STORYMIRROR

Soudamini Shampa

Abstract Classics Others

4  

Soudamini Shampa

Abstract Classics Others

বর্ষামেদুর মেঘলা দিনে

বর্ষামেদুর মেঘলা দিনে

3 mins
439

বর্ষামেদুর মেঘলা দিনে

সৌদামিনী শম্পা 


বর্ষামেদুর মেঘলা দিনগুলোয়, যে দিন মন একটা অচেনা অনুভূতিতে আনচান আনচান করে, কিচ্ছু ভালো লাগে না, চারিপাশে একটা হালকা ধোঁয়ার কুন্ডলী পাক খেতে ফিসফিসিয়ে মনে করিয়ে দেয়, এ মেঘলা দিনগুলো বড্ড মন কেমনের! 

 ছোট্ট জানালার ফাঁক দিয়ে দেখতে পাওয়া আকাশটুকুতেও যেন কার্পণ্য ভর করে। সেও যেন পুরোপুরি ধরা দিতে চায় না। ঘড়ির কাঁটা লুকোচুরি খেলে দিনের আলোর সাথে। জানালার পাশের পেঁপে গাছে ধরা গোটা তিনেক ছোট বড় পেঁপেরা নতুন সবজে রঙে বেশ অহংকারী ভাব নিয়ে নাইতে থাকে , ঝুপঝুপ করে পাতার ফাঁক বেয়ে নেমে আসা শ্রাবণ ধারায়! মাঝে মাঝেই পুকুরের দিক থেকে ভেসে আসা সোঁদা গন্ধ ঝাপট মেরে জানিয়ে যায় এ শুধু সাহিত্যমাখা বর্ষা নয়, এতে জীবনগন্ধী মনুষ্যেতর প্রাণেরাও তাদের রোজ কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে সাড়ম্বরে।

 সত্যিই তো! জানালার বাইরে মুখ বাড়ালে জলের ছোঁয়া হালকা হালকা ভিজিয়ে দেয় নাকের ডগা, কানের লতি ,চোখের পাতা ছাপিয়ে চুল ছুঁই ছুঁই আদুরে স্পর্শ লেগে থাকে হীরের কণার মত। দেখি রাঁধু জ্যাঠা বঁড়শি আর মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে পুকুর ধারে উপস্থিত। আজ মাছেদের সংসারে দুয়েকজনের সংখ্যা কমবেই কমবে! রাঁধু জ্যাঠাকে তো চিনি! ও লোক শিকার ফসকানোর লোক নন। আজ ওনার বাড়িতে হয়তো ছোট ছোট মাছের টক গরমাগরম। জেঠি খুব ভালো রাঁধে। একবার মা মামা বাড়ি যাওয়ায়, রাঁধু জেঠি সে বেলা ওদের ওখানে খেতে বলেছিল। শাপলা সর্ষে আর কচুর শাক। সবই ওই পুকুরঘাটের সম্পত্তি! কিন্তু এতো সোয়াদ যে আজও মুখে লেগে! ওরা যে বড্ড গরীব। ছেলে মেয়ে কেউ নেই। আগে জ্যাঠা রাজ মিস্ত্রী খাটতো, এখন আর পারে না। লোকের খেতের কলাটা, মুলোটা দিয়েই সংসার চালায় আর এই বর্ষায় ক'দিন এর ওর পুকুর ডোবার দৌলতে একটু আঁশের গন্ধ পায়, এই যা! জেঠি এর ওর ফাই ফরমাশ খেটে যা দুচারটাকা পায় তাতে টেনেটুনে সংসার চলে না, গড়ায় কোনোমতে!

 জ্যাঠার উপস্থিতিতে ব্যাঙের রাজত্বেও বেশ একটা শোরগোল! ওদের মোটেও বিষয়টা ভালো লাগছে না। একে বৃষ্টির তোড়ে ফড়িং টড়িংগুলো না জানি কোথায় ঘাপটি মেরেছে? তার উপরে একটা গোটা মানুষ, হাঁটুর উপর লুঙ্গি গুটিয়ে, মাথায় একটা ছেঁড়া ছাতা এঁটে পুকুর ধারে বসে বিড়ি খাবে আর ছিপ ফেলবে! এ ওরা মেনে নেবে কেন? বেশ ঘ্যাঁ ঘোঁ শব্দে প্রতিবাদ জুড়লো, কিন্তু রাঁধু জ্যাঠার তাতে কোনো হেলদোল নেই।

 আমি এক মনে এসব দেখতে দেখতে , কখন যেন আনমনা হয়ে পড়েছি! এতে আমার কোনো দোষ নেই! মা পাশের ঘরে শুয়ে গুনগুন করে গান ধরেছে, "এমন দিনে তারে বলা যায়!" সত্যিই কি সব বলা যায় ,এমন দিনগুলোতে? কই আমি তো পারছি না, তার নম্বরটা ডায়াল করে সব বলে দিতে! তবে আমার মা বেশ গায়! এই এত বছরে বহুবার মায়ের গান শুনেছি, রবীন্দ্রসঙ্গীতও। কিন্তু সব কিছুর সাথে মিলিয়ে কখনো দেখিনি যে মায়ের গলায় রবীন্দ্রনাথের গান এত সুন্দর খেলে! আসলে শ্রাবন, বর্ষা, রাঁধু জ্যাঠার বঁড়শি, ব্যাঙের মকমকি এই সব মিলিয়ে যেমন বর্ষা , তেমনি রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর বর্ষা সঙ্গীত না হলে বাঙালির শ্রাবণ যেন সম্পৃক্ত হয় না। ততক্ষণে মায়ের গলায় নতুন গান, "আজি ঝরঝর মুখর বাদল দিনে"!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract