Amit Ghosal

Children Stories Drama

4.3  

Amit Ghosal

Children Stories Drama

ইতি তোমার বাবা

ইতি তোমার বাবা

4 mins
425


স্নেহের পুটু,

বেশ কয়েক দিন ধরে ভাবছিলাম, তোমাকে একটা চিঠি লিখি আর লিখে মা এর হোয়াটসআপ এ পাঠাই|

যদিও আমাদের প্রতিদিনই ভিডিও কল এ কথা হয়, কিন্তু জানোতো, আমি না তোমাকে অনেক কিছু বলতে চাই, যেগুলো অন্য কথার ফাঁকে আর বলা হয়ে ওঠেনা| তাই ভাবলাম, তোমাকে লিখে পাঠাই|

কিন্তু লিখতে বসেই ভারী বিপদে পড়লাম; বুঝতে পারছিনা, চিঠি তে তোমার নাম কি লিখবো !! পুটু তো তোমার ভালো নাম নয়, যদি পুটু লিখলে তুমি রাগ কারো ! তাই প্রথমে 'স্নেহের আর্য' লিখে শুরু করলাম | কিন্তু তারপরে ভাবলাম - তুমি তো এখনো ততোটা বড় হওনি| এই তো সবে আট বছর বয়স হবে | আর তাছাড়া পুটু নাম টা তো তুমি ভীষণ পছন্দ করো| তাই আমি 'স্নেহের আর্য' দিয়ে শুরু করলাম | জানোতো, যখন আমি হোস্টেল এ থাকতাম, তখন তোমার দাদানও আমাকে চিঠি লিখতেন আর শুরু করতেন 'স্নেহের খোকন' দিয়ে | 

আচ্ছা পুটু তোমার ওই ভিডিও তার কথা মনে আছে, যেটা তোমার মা তুলে দিয়েছিলো তার সেই পুরোনো মোবাইলের ঝাপসা হয়ে যাওয়া ক্যামেরা দিয়ে| সেই যে এইটুকু তুমি বিছানায় শুয়ে; তখন তো তুমি হাঁটতে শেখোনি! আমি পুটু . পুটু. . পুটু. . . পুটু. . . ও ও . ও. ও পুটু. .. . . বলে ডাকছিলাম আর তুমি খিল খিল করে হাসতে হাসতে মুখ দিয়ে কত রকমের আওয়াজ করছিলে আর প্রাণ পনে হাত পা ছুড়ে আমার কোলে আস্তে চাইছিলে! আমি ক দিন আগেই তোমার মাএর কাছে জানতে চাইছিলাম - সেদিন তুমি ঠিক কি বলার চেষ্টা করছিলে 'মা' নাকি 'বাবা' ? তোমার মা বললে - তুমি 'মা' ডাকছিলে, কিন্তু আমি নিশ্চিত তুমি সেদিন 'বাবাই' বলতে চেয়েছিলে|

জানোতো !! আমার ফোন টা তে কিছু প্রব্লেম হচ্ছিলো, তাই সারাতে দিয়েছিলাম| তা এখানকার দোকানে আমাকে বললো - ফোনের মেমরি ফুল হয়ে গ্যাছে, ফরমাট করলেই ঠিক হয়ে যাবে! সেই ফরম্যাটের চক্করে সব কিছু ডিলিট হয়ে গেলো !! ওই ভিডিও টাও আর আমার কাছে নেই !!

তোমাকে চুপি চুপি একটা কথা বলি - ওই ভিডিও টা না আমি ঘুমোতে যাওয়ার আগে প্রতি দিন একবার করে দেখতাম| মনে হতো - এই বুঝি ফোন থেকে বেরিয়ে এসে তুমি আমার কোলে চড়বে!

এখন কি করি বলতো ? আচ্ছা একবার মা এর ফোন খুঁজে দেখোতো, যদি ওটা পাও, তাহলে আমাকে পাঠিয়ে দিও| ওই ভিডিও টা তো এখন আর নতুন করে বানাতেও পারবোনা | তুমি যে বড়ো হয়ে গেছো !!

তোমাকে তোমার খুব ছোট্ট বেলার একটা ভীষণ মজার কথা বলি| তখন তোমার বয়স এক মাসও হয়নি| তোমার মা আর আমি তোমাকে সেই রাস্তার ওপারের ডাক্তার কাকুর কাছে নিয়ে গেছিলাম ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য | ডাক্তার কাকু যেইনা ইঞ্জেকশনের সূচ বের করেছেন অমনি তোমার মা আর আমি কাঁপতে শুরু করি| তুমি তো কিছুই বুঝতে পারছোনা - কি হতে চলেছে!

এরপরে যেইনা উনি ইঞ্জেকশনের সূচ টিতোমার ছোট্ট থাই তে ফোটালেন !! ব্যাস!!! আর যায় কোথায়!!! পাশ দিয়ে মাল গাড়ি যাওয়ার শব্দ; আর সেই শব্দ ছাপিয়ে তোমার পরিত্রাহি চিৎকার আর কান্না | আর সেই সুরে সুর মিলিয়ে আমার আর তোমার মায়ের কান্না !! ডাক্তার কাকু বোধ হয় এতটা আশা করেননি, তাই উনিও খানিকটা হকচকিয়ে গিয়েছিলেন|| যাই হোক, খানিক পরে ব্যাথা কমে যাওয়ার জন্যই হোক বা আমার আর তোমার মায়ের যৌথ কান্নায় ঘাবড়ে গিয়েই হোক, তোমার কান্না থামলো আর আমরা টোটো চড়ে বাড়ি ফিরে এলাম| জানো পুটু তোমার কিছু হয়েছে শুনলে, আমার না এখনো ওই রকমই কান্না পায়|

আর একবার একটা কান্ড হয়েছিল যখন আমরা চেরাপুঞ্জি বেড়াতে ঘেছিলাম !! তোমার বোধ হয় একটু একটু মনে আছে | সেইযে রাজু আঙ্কেল, যে আমাদের গাড়ি চড়িয়ে সব জায়গা ঘোরাতে নিয়ে যেত! ওই তো তোমাকে সব সময় কোলে নিতো, যখন তুমি আর হাঁটতে পারতেনা| ওরও তো তোমার মতোই একটা ছোট্ট বেবি ছিল, কিন্তু সে ওর কাছে থাকতোনা |তোমার মনে পড়ে? রাজু আমাদের ঝর্নার পাশে একটা গুহা তে নিয়ে গেছিলো| গুহাটা আঁকা বাঁকা 'U' র মতো| একদিক দিয়ে ঢুকে আর একদিক দিয়ে বেরোতে হয় | অনেকখানি রাস্তা, ভেতরে ছোট্ট ঝর্ণা ছিল, অনেক গাছ ছিল| আর গুহার পাথরের ছাদটা ছিল খুব নিচু | মাথায় লেগে যায় | একটা জায়গায় তো হামাগুড়ি দিয়ে পেরোতে হয়েছিল!

আমি আর তোমার মা বলেছিলাম - আমরা এখানে ঢুকবোনা| কিন্তু রাজুই জোর করলো; বললো আপনারা আগে আগে চলুন , আমি বাবু কে নিয়ে পেছনে আসছি | যাই হোক, আমরা গেলাম ভেতরে | গুহার ভেতরে খানিক যাওয়ার পরে, পেছন ফিরে তোমাকে অরে রাজুকে আর আমরা দেখতে পাইনা!! আমরা কোনো রকমে হাতড়ে হাতড়ে মাথায় আর পায়ে পাথরের ঠোকা খেতে খেতে এগোতে লাগলাম আর তোমার নাম ধরে চিৎকার করে ডাকতে শুরু করলাম| ভেতরে তো মোবাইল ফোনের সিগনাল ছিলোনা!! কি হবে!!! করো সাড়া পাচ্ছিনা, তোমার বা রাজুর!!

শেষ্য আমরা ভয়ে, দুঃখে, চিন্তায় আধমরা হয়ে কোনো রকমে গুহার মাঝামাঝি এসে একটা পাথরে বসে পড়লাম| আর ভাবছিলাম কি করবো - তোমাকে কোথায় খুজবো? উল্টো দিকে ফিরে যাবো, নাকি পুলিশ এ খবর দেব| রাজু কি তোমাকে নিয়ে পালিয়ে গেল !! একটু পরেই একটা ছোট্ট ছেলের গলা পেলাম| শুনেই হুড়মুড়িয়ে পাথর থেকে নামতে গিয়ে তোমার মা পায়ে চোট পেলো|

কিন্তু সে তুমি নয়, অন্য করো বেবি|, তার মা বাবার সাথে যাচ্ছে| সেও গুহার ভেতরে খুব ভয় পেয়েছে আর বাবার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে | আমি কেন তোমার হাতটা ওই ভাবে ধরে রাখিনি!! আমি তোমার মাকে বললাম - তোমাকে ফিরে না পেলে, ওই গুহা থেকে আমি আর বেরোবোনা|

এর একটু পরে দেখতে পেলাম - রাজু তোমাকে পিঠে চাপিযে নিয়ে আসছে; তোমার হাতে আইস ক্রিম| গুহায় ঢোকার মুখে সেই কিনতেই দেরি| আর তোমাকে নিয়ে রাজু খুব আস্তে আস্তে আসছিলো, যাতে তোমার কোথাও লেগে না যায়!!

যাই হোক, সেদিন আমরা আর কোত্থাও যাইনি| সোজা হোটেলে ফিরে এসেছিলাম|

আচ্ছা পুটু? বড়ো হয়ে আবার ঐরকম হারিয়ে যাবেনাতো? তোমাকে খুঁজে পাবোতো?

আজকে এখানেই শেষ করি| পরে আবার লিখবো 

বুক ভরা ভালোবাসা নিও|

ভালো থেকো|


ইতি তোমার বাবা


Rate this content
Log in