Payel Guha

Tragedy Others

3  

Payel Guha

Tragedy Others

বন্ধু।।

বন্ধু।।

2 mins
279



আমার কখনো মনে হয়নি বাবা ‘ওয়ান লাইনারের বাদশা’, ওই ‘বাবার হোটেলে তো বেশ খাচ্ছ' বা ‘লাটসাহেব' জাতীয় খোঁটা কখনো শুনিনি। মা যত-ই ভয় দেখানোর চেষ্টা করতো, “দাঁড়া তোর বাবা আসুক...” ভয় আমি পাইনি। কারন, বাবা ছিল আমার সেভিয়ার্। পরীক্ষার কম নম্বর হোক, বা দুষ্টুমি উল্টে মা-কে লুকিয়ে আমি বাবাকে-ই সব বলতাম... আর বাবা ভুল করলে বোঝাতো আর মায়ের বকুনি থেকে বাঁচাতো।


বাবা আমার কাছে বেষ্টফ্রেন্ড, ওই যার সাথে দুষ্টুমি করা যায়। রান্নাঘরে তরকারি চুরি করে খাওয়া অভিযান থেকে শুরু করে বাবার খাওয়া বারন মিষ্টি চুরির অভিযানে পার্টনার ইন ক্রাইম, সবটাই আমার সঙ্গে জুটি বাবা।

তাই যখন কেউ জিজ্ঞেস করতো, “কাকে বেশি ভালোবাসিস?” উত্তরটা বিনা ভাবনায় বাবা হতো আমার। 


বাবা আমার কাছে মুক্ত আকাশ। ঠিক যেমন ওই নীল আকাশের বুকে পাখিরা স্বাধীন, আমার কাছে বাবা তেমনি একফালি নীল আকাশ। আমার ভালো-খারাপ নিয়ে সব চেষ্টার সব-সময়ের সার্পোটার সে। ভালো নম্বর নিয়ে যখন ফিরতাম বা কোনো ট্রফি নিয়ে ফিরতাম বাবার হাসিটা দেখতাম। মনে হতো ওই হাসির জন্য সব যুদ্ধ জয় করে নেওয়া যায়। ওই একটা কথা “তুই সব পারবি”, তাতেই যেন সব যুদ্ধজয়ের মন্ত্র লোকানো আছে...


আজও আমি যুদ্ধ লড়ি‌, জীবনের যুদ্ধ! বড্ড কঠিন এখনের যুদ্ধ। বাবাকে খুঁজি। অপেক্ষা করি বড্ড, ওই যখন চাকরির অ্যাপোয়েন্টমেন্ট লেটারটা আসবে, আর বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলবে, “প্রাউড্ অফ ইউ মাই সন।” 

হ্যাঁ, ‘সন্’ বাপকা বেটা-ই হতে চাই আমি।


ভয় পেলে আজও ওই কড়ে আঙুলটা খুঁজি।

যখন রাতের বেলা বড্ড মনখারাপ করবে, বা শরীর খারাপ; সেই মানুষটার আদুরে হাতটা আমার মাথায় বুলিয়ে দেবে, সকল ক্লান্তি ম্যাজিকের মতো উধাও হয়ে যাবে। কোথায় গেল ওই হাতটা? কোথায় এখন তো আর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় না কেউ!


না... না... দেয়! ওই মাঝরাতের আঁধারে একজন হাত বুলিয়ে দেয়। বাবা চলে যাবার পর থেকে যে এক অঙ্গে মা- বাবা হয়ে ওঠার চেষ্টা করে চলছে...

সারাদিন মায়ের দায়িত্ব, বাবার দায়িত্ব সামলে রাতের বেলায় সে হাত বুলিয়ে দেয়, লুকিয়ে! যখন আমি স্বপ্নে ডুবি, সে হাত বুলিয়ে দেয়, যাতে অন্ততঃ স্বপ্নে আমি বাবা-কে পাই।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy