বিচার
বিচার


বিচার
কড়িকাঠ থেকে মেয়েটার দেহ নামিয়ে পোষ্টমর্টেমে পাঠিয়ে অফিসার মিত্র ওঁর জুনিয়ার পাল কে বললেন -''সুইসাইট নোট কিছু আছে কিনা দেখো খুঁজে। না থাকলে এখনি সব কটাকে তুলে চালান করবে। শালা, বডিটা দেখলে মনে হয় এ বাড়িতে একটা এসট্রেও নেই। সবাই সব কিছু ঐ শরীরেই নেভাত।''
মাথা নিচু করে মেয়েটার স্বামী আর শ্বশুর এক কোনে দাঁড়িয়ে।
শাশুড়ি আগেই মরা কান্না কেঁদে বলেছে গত রাতে তারা সবাই মেয়ের বাড়ি গেছিল। বৌ ছাড়া কেউ ছিল না এ বাড়িতে। আজ সকালে ফিরে দেখে এই কাণ্ড।
-''আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়াও হত্যার সামিল। মনে রাখবেন।'' ধমকের সুরেই বলেন অফিসার মিত্র।
শাশুড়ি বিষম খেয়েছে মনে হয়। কাজের বৌটা চা নিয়ে এসেছে সবার জন্য।
-''কে দেখেছে সবার প্রথমে ? ''
-''আজ্ঞে, আমি.... দরজা ধাক্কিয়েও যখন বৌদিমনি খুলল না আমি পাশের বাড়ির বৌদির থেকে চাবি চাই। একসেট চাবি ওখানে থাকত। আর ঘরে ঢুকেই দেখি এই ঘটনা।''
-''ওঁরা কখন ফিরলেন মেয়ের বাড়ি থেকে?''
পাল জিজ্ঞেস করেন।
-''আমি ফোন করার পর... ঐ ঘন্টা খানেক। ''
-''খুব অত্যাচার করত বৌ এর উপর ?'' একটু নিচু গলায় প্রশ্নটা করেন পাল।
কাপড়ের আঁচল দিয়ে মুখ মুছে কাজের বৌ বলে -''আমি ঠিকা কাজ করি, কেমনে কই বলেন তো!''
-''আপনারা একটু দেখুন, নিশ্চই কিছু ভুল হচ্ছে। আমরা তো ছিলাম না বাড়িতে।'' শ্বশুর বলেন।
-''মেরে কড়িকাঠে লটকে মেয়ের বাড়ি পালিয়েছিলেন বলছেন । পাল সব কটাকে গাড়িতে তোলো।'' গটগট করে বেরিয়ে যান অফিসার মিত্র।
বাবার হাতটা চেপে ধরে ছেলে, নিচু গলায় বলে -'' রয়েছে, ডাইরির ভাঁজে। পেয়ে যাবে ওঁরা।''
-''সার, কোথাও কোনো সুইসাইট নোট নেই।''
-''তাহলে যা ভাবছি তাই। চলুন এবার সবাই, জামাই আদর খাবেন জেলে বসেই।''
অবাক হয়ে তাকায় ছেলেটা, বলে -'',না, না, কিছু ভুল হচ্ছে। ভালো করে খুঁজুন। ওটা রয়েছে।''
-''আপনি কি করে জানলেন যে রয়েছে? জানতেন ও আত্মহত্যা করবে তাই বাড়ি থেকে সবাই চলে গেছিলেন সবাই এক সঙ্গে?''
মিত্রর বিদ্রুপে থতমত খেয়ে যায় ছেলেটা। বাবা মায়ের সঙ্গে গাড়িতে গিয়ে বসতে বাধ্য হয়ে। কিন্তু গেল কোথায় নোটটা? ডাইরির ভেতর দেখা যাচ্ছিল তো, এমন ভাবেই সাজানো ছিল। প্ররোচনার দায়ে যদি জেলে ঢোকে চাকরিটাও থাকবে না আর।
কাজের বৌটা নোংরা ওয়ালাকে ময়লার বাস্কেটটা ঢেলে দিয়ে মনে মনে বলে, "যাক এতোদিনে মেয়েটা হয়ত সুবিচার পাবে। ভাগ্যিস চিঠিটা সরিয়ে ফেলেছিলাম। আমার মেয়েটার সময় শাস্তি দিতে পারিনি। এবার পারব ঠিক। মেয়েটা মরে অন্তত বিচার টুকু পাক। তাতেই আমার মনটা ঠাণ্ডা হবে।