STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Fantasy Inspirational

4  

Manab Mondal

Abstract Fantasy Inspirational

বর্গাভীমা

বর্গাভীমা

3 mins
343

৫১পিঠ এর একটি পিঠ। দেবীর বাম পায়ের গোড়ালি পরেছিল এখানে।এটি সতীপিঠ হলেও,পান্ডা র উৎপাত নেই এখানে। শান্তিতে মায়ের পূজা দেওয়া যায়। সকালে মন্দির কমিটির অফিস থেকে ভোগের কুপন কেটে মায়ের ভোগ পেতে পারেন। ভীমের দখলে থাকায় এই জায়গার নাম বর্গভিমা বোধহয়। ময়ুর বংশীয় রাজা তামুরক ধজ্জ এই মন্দির টি প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে মায়ের ভোগে দেওয়া হয় শোলমাছ। এই শোলমাছের সাথে মন্দির প্রতিষ্ঠা র একটা গল্প প্রচলিত আছে। এখানের কুন্ডে রাজার খাবার মৃত শোল মাছ জ্যন্ত হয়ে গেছিলো।তার পর রাজা এই মন্দির নির্মাণ করেন।

এরপর থেকে দেবীর নাম ডাক ছড়ায় চারিদিকে। মজার ব্যাপার এখানে কাঠচাপা গাছে মঙ্গলঘট বাঁধা হয়, মোমবাতি, ধুপ জ্বালিয়ে , মনস্কামনা করা হয়। এই মন্দিরের দেবী খুবই জাগ্রত। তাই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এই মন্দিরে এসে ভিড় জমান এবং তাঁদের মানত করে থাকেন। ভক্তদের বিশ্বাস, এখানে মায়ের কাছে মানত করলে বিফলে যায় না। তাই মন্দিরে ভক্তদের ভিড় দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।নিত্য পুজোর পাশাপাশি বিশেষ বিশেষ দিনে পুজো-আচ্চা করা হয় এখানে। ১০ ও ১১ ডিসেম্বর মন্দিরের বার্ষিক অনুষ্ঠান।তবে এ প্রসঙ্গে বলে নেওয়া দরকার রাজার প্রতিষ্ঠা হবার আগেই এই মা পূজিত হতেন বহুবছর পূর্ব থেকেই।

প্রাচীন যুগে নদী কুলকে বলা হত কচ্ছ। ভারতের পশ্চিম উপকূল কচ্ছ বা কাথিয়ারা, মতো পূর্ব উপকূলেও ছিল কচ্ছ,বর্তমানে যা মেদিনীপুর জেলার কাঁথি। মহাভারতের পাই, মহাবীর অর্জুন এসেছিলেন কচ্ছপ্রদেশে পঞ্চতীর্থের জলে স্নান করতে।

প্রাচীন মেদনীপুরের সুবর্ণরেখা,কংসাবতী, রূপনারায়ণ,দামোদর ও বর্তমানে রসুলপুর নদী, এই পাঁচটি নদীই পঞ্চতীর্থের জল বহন করত। কথিত আছে পঞ্চতীর্থের জলে পাঁচজন সুন্দরী অপ্সরা বসবাস করতেন, তারা সময় সময় ডাঙাতেও বেড়াতেন।তাঁদের নেত্রী ছিলেন বর্গা। একবার বর্গাসহ চার অপ্সরা এক ব্রাহ্মণের অভিশাপে কুমীর হয়ে গেছিল। তাই তারা আর লজ্জায় ডাঙায় উঠতেন পারেনা। এইদিকে তাদের ভয়ে সাধারণ মানুষও আর পুণ্যস্নান করতে পারেনা।


একবার নারদ পঞ্চতীর্থে এলে কুমীর হয়ে যাওয়া অপ্সরারা জানতে চায়, কীভাবে তাদের অভিশাপ খণ্ডন হবে। নারদ বললেন, অর্জুন এসে তাদের লজ্জা ভেঙে ডাঙায় তুললে তারা আবার আগের রূপ ফিরে পাবেন।যথাসময়ে অর্জুন এলেন,এবং ডাঙাতে তুললেন,কুমীররা রূপবতী অপ্সরা হয়ে গেল। রূপ যৌবন ফিরে পেয়ে তারা অর্জুনকে বিয়ে করতে চাইলেন। না অর্জুন তাদের বিয়ে করেননি। অর্জুনের পরে ভীম এলেন তাম্রলিপ্ততে, বকরাক্ষসকে বধ করতে। অনেকে বলেন বর্তমান গড়বেতার গনগনিডাঙার মাঠে ভীমের সঙ্গে বকরাক্ষসে ভিষণ লড়াই হয়েছিল। ভীমের পৌরুষ দেখে ভীমের প্রেমে পড়ে যায় বর্গা। ভীমেরও ভালো লাগে বর্গাকে। গার্ন্ধবমতে বিয়ে করে তাঁরা। অনেক সন্তানও জন্মায়। ভীম ফিরে গেলে,ভীমের বিরহে বর্গা প্রাণত্যাগ করে এক জঙ্গলে। বর্গার শরীর পাথর হয়ে জমে গিয়ে ছোট আকার ধারণ করে।বহুযুগ পরে বনের মাঝে এক ধীবর বর্গার পাথরের মূর্তি খুঁজে পায়। সে বিগ্রহ রূপে গোপনে বর্গার পুজো করতে থাকে। পরবর্তীকালে বর্গার বিগ্রহ তমলুকের রাজবংশের অধিকারে আসে। কালক্রমে বর্গাই হয়ে ওঠেন তামলিপ্তের অধিষ্ঠাত্রী দেবী ” বর্গাভীমা”।পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের প্রাচীন মন্দিরে আজও তাঁর পুজো হয়। ভীম ও বর্গার সন্তানসন্ততির নাম বর্গাসোই।


আর ভীম? না, ভীমকেও ভোলেননি তমলুক তথা মেদিনীপুরবাসীরা ভীমও দেবতারূপে পূজিত মেদিনীপুরে। এছাড়াও দেবী বর্গাভীমাকে নিয়ে আরো অনেক জনশ্রুতি আছে বিশেষ করে কালাপাহাড় বা ভাস্কর পণ্ডিতকে নিয়ে।১৫৬৭-৬৮ খ্রিস্টাব্দ নাগত দুরন্ত কালাপাহাড় উড়িষ্যা বিজয়ের পর বঙ্গদেশের তাম্রলিপ্তে প্রবেশ করেছেন, তিনি এই দেবীকে দর্শন করে শক্তিহীন হয়ে পড়েন এবং এই ঐতিহাসিক দলিল রচনা করেন। কিংবদন্তি মেশা কাহিনী বিস্ময়কর, লোমহর্ষক। কালাপাহাড় সুলেমান করণানির সেনাপতি ছিলেন।উড়িষ্যা অভিযান কালে কালাপাহাড় মন্দির ও দেবদেউল ধ্বংস করে বঙ্গদেশে এগিয়ে চলেছেন রূপনারায়ণের দিকে। তটে শিবির খাঁটিয়ে বর্গভীমার মন্দিরের দিকে একা এগিয়ে চললেন কালাপাহাড়। মন্দিরের দেবীগৃহের দুয়ারে এসে দাঁড়ালেন কালাপাহাড়। তারপর মন্দির ধ্বংস করে না তাঁবুতে না ফেরার তাঁবুর পাঠান সৈনিকরা স্তম্ভিত হন। তাঁরা মন্দিরে এসে দেখেন দেবী বর্গভীমার পদতলে আশ্রয় নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন সুলেমান করণানির সেনাপতি কালাপাহাড়। মূর্তিনাশক কালাপাহাড় জীবনে প্রথম ও একমাত্র মূর্তিকে ধ্বংস করতে এসেও ধ্বংস করতে পারেন নি। বর্তমানে দেবীবর্গভীমা উগ্রচণ্ডা, দুর্গা ও কালিকা রূপেই আরাধ্য।

ছবি - পলাশ রায়


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract