Amit Ghosal

Comedy

5.0  

Amit Ghosal

Comedy

বরেন বাবুর বুদ্ধি

বরেন বাবুর বুদ্ধি

4 mins
862



বাবুর বাবার বিকট বদনে আজ বিরাট হাসি | কারণ বাবুর বাবার বাগানে বড় বড় বক ফুল ফুটেছে|

বাবুর বাবা তাই মনের আনন্দে বিশাল এক খান ব্যাগ বগল দাবা করে বাজারে চললেন | পরনে বাঁশ গাছের ছাপ ওয়ালা বটল গ্রীন জামা আর বকলস বাঁধা বেল বটম পেন্টুলুন| 

বেরোনোর মুখেই বাবুর বচন বাগীশ মায়ের বাজখাই বাক্য বান!

'তা সং সেজে ঢং করতে কোথায় চললে শুনি?'

বিষম খেয়ে বাবুর বাবা বিরস বদনে বাঁয়ে মুড়লেন এবং আল্হাদে অষ্টআশি খানা হয়ে বত্রিশ পাটি বিকশিত করে বললেন - ' বাগানের বক ফুল গুলো কত বড় হয়েছে দেখেছো বনানী!'

ব্যাস !! বহ্নি তে বারুদ বিচ্ছুরণ !! "ওরে আমার বাগান বিশারদ রে ! তিন কাল গিয়ে এককালে ঠেকলো, মিনসে বক ফুল ফোটাচ্ছে !! লোকে বাগানে বেলি চামেলী গোলাপ চন্দ্রমল্লিকা ফোটায় |আর তুমি বক ফুল নিয়ে আদিখ্যেতা করছো? বলি বাজারে বেরোচ্ছো মানি ব্যাগ না নিয়েই? বাজারে গিয়ে কি বিনে পয়সায় বগল বাজাবে? আজ তোমারি একদিন কি আমার একদিন | তোমার হাড়ে আমি দুব্বো গজিয়ে ছাড়বো এই বলে রাখলাম !!'

বাবুর মায়ের প্রস্থান | বাবুর বাবার মাথা বন বন | চোখে সর্ষের ক্ষেত্রে; ফুলে ভর্তি| বজ্রাহত বাবুর বাবা বাকস্তব্ধ হয়ে বাগানেই বসে পড়লেন | বাবুর মায়ের গলার আওয়াজ নেহাত কম নয় ! পাশের বোস বাড়ির বরেন বাবু বাইরে বেরিয়ে এসেছেন |

'কি হলো মশাই? বেলা বাড়ার আগেই বৌদির বজ্র নির্ঘোষ? আর আপনার বদন খানি ম্লান |'

'আর বলবেন না বরেন বাবু' | বাবুর বাবা ব্যতিব্যস্ত হয়ে সদ্য ঘটে যাওয়া বিপর্যয়ের বিশদ বিবরণ বিস্তারিত ভাবে বলতে শুরু করলেন |

বরেন বাবু কে বঙ্গবন্ধু পল্লীর আবাল বৃদ্ধ বনিতা বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষন বলেই জানে | রণে বনে জলে জঙ্গলে যে যখনি বিপদে পড়ে বরেন বাবুর বসত বাটিতে হাজির হয়| বরেন বাবুও নিজের বিচার বুদ্ধি বলে একটা উপায় বাতলে দেন | আজ বাবুর বাবাও তাই বিপদতারণ বরেন বাবুর বশবর্তী হলেন |

বরেন বাবু বড় বড় চোখ করে বিশদ শুনলেন এবং বারো সেকেন্ড চুপ রইলেন |

বাবুর বাবা বিশেষ বিচলিত | বরেন বাবু কিছুই বলছেননা | আরো বারো সেকেন্ড নির্বিকল্প সমাধিতে থাকার পরে বরেন বাবু বলে উঠলেন –

“বুঝলাম”|

‘আপনার পরিস্থিতির বিশেষ বিশ্লেষণ করে আমি আপনাকে একটা কথাই বলতে পারি’ –

‘কি ? কি ? বলুন বলুন?’ বাবুর বাবা বিগলিত| 

‘উপায় একটাই’| বরেন বাবু বললেন | ‘বিষস্য বিষ ঔষধম'|

বাবুর বাবা বিশ বাওঁ জলে | ‘মানে?’ -

‘মানে – বিষে বিষে বিষক্ষয়| কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে হবে| আপনি সাহসে ভর করুন, রুখে দাঁড়ান| আপনার স্ত্রীর এই স্বামী নির্যাতনের চরম প্রতিবাদ করুন| বন্ধুগণ এ অত্যাচার, এ অপমান আর আমরা মুখ বুঝে সইবোনা| বাবুর বাবা পিছন ঘুরে দেখলেন আরো কোনো নির্যাতিত নিপীড়িত কমরেড যোগ দিচ্ছে কিনা| বরেন বাবুর বীর রসসিক্ত বক্ত্রিতা তে বাবুর বাবা - বেবাক ! বিস্মিত !! বিমোহিত !!! | উদ্বেল !উত্তেজিত !! উদ্দীপ্ত !!! বলে উঠলেন – 

বলো বীর বলো উন্নত মম শির,

শির নেহারি আমারি নত শির ওই বাবর আলমগীর !!

অতঃপর বাবুর বাবার বলিষ্ঠ বচন - ‘মারি অরি পারি যে কৌশলে’|

কিন্তু বনানীর শ্রীমুখ এবং মুখ নিঃসৃত বাণীর কথা মনে পড়তেই বাবুর বাবার বিদ্রোহী বুকে সাহসের বেলুন টা কেমন জানি চুপসে যেতে লাগলো| তিনি ক্রমশ সাহসী থেকে ভীরু, ভীরু থেকে নিস্পৃহ, নিস্পৃহ থেকে ম্রিয়মান, ম্রিয়মান থেকে ম্যাদামারা, এবং ম্যাদামারা থেকে বাক্য হারা হয়ে পড়লেন|

অগত্যা বরেন বাবুই বিকল্প|

‘ঘাবড়াবেননা| এরও ওষুধ আছে আমার কাছে| এক বোতল মা কালী মার্কা সায়ং কালে সেবন করুন এবং অবতীর্ণ হন সম্মুখ সমরে'|

বাবুর বাবা বিপাকে পড়লেন| নিরুপায় হয়ে প্রথমে অরাজী, পরে গররাজী শেষে গররাজী থেকে নিমরাজী হলেন এবং হাতে বাজারের ব্যাগ আর বুকে বিদ্রোহের বহ্নি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন|

বেশ বড় বড় চার পাঁচ পাত্র মা কালী মার্কা গলঃধকরণ করে বাবুর বাবা রাত বারোটার পরে বাড়ি ফিরলেন| পূর্ব পরিকল্পনা মতো পাঁচিল ঘেঁষে বরেন বাবুর আবির্ভাব|

এরপর যা ঘটলো তার বিস্তারিত বিবরণ খানিকটা এই রকম –

বাবুর বাবা : বনানী!! দুয়ার খোলো জননী

                 প্রিয়ে !! তোমাকে কত দিন দেখিনি|

বরেন বাবু ( দূর থেকে ) : ও মশাই! হচ্ছেনা| প্রেম রস নয়; বক্তব্যে বীভৎস ভাবে বীর রস ভরে দিন|

বাবুর বাবা : চোপরাও বুৰ্বক| মোরে দিবি উপদেশ! বেয়াদপীর একশেষ!!

বাবুর মায়ের প্রবেশ| এক হাতে বাঁশের লাঠি অন্য হাতে আঁশের বঁটি|

বাবুর বাবা : অহ! কি অপরূপ রূপের আধার!! সন্ধ্যা সবিতার তীরে সখি তুমি কার?

বাবুর মা  : তোর বাবার| হতচ্ছাড়া অনামুখো অলপ্পেয়ে --

বাবুর বাবা : প্রেম নিবেদন করবো তোমায় বকেরই ফুল দিয়ে!!

এরপর আপাত অর্থহীন, কিন্তু গূঢ় অর্থবহ কিছু শব্দ এবং গোঙানি; সপাং সপাং! দুম দাম!! ঠাস ঠাস!!! আর মা কালী মার্কার নেশা ছুটে যাওয়া বিপন্ন বাবুর বাবার বেদম চিৎকার -‘ওরে বাবারে ! মেরে ফেললো রে কে কোথায় আছো রক্ষা কারো ও বরেন বাবু কোথায় গেলে!!

বাবুর মাএর বাঁকা ভুরুর চোখা নজর পাঁচিল এর পাশে লুকিয়ে পড়া বরেন বাবুর দিকে গেল :

ও| তুমিই তাহলে ফাটা ঢোলের কাঠি| পচা শাকের আঁটি|

রাম চন্দ্রের হনুমান, ডিডি মেট্রোর শক্তিমান|

এইডসের বিষাক্ত জীবাণু,

লাইফবয়ের বিজ্ঞাপনে, বেঁচে যাওয়া কীটাণু|

বন্ধু কে বদ মতলব দিয়ে বিগড়োতে এসেছো !!

বুড়ো ভাম, মরণ কালের ঘাম !!

তোমার বংশের বাতি আজ আমি নিভিয়েই ছাড়বো|  

অসুর নাশিনী দনুজ দলনি বাবুর মা বিপর্যস্ত বিধ্বস্ত বাবুর বাবা কে ছেড়ে বরেন বাবুর দিকে অগ্রসর হলেন||

বঙ্গবন্ধু পল্লীর বিদ্যতজনেদের মধ্যে বরেন বাবুর উপস্থিত বুদ্ধির বিশেষ খ্যাতি| সেটা যে অকারণ নয় তা আজ বেশ বোঝা গেল|

রেডি. . .

স্টেডি . . . . .

গো. . . . . . . . . . . .

বরেন বাবু যে এত বড় দৌড়বাজ বঙ্গবন্ধু পল্লীর বিশিষ্ট জনেরা তা জানতেননা|

দৌড়তে দৌড়তে বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষণ বরেন বাবু, বাবুর বাবা কে একটি মোক্ষম উপদেশ দিয়ে গেলেন – "বাঁচতে চান তো পালান| য পলায়তি স জীবতি"|

আপাতত বাবুর বাবা বঙ্গবন্ধু পল্লীর বিশল্যকরণী হাসপাতালের বিশেষ যত্ন বিভাগের ( Intensive Care Unit ) বিছানায় সজ্জাশায়ী এবং অস্থি বিশেষজ্ঞ ব্রজবিলাস বাঁড়ুজ্জের চিকিৎসাধীন| বাবুর মা হাসপাতালে শাসানি দিয়ে গেছেন- বাবুর বাবা সম্পূর্ণ সুস্থ না হলে ব্রজবিলাসের একটি অস্থিও গোটা থাকবেনা|


বরেন বাবু বেপাত্তা| শোনা যায় তিনি ব্রোকারের মাধ্যমে বাড়ি টি বেচার চেষ্টা করছেন|

বঙ্গ বন্ধু পল্লীর বিশিষ্ট জনেদের মধ্যে বুদ্ধিমান বরেন বাবুর বিচক্ষণতা এবং বৈদগ্ধ নিয়ে বিশেষ বাক্যালাপ আজ কাল আর শোনা যায়না|


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy