বসের সাথে প্রেম
বসের সাথে প্রেম
কলেজের সব সাধাসিধে ছেলে ছিলো সৌম্য। বুকিং বয়। বিজয়া ওর নাম রেখে ছিলো শিয়াল পন্ডিত। চশমার আড়াল থেকে রোজ ওর দিকে তাকতো। দুষ্টু মিষ্টি মেয়ে বিজয়া অভিজাত বোনিদী পরিবারের মেয়ে প্রেমে টেম করা সুযোগ হয়নি স্কুল জীবনে। কলেজ এসে প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছে অনেক কিন্তু লাভ হয়নি। কারণ তার ভয় একটাই কোন সম্পর্ক জরিয়ে গেলে সে সম্পর্ক মেনে নেবে না বাড়ি থেকে। অথচ ওরতো প্রেম প্রেম পায় কখনো মনে মনে। গোটা একবছর কেটে পর বিজয়া লক্ষ করলো সৌম্য সাথে প্রেম করাটা ওর পক্ষে খুব নিরাপদ।
কারণ একটাই সৌম্য নিতান্তই ভদ্র ছেলে। ওকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখলেও , পাড়া পড়শী টের পাইনি ও যে ওর দিকে তাকায়। ওর বন্ধুমহল কেন ওর প্রিয় বান্ধবী ও বিশ্বাস করেনি সৌম্য ওর দিকে তাকায়। কারণ সৌম জীবন সাদাকালো টিভির মতো। একটা সাইকেল করে ও আসে। ক্লাসে ঢোকে, নোট নেয়, ল্যাইব্রেরী যায়, টিফিন বাড়ি থেকে নিয়ে আসে তাই ক্যান্টিং , ইউনিয়ন রুম , কমন রুম , কোথাও ওর কোনদিন দেখা মেলে না, মোটামুটি ভাবে সুবোধ বালকের মতো তার জীবন যাপন। আর একবছর পর ওর সাথে কথা বলতে গেলে সৌম কোষ্ট কাঠিন্য ভোগে। তাই নিজে প্রেম প্রস্তাব দিয়ে সৌম্য সাথে বলা যেতে পারে এক কথায় জোর করেই প্রেম করলো বিজয়া দুই বছর। তারপর কি হলো । কলেজ শেষ ইউনিভার্সিটি শেষ করে , এক বছর ঘরে বসে থাকার পর , বিজয়া বাড়ি সাথে ঝগড়া ঝাটি করে, অনুমতি ছাড়াই জোর করেই চাকুরীর ইন্টারভিউ দিতে চললো বিজয়া।
সুট বুট পরে যতোই হ্যানসাম লাগুক , ক্যাবলাকান্ত সৌম্যকে ঠিক চিনতে পরেছিলো সৌম। মেট্রোতে সৌম্য দুই একবার বিজয়ার দিকে তাকালেও এমন ভাব দেখালো চিনতেও পারে নি। অথচ অফিসের গ্যাট পর্যন্ত চলে এ সৌম্য। বিজয়া ছেড়ে দেবার পত্রী নয়। ভালো করে কথা শুনিয়ে বলছ দিলো ওর পিছু না নেয় আর সৌম কোনদিন।সৌম্য আগের মতোই আছে বোধহয় কোন প্রতিবাদ করলো না।
অফিস ঢুকে চমক। মেসোর রেফারেন্স এসেছে বিজয়া। মেসোর কোন বন্ধুর অফিস এটা চাকরি হবে জানাই ছিলো। কিন্তু যা চেয়েছিলো তার তিনগুণ মাইনে। আর একবারে এম ডি পার্সোনাল সেক্রেটারী কাজ। বস নাকি কম বয়সী , বসে মিশুকে সবার কাছে শুনেছে ও। একটাই শর্ত একটা বন্ডে চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে। সেটাতে যুক্তিও আছে। ও বড়লোকের মেয়ে, হঠাৎ চাকুরীর ইচ্ছে হয়েছে করতে এসেছে, হঠাৎ দুম ছেড়ে দিলে কোম্পানির ক্ষতি হবে। তাই দুই বছর চাকরি ছাড়া চলবে না। আর আকর্ষণীয় শর্ত ছিলো বিয়ে করা চলবে না। ওটাতেই রাজী হয়ে গেল বিজয়া কারণ ও বিয়ে করতে চায় না এখনি।
চাকুরীটা নিয়ে বেশ বিপদে পড়লো বিজয়া। ওর বস আর কেউ না ওর প্রাক্তন প্রেমিক সৌম্য।কাজ করানোর জন্য নয় প্রতিশোধ নিতে চাকুরী দিয়েছে ও। ওর প্রিয় ফুচকা, আইসক্রিম । বস ওর কাজের ছুঁতো নিয়ে গিয়ে ওগুলো খায় অথচো ওকে খেতে দেয়না। ওকে দিয়ে কাজ করানোর চেয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা। চা নিয়ে আনানো, ব্যাগ বয়ানের কাজই বেশি করানো হয়। একেবারে জীবনটা হেল করে দিয়েছে ওর বস সৌম্য।
কোন প্রয়োজনে ওকে ছুটি দেয়না ওর বস। কিন্তু সেই হঠাৎ ছুটি দেওয়াটা যে ওকে ফন্দী ছিলো সেটা ও বুঝতে পারেনি। ড্যাঙ ড্যাঙ করতে করতে মাসির বাড়ি মা বাবার সাথে হাজির। সেখানে ও পারিবারিক ছোট অনুষ্ঠানে দেখলো হাজির হয়েছে সৌম্য আর ওর বাবা মা। বেশ মিষ্টি মিষ্টি কথাবার্তা চলছিলো। হঠাৎ ও বুঝতে পারলো ওর বিয়ের দেখাশোনার জন্য সৌম্যকে ডাকা হয়েছে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে। মনে মনে যদিও খুশি হয়েছিলো।
কিন্তু সৌম্য হাঁটে হাঁড়ি ভাঙার জন্য এসেছে। চাকুরী পেতে সে বিয়ে না করা শর্তে সাক্ষর করেছে। কলেজ লাইফে চুটিয়ে প্রেম করেছে। এবং যে ছেলেটিকে প্রেম করেছে তাকে জোর করে গোলাপী জামা পড়াতে বাধ্য করতো। আর ব্রেকআপ দিন সেই ছেলেটি তারই কিনে দেওয়া গোলাপী জামা পরে আসায় ব্রেক করে সেই ইস্যুতে। সবাই ছি ছি করতে থাকে বিজয়ার।
বিজয়া হার মানবার মেয়ে নয় , সবার সামনে বশের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলে, অফিসের বশ নয় সে সৌম্যকে করতে চায় তার জীবনের বস। সবাইকে বোঝাতে সক্ষম হলো সে পরিবারের ইচ্ছার মূল্য দিতেই সে সেইদিন বিনা কারণে সৌম্যকে দুঃখ দিয়ে ভুল করছে। আর তার প্রতিশোধে সৌম বস হিসেবে নিয়ে নিয়েছে। আর পড়াশোনা করে সাবলম্বী হবার উদ্দেশ্য সে চাকরি করতে গেছে তাতে তার কোন অপরাধ নেই। সুতরাং বাড়ির বড়োদের কথায় সৌম্য এবার বিজয়াকে বিবাহ করতে বাধ্য হলো। আর কি এখন সৌম্য এর বস হয়ে বিজয়া ওর জীবনটা নাজেহাল করে ছাড়ছে,,,

