Manab Mondal

Abstract Comedy Drama

4.3  

Manab Mondal

Abstract Comedy Drama

বিশ্বাস ঘাতক

বিশ্বাস ঘাতক

3 mins
272


এইওকে ঠিক বিশ্বাস ঘাতক বলতে পারবো না। বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগে ওকে আমি অভিযুক্ত করতে পারি না। আসলে ও লিখিত বা মৌখিক কোনো চুক্তি তো হয়নি আমাদের। আমি তাই চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগে ওকে অভিযুক্ত করতে পারি না ।

সব কিছু একটু আধটু খুলে বলতে হবে তোমাদের নয়তো তোমরা বুঝতে পারবে কি করে আমি কি নিয়ে বক বক করছি। আমাদের ছেলে বেলা।কৃষি কাজ তখন মানুষ হঠাৎ করে উন্নতি করেছে। আগে শুধু বর্ষার জলে নির্ভর করেই ধান চাষ হতো। কিন্তু হঠাৎ করে প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করতেই আমাদের জমি গুলো হয়ে গেলো দোফসলী তিনফসলী জমি। প্রসঙ্গত বলে নিতে হবে আগে থেকে তখন দুই গ্রামের মাঝখানে একটা শ্মশান থাকতো। তাই এই শ্মশানের কাছে জমিকে আমরা খেলার মাঠ হিসাবে ব্যবহার করতাম।

আমি ছোট বেলা থেকে ভুত প্রেত বিশ্বাস করতাম না। আসলে আমার ঠাকুর মা , পিসি ছিলো না যে তাঁরা ভুতের গল্প বলবে। তাছাড়া কোন ভুত পেত্নী ও আমাকে কখনো ভয় দেখায়নি কখনো। তাই ভুত দের সম্পর্কে আমার কোন ধারণা ছিলো না। তবে, শাকচুন্নি, মেছো ভুত , গেছো ভুত দের নাম শুনেছি মাত্র। তখন নবম শ্রেণীর ছাত্র টিফিন পর বেশিরভাগ ছেলেরা মাস্টার মশাই কাছ থেকে গন ছুটি আদায় করলো। সেই সময় মুঠো ফোন এর ব্যবহার আমরা শিখিনি। রাত জেগে তখন আমরা মাঠের মধ্যে বশে , যাত্রা পালা দেখতাম, জলসা দেখতাম। কিন্তু আমার কিছু বন্ধু সিনেমা হলে যাওয়া শুরু করেছে। সেই দিন ওরা সবাই সিনেমা দেখতে গেছে। কিন্তু আমি পুচকি মানে বেঁটে যদি বাচ্চা ছেলে বলে সিনেমা হলে ঢুকতে না দেয়। সেই ভয়ে শেষ মুহূর্তে আমাকে ওরা বাদ দিয়ে দিলো। মনের দুঃখে আমি ঐ খেলার মাঠে চলে গেলাম। যদিও জানতাম আজ খেলা হবে না। কারণ আজ হরিলুট হবে খিচুড়ি ও হবে।

যাইহোক শ্মশানে একটা বটগাছ ছিলো। সেখানে গা এলিয়ে বসলাম। যেনো কেউ আমার চুল টেনলো , মাথায় চাটা মারলো, কিন্তু বেশ ভালো ই লাগলো । মামা বাড়ি বিহারী সেলুনে চুল কাটার পর, বাড়তি পয়সা লোভে নাপিত ভায়া এরকম মেসেজ করে থাকেন। কিছুক্ষণ করতেই আমি ঘুমিয়ে পরেছিলাম। ওমনি ঝপাং করে একটা ছোট্ট পুরুত ঠাকুর আমার সামনে লাফিয়ে হাজির হলো। আর কি রকম আবাল তাবল আচার আচরণ করলো। ঠিক আজকাল সোস্যাল মিডিয়াতে লাইক পাবার আশায়, নৃত্য এর নামে যেরকম লম্ফ ঝম্ফ করে সে রকম আরকি। ঘুম টা ছেড়ে যেতে ই মুড অফ। ঐ মক্কেলের উপর ওপর রাগ উঠলেও একটু সামলে নিলাম নিজেকে। সামনে সরস্বতী পূজা। দেবতার বাংলা বোধহয় বোঝে না। তাই দোভাষী হিসেবে পুরুত ঠাকুর দরকার। এইসময় বামুন ঠাকুর দের কিটন্যাপ করতে হয়। তাই বামুন ঠাকুর দেখেই একটু সংযমের সাথে কথা বলাম। কারণ বামুন এর প্রয়োজন হবেই কয়েক টা দিন পরে।

আমি একটু গলা খ্যেকিয়ে বললাম " কি হচ্ছে এরকম লাফালাফি করছিস কেন?"

ছোট্ট পুরুতঠাকুর একটু কাঁচুমাচু করে বললো " তুই আমাকে ভয় পাস নি ?"

আমি বললাম " তোকে ভয় পাবো কেন তুই ভুত না পেত্নী যে?"

ও ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে বলতে শুরু করলো " আমি তো ব্রম্ভদত্যি"

আমি হাসতে যাচ্ছিলাম কিন্তু প্রকাশ করতে পারলাম না। আমি যদিও ভুত টুত মানি না তবে জেনে রাখুন ভুত সমাজে ব্রম্ভদত্যি দের একটা সন্মান আছে। শাকচুন্নি, টুন্নিদের মত চ্যাংরামো মারে না। হাজার হোক জাতে তাঁরা বামুন।

যাইহোক ওর সাথে বন্ধুত্ব হতেই ওর কথা শুনে আমার চোখে জল ভরে এলো। আপনারা জানেন বামুন যখন আত্মহত্যা করে তখন তারা ব্রম্ভদত্যি হয়। পৈতে হবার সময় লোকজন কে ঘরে আটকে রাখা হয় জানেন। সেই সময় একা মানুষের তো খিদে পায়। এই সময় ওর লুকিয়ে পাশের বাড়ির থেকে তেঁতুল এর আচার চুরি করেছিলো। এই ব্যপারটা জানাজানি হতেই ওকে দারুন বকাঝকা করে সবাই। এই সময় মনের দুঃখে আত্মহত্যা করে ও। তারপর থেকে ভুত হয়েও ও তেঁতুল দু চোখে দেখতে পারে না।

থাক ওইসব শাক বেগুনের গল্প। আসল গল্পটায় আসি। বাংলা কর্মসংস্থানের সুযোগ কম জানেন। বড় হতেই আমি বুদ্ধি খাটিয়ে একটা ব্যবসা ফেঁদে বসলাম। ওপেন ইয়ার ম্যাসেজ পার্লার। ও মানুষের মাথার চুল টানতে, মাথায় চাঁটি মারতে ভালো বাসতো কিন্তু সেটা ম্যাসেজ এর মতো লাগতো। আমি লোকজন এর থেকে টাকা নিতাম। কিন্তু আজ ভুল করে এক টেকো খদরকে পাঠালাম ওর কাছে তাতেই বিপত্তি। চুল না টানতে পেরে বেজায় চটে গিয়ে একটা আস্ত কাঁঠাল ভেঙেছে মানুষ টির মাথা। মহা বিপদ এখন আমাকে গারদে পাঠানো হবে বলছে কিন্তু ব্রম্ভদত্যি কথা কেউ বিশ্বাস করছে না। জানি না আমার কি হবে। তবে মরে গিয়ে যদি ভুত হলে নিশ্চয়ই ওর ঘাড় আগে মটকাবো।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract