বকশিস
বকশিস
“তা হ্যাঁ গো পুঁটির মা, মেয়ের বাড়ী কেমন ঘুরলে?” মুখে পানটা ঠুসে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো সাধুখা গিন্নী।
পুঁটির মা এ বাড়ীতে বহুদিন হল কাজ করে। সেই পুঁটি যখন দুধের শিশু। তখন পুঁটিকে সঙ্গে নিয়েই কাজে আসতো ও। গিন্নিমার দুই মেয়ে এক ছেলে। ছোট মেয়েটি পুঁটির চেয়ে একটু বড়। তারই পুরনো জামা আর খেলনায় পুঁটি বড় হয়েছে। একটু বড় হতে গিন্নিমাই জোর করে পুঁটিকে পাড়ার ইশকুলে ভর্তি করে দিলেন।
পুঁটিকে দেখতে শুনতে ভালো। দেখে কে বলবে যে ও ঝিয়ের মেয়ে? যখন ক্লাস টেনে উঠলো পুঁটি তখন একজন অঙ্কের মাষ্টার রেখেছিল পুঁটির মা। একটা অল্পবয়সী ছেলে।
বিকেলে যখন ছেলেটা পড়াতে আসতো তখন পুঁটি একাই থাকতো ঘরে। তাতে যা হবার তাই হল। বয়সের ধর্ম।
পুঁটির মা জানতে পেরে প্রথমে মেয়ের চুলের মুঠি ধরে বেশ ঘা কতক লাগিয়ে কাঁদতে কাঁদতে এসে উপস্থিত হল ওর মুশকিল-আসান সাধুখা গিন্নীর কাছে, "বৌদি, আমার সব্বোনাশ হয়ে গেলো ...... আমি মুখে রক্ত তুলে খাটছি যাতে মেয়েটা মানুষ হয় আর .........।“
ওকে অনেক কষ্টে থামিয়ে সব কথা শুনে গিন্নী বললেন ,” দাঁড়াও মাথা ঠাণ্ডা কর। ছেলেটাকে একবার আমার কাছে নিয়ে এসো দেখি কাল।“
সাধুখা গিন্নী চিরকালই খুব বুদ্ধিমতি উনি ছেলেটিকে দেখেই বুঝলেন ছেলেটা ভালো, পুঁটিকে সুখে রাখবে।
ওনার সাহায্যেই শেষ পর্যন্ত পুঁটির বিয়ে হয়ে যায় ওর মাস্টার অনুপমের সাথে। অনুপম আর পুঁটি এখন হায়দ্রাবাদে থাকে। অনুপম একটা স্টিল ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে। ফ্যাক্টরি থেকে ওদের কোয়ার্টার দিয়েছে। নিজের সংসার গুছিয়ে নিয়ে পুঁটি মায়ের জন্য ট্রেনের টিকিট কেটে পাঠিয়েছিল।
জীবনে এই প্রথম পুঁটির মা ট্রেনে করে কল
কাতার বাইরে গিয়েছিল। যাবার আগে সাধুখা গিন্নী পাঁচটা একশো টাকার নোট ওর হাতে দিয়ে বলেছিলেন,” রাখো, লাগবে।“
আজ দুপুরে পুঁটির মা ফিরেছে। আর বিকাল হতে না হতেই এসে উপস্থিত হয়েছে এ বাড়ীতে।
“ পুঁটি খুব ভালো আচে বউদি......খুব ভালো আচে।“ আনন্দের আতিশয্যে যেন দমটা বন্ধ হয়ে এলো পুঁটির মায়ের।
“ জামাইকে ওদের ফ্যাক্টরি থেকে দু কামরার কোয়ার্টার দিয়েছে। ঘরে টিভি, ফিরিজ সব আচে। মেয়েকে যাতে কোনও কাজ করতে না হয় তাই একটা ঠিকে ঝিও রেকে দিয়েচে জামাই। পুঁটির আবার চার মাস চলচে কিনা......”
“ বাঃ! এতো খুব ভালো খবর। মেয়েকে নিয়ে আসবে তো নাকি?”
“ ভাবচি বৌদি । কিন্তু আমার এই কুঁড়ে ঘরে আর কি ও থাকতে পারবে? ওর এখন পাখার হওয়ায় নরম বিচনায় শোয়ার অব্যেস হয়ে গেচে কিনা।“ একটু অন্যমনস্ক হয়ে যায় পুঁটির মা। তারপর কি একটা মনে পড়তে নিজের হাতের কাগজে মোড়া একটা প্যাকেট গিন্নীর দিকে এগিয়ে দেয় সে।
“ ও বৌদি জামাই তোমার জন্য পাটিয়েছে, ওদের ফ্যাক্টরিতে তৈরি একটা স্টিলের প্লেট। বললে কাকিমাকে দিও।“
প্লেটটা প্যাকেট থেকে বার করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে সাধুখা গিন্নী হাসি মুখে বললেন,” তোমার জামাইকে বোলো আমার খুব পছন্দ হয়েছে।“
“জানো বৌদি ভাগ্যিস তুমি আমায় টাকা কটা দেছিলে। ফেরার সময় সেই ওদের বাড়ীর ঝিটার , সে কি কান্না, মাম্মি তুমি যাচ্চ। আবার এসো। আমি তকন তাকে আবার একশোটা টাকা বকশিস দিলুম। নইলে তো মান থাকে না কি বল?“ কথাটা বলতে বলতে গর্বে আর আনন্দে পুঁটির মায়ের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
ওর ওই উজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে সাধুখা গিন্নী বুঝলেন বকশিস দেয়ার আনন্দটা, বকশিস পাওয়ার আনন্দের চেয়ে কিছু কম নয়, বোধহয় বেশী।