পর এখন তোকে দেখছি অনেক ম্যাচিওর চোখে, তাই অনেক কিছুই চাইলেও ওভারলুক করতে পারছি না বলতে পারিস... তবে...”

একটু থামলো শুভমিতা, কি যেন ভাবলো গভীরভাবে, পরের কথাগুলো বলবে কি বলবে না বিবেচনা করলো সূক্ষ্মভাবে, তারপর যেন সিদ্ধান্তে পৌঁছে মুখ খুললো আবার, “তবে আন্টির সম্পর্কে কিছু কথা আমার বলার আছে তোকে। তুই আমাকে কি ভাবলি সেটা যেহেতু আমার না ভাবলেও চলছে, তাই মনে হলো কথাগুলো তোকে বলার দরকার আছে... আমি দোষ দিচ্ছি না উনাকে... কিন্তু উনার একটা স্বভাব সম্পর্কে জানা থাকা দরকার তোর... মানুষকে খুব সূক্ষ্মভাবে অপমান করার একটা টেন্ডেন্সি আছে উনার। এটা তো সেই ১০ বছর আগেই আমি বুঝেছি... এবার যখন উনি নিজে থেকে তোরফোনে কথা বলে আমাকে অনুরোধ করলেন এ বাড়িতে আসার, তখন ভেবেছিলাম হয়তো বয়সের সাথে উনার পরিবর্তন হয়েছে... কিন্তু প্রিয়ার প্রতি উনার ট্রিট্মেন্ট দেখে বুঝলাম, সেদিনের টার্গেট ছিলাম আমি... আর এখন উনার পার্মানেন্ট টার্গেট প্র্যাক্টিসের নিশানা হয়েছে প্রিয়া... প্রিয়া কোনও আলতু ফালতু ঘরের মেয়ে না... কিন্তু স্রেফ তোদের তুলনায় ওরা কম স্বচ্ছল বা কম প্রভাবশালী বলে কথায় কথায় ওর বাপের বাড়ির রেফারেন্স টেনে আনাটা কোনও কাজের কথা না... আর দু’মেয়ে হওয়ার পরে এখন এই যে উনার আফসোস, ছেলের বউ বাছার আগে সব দেখেই বিয়ে দিলেন... শুধু এটা কেন চোখে পড়লো না উনার যে মেয়ের মায়ের ৩টাই মেয়ে... সেই মায়ের মেয়ে হয়ে এই মেয়ের পেটে ছেলে আসবে না এটাই তো স্বাভাবিক...”

আবারও চমকে গেছে প্রিয়া, এই মানুষটা এতো গভীরভাবে এতোকিছু কখন দেখলো! ওর এই চাপা কষ্টের কথা তো কারও সাথে ভাগ করে নি ও! তাহলে?

রঞ্জন এই কথার শুরুতে শুভমিতা ওর মাকে নিয়ে কিছু বলবে শুনেই প্রস্তুত হয়ে ছিলো প্রতিবাদ করবে বলে, কিন্তু যেটা শুভমিতা বললো, তাতে ওর বলার কিছু থাকলো না, কারণ শুভমিতা এ বাড়িতে আসার পর থেকেই মায়ের এই আক্ষেপের বয়ান বেড়ে গেছে। প্রায় প্রতিদিনই চলছে, এবং সেটা শুভমিতার সামনেই। মাথা নিচু করে শুনে চললো ও। শুভমিতা বলছে, “রণ, আরও একটা কথা তোকে বলি... শুনতে ভালো লাগবে না তোর... তবু বলছি... এবার যে আন্টি আমাকে এতোবার বলে কয়ে এনেছেন এখানে... এখানেও উনার একটা উদ্দেশ্য আছে... চমকাস না... আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোটা উনার উদ্দেশ্য যে সংসারী মেয়ে বলতে কি বোঝায়... তার ছেলের বউ কেমন হওয়া উচিৎ, সেটা... একদিকে উনি প্রিয়ার চোখের সামনে তোকে-আমাকে অবাধে মেলামেশা করতে দিয়ে দেখাতে চেয়েছেন যে ওর চাইতে কত যোগ্য মেয়ে উনার ছেলের জন্য অপেক্ষায় ছিলো, এটা ওর উপর একরকম মানসিক চাপ সৃষ্টি করে এ বাড়ির সবাইকে আরও সন্তুষ্ট করে চলার জন্য বাধ্য করা... অন্যদিকে আমাকে দেখাতে চেয়েছেন ঠিক প্রিয়ার মতো লক্ষ্মী, ঘরোয়া মেয়েকেই এই বাড়ির বউ হিসেবে মানায়... আমার মতো উড়নচন্ডী, গবেষণার ফিল্ড ওয়ার্ক করে বেড়ানো, সংসারে যথেষ্ট সময় দিতে না পারা মেয়ে নয়...” আবারও দীর্ঘশ্বাস পড়লো শুভমিতার।

শুভমিতা বলে চললো, “রণ, মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালবাসা থাকবেই... ওটা সম্ভবত প্রকৃতির একমাত্র অনুভব যেটা নির্ভেজাল... কিন্তু তার জন্য অন্য কারও মা’কে অপমান করার অধিকার আমাদের কারও নেই, যতক্ষণ না সঙ্গত কোনও কারণ সামনে আসছে, এটা তো মানবি? আমাকে সেই একদিন ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে উনি যে কথাগুলো বলেছিলেন, আমি সেটা আজও ভুলতে পারি নি। প্রিয়ার কেমন লাগে ভাবতে পারিস? আর একথাগুলি উনি বা তোর আত্মীয়-স্বজন যে কেউ এতো অবলীলায় প্রিয়াকে বলতে পারে কেন জানিস? কারণ তুই ওকে গুরুত্ব দিস না... তোর কাছে যদি উপযুক্ত সম্মান ও পেতো, তাহলে ওকে অসম্মান করে কথা বলার আগে যে কেউ দু’বার ভাবতো, হোক সেটা আন্টি বা তোদের দূর সম্পর্কের মামি-ফুফু... আর তুই? এই আধুনিক যুগের ছেলে হয়ে তুই খুব ভালো করেই জানিস যে সন্তানের জেন্ডার নির্ধারিত হয় পুরুষের দ্বারা... মায়ের মাধ্যমে না... এই মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনা... একটা বারের জন্য শুধরে দেয়ার চেষ্টা করেছিস আন্টিকে? আর এগুলো কি ধরণের কথা? বংশের বাতি হলো ছেলেরা? মেয়ে দিয়ে পোষাবে না? তোদের তিন্নি হয়েছে ৩ মাস হয় নি এখনও... এখুনি ওকে আবার বাচ্চা নেয়ার জন্য প্রিপেয়ারড হতে বলছেন আন্টি... এগুলো কি মানুষের মতো কথাবার্তা? তুই নিজেও কি সমস্ত মানবিকতা থেকে হাত-পা ঝেড়ে ফেলেছিস?”

এতোগুলো কথা একবারে বলে আফসোসে মাথা নেড়ে ডানহাতের আঙুলগুলো দিয়ে কপাল ডললো শুভমিতা। রঞ্জন নিশ্চুপ। মৃদুস্বরে শুভমিতা বললো, “রণ, সত্যি বলছি... তোকে দেখে, তোদের চিন্তাভাবনা দেখে আমার বারবার মনে হচ্ছে, তোর সাথে সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়ে আমি বোধহয় বেঁচে গেছি... কারণ আমার সাথে এসব চলতো না... না আমি এসবে অভ্যস্ত, না আমি এতে কোনদিন অভ্যস্ত হতাম...।“

রঞ্জন এখনও চুপ করেই আছে। শুভমিতার কিছু কথা ওর মস্তিষ্কে ঢুকছে, কিছু কথা মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। ওর শুধু মনে হচ্ছে ও যা জানতে এসেছে, শুভমিতা কিছুতেই সেই বিষয়ের ধারে কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছে না ওকে। বরং বার বার নানা বিরূপ কথা বলে ওকে দূরে ঠেলে দিতেই যেন চাচ্ছে ওর মিতা। রঞ্জন স্তিমিত আর আফসোসে ভরা কণ্ঠে বললো, “তুই… আম্মু… তোরা সবাই শুধু নিজেদের সিদ্ধান্ত, চিন্তাভাবনা, হিসাব-নিকাশ আমার উপর চাপায়েই গেলি… আমার দিকটা কেউ ভাবলি না কোনদিন!”

চলবে...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract