বৃষ্টি ভেজা বিকাল
বৃষ্টি ভেজা বিকাল


সকাল থেকে মেঘলা আকাশ। তিতলির সাথে মন খারাপ করছে হয়তো আকাশটার। শহরের আকাশটা গ্রামের আকাশটার মতো বড়ো নয়। ছোট। তাই তার দুঃখের কথা গুলো ছোট ছোট। তিতলি ভাবছে আজ কলেজটা না এলেই হয়তো ভালো হতো আজ। কিন্তু সবাই ওকে ভালো মেয়ে বলে জানে , সচারাচর কলেজ তো কামাই করে না। আজ বাড়ি থাকলে লোকে কি ভাববে?
কিন্তু বুবাই দা আজ চলে যাবে এ শহর ছেড়ে। আর হয়তো দেখা হবে না কোন দিন ওদের।
আজ থেকে ঠিক চার বছর আগে ও দেশ থেকে ফিরছিলো কলকাতায়। ট্রেনেই আলাপ ওদের। ও একবার দুবার তাকিয়ে ছিলো । ও মা পিছু নিয়ে নেবে না। পরে তিতলি দেখলো ও ভুল। ও ওর দাদার বন্ধু, পেয়িং গেস্ট হিসাবে থাকলো তিতলির মামা বাড়িতে । তিতলি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। টিউসানি করে কোনক্রমে নিজের পড়াশোনার খরচাটা চালিয়ে নেয়। অনেক হিসাব করে চলতে হয় ওকে। বুবাইদাকে ওর ভালো লাগে কিন্তু বলতে পারেনি সেকথা। বুবাই দাও একটা ভালো চাকরি খোঁজার জন্য এ শহরে এসেছিলো। খুব নিষ্ঠার সাথে কাজ খোজা আর জীবনে উন্নতি খোঁজ খবর করার কাজটাই করছে। সকাল বিকালে একবার কিছুক্ষন তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেওয়া ছাড়া কিছু করে উঠতে পারিনি। ও ফেসবুকে একটা ফ্রেন্ডরিকোস্ট পাঠিয়েছিলো ঠিকই তবে যেটা তিতলি একসেপ্ট করে নি। কারণ সারাদিন ধরে বুবাই দা সবার সাথে বকবক করে শুধু ওর কাছে এলেই বোবা হয়ে যায়।
কলেজ শেষ হলেও বৃষ্টি পড়ছিলো। গেটে দাঁড়িয়ে থেকে তিতলি বেড়াবে কি বেড়াবে না ভাবছে তখনই চোখ পড়লো , বুবাই দা সামনের চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে ওর লাগেজ ব্যাগ নিয়ে। তিতলি গিয়ে জিজ্ঞেস করলো। "আজ তোমার মুম্বাই যাবার কথা না।"
ও আমতা আমতা করে বললো" আসলে তোমার সাথে সেইদিন বাজি ধরে হেরে গিয়ে ছিলাম তোমাকে ফুচকা খাওয়ানোর কথা ছিলো সেটা খাওয়া তে এলাম।"
তিন বছরে একদিন বাজি হারের ফুচকাটা খাওয়ানোর সময় পেলো না। আজ সময় হলো মহারাজের। তবে তিতলি কিছু কথা না বাড়িয়ে ফুচকা খেতে গেলো। ফুচকা খাওয়া শেষ হতেই মনে পড়লো ওর তিতলিকে চাকুরী পাওয়ার ট্রিট দেওয়া হয়নি। মোম খাওয়াতে নিয়ে এলো ও তিতলিকে রবীন্দ্র সদনে। তারপর ওর মনে পড়ল ওর কোনদিন ভিক্টোরিয়া সামনে ঘোড়ার গাড়ি চড়া হয় নি, ময়দানে ট্রাম চড়া হয়নি। ও সঙ্গী হতে বললো তিতলিকে। তিতলি আপত্তি করলো না। শেষমেশ ওরা হাজির হলো বাবুঘাট গঙ্গার তীরে। আকাশ থেকে সব মেঘ কেটে গেছে। সূর্যটি দিনের শেষে প্রাণ খুলে হাসতে। বুবাই এর কান্ড কারখানা দেখে। তিতলির হাসি দেখে বুবাই জিজ্ঞেস করলো " হাসছো কেন হঠাৎ!"
তিতলি বুবাই জড়িয়ে ধরলো। বিকালের আকাশটাও মুখে খুশির হাসি ফুটে উঠলো।