বুড়া কালী
বুড়া কালী
তখন বোধহয় বয়সটা অনেক কম, গালে গোঁফ দাড়ি তেমন ভাবে ওঠেও নি। ভীষণ প্রতিবাদী, কবিতা র প্রতিটা লাইন যেনো বিষ্ফোরণ ঘটাতে পারে , উল্লটে পাল্লটে দিতে চাইতো সমাজ কে, ঈশ্বরকে কটু কথা বলতে ছাড়তাম না, আজ সেই সময়কার কবিতা র কিছু লাইন মনে পরে গেলো, কাউ যেন আঘাত না পান, লাইন গুলো ছিলো নিতান্তই ছেলে মানুষী।
" ঈশ্বর তুমি ও আজ শিখে গেছো, দারুন করতে ফন্দী
কিছু চাইলে জিব কাটে মা কালী,
জগ্গনাথ বলে আমি নিজেই প্রতিবন্ধী
ঈশ্বর তোদের অনেক বয়স হলো, হয়েছিস বুড়ো বুড়ি
এবার তোরা ছেড়ে দেনা, সবার মঙ্গল করার চাকরী..."
সত্যি তখন জানতাম না এ বাংলায় ঈশ্বর বুড়ো বুড়ি হয় । পশ্চিম বাংলায় একটি বিখ্যাত মা কালি মন্দির আছে, যাকে বলা হয় বুড়ি মা, আবার বাংলাদেশ আছেন বুড়া কালি বাড়ি।
আজ সে নিয়েই কিছু কথা বলবো।
দিনাজপুরের ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, বর্তমান বুড়াকালী বাড়ির জায়গায় ছিল আত্রেয়ী নদীর সদর ঘাট। কুঠিকাছারির জমিদার আমলে আত্রেয়ীর বালুকাময় তট ও জঙ্গলে ঘেরা এই ঘটেই নদীপথে বড় বড় নৌকা ও বজরায় চলত। পরবর্তী কালে আত্রেয়ী গতি পথ পাল্টে পশ্চিম দিকে সরে যায়। কথিত আছে, এর পরেই মাটি ভেদ করে পাথরের আবক্ষ কালী মূর্তির আবির্ভাব হয়। বহু বছর আগে ঝোপ জঙ্গলে ঘেরা আত্রেয়ী নদী ও খাঁড়ি সন্নিহিত এলাকায় ডাকাত কালী, বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মোটর কালী , বয়রা কালী সহ শহরের অনেকটি প্রাচীন কালীর ছিলো। পরবর্তীতে তাই শহরবাসীর আদরের ডাক নামে দেন বুড়া কালি। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কয়েকটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী জাগ্রত কালীর মধ্যে অন্যতম বালুরঘাট শহরের তহবাজার এলাকার এই বুড়া কালী। পুরনো রীতি রেওয়াজ মেনেই হয় এই মায়ের পুজো। কালি পূজা র দিন ছাড়াও প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার ও শনিবার বুড়া কালীবাড়িতে পুজো দেওয়ার লম্বা লাইন পরে ভক্তদের। আগে নাকি ২০ কিলো ওজনের শোল মাছ বলি হত।
জনশ্রুতি আছে, কয়েকশো বছর আগে বর্তমান বালুরঘাট বুড়া কালীমাতার মন্দিরের পাশ দিয়ে নাকি আত্রেয়ী নদী বইত। কিছু মানুষের কথায় এক সময় আত্রেয়ী নদীর ধারে নিজে থেকেই নাকি ভেসে ওঠে বুড়া কালীমাতার বিগ্রহ। এক তন্ত্রসাধক সেই সময় ওই বিগ্রহকে তুলে নিয়ে এসে পুজো দেন। তারপর থেকেই টিনের ঘেরা দিয়ে ছাপরা ঘরে বুড়া কালীমাতার পুজো শুরু হয়েছিলো। রানী রাসমণি এই মন্দিরে পুজো দিতে আসতেন নদী পথেই। জনশ্রুতি আছে ,সন্ধ্যের পর নাকি ফুলের অপরূপ সুগন্ধ পাওয়া যেত এই এলাকা থেকে। কিন্তু কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত তেমন কোনও গাছ বা জঙ্গল ছিল না। নূপুরের আওয়াজ শোনা যেতো। এখনো সেই বিশ্বাসেই পুজিত হন মা। পুজোর দিন দর্শনার্থীদের দেওয়া হয় অন্ন ও খিচুড়ি ভোগ। প্রতিবার তিন সাড়ে তিন হাজার হাঁড়ি খিচুড়ি ভোগ বিলি হয় । সেই সঙ্গে অন্যান্য ভোগ মিলিয়ে ২০ হাজার ছাড়িয়ে যায় ।
এই পুজোকে ঘিরেই জেলার মানুষের একটা আলাদা আবেগ রয়েছে।৩৬৫ দিন বুড়া মার অন্নভোগ, আরতি, পুজোর পাশাপাশি মন্দির চত্বরে অধিষ্ঠিত বিশাল মহাদেবও নিত্য পুজিত হন। দীপাবলির রাতে বহু মানুষ ভিড় করে পুজো দেন বুড়া মায়ের। আলোকমালায় সেজে উঠে গোটা বুড়াকালীর মন্দির।
