Susmita Goswami

Abstract Tragedy Inspirational

2.8  

Susmita Goswami

Abstract Tragedy Inspirational

ব্যস্ত !

ব্যস্ত !

9 mins
251


লেখায় : সুস্মিতা গোস্বামী। 

কি ব্যাপার , খুব ব্যস্ত মনে হচ্ছে তোকে ? বলে ওঠে শ্রেয়া। 

পাখি আমতা আমতা করে বলে, আআআআ! না, আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে কি.. 

থাক আর কিছু বলতে হবে না ! এই বলে শ্রেয়া থামিয়ে দেয় পাখির অজুহাত। 

শ্রেয়া মৃদু হেসে বলে , ঠিক আছে তুই তোর কাজ কর আমি রাখলাম কেমন। 

খুব অচেনা লাগে সকলকে শ্রেয়ার । পাখি ; ছোটবেলাকার বন্ধু কিন্তু যতদিন যাচ্ছে তত যেন পাখি পাল্টে গেছে অনেক। সবাই শুধু ব্যস্ত থাকে। কারোর একটু সময় হয় না শ্রেয়া কে দেওয়ার মতো। 

শ্রেয়া কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন করে সুব্রত কে। একবার, দুবার, তিনবার এভাবে মোট আটবার। 

নয়বারের মাথায় রিসিভ। 

শ্রেয়া ভেবেছিল সুব্রত নিশ্চ্য়ই প্রথমে হ্যালো বলে জানাবে তার রিসিভ না করার কারণ। কিন্তু তা হলো না। বরং শ্রেয়াকেই বলতে হলো, হ্যালো ।

--- হুম বলো। সংক্ষিপ্ত উত্তর সুব্রতর। 

---- কি হুম। দেরি কেন হলো ধরতে? 

---- কেন না জানার তো কিছু হয়নি। তোমাকে তো সবটাই বলেছি, আমি ব্যস্ত থাকি। আমার পড়াশোনার সাথে সাথে অনেক অনেক কাজ আছে আর থাকে এবং সেটা ঘরে ও বাইরে দু'জায়গাতেই। তারপরেও জিজ্ঞাসা কেন করছ বুঝতে পারছি না। বেশ অসন্তুষ্ট হয়ে বলে ওঠে সুব্রত। 

শ্রেয়া আপনমনে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে, ওও আচ্ছা, তা তোমার সবসময়তেই কাজ তাইতো? আমার সাথে একটু কথা বলার মতো সময় নেই? 

সুব্রত প্রচন্ড বিরক্তি চেপে বলে, শ্রেয়া তোমার যা বলার তাড়াতাড়ি বলো , আমার কাজ আছে। 

---- আচ্ছা ঠিক আছে তুমি তোমার কাজ করো। দুঃখিত তোমাকে বিরক্ত করার জন্য। 

---- শোনো শ্রেয়া, আর যাই করো না কেন, জাস্ট এই ন্যাকামো গুলো কোরো না, ভীষণ বাজে লাগে। ঠিক আছে আমি রাখছি। 

সুব্রত ফোন টা কেটে দিলে শ্রেয়া ছাদে ঘোরে আর ভাবে দিন কে দিন মানুষ কত পাল্টে যায়। একজন ভালো বন্ধু আর একজন ভালোবাসার মানুষ। 

প্রায় প্রতিটি বন্ধুই তার ব্যস্ত। বন্ধুদের এই ব্যবহার টা প্রথমে খুব আঘাত করত শ্রেয়াকে। কিন্তু সুব্রত আসার পর ওর কাছে এইসব আঘাত আর কিছুই মনে হয় না। আর এখন সুব্রতও সেই একই রকম আঘাত দিচ্ছে! আগের সুব্রতর সাথে এই সুব্রতর কোনো মিল খুঁজে পায়না শ্রেয়া। পুরোনো স্মৃতি গুলো মনে করতেই দুচোখ বেয়ে জল নেমে আসে শ্রেয়ার। ব্যস্ততার অজুহাতে তার হৃদয়টা সবাই খান খান করে দিয়েছে। ব্যস্ততাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে সবাই তাকে কতটা অবহেলা করেছে!! কিন্তু কাউকে আর কোনো অভিযোগ করে না শ্রেয়া। নীরবে সবটা সয়ে যায় সে। কারণ -- অভিযোগ বা অভিমানের মাসুল তাকেই যে দিতে হয়। তাকেই বারবার প্রমাণিত হতে হয় যে দোষটা আসলে তারই। 

সব কথা একে একে মনে পড়ে ।

বাড়ির লোকেরও যেন তার প্রতি অবহেলিত নজর।

তার চেয়ে দু’বছরের ছোট ভাই কে নিয়ে বাড়ির সবাই ব্যস্ত। 

এত বড় পৃথিবী তে খুব একা একা লাগে শ্রেয়ার। 

তার চোখের জল কেউ দেখতে পায় না। চোখ ছলছল যদি কারোর সামনে কোনোকারণে হয়েও যায়, শ্রেয়া বলে - আসলে খুব ফোন ঘাঁটছি তো, তাই চোখে জল এসে গেছে! 

মাও বোঝে না বা হয়ত বুঝেও বুঝতে চায় না। শ্রেয়া চায় না তাই আর কাউকে নতুন করে সবটা বোঝাতে। নিজের মনেই সবটা চেপে রেখে দেবে। কারণ শোনার মতো যে কারোর সময় নেই আর বোঝার মতো কারোর.......!! 

নীরবে চেয়ে নিজের মৃত্যু কামনা করে শ্রেয়া, অনেক বার অনেক ভাবে চেষ্টা করেছে, কিন্তু জীবন তাকে যন্ত্রণা দিতে চায়, তাই সে মরতে পারেনি । সে আসলে সবাইকে খুব ভালোবেসে ফেলে সহজেই। বিশ্বাস করে আর নিজের সবটা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাহায্য করার জন্য। সবাই তাকে নিংড়ে নেয় আর শ্রেয়াও কাউকে ফিরিয়ে দেয় না। 

বাড়ি হোক বা বন্ধুমহলে, কারোর মন খারাপ ; এক বাক্যে শ্রেয়া হাজির বা ফোন আর মন খারাপ কে ভালো করা। 

কেউ কষ্টে আছে; শ্রেয়া যতক্ষণ না ঠিক করতে পারছে ততক্ষণ সে ছাড়বেই না। 

আর সুব্রতর সাথে তো অন্যরকম সম্পর্ক। ওর মনের জোর, মনের সমস্তটা শ্রেয়া জানে। শ্রেয়া সুব্রতর জন্য যা করেছে তা সচরাচর খুব একটা কেউ করে না। শ্রেয়া অবশ্য কখনো তা নিয়ে নিজে ভাবে না বা বলেও না নিজের মুখে। 

 এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে সন্ধ্যা হয়ে যায়। ছাদের পাঁচিলে তবুও বসে থাকে সে। 

বড্ড বকা খেতে ইচ্ছা করছে তার। 

ঠিক তাই হলো।

মা এসে বলে, এত বড় মেয়ে হয়েছিস , সন্ধ্যে টা কে দেবে? সব কি বলে দিতে হবে তোকে!! 

শ্রেয়া চুপচাপ ঘরে গিয়ে সন্ধ্যা বাতি দেয়। পড়তে ইচ্ছে করছে না তার। সারাদিনে তার মেসেজ সবমিলিয়ে পঞ্চাশ টা আর সুব্রতর সংক্ষিপ্ত উত্তর মাত্র ছয় টা। 

কেউ তাকে কিছু পাঠায়নি। সবাই কত ভালো আছে, শ্রেয়া ভাবে ।

ফোনে গান চালালো, ইয়ারফোন নিয়ে। এই গানটাই তার মনটার ক্ষত বোঝে। খুব কষ্ট হচ্ছে তার, কেন হচ্ছে তা অজানা। 

পাখি ফোন করে। 

শ্রেয়ার ঘোর ভাঙে। ফোন টা একটু পরে মানে দুবারের মাথায় ধরবে ভাবল শ্রেয়া।

কিন্তু পাখি মাত্র একবার ফোন করে। শ্রেয়ার খুব রাগ হয় নিজের উপর। কেন সবাই তার সাথে এমন টা করছে? তার অন্যায় কি যে সবাই তাকে এভাবে অমানুষদের মতো উপেক্ষা করছে? সবাই ব্যস্ত, সবাই শুধু ব্যস্ত তাহলে সে নিজে কেন ব্যস্ত থাকতে পারে না? সে নিজে কেন এই একই খারাপ ব্যবহার ফেরত দিতে পারে না?? কেন ?কেন? কেন??? কেন তাকেই তার চোখের জলে রোজ গভীর রাতে বালিশ ভেজাতে হয়? 

সুব্রতর মেসেজ আসে হঠাৎ করে, ওবেলা তোমার সাথে ওভাবে কথা বলা উচিত হয়নি। আই অ্যাম ভেরি সরি। প্লিজ তুমি কিছু মনে কোরো না। শ্রেয়া মেসেজটা পড়ে একটু খুশি হয় কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ে এটা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। প্রতিবার এইরকম করে সুব্রত আর অনেক পরে ইচ্ছে হলে এইরকম একটা মেসেজ করবে অথবা করবে না। 

নিজেকে সামলে নেয় শ্রেয়া। সবাই যখন ব্যস্ত তখন তাকেও ব্যস্ত থাকতে হবে। যেন কেউ তাকে কখনোই ফাঁকা না পায়। 

কিন্তু সব ভাবনাই যে কার্যত হয় তা তো নয়। মনের জোর পাচ্ছে না। সবসময় এইভাবে মনে কষ্ট জমে থাকলে কি করে সে পারবে ব্যস্ত থাকতে? 

নাঃ নিজেকেই নিজের জন্য লড়তে হবে।

কিন্তু কিভাবে? তার মন তো অনেকে মিলে ভেঙে দিচ্ছে। অবহেলা, অপমান, অজুহাত, উপেক্ষা....... 

আর ভালো লাগছে না শ্রেয়ার। 

কিছুতেই মন ঠিক হচ্ছে না। কথা বলা তার কমে গেছে এর ফলে। হাসিটাও আর আসে না। মন ভালো রাখার অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। 

ইতিমধ্যে সুব্রত যেন কথা বলা আরো অনেক কমিয়ে দিয়েছে শ্রেয়ার সাথে। তার ভাল লাগে না শ্রেয়ার তার প্রতি এত চিন্তা, এত খেয়াল, এত নজর , এত জিজ্ঞাসাবাদ। 

কি করছ? কখন খেয়েছ? শরীর ঠিক আছে? --- ইত্যাদি বিরক্তিকর প্রশ্নের উত্তর দিতে সত্যিই আর ভালো লাগে না সুব্রতর। মেয়েটা এমন ভাব করে যেন তাকে ছাড়া সে বাঁচবে না। বাঁচবে না, বাঁচবে না, আমার কি! একবার ফোন করলেই হলো, শুরু হয়ে যায় ন্যাকামি , প্লিজ এরকম কোরো না সুব্রত। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। তোমাকে নিয়ে আমার খুব চিন্তা হয়, ভয় হয়, তোমার ফোন না পেলে দুশ্চিন্তা হয়, খারাপ লাগে, প্লিজ এরকম কোরো না ইত্যাদি ইত্যাদি ন্যাকা ন্যাকা কথা আর তার সাথে কান্না । আসলে সবকিছু হাতের কাছে পেয়ে যায় তো, কুটোটি নেড়ে তো দুটো করে না কি আর বুঝবে সে মেয়ে। নিজের কাজ নেই বলে যেন কারোরই কাজ থাকতে পারে না, যত্তসব! 

এই জন্য সুব্রত এখন আরো কম করে দিয়েছে কথা বলা।

শ্রেয়া নিজে সেটা বুঝেও বারবার ফোন করে, ফোন করে, কাঁদতে কাঁদতে ফোন করে তবুও রিসিভ করে না সুব্রত। 

বাড়ির লোকেও তার প্রতি খুব অযত্নশীল। তার কোনোকিছুতে একটু ভূল হলেই মা, কাকিমা বাড়ি মাথায় করে।

সবসময় সবার ধারণা শ্বশুরবাড়ি গিয়ে মেয়েটা কি করবে? ওখানে তো লাথি ঝাঁটা খাবে আর বলবে বাড়ির লোক কিচ্ছু শেখায়নি! 

শ্রেয়ার অনেক ইচ্ছা চাকরি করার কিন্তু বাড়ির কাউকে কখনো সেটা স্বীকার করতে দেখেনি সে। ভেবেছিল তার আড়ালে নিশ্চ্য়ই করে। কিন্তু আড়ালের আলোচনা তাকে নিয়ে নয়!!

আচ্ছা সে লাথি ঝাঁটা খেলে কি কারোর খারাপ লাগবে না! হয়ত লাগবে না বলেই বলে বারবার!

কলেজে গেল পরদিন সকালে। অঙ্ক ক্লাসের নোটস নেওয়ার পর অফ পিরিয়ড শ্রেয়ার। একা চলে যায় লাইব্রেরী তে। সকাল থেকে কারোর সাথে খুব একটা কথা বলেনি সে। তার সাথেও যে সবাই কথা বলেছে তাও নয়। শ্রেয়া স্কুল ও কলেজ দুই জায়গাতেই খুব ভালো ছাত্রী হিসেবে পরিচিত। সব শিক্ষক শিক্ষিকা , প্রফেসর এমনকি প্রিন্সিপাল পর্যন্ত শ্রেয়া হাজরা বলতে এক ডাকে চেনেন। 

অনেক খারাপ লাগার মধ্যে এই ব্যপারটা তার ভাবতে বেশ লাগে। দিন দিন সে যেভাবে একপ্রকার মানসিক রোগী হয়ে 

যাচ্ছে তাতে এই ছোট্ট ছোট্ট ভালো ব্যাপারগুলো ভাবতে খুব ভালো লাগে তার। এরপর মনে পড়ে প্রাইমারী স্কুলের নানান দুষ্টু মিষ্টি স্মৃতি গুলো। মনে পড়ে ছোটবেলাতে টিফিন কাড়াকাড়ি করে খাওয়া। অজান্তেই আপন মনে হাসি আসে শ্রেয়ার। 

অফ পিরিয়ড শেষ হলো, লাইব্রেরী তে এসে যেই বইটা নিয়ে বসেছিল সেইটা রেখে চলে আসে ক্লাস রুমে। 

কলেজের প্রায় সব ছেলেমেয়েদের আড্ডা, অনেক ছেলেমেয়েদের নতুন প্রেম, বিচ্ছেদ, ঝগড়া খুনসুটি সব দেখে শ্রেয়া। 

খুব মজা লাগে তার। কলেজেও তো সবাই ব্যস্ত কিন্তু সকলকে সঙ্গে নিয়ে ব্যস্ত। 

হঠাৎ করেই কয়েকজন ছেলেমেয়ে তার হাত ধরে বলে ওঠে, চল চল শ্রেয়া, সিনেমা দেখতে যাবো আজ, তোর জন্যও টিকিট কেটেছি । চল। 

মনটা কেমন যেন খুশি লাগল আরো। মনটা যেন আনন্দে নেচে ওঠে এতদিন পরে। সত্যিকারের ব্যস্ততা খুঁজে পায় সে। কিন্তু এই ব্যস্ততা শুধু নিজের পৃথিবী কে নিয়ে নয়, সকলকে সাথে নিয়ে !

খুব মজায় কাটে দিনটা। বলা ভালো এত দিন পরের দিনটা। এত ভালো দিনও হয়। বেশি কিছু চায়নি তো সে, একটু ভালোবাসা, একটু খেয়াল আর একটু খানি বুঝতে পারা, ব্যস্! আর কিচ্ছু চাই না ওর। এর বিনিময়ে সব কিছু এমনকি নিজের প্রাণ দিতেও রাজি শ্রেয়া। আর দুঃখ কষ্ট, অবহেলা, উপেক্ষা ভাল লাগছে না তার। এবার থেকে ওউ ব্যস্ত থাকবে। পারবে না আর সুব্রতর ফোন ধরতে বা পাখির অজুহাত শুনতে। 

নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে শ্রেয়া। সবার সব ব্যস্ততা তাকে নতুন করে মানুষ চিনিয়েছে।


হ্যালো শ্রেয়া। বিব্রত কন্ঠে বলে সুব্রত। 

--- হুম। 

---- হুম? তুমি এতদিন ধরে ফোন করোনি কেন? বেশ মেজাজ দেখিয়ে বলে সুব্রত। 

নতুন কাউকে পেয়েছ নাকি? 

---- তা বলতে পারো। সহজভাবে বলে শ্রেয়া। 

----- বাঃ সত্যি নতুন কাউকে পাওয়াও হয়ে গেল। মানে আমি একটু ব্যস্ত থাকতাম বলে.. 

---- আমিও এখন ব্যস্ত আছি। তোমার যা বলার তাড়াতাড়ি বলো, আমার সময় খুব কম। শ্রেয়া সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে সুব্রতকে পুরো কথাটা বলতে না দিয়ে। 

--- তা কি এমন কাজ করছ শুনি! রান্না বান্না বা ঘরের কোনো কাজটাই তো পারো না বা করোও না। তা কি এমন করছ? 

--- কেন এইসব কাজ ছাড়া কি আর কোনো কাজ থাকতে পারে না নাকি মনে হয় না আমি পারি বলে? আমি টিউশন পড়াচ্ছি, এখন এত সময় নেই আমার কথা বলার, বুঝতে পেরেছ, আমি রাখছি। 

ফোন কেটে দেয় সুব্রত কিছু বলার আগেই। ওদিকে পাখি বা অন্য বন্ধুদের সাথেও ঠিক একই ঘটনা ঘটে। শ্রেয়া পরিষ্কার করে বলে দেয়, দেখ আমার অত সময় নেই, প্রচুর কাজ তাই অনেক ব্যস্ত থাকতে হয়। সত্যি বলতে এত কথা বলার সময় আমার আর নেই। 

---- তুই খুব পাল্টে গেছিস শ্রেয়া! খুব খারাপ লাগছে বিশ্বাস কর। তুই এতটা খারাপ ব্যবহার করছিস যে বলার মতো নয়! 

---- হুম ঠিকই বলেছিস। যেভাবে তোরা একদিন পাল্টে গেছিলি, সেদিন আমারও খুব খারাপ লেগেছিল, লাগত, কষ্ট হতো, কাঁদতাম রাতে একা শুয়ে শুয়ে। মৃত্যু কামনা করতাম নিজের আর তোদের কাছে শেয়ার করলে তোরা হাসতিস অথবা আমার ঘাড়েই দোষটা চাপাতিস। 

যাই হোক, আমার এখন কথা বলার আর সময় নেই। আমি রাখছি। 

ফোন রেখে দেয় সে। 

দুটো বছর কেটে গেছে। অবহেলার জবাব অবহেলা আর ব্যস্ততার জবাব ব্যস্ততাই হয়। এখন শ্রেয়া অনেক স্টুডেন্টদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে। একেকসময় ভাবে যে সে মরতে চেয়েছিল এত সুন্দর জীবন টা থেকে! হেরে যাচ্ছিল সবার কাছে অবহেলিত হয়ে! এ সে কি করছিল! যার মনের জোর দেওয়ার কেউ নেই তার ভগবান আছে আর সে নিজে আছে। আজ পরিবারও তাকে ব্যস্ততার দোহাই দেখায় না। আলাদা থাকে শ্রেয়া। থাকুক ওরা সবাই নিজের নিজের মতো ব্যস্ত। তার খোঁজ চাই না কারোর। 

সুব্রত অনেক বার ফোন করে শ্রেয়াকে। অবশেষে শ্রেয়া ধরে ফোনটা। 

সুব্রত ধরা গলায় বলে, শ্রেয়া এতবার করে ফোন করছি, ফোন কেন ধরছ না। আগে কত মেসেজ করতে এখন একটাও করো না। প্লিজ তুমি এরকম কোরো না। তোমার কি হয়েছে? তুমি এমন কেন করছ? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, প্লিজ তুমি এরকম কোরো না। 

---- উফ! সুব্রত প্লিজ এইসব আমার ভালো লাগছে না। রাখো ফোন, আমার ভালো লাগছে না তোমার সাথে কথা বলতে। এখন কি তোমার সব কাজ শেষ যে আমার পেছনে ফালতু সময় নষ্ট করছ? যাও যাও তোমার কাজের ক্ষতি হয়ে যাবে। 

---- এইরকম করে কেন বলছ শ্রেয়া। আমি স্বীকার করছি আমি ভুল করেছি। সত্যি বলছি এখন খুব মিস করছি তোমার মেসেজ গুলো। তোমার ফোন। অনেক অবহেলা করেছি তোমাকে। ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে তোমার ভালোবাসা কে অপমান করেছি। প্লিজ তুমি ফিরে এসো আমার কাছে আবার আগের শ্রেয়া হয়ে। 

--- দেখো সুব্রত, আমি আর আগের মতো হতে পারব না, আমি চাইও না হতে। আগের শ্রেয়া অনেক অবহেলা পেয়েছে কিন্তু এই শ্রেয়া অবহেলা করবে। তুমি রাখো আমার ভালো লাগছে না প্লিজ। 


সবার কাছেই আজ শ্রেয়া অচেনা, অজানা, সে পাল্টে গেছে। না না, ওকে পাল্টে দিয়েছে ওর কাছের মানুষ গুলোই। সবার কাছে ব্যর্থ শুনতে শুনতে নিজের কাছেও নিজেকে ব্যর্থ মনে হতো। সবাই ব্যস্ত, শুধু সে.... মনে মনে হাসে শ্রেয়া। সে হাসিতে আনন্দ নাকি হতাশা। সফলতা নাকি ব্যর্থতা তা তার অজানা। সবার থেকে আলাদা থেকেও আজ সেও যে খুব ব্যস্ত ! 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract