STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Romance Inspirational

3  

Manab Mondal

Abstract Romance Inspirational

বিয়েটা কবে করছিস

বিয়েটা কবে করছিস

6 mins
31

কেয়া উচ্চ শিক্ষিত স্বনামধন্য পরিবারের  একমাত্র মেয়ে সে।এমএ পাশ করছে ভালো ভাবে। বন্ধু মহলে সবাই জানতো গবেষণা করবে বলেই । বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাধে সে অনেক স্মার্ট, সে কারো কথায় কান দেয় না ,তার মন যখন যেটা চায়, সে সেটা করে। সেইদিন বিয়ে বাড়িতে সবাই ওকে তিক্ত বিরক্ত  করলো বিয়ে কবে করছিস করছিস বলে। কিন্তু ও তেমন প্রতিবাদ করলো না। 

সেটা দেখে ওর বাড়ির লোকজন ওর বিয়ের কথা শুরু করে দিলো। ওর অবশ্য নিজের তেমন পছন্দ নেই কারণ সে তার যোগ্য কাউকে মনে করে না , আর এর জন্য, সে শহর একা থেকেও এত দিনেও একটা প্রেম করতে পারেনি। অনেক ছেলে তার প্রেমে পড়েছে, সেও পাত্তা দিত কিন্তু ছেলে গুলো কয়েক দিন পর কেটে পড়তো স্বাভাব দেখে, সে চায় সকলকে তার মত চালাতে, যে তার কথা শোনে না সে তার ধার দিয়ে চলে না।আর এর জন্য তার প্রেম আর টেকসই হয়নি। 
এটা নিয়ে তার কোন আফছোস নেই ,সে নিজের অহংকার নিয়ে ভালোই আছে। তার সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে পুলিশে উচ্চ পদস্থ অফিসার নতুন চাকুরি পেয়েছে। শহরে তার দুই দুটো বাড়ি আছে । কেয়ার বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা। সেই সুত্রে আলাপ। ছেলেটার আবার প্রোমটারিং ব্যাবসা আছে। কেয়া রাজ রানী হয়ে থাকবে। 

কেয়ার বাবা ওর মতো অহংকারী। তিনিমনে করেন জীবনে কখনো ভুল সিদ্ধান্ত তিনি নেননি ,আর বাকী জীবনে নিবেন না। তার মেয়ে যেহেতু অংককারী এবং জেদী তার জন্য সহজ সরল একটি পাত্র দরকার। আর এই ইন্দ্র নাথ হল সেই উপযুক্ত পাত্র। ইন্দ্র যেদিন প্রথম কেয়াকে দেখতে এলো সে দিন কেয়ার বাবা ইন্দ্রের সাথে প্রায় ৪ ঘন্টা গল্প  করেছিলো। ইন্দ্র সাথে আসা তার কলিগ ২ ঘন্টা পরেই চলে গিয়েছিল। ইন্দ্র বেশ বয়স হয়ছে।অথচ ভাজা মাছটা উল্লেটে খেতে জানেনা এমন বোকা বোকা আভা ভাব। 
কেয়ার ওকে প্রথম দিন পছন্দ হলো না।কারণ রাত হয়ে গেল যেতে ওদের বাড়িতে থেকে গেলো। বিয়ে তো ঠিক হয় নি। ঠিক হলেও তবুও বিয়ের আগেই তার হবু শ্বশুর বাড়িতে রাত কাটাতে হল। কেয়া লেখা পড়ায় ফাঁকি দেয়নি কোন দিন, তাই তার জ্ঞান সীমা হীন, সে এখনো প্রতি সপ্তাহে দুটি করে বই পড়ে শেষ করে । তাই জগতের বেশির ভাগ বিষয়ে সে অবগত । 
অথচ ঐলোকটার  আধুনিককতা তাকে এখনো স্পর্শ করতে পারেনি। সে ঠেলা ঢুলা জামা কাপড় পরে । তাকে দেখতে শিক্ষক এর মত লাগে সব সময়। কেয়া তাকে এক পলক দেখেই না করে দিয়েছে ,সে বলেছে এমন গেঁওয়া এবং আনস্মার্ট ছেলেকে সে বিয়ে করবে না সবাই ভেবে নিল।  

কেয়া তেমন কিছু  করলো না ।  আর্শীবাদ আগেই ইন্দ্রের সাথে বের  কয়েকটি ঘুরতে বেড়ালো সে। এমনকি ইন্দ্রের বাড়িতে ও গেলো। সারাদিন একসাথে ঘুরলো শহরটা। ওকে ভালো লেগার চেষ্টা করলো।  তারা বের হল কেয়া চাইছিল ভালো কোন রেস্টুরেন্টে বসে গল্প করলো ।ওনার একটি প্রাইভেট কারে করে লং ড্রাইভে গেলো।।
  কেয়া সবসময় গাড়িতে চলাফেরা করে ।রেস্টুরেন্ট গেছে অনেক দামি দামি। কিন্তু এই কয়েকটি দিন সে প্রচুর স্লেফি তুললো। লাইফ করলো। ফেসবুক পোস্ট করলো সব ছবি। 

শহরটা কেয়া দেখেছে আগেও। ঘুরছে  আর পার্কে বসে বাদাম খায়েছে। ট্রামে চড়ে ছে, রিকসাতে  চড়েছে। । রিকসায় চড়তে তার ভালো লেগেছিল।ইন্দ্রকে গাড়ি থামিয়ে দিতে বললো সে। তারপর একটা রিকশা ধরে উঠে পড়লো। , তাবে পাশে আপন  লোক বসে আছে। কিন্তু  কেয়া একনাগাড়ে কথা বলে গেলো অচেনা ঐ রিকশা ওয়ালার সাথে।এটা ইন্দ্রের খুব একটা ভালো লাগছে না।তবুও কেয়ার সব ছেলে মানুষী সে সহ্য করে নিলো। সারা বিকেল ঘুরে তারা সন্ধ্যায় কেয়া নিয়ে যখন বাড়িতে ফিরলো। তখনো কিন্তু কেয়ার বাবা মা বেশ চিন্তা ছিলো। সোমা মাসি ওকে সবার থেকে আলাদা করে জিজ্ঞাসা করলো " বিয়েটা কবে করছিস"... 
কেয়া প্রশ্ন টায় বিরক্ত হলো না একটু হসে ঘরে চলে গেলো। 
ফোন হাতে ছিলো কেয়ার তবুও ঘরে কোন  নির্জন বসে ওর করা পোস্ট গুলো দেখতে থাকলো। কিন্তু মানব একটাও রিয়াকশন দেয় নি। 
মানব ছেলেটি সাধারণ তার এই অতি সাধারণ। ওর চলাফেরা তার ভালো লাগে না।কেয়ার মা কেয়ার বাবা পছন্দ করতো কিন্তু ছেলেটি কে । কিন্তু কেয়া সাথে তা বলে বিয়ের কথা ভাবে নি। তার বাড়ি নাই গাড়ি নাই তার সাথে বিয়ে করে সে সুখী হতে পারবে না।কিন্তু সোমা মাসি বলতো মানব তোকে খুব ভালো বাসে।সোমা মাসি তাকে বুঝিয়েছে ছিলো তোর  মায়ের বাবার সাথে যখন  বিয়ে হয় তখন তার কিছু ছিল না শুধু চাকুরি ছাড়া এর পর আজ দেখ তোদের সব হয়েছে, তোরও হবে । মানুষ এক দিনে বড় হয় না  তুই রাজি হয়ে যা মানব খুব ভালো ছেলে। কোন মানুষকে একদিনে ভালো লাগে না, তার সাথে চলতে ফিরতে দেখবি ভালো লাগবে।
মানব যদিও কোন দিন জানায় নি কেয়া কে ও ভালোবাসে। ভালো বন্ধু ছিলো। খুব কেয়ারিং, ওর কথায় ওঠতো বসতো। ও ক্যামেরা ম্যান হবার স্বপ্ন দেখতো। কেয়া কথায় ক্যামেরা ম্যান কাজ ছেড়ে মধ্যপ্রাচ্যের কোন একটা ক্যাটারিং কোম্পানি তে কাজ করছে।
অনেক রাত অবধি কোন রিয়েকশান না দেখে। কেয়া মানব কে ফোন করলো। একটা শাসকের গলায় থমক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো। " কলকাতায় এসেছিস কাল সকালে এক বার ফোন করলি না কেন?? এখন রাত হয়ছে। কাল দুপুরে  টালিগঞ্জ আসবি। আমার বিয়ে ঠিক হয়ছে জানিস তো। আমি আর বেড়াতে পারবো না। তোদের বাড়ির দিকটা গ্রাম গ্রাম আছে ওখানে ঘুরতে নিয়ে যাবি আমাকে। আমি বৃষ্টি ভিজবো কিন্তু তাই তুই ছাতা নিয়ে আসবি মনে করে তোর জন্য।"
বিকেল বেলায় মানব হাজির সেই ভাঙা সাইকেল নিয়ে। কেয়া বলল" আমি তোর এই ভাঙা সাইকেল আর উঠবো না। তুই এতো পয়সা ইনকাম করছিস একটা বাইক নিতে পারলি না। "
দাঁত কেলানতানের মতো একটা হাসি হেসে বললো "হবু বরে গাড়িতে অনেক ঘুরেছিস আরো ঘুরবি। গরীব বন্ধুর  সাইকেল করে ঘুরে দেখ আজ শেষ বার শহরতলীটাকে। বাইক কেনার স্বপ্ন আগে বাড়িটা ভালো করে তৈরি করছি। আমাকে তো বিয়ে করতে হবে নাকি। এরপর বিয়ে করলে, ছেলে পুলের বন্ধু বান্ধবী রা আঙ্কেল না বলে দাদু ডাকবে।"
কেয়া বললো "একটা শর্ত, রিকশা ওয়াল, ফুচকা ওয়ালা, দোকান দার, পথ চলতি অচেনা মানুষ সাথে বেশি কথা বলবি না। শুধু আমার সাথে কথা বলবি। তোকে কাউকে জ্ঞান দিতে হবে না। জ্ঞান অর্জন করতে হবে না। নো বক বক। শুধু মাত্র আমি কথা বললবো। "
বেশ কাটলো বিকেল টা। সন্ধ্যায় মেঘ করেছে দেখে  কেয়া কে কাছাকাছি একটি মেট্রো স্টেশন কাছে নামিয়ে দিলো মানব। কেয়া বললো " আমি বাড়ি যাবো না এখন আজ 10 আগষ্ট না। চল কেক কিনবো তোর বাড়ি গিয়ে জন্মদিন সেলিব্রেশন করবো"
মানব প্রথম রাজি না হলেও শেষ বাড়িতে নিয়ে গেলো ওকে। কেয়া দেখে ওর বাড়ির লোক জন রা খুব খুশি হলো। কেক টেক কাটার পর। কিছুটা সময় ছাদে  দাড়াতে চাইলো কেয়া। বৃষ্টি শুরু হলো। কেয়া ভিজতে থাকলো। মানব ওকে বাধা দিলো না। 
হঠাৎ সব নিরবতা ভেঙে জিজ্ঞেস করলো " মানব তুই কবে বিয়ে করছিস "
মানব বললো "জানি না। "
কেয়া বললো " তুই কিন্তু আমাকে কোন দোষ দিস না। আমি অনেক টা সময় অপেক্ষা করেছি। "
মানব বললো " জানি। কিন্তু আসলে কেউ কারো জন্য অপেক্ষা করে না। অপেক্ষা করে বেটার অপশনের.."
কেয়া বললো " বাদ দে, তোর মনে আছে, এই ছাদে আমার বেক লেস ব্লাউজ ফোট সুট করেছিলি এমন একটা বৃষ্টি ভেজা দিনে। "
মানব বললো " হু ঐ দিন তোর জন্ম দিন ছিলো"
কেয়া বললো " জন্ম দিনে কোথায় আমাকে উপহার দিবি না, সুযোগ বুঝে তুই আমার পিঠে চুম খেয়ে ছিলি। "
মানব আমতা আমতা করে বললো " বিশ্বাস কর সেই দিন তোকে সতি্য খুব সুন্দর লাগছিল। আমি কোন দিন কোন মেয়েকে অত কাছে থেকে দেখিনি। তাই চুম খেয়ে ফেলেছিলাম। আমি তো কত বার সরি বলেছি। "
কেয়া ওর কাছে এসে মানব হাত দুটি ওর কোমরে দিয়ে বললো " এখন কি আমাকে সুন্দর লাগে না'
মানব চোখ বন্ধ করে নিয়ে বললো "আমি নিজে কে সামলাতে পারবো না। তুই সর আগে। '
কেয়া বললো" ওটা আমার জীবনে প্রথম কোন পুরুষের ছোয়া। "
মানব বললো " আমারো। কিন্তু তুই ছাড়া আর কাছে আসিস না। "
কেয়া ওকে জরিয়ে ধরলো। কিছু বলার আগে ওর ঠোঁট টা ঠোঁট দিয়ে দখল করে নিলো। সময় নিজের তালে  গরিয়ে গেলো। বৃষ্টি থেমে যেতে । কেয়া নিয়ে বেড়াতে যাবে তখন মা বললো " কোথায় যাচ্ছিস ঘড়ির দিকে তাকা। ওর শোবার ব্যবস্থা আমার ঘরে করে দিয়েছি খেতে বস। "
ভাই ফিস ফিস করে জিজ্ঞাসা করলো। " তোরা বিয়েটা কবে করছিস "

 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract