ছেঁড়া ঘুড়ির লাটাই সুতো
ছেঁড়া ঘুড়ির লাটাই সুতো
ছেঁড়া ঘুড়ির লাটাই-সূতো
স্বাগতা সাঈদ
নিজের ঘর থেকেই শুনতে পেলো প্রিয়া, সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে যাচ্ছে শুভমিতা। একটু পরেই শুনলো সেই আওয়াজ অনুসরণ করছে রঞ্জনের পায়ের শব্দ। দু’চোখের কোল উপচে পানি পড়ে চললো প্রিয়ার। কেউ কিছু না বলে দিলেও এই ক’দিনে এটুকু ওর বোঝা হয়ে গেছে এই দু’জনের মধ্যে এমন টান কিসের। নারী সে। স্ত্রী সে। নিজের পুরুষের চোখে অন্য নারীর ছায়া পড়ে নিতে সময় লাগে নি তার।
বনেদী ব্যবসায়ী পরিবারের একমাত্র পুত্রবধূ প্রিয়া। ওর বাবাও ব্যবসায়ী। তবে ওর শ্বশুরবাড়ির মতো রমরমা ব্যবসা নয় ওদের। তিন বোনের মধ্যে বড়, বাবা-মায়ের একান্ত বাধ্যগত প্রিয়ার বিয়ে হয়ে এ বাড়িতে এসেছে ওর যখন ১৭ ছাড়িয়ে মাত্র ১৮ তে পড়েছে তখন। ইন্টারের পর আর পড়াশোনা হয় নি তেমন। বিয়ের পরে তো আর সে প্রশ্নই আসে নি। বিয়ের বছর ঘুরতেই কোলজুড়ে এসেছে প্রথম সন্তান, তুলতুলি। মেয়ের আদরের ডাকনাম সবার মুখে মুখে এটাই দাঁড়িয়ে গেছে। প্রথম সন্তান হিসেবে আদর কম নয় তুলতুলির। কিন্তু পরিবারের উত্তরাধিকার, বংশপ্রদীপের আশায় ওর পরে আজ মাস তিনেক হলো তিন্নি এসেছে কোলে। না, এবারও এই পরিবারকে বংশপ্রদীপ উপহার দিতে পারে নি প্রিয়া। তাই তিন্নির জন্ম তুলতুলির মতো আনন্দের আড়ম্বর নিয়ে আসেনি। মাত্র ২১ বছর বয়সে, বিয়ের ৩ বছরের মাথায় দুই সন্তানের জননী সে। কিন্তু এই দায়িত্ব যে তার ফুরায় নি তা সে তিন্নির জন্মের পরেই টের পেয়েছে। বংশপ্রদীপের আশায় আবারও গর্ভধারণ করতে হবে তাকে। দু’টো ছোট্ট শিশু সামলাতে সামলাতে বিধ্বস্ত প্রিয়ার আতঙ্ক লাগে সেকথা ভাবলেই। কিন্তু পারতে তাকে হবেই! শুভমিতা এ বাড়িতে আসার পর থেকেই ও বুঝে গেছে এখানে টিকতে হলে ওকে আরও অনেক কিছুই পারতে হবে।
শুভমিতা আমেরিকা থেকে এ বাড়িতে এসে উঠেছে মাস দুয়েক থাকবে বলে। আমেরিকাতে পিএইচডি করছে ও। দেশে এসেছে ডাটা কালেকশনের কাজে। কাজ শেষ হলে ফিরে যাবে আবার। ওর মা-বাবা থাকেন আমেরিকাতেই। দু’জনেই ওখানকার দু’টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় আছেন। চাচারা সকলেই আমেরিকাতেই স্থায়ী। দেশে আছেন শুধুমাত্র এক খালা। কিন্তু তিনি থাকেন রংপুরে। ওদিকে ওর ডাটা কালেকশনের কাজ মূলত ঢাকায়। তাই রংপুরে থাকার দিনগুলো ছাড়া এ বাসাতেই ওর থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। ওর পরিচয়, ও রঞ্জনের প্রিয় বন্ধু।
কলেজ জীবনে একসাথে পড়াশোনা করেছে রঞ্জন আর শুভমিতা। পরে রঞ্জন ভর্তি হয় ঢাকার এক স্বনামধন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে, আর শুভমিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুভমিতার বাবা তখন আমেরিকাতে, পিএইচডি আর পোস্ট-ডক্টরেট ডিগ্রী শেষে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। স্ত্রী আর মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কিছু জটিলতার কারণে সেটা আর শুভমিতার ইন্টার শেষ হওয়ার পরপর হয়ে উঠলো না। ও এখানেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গেলো। ওর মা নিজেও ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষিকা। শুভমিতার যখন ৭-৮ বছর বয়স, তখন তিনি পিএইচডি শেষ করে এসেছেন। তখন তিনিও পোস্ট-ডক্টরেট করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিলেন, সেই সাথে চেষ্টা ছিলো যাতে স্বামীর কাছাকাছিই কোথাও যেতে পারেন, আর শুভমিতা গ্র্যাজুয়েশন আর পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশন তাহলে বাহিরের বিশ্ববিদ্যালয়েই করতে পারবে। সুযোগ যখন হলো তখন শুভমিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বছর পার করে ফেলেছে। শুভমিতাকে তাও ওর মা-বাবা বলেছিলেন গ্রেড ট্রান্সফার করে চলে যেতে উনাদের সাথে। কিন্তু রাজী হয়নি শুভমিতা। রঞ্জনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলো যে তখন! মাকে রওনা করিয়ে দিয়ে হলে উঠে গেলো ও, কথা হলো যে মাস্টার্স্টা দেশের বাইরে গিয়েই করবে। মাস্টার্স ও পরে ঠিকই মা-বাবার কাছে গিয়েই করেছে, কিন্তু ওর আর রঞ্জনের সম্পর্কটা আর বিয়ের পরিণতিতে গড়ায় নি।
এর কোনকিছুই প্রিয়ার জানা ছিলো না। জানলো শুভমিতা এ বাসায় আসারও প্রায় মাস খানেক পরে। দু’দিন আগে ওর এক ননদ, রঞ্জনের ফুফাতো বোন এসেছে এ বাড়িতে বেড়াতে। সম্পর্কে ননদ হলেও, রুখসানার বয়স প্রিয়ার চাইতে বেশি। রুখসানা বাসায় এসে শুভমিতাকে দেখেই কেমন চমকে গিয়েছিলো। পরে প্রিয়াকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বলেছে রঞ্জন আর শুভমিতাকে চোখে চোখে রাখতে। দুজনকে যেন আলাদা বেশি না ছাড়ে তাই বললো। প্রিয়া এমনিতে ভীষণ মুখচোরা। কিন্তু কিছুদিন থেকে যে সন্দেহটা ওকে তাড়া করে বেড়াচ্ছিলো, রুখসানার কথাগুলো যেন তাতে ঘি ঢাললো। চেপে ধরাতে রুখসানা খুলে বললো রঞ্জন আর শুভমিতার প্রেমের কথা। তবে ওদের সম্পর্কটা টেকেনি কেন সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু বলতে পারলো না রুখসানা। মুখ বাঁকিয়ে শুধু একটা ধারণার কথা বললো নিজের, “কি জানি! বোধহয় মামী পছন্দ করতো না ওরে! আমাদের ফ্যামিলি দেখতেসো না? ওই মেয়ের ফ্যামিলি কি আমাদের সাথে যায় নাকি? খালি শিক্ষাদীক্ষা থাকলেই হয়? পকেটে টাকাও থাকা লাগে... তোমাদের তো তাও ঢাকায় বাড়ি গাড়ি আছে... ওর মা-বাপের শুনছি তাও নাই... আর দ্যাখো! এতো বয়স হইসে, এখনও সংসার করার নাম নাই... পড়ালেখার নামে ঘুরে বেড়াইতেসে... যত্তোসব।...”
রঞ্জনের বয়স ৩২। শুভমিতা রঞ্জনের সমবয়সী। রুখসানার বলা কথা প্রিয়া বুঝলো ঠিকই, সাথে এটাও বুঝে নিলো শুভমিতা বিয়ে করেনি রঞ্জনের কারণেই। ও আসার পর থেকে রঞ্জনের যে যত্ন দেখছে শুভমিতার প্রতি, প্রিয়া মনে করতে পারলো না এতো যত্ন কোনও ও পেয়েছে কিনা ওর স্বামীর কাছে। শুভমিতা কখনও বাইরে যাবে, কোথায় যাবে, গাড়ি লাগবে কিনা, রঞ্জন যাবে কিনা সাথে, কি খাবে, কখন খাবে, চা পাঠাতে হবে কিনা ওর ঘরে, আরও কত কি!আর রুখসানা বললো ঠিকই যে রঞ্জনের মা পছন্দ করেননি শুভমিতাকে, কিন্তু সেটা নিয়েও দ্বিধা আছে প্রিয়ার। আসার পর থেকে শুভমিতার প্রতি ওর শাশুড়ি চরম মিষ্টি ব্যবহার করে যাচ্ছেন। এতো মিষ্টিস্বরে কখনও তো বাড়ির বউয়ের সাথে কথা বলেন না উনি!
একটা ব্যাপার অবশ্য খেয়াল করেছে প্রিয়া। শুভমিতাকে এ বাড়িতে জোর করে এনেছে রঞ্জনই। আসার পরেও বেশ কয়েকবার ও শুভমিতাকে বলতে শুনেছে হোটেলে উঠে যাওয়ার কথা। রঞ্জন তো সেকথা কানেই তোলে না, আর ওর শাশুড়িও এখন সেকথা শুনলে একদম হাঁহাঁ করে ওঠেন। তবে শতবার বলার পরেও শুভমিতাকে এই বিশাল ডুপ্লেক্স বাড়ির ৮টা বেডরুমের কোনটাতে থাকতে রাজী করানো যায় নি। বাড়ির ছাদে একটা চিলেকোঠার ঘর আছে বেশ বড়ই, বাথরুমও আছে সাথে, ও এ বাড়িতে থাকতে রাজী হয়েছে ওই ঘরটাতে থাকার শর্তে। বলেছে, “আমি রাত জেগে লেখার কাজ করি, চা-কফি খাই, মাঝে মাঝে গান শুনি। আমার ঘরে আলো জ্বলে প্রায় সারা রাত। আমার জন্য ওই ঘরটাই পারফেক্ট। ছাদটাও আছে, আমি ইচ্ছামতো হাঁটাহাঁটি করতেও পারবো। আমার নিজের প্রাইভেসীর জন্যেও, আর বাড়ির অন্যদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেকারণেও।“ কারও ওজর আপত্তিই যখন টেকেনি, তখন রঞ্জন পুরো নতুন আসবাব কিনে ঘরটা সাজিয়ে দিয়েছে শুভমিতার জন্য। বাথরুমটা টুকটাক সারাই করে সারিয়ে দিয়েছে, একটা বাথটাব বসিয়ে দিয়েছে।
শুরুর দিকে এসব দেখে খুব অবাক হয়েছিলো প্রিয়া। ধীরে ধীরে নজরে এসেছে রঞ্জনের চোখের দৃষ্টি। শুভমিতা যখন বাড়ির অন্যদের সাথেও কথা বলে, একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে রঞ্জন ওর দিকে। শুভমিতা না চাইলেও ওর সাথে এক্টুখানি সময় কাটানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে রঞ্জন। আর তারপরেই খেয়াল করেছে প্রিয়া, শুধু ও না, এসমস্তই খেয়াল করেছেন ওর শাশুড়িও, কিন্তু তা স্বত্তেও তিনি নির্বিকার। তাঁর মাথায় কি ঘুরছে তা জানে না প্রিয়া। কিন্তু এই ৩ বছরে যতটুকু চিনেছে উনাকে, তাতে ওর শঙ্কা উদ্বেগে রূপ নিতে সময় নেয়নি। দুই বাচ্চার মা হলেও, মনটা তো সদ্য তরুণীর এখনও প্রিয়ার। এমনিতেও সরল প্রকৃতির সে। সংসারের কলূষতা নষ্ট করতে পারেনি এখনও ওর স্বচ্ছ মনটাকে। সব দেখেশুনে সরল একটা অংক সে করেছে। শুভমিতা ওর চাইতে বয়সে বেশি হলেও ধারালো সুন্দরী, সেই সাথে আছে ওর প্রখর ব্যক্তিত্ব। কথায়, আচার-ব্যবহারে, জ্ঞানে, যে কাউকে আকৃষ্ট করতে সে সক্ষম। তার উপর স্বনির্ভর, সুশিক্ষিত। আমেরিকার পাসপোর্টধারী শুভমিতা যদি আজ রঞ্জনকে সাথে নিয়ে বিদেশের মাটিতেও ঘর বাঁধতে চায়, রঞ্জনের দিক থেকে কোনও বাধা যে আসবে না তা প্রিয়া রঞ্জনকে দেখেই বুঝেছে। আর প্রিয়ার বাধা দেয়ার সেই ক্ষমতা নেই, সেটাও বুঝেছে।
৩ মাস বয়সী তিন্নিকে বুকে নিয়ে চোখের পানিতে বালিশ ভেজাচ্ছিলো প্রিয়া নিজের বেড্রুমে। এবার ঘুমন্ত শিশুটাকে নামিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ালো চোখ মুছে। সহকারী একজনকে বাচ্চাগুলোর কাছে বসতে বলে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। আজ সকাল থেকেই খেয়াল করছে কিছু একটা হয়েছে রঞ্জন আর শুভমিতার মধ্যে। শুভমিতা স্বাভাবিকের চাইতে গম্ভীর। আর রঞ্জনের চোখের দৃষ্টি লাল, কেমন উদ্ভ্রান্ত, উন্মাদ দৃষ্টি। গত রাতে রঞ্জন ঘুমায় নি,ম সেটাও প্রিয়া জানে। সকালে নাশতার টেবিলেই শুভমিতা জানিয়েছে এ বাড়ি ছেড়ে আজ চলে যাবে সে কিছুক্ষণ পরে। ওর কাজ শেষের দিকে, বাকি কয়েকটা দিন হোটেলেই থাকতে চায়। আজ যাবে রংপুর, সেখান থেকে ফিরে হোটেলেই থাকবে যে ক’দিন আছে। রঞ্জনের বাবা-মা জানতে চেয়েছিলেন কেন, এখানে কি অসুবিধা হচ্ছে ওর। শুভমিতা স্পষ্টস্বরে জানিয়ে দিয়েছে, সেটা ওর ব্যক্তিগত ব্যাপার, ওর কাজের সুবিধার্থেই এখানে আর থাকতে পারছে না ও। ওর শাশুড়ি ইনিয়ে বিনিয়ে আরও কিছু বলছিলেন, কিন্তু সেখানে আর থাকেনি প্রিয়া। শুভমিতা চলে যাবে বলে রঞ্জনের অস্থিরতা ওর নজর এড়ায়নি। বাচ্চা রাখার নাম করে পালিয়ে এসেছে টেবিল থেকে নিজের কান্না কাউকে দেখতে দেবে না বলে।
এখন উপরে যাবে ও। যা হয় হোক, আজ ওদের দু’জনের মুখোমুখি হবে ও। প্রায় দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে ছাদের সিঁড়ি দিয়ে ছুটলো প্রিয়া ওপরে। চিলেকোঠায় শুভমিতার ঘরের দরজা খোলা। খোলা দরজা দিয়ে ভেসে আসছে দু’জনের গলার স্বর। সামনাসামনি হতে চাইলেও পা থেমে গেলো প্রিয়ার। দেয়ালের আড়াল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো ও। অন্যায় জেনেও শুনতে লাগলো ওদের কথা। যার জীবন ঝুলে আছে সুতোর উপর, ন্যায়-অন্যায় নিয়ে ভাবার অবকাশ তার হলো না আজ। শুভমিতাকে বলতে শুনলো প্রিয়া, “সেই তখন থেকে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস রণ! কিছু বলবি? না বললে ঘরে যা... আমাকে গোছাতে দে...” কণ্ঠের বিরক্তি ঢাকার কোনও চেষ্টাই ও করছে না।
রঞ্জনের ক্লিষ্ট স্বর কানে আসলো প্রিয়ার, “তুই জানিস না কি বলতে চাই, মিতা?”
দু’চোখের পাতা চেপে বুজলো প্রিয়া। মনে মনে চাইছে শুভমিতা বলুক, “জানি না, জানতে চাইও না।“ কিন্তু ওর আশায় পানি ঢেলে শুভমিতা বললো, “জানি।“
রঞ্জনের গলা কাতর, “তাহলে?”
সদ্য মুছে শুকিয়ে আসা চোখে আবারও ঢল নেমেছে প্রিয়ার। শুনতে লাগলো শুভমিতা বলছে, “তাহলে কি রণ? তোর কি মাথায় সমস্যা নাকি? বিয়ে করেছিস, দু’টো মেয়ে আছে তোর! সব ফেলে আমি আসার পর থেকেই আমার সাথে লেগে আছিস। আমি আসতেই চাইনি তোদের বাসায়! তোর আর বিশেষ করে তোর মায়ের কথা ফেলতে পারলাম না বলে এসেছি! রবিন যে কেন তোকে খবর দিতে গেলো আমার আসার! বলদ একটা... বার বার করে বলে দিয়েছি যেন তোকে না জানায়... কি দরকার ছিলো! দেশে ফিল্ড ওয়ার্কের টাইমটা ফেললাম যাতে কলেজ রি-ইউনিওনটা এ্যাটেন্ড করতে পারি... সেটা যে এরকম ফায়ার ব্যাক করবে তা কে জানতো!... এসব ভালো লাগছে না আমার রণ! যা এখান থেকে!...”
তিক্ততায় বিষিয়ে উঠলো প্রিয়ার মন। রুখসানা আপা ঠিকই বলেছে, এসব মেয়েরা ছেলেদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাতে পারে! এতোগুলো দিন ওর স্বামীর মাথা নষ্ট করে এখন ভান ধরছে যেন কিছুই বোঝে না! এরকম অসম্মান করে স্বামীর সাথে কথা বলার কথা চিন্তাতেও আনতে পারে না প্রিয়া! রঞ্জনের গলা শুনতে পেলো ও, “কি ভালো লাগছে না তোর? কি করেছি আমি? সেই সময়েও তুই কিছু না বলেই চলে গেলি!... এতোদিনের সম্পর্ক শুধুমাত্র সম্ভব না বলে দিলেই হলো? সম্ভব না বলে চলে গেলি! তারপর? সেদিনও কোনও একপ্লেনেশন দিস নাই তুই... আজকেও কিছু না বলেই চলে যাবি? পেয়েছিস কি বারবার?”
প্রিয়া কেঁপে উঠলো, রঞ্জনের রাগ সম্পর্কে ভালোই ধারণা আছে ওর। এমনিতে শান্তশিষ্ট রঞ্জন, কিন্তু রাগলে ওর মা পর্যন্ত ওকে সমঝে, বাবা/আব্বা বলে শান্ত করে। কিন্তু প্রিয়ার অবাক হবার বাকি ছিলো তখনও। রঞ্জনের ক্রুদ্ধ স্বর থামতে না থামতেই শুভমিতার শীতল, ইস্পাত-কঠিন কণ্ঠ ওকে থমকে দিলো, “আওয়াজ নীচে কর রণ! আমাকে তোর বাড়ির লোকজন পাস নি যে গলা চড়াবি আর আমার হাঁটু কেঁপে যাবে... ঠান্ডা মাথায় কথা বলার হলে বল... ভদ্রভাবে কথা বলতে না পারলে যখন পারবি, তখন আসিস কথা বলতে... আমি কেমন মানুষ সে বিষয়ে তোর খুব ভালো ধারণা আছে... আমি তোর খাইও না, পরিও না... পরোয়াও করি না... ওসব জেদ-টেদ আমার সাথে দেখাতে আসিস না...”।
প্রিয়ার বিস্ময় ওর কল্পনারও সীমা ছাড়ালো যখন শুভমিতার এই কণ্ঠে এবং এই কথায় রঞ্জনকে ও চুপ হয়ে যেতে শুনলো, এবং একটু পরে মৃদুকণ্ঠে সে ‘সরি’ বললো শুভমিতাকে। এই ছেলে, যার রাগ সম্পর্কে ওর বিয়ের আগে মেয়ে দেখে পাকা কথা দেয়ানেয়ার সময়েই হাস্যচ্ছলে ওর শাশুড়ি বলেছিলেন, “আমার ছেলের রাগটা একটু বেশি...”, বিয়ের পরে অসংখ্যবার যাকে রেগে ঘরের জিনিসপত্র ভাংচুর করতে দেখেছে, যার রাগের একটা গর্জনেই বাড়ির গৃহকর্মী, ড্রাইভার, এমনকি অফিসের বেতনভুক্ত কর্মচারী পর্যন্ত সকলকে তটস্থ হয়ে যেতে দেখেছে, সেই ছেলে আজকে একটা মেয়ের কঠিন গলার সামান্য ধমকেই নুয়ে পড়লো, এটা চোখের সামনে দেখেও বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছে প্রিয়ার। সেই সাথে বাড়ছে হতাশা, নিজের স্বামীর ওপর এই মেয়ের দখল এবং অধিকারের মাত্রা দেখে।
ও ঘর থেকে গ্লাসে পানি ঢালার আওয়াজ এলো প্রিয়ার কানে। শুভমিতার গলা শোনা গেলো, “পানি খা রণ। মাথা ঠান্ডা কর।“ কিছুক্ষণ চুপচাপ। থম ধরে আছে দুপুর ঘনানো প্রকৃতি, থম ধরে আছে তিন জন মানুষ, ঘরের ভেতর এবং বাহিরে।
শুভমিতার কণ্ঠে ঘোর ভাঙলো প্রিয়ার। কণ্ঠ কিছুটা নরম এখন ওর, “তুই ঠিক কি জানতে চাস রঞ্জন, বল তো আমাকে? আমাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিলো, আমি তা অস্বীকার করি না। কিন্তু আমরা দু’জনেই তো সেই জায়গাটা থেকে সরে এসেছি, তাই না? পুরো ৯-১০ বছর পার করে ফেলেছি দু’জনে। তুই স্থির হয়েছিস, বিয়ে করেছিস, বাচ্চা হয়েছে... আমি আমার জীবন নিয়ে এগিয়ে গেছি... এখানে আসার আগেও তোকে হাজার বার আমি বলেছি যদি একান্তই এ বাড়িতে আমার পা দিতেই হয় তাহলে শুধুমাত্র তোর বন্ধু হিসবেই দেবো! এর বেশি কিছু নয়... আমার দিক থেকে আমি পরিষ্কার... তুই তো তোর কথায় স্থির থাকতে পারছিস না! এতোদিন পরে আবার কি জানতে চাস? কি খুঁড়ে বের করতে চাস, বল তো?”
অবাক প্রিয়া ভাবছে, এ তো ওর নিজেরও প্রশ্ন! এ প্রশ্ন শুভমিতার মুখে কেন? ও কি সত্যিই অভিনয় করছে রঞ্জনের সাথে, নাকি মন থেকে বলছে কথাগুলো? রঞ্জনের উত্তেজিত গলা শুনে আবার সচকিত হলো প্রিয়া, “সবার আগে তুই আমাকে এটা বল মিতা, তুই আমাকে ছেড়ে গেলি কেন... কেন কিছু না বলে চলে গেলি... এক কথাতে একটা সম্পর্ক শেষ করে দেয়া যায়? সম্ভব না বলে চলে গেলি... তারপর? আমি কি কোনও এক্সপ্লেনেশন ডিজার্ভ করি না?”
শুভমিতা জোরে শ্বাস ফেলে বললো, “এক্সপ্লেনেশন ডিজার্ভ আসলে তুই করিস না রণ। কিন্তু সেটার চাইতেও বড় কথা, আমি যখন এতো বছরে কোনও কারণ তোকে দেই নি, তোর বোঝা উচিৎ ছিলো আমি তোকে কিছু বলতে চাচ্ছি না বলেই বলিনি... সব কিছুতে জেদ করা ঠিক না রণ। যাই হোক, জানতে যখন চাচ্ছিস তখন বলি, আমরা যখন অনার্স শেষ করলাম, তখন তুই তো বিজনেসে অলরেডি ঢুকে গেছিস আঙ্কেলের সাথে... কিন্তু তার আগে থেকেই টের পাচ্ছিলাম, তুই আমাকে কিছুটা টেকেন ফর গ্র্যান্টেড ধরে নিয়েছিস... মনে আছে? আমি দেখা করার জন্য কতবার সময় চেয়েছি তোর কাছে? তুই বেশ বিরক্ত হতি তখন... আমি জানি তুই কি বলবি... তখনও তাই বলতি... নতুন কাজে ঢুকেছিস, সময় তো বেশি দিতে হবেই... কিন্তু আমার সেই বয়সটাও বুঝে দ্যাখ! তোর জন্য বাইরের ভার্সিটিতে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমি গ্রেড ট্রান্সফার করে যাই নি... মা-বাবা দু’জন বাইরে... এখানে, এই শহরে একা আমি রয়ে গেলাম... তেমন কোনও আত্মীয় পর্যন্ত ছিলো না... সবটাই তোর জন্য! কিন্তু তখন মনে হচ্ছিলো, তুই আমার স্যাক্রিফাইসের দাম দিচ্ছিস না... তুই ধরেই নিয়েছিস আমি তোর জীবনে আছি, থাকবো...”
শুভমিতার কথার মধ্যেই কথা বললো, রঞ্জন, “তখনও তুই আমাকে এই একই দোষ দিসিস... এখনও তাই দিতেসিস আবার... “
“উঁহু”, রঞ্জনকে থামিয়ে দিলো শুভমিতা, “ভুল বুঝছিস... তখন দোষ দিয়েছিলাম সত্য... এখন দেই না... বরং এখন আমার দেখার দৃষ্টিটাই আলাদা... আচ্ছা সে কথা পরে বলি... যেটা বলছিলাম... তখন দোষ দেয়াটা কি খুব অস্বাভাবিক ছিলো রণ? আমি একা একটা ২০-২১ বছর বয়সী মেয়ে, পুরো শহরে, এমনকি বলা যায় দেশের মধ্যেই স্রেফ তোর টানে, তোকে আপন মনে করে রয়ে গেলাম মা-বাবার সাথে না গিয়ে... হলে থাকি, আমার কি লাগে না লাগে... কি বাজার করি... কোনখান থেকে করি... কি খাই... এই সমস্ত কিছুতে তো আমি সেভাবে অভ্যস্ত ছিলাম না রে রণ! এটা ঠিক আমি তোর উপর ডিপেন্ডেন্টও ছিলাম না ঠিক, কিন্তু তারপরেও, যার জন্য করলাম, তার একটু কেয়ার পেতে তো ইচ্ছা হতো, নাকি? এখনকার কথা আলাদা... ছেলেমানুষী আবেগ থেকে বের হয়ে গেছি আরও আগেই... আরও ছিলো, তোর অবহেলা বা ওই ধরণের উদাসীনতাতে ভীষণ ইনসিকিউরিটিতে ভুগেছিলাম... এখন তোর উপর কোনও রাগ নেই আমার... কিন্তু সেই সময়ের অভিমানটা এখনও ভুলিনি...”
রঞ্জনের বিরক্ত কণ্ঠ শোনা গেলো, “এইটুকুই কারণ? আমাকে ছেড়ে যাওয়ার? ঠিকমতো আমারে বুঝায় বলতি! বললে কি আমি বুঝতাম না কি ভুল বা কি ঠিক আমি করতিসি?”
শুভমিতা শান্ত কণ্ঠে বললো, “বলেছি, রণ, অনেক বলার চেষ্টা করেছি... তুই শুনতেই চাইতি না... আমি নিজে তোর অফিসের কাছাকাছি গিয়ে দেখা করতাম... হল থেকে রান্না করে নিয়ে যেতাম তোর জন্য... কিন্তু তুই ওইটুকু সময়ও আমাকে দিতে চাইতি না... “ বেশ খানিকক্ষণ চুপ থেকে শুভমিতা বললো, “তাছাড়া এইটুকুই সবটা কারণ না...”
রঞ্জন জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে?”
শুভমিতা বললো, “অনার্স লাস্ট ইয়ারে তখন আমি... তোর লাস্ট সেমিস্টার চলে... তুই সেবার পরীক্ষা দিবি না সিদ্ধান্ত নিলি... আমার জোরাজুরিতে বাসায় নিয়ে এসেছিলি, মনে আছে? আন্টির সাথে দেখা করাতে?”
রঞ্জনের উত্তর কানে এলো না প্রিয়ার। হয়তো মাথা নেড়ে উত্তর দিয়েছে, ধরে নিলো ও শুভমিতার পরের কথা থেকে, “তুই আমার জীবনের প্রথম প্রেম রণ... তোর বদলে যাওয়াটা নিতে পারছিলাম না আমি... এর আগেও তোদের বাসায় এসেছি বন্ধুবান্ধব সহ, কিন্তু সেসময় ইনসিকিউরিটি থেকে সেই কারণেই আসতে চেয়েছিলাম... কোনমতেই চাচ্ছিলাম না সম্পর্কটা ভেঙে যাক... চেয়েছিলাম তোর মা-বাবার সাথে পরিচিত হতে আলাদাভাবে... আঙ্কেলকে তো পেলাম না সেদিন বাসায়... তোর মায়ের সাথে কথা বলিয়ে দিলি... আর সেদিনই বেশ কিছু জিনিস পরিষ্কার হয়ে গেলো আমার কাছে...”
রঞ্জনের স্বর চমকানো, “মানে?”
ধীর-শান্ত স্বরে শুভমিতা বলে গেলো, “আন্টি আমাকে সেদিনও খুব আদর করেছিলেন... ভুলিনি আমি... কিন্তু কথায় কথায় কিছু কথাও উনি আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন... টেবিলে নাশতা সাজিয়ে দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তোমার মা তো শুনেছি চাকরিবাকরি নিয়েই থাকে... তা ঘরের রান্নাবান্না করতে টরতে পারে তো? নাকি বুয়ার হাতে খাও তোমরা? তুমি কিনুত রান্নাবান্না শিখবা, মা... ঘরের কাজ না শিখলে ভালো বিয়েশাদী হবে না কিন্তু তোমার... আমার বাবুরে তো আমি দেখেশুনে বিয়ে দিবো... এমন মেয়ে দেখবো যাতে সে সব কিছু পারে... তুমিও দেইখো মেয়ে ওর জন্য, কেমন? মানে একটু ঘরোয়া টাইপ... শিক্ষিত হইলে সমস্যা নাই... কিন্তু তোমার মা’র মতো যেন আবার না হয়...’ উনি হাসতে হাসতেই কথাগুলি বলছিলেন আমাকে, কিন্তু আমার মা’কে নিয়ে ওভাবে বলা কথাগুলি আমার ভালো লাগেনি...”
শুভমিতা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো, কিন্তু কথা বললো রঞ্জন। কিছুটা উত্তেজিত স্বরে বললো, “খারাপ কি বলছে আমার মা, বল? মেয়েদের সংসারী হইতে বলাটা কি খারাপ নাকি?”
প্রিয়া দেখতে পেলো না, কি প্রচন্ড শীতল দৃষ্টিতে রঞ্জনের দিকে চেয়েছে শুভমিতা, আর কিভাবে সেই দৃষ্টির সামনে রঞ্জনের কণ্ঠের জোর মিলিয়ে গেলো। শুভমিতা বললো, “২২ বছরের আমিও সেদিন ঠিক একথাটাই মনে মনে ভেবে নিয়ে উনার করা অপমানটা হজম করেছিলাম রণ, মুরুব্বী মানুষ কোনও উপদেশ দিলে ক্ষতি কিসের, এই ভেবে। কিন্তু করা উচিৎ হয়নি বলে মনে হচ্ছে এখন... নিজের মায়ের দিক টেনে কথা বলার আগে এটা মনে রাখিস, আমার মাও কিন্তু আমার কাছে ‘আমার মা’... সেখানে নেগেটিভ কিছু সহ্য করা আমার পক্ষেও সম্ভব না... করবোও না আমি… আর আমার মা রান্না পারেন কি করেন না, তা উনি কি জানতেন? তুই তো জানতি... আমাদের বাসায় গিয়ে অনেক বার খেয়েছিস, মা নিজের হাতেই বেড়ে খাইয়েছে তোকে... তোর তো না জানার কথা না যে মা রাঁধতে জানে কি জানে না! তাহলে উনি ধরেই নিলেন কেন যে আমার মা সুগৃহিণী না? এর মানে, আইদার তুই উনাকে কিছু জানাস নি আমার পরিবার সম্পর্কে... অর উনি জেনে বুঝেই অন্য ইঙ্গিত দিচ্ছেন ... আর আমার কথা শেষ হয়নি... আরও আছে... “
শুভমিতা থামল, কিন্তু রঞ্জনের কোনও আওয়াজ প্রিয়া পাচ্ছে না। কোনও এক অদ্ভূত কারণে ওর উঁকি দিয়ে দেখতেও ইচ্ছা করছে না ঘরের ভেতর। দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে স্রেফ ওদের কথোপকথন শুনে যাওয়াটাই যেন তখন ওর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। শুভমিতাকে আবার বলতে শুরু করতে শুনলো প্রিয়া, “সেই এক দিনেই উনি কয়েক দফায় আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন তোর জন্য কেমন মেয়ে উনার চাই...এবং আমি যে কোনভাবেই তোর উপযুক্ত না, সেটা... তুই কোথায় ছিলি? তুই বিজনেসের কাজ দেখিয়ে নিজের রুমে ছিলি ল্যাপটপ নিয়ে... যতোক্ষণ সাথে ছিলি, তোর সামনে একটা কথাও উনি বেফাঁস বলেননি... “
রঞ্জন চুপ।
শুভমিতা নিজের মতো বলে গেলো, “এগুলোকে আমি তাও সেভাবে কোনও অফেন্স ধরিনি। মেয়েদের ক্যারিয়ার করা উচিৎ না, আমারও উচিৎ সংসারের ব্যাপারে মনোযোগী হওয়া এখন থেকেই, এই সমস্ত কথাও আমি চুপ করেই শুনেছি... আমাদের কেন ঢাকায় বাড়ি নেই... বাড়ি না থাকলে আমার বিয়ে হবে না এগুলো সবই আমি স্রেফ শুনে গেছি... কিন্তু উনি লিমিট ক্রস করেছিলেন তখন যখন আমার বাবা-মায়ের সম্পর্ক এবং তাঁদের চরিত্র নিয়ে কথা বললেন... আমার বাবা-মা কেন দু’জন দুই দেশে থাকেন এতোদিন ধরে, একথা বলতে বলতে উনি বললেন, ‘দেইখো, আবার ওই দেশে গিয়ে তোমার বাপ না আরেক সংসার পাতে তোমরা যাইতে বেশি দেরী করলে! পুরুষ মানুষ বেশিদিন একা থাকতে দিতে নাই’... আর অন্যদিকে আমার মামা-খালা কয়জন, বাসায় আত্মীয়-স্বজন আসা-যাওয়া করে কিনা এসব জিজ্ঞেস করতে করতে আমার বাবার অবর্তমানে মায়ের বন্ধুবান্ধব কারা কারা আসা-যাওয়া করে একথা জিজ্ঞেস করতেও উনার বাধেনি ... সেদিন আমি আর কথা বাড়তে দেইনি... ফিরে এসেছিলাম... এবং তোকে না জানিয়েই... তবে আসার আগে বলে এসেছিলাম আন্টিকে, আমার বাবা-মায়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং পারিবারিক শিক্ষা, কোনটারই অভাব নেই কোনও দিক দিয়ে... সেই কারণেই উনারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুনামের সাথে কাজ করতে পারছেন... আমার অনেক কিছুই বলার ছিলো আসলে উনাকে রণ... তুই খুব ভালো করেই জানিস, সত্যি কথা, এবং উচিৎ কথা মুখের উপর বলতে আমার বাধে না। সেদিন যে এটুকু বলেই থেমেছিলাম, তার একমাত্র কারণ উনি তোর মা...”
চলবে...
