বিসর্জন
বিসর্জন


সজ্ঞয় , ও..................... সজ্ঞয়..... - উমা ডাকতে থাকে।
পাশ থেকে কালু বলে ওঠে : আরে কাকিমা , আজ যে চতুর্থী , সজ্ঞয় এর আর খোজ পাাবে না যে।
উমা : উফফফফফফ..... ছেলে টার পূজো পড়লে যে মাথায় কী ভূত চাপে বুঝিনে বাপু । ছাড় ওসব , ওই কালু , চল রান্না ঘরে ।।
কালু , " আজ্ঞে পিসি " বলে চলে গেল।
এদিকে সাত বছরের সজ্ঞয় পাড়ার প্য্যান্ডেলে ব্যাস্ত।
রহিমকাকা : ওই , গিরিশের ছেলে , বাবাকে বল তাড়াতাড়ি ঠাকুর টা তৈরী করতে।
পাশে থাকা রামবাবু : আজ যে চতুর্থী । এখনও মূর্তি তৈরী হয় নি?
রহিমকাকা: সেই জন্যই তো বললাম সজ্ঞয় কে।
রামবাবু : না , ঠিক নয় , ঠিক নয় , এরকম করলে পড়ের বার থেকে গিরিশ কে আর দায়িত্ব দেওয়া হবে না।
এসব কথা শুনতে পেয়ে সজ্ঞয় এর মন খারাপ হয়ে যায় , সে দৌড়ে চলে যায় বাবার দোকানে।
গিয়ে দেখে তার বাবা শান্তি মনে প্রতীমার চোখ অঙ্কন করছেন।
সজ্ঞয় আস্তে করে ঢুকে , পাশে গিয়ে বসে।
গিরিশ : সজ্ঞয় !! এসেছিস বাবা ।
সজ্ঞয় : হ্যাঁ , বাবা।
আচ্ছা বাবা , আর কতদিন লাগবে এটা বানাতে?
গিরিশ : আজ ই হয়ে যাবে সোনা।
ছোট্ট সজ্ঞয় নব নির্মিত মূর্তির দিকে তাকিয়ে থাকে , মায়ের টান টান চোখ , তার বুকের ভিতরে ঢাক বাজাতে থাকে। তার বাবার হাতের তৈরী মূর্তিটি তার কাছে সবচেয়ে প্রিয় হয়ে উঠেছে। সে যেন অনুভব করতে পাাচ্ছে মূর্তি তৈরীর পিছনের শ্রমকে।
পূূূজোর সব দিন , দশমী বাদ দিয়ে , সে অন্য বাচ্চাদের মত না খেলে সেই প্রতীমার দিকে তাকিয়ে থাকত।
উমা , সজ্ঞয়ের এই ব্যাবহার দেখে তাকে ঘরে টেনে এনে জিজ্ঞেসা করেছিল : খোকা , কী হয়েছে তোর?
এর উত্তরে সজ্ঞয় বলেছিল : মা , ও মা , যানো বাবা প্রচুর পরিশ্রম করে " মা " তৈরি করে।
এ উওর শুনে উমা ধরেই নিয়ে ছিল ছেলেকে ভূতে ধরেছে।
এভাবে কাটতে কাটতে চলে এল দশমী মানে বিসর্জন ।
চারিদিকে মূর্তি ভাসানের ব্যাস্ততা। এদিকে সজ্ঞয়ের চোখে জল । পাড়ার মন্ডপ এ গিয়ে জোড় গলায় বলে আসে : এ মূর্তি সে ভাসাতে দেবে না । এ মূর্তি তার আরেক মা।
পাড়ার সব লোক হাসতে থাকে।।
শেষমেষ গিরিশ ছেলেকে ডেকে বোঝা য়: কেন বাবা , তুই বিসর্জন দিতে চাস না ?
সজ্ঞয় : বাবা ওঠা তুমি নিজের চার সপ্তাহের ঘুম নষ্ট করে বানিয়েছো। আর মাএ চারদিন পর তাকে ভাসিয়ে দেওয়া হবে।
গিরিশ : বাবা , এটাই যে বিধাতার রীতী।
সজ্ঞয় : এ কেমন রীতী বাবা , চারশো দিনের নিজের হাতের তৈরী মেয়েকে তুমি ভাসিয়ে দেবে।
গিরিশ চমকিত ।। সে আজ তার ছেলের মধ্যে এক শিল্পীকে দেখতে পেয়েছে।
সজ্ঞয় একা সরে বলতে থাকে : হে , মা , তুই চলে যাবি মা বিসর্জনে ।
গিরিশের চোখে জল।।