বইমেলা, নির্ভরতা
বইমেলা, নির্ভরতা


কয়েকবছর আগে বইমেলাতেই অরূপের সাথে শমিতার পরিচয়।মেদিনীপুরের ছেলে।সহজ সরল।বাবা ওখানকার নামকরা প্রকাশক।প্রত্যেক বছর কলকাতা বইমেলায় অনান্য কর্মচারীদের সাথে অরূপও আসে।কোন বছর অরূপের বাবা আসেন কোনবার আসেননা।বয়স হয়েছে , সবসময় পেরেও ওঠেননা।দমদম নাগেরবাজারের কাছে দুই কামরার একটা ছোট্ট ফ্লাট আছে ওদের।সাধারণত তালা দেওয়ায় থাকে।নানান কারনে কলকাতা আসা বিশেষত চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যপারে অরূপের মাকে নিয়ে প্রায়ই বাবা বা অরূপকে কলকাতা আসতে হয়।তখন ওই ফ্লাটেই তারা থাকেন।
বইমেলায় পরিচয়ের সূত্র ধরেই ফেসবুকে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠানো আর নিয়মিত কথা বলা।কাছাকাছি আসতে বেশি সময় নেয়না।সারাবছর ধরে অপেক্ষায় থাকা এই বইমেলার জন্য।অবশ্য মাঝে মধ্যে মাকে নিয়ে কলকাতা আসলে কিছু সময়ের জন্য হলেও অরূপ শমিতার সাথে দেখা করেই যায়।বেশিক্ষণ সময় দিতে পারেনা কারন মা একা ফ্লাটে থাকেন।
শমিতার গ্রাজুয়েশনের এবার শেষ বর্ষ।বাড়িতে পরীক্ষার শেষেই ব্যপারটা জানাবে বলে স্থির করে আছে।কিন্তু আজ কিছুদিন ধরে অরূপকে শমিতা ফেসবুকে দেখতে পায়না।ফোন করলে সুইচ ওফ পায়।নিজের কষ্ট একাকী সুযোগ পেলেই চোখের জল ফেলে লাঘব করার চেষ্টা করে।
বইমেলা আসন্ন।প্রথম দিনেই শমিতা সময়ের অনেক আগেই এসে হাজির হয়।চলে যায় সোজা অরূপদের ষ্টলের কাছে।তখনও ষ্টলের কাজ চলছে।অরূপ একটা চেয়ারে বসা।এগিয়ে যায় কাছে।অরূপকে বসে থাকতে দেখে মুহুর্ত মনের মাঝে অনেক কথা সাজিয়ে ফেলে যা অরূপকে সকলের সামনেই বলবে বলে ঠিক করে।অরূপও জানতো শমিতা আজ আসবেই।মুখোমুখি হয় দুজনে।আর সঙ্গে সঙ্গে চেয়ারের পাশে রাখা ক্রাচটা বগলে চেপে ধরে অরূপ উঠে দাঁড়ায়।শমিতা তার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যায়।আরও কাছে এগিয়ে যায় সে।অরূপের বগল থেকে ক্রাচটা হাতে টেনে নিয়ে নিজের কাঁধটাকে এগিয়ে দেয় ভর দিতে।