STORYMIRROR

Abanti Pal

Abstract Romance Inspirational

3  

Abanti Pal

Abstract Romance Inspirational

বিবাহের সপ্তম পাক

বিবাহের সপ্তম পাক

3 mins
191


"যেভাবেই হোক, আজই আমি প্রতীমকে কথাটা বলব। আমার সখ-আহ্লাদ-স্বপ্ন কিছুই নেই না কি? যে সম্পর্কের কোনও পরিণতি নেই, উল্টে হাঁফ ধরিয়ে দেওয়া পরিশ্রম আছে, সেখানে থেকে নিজের পায়ে শেকল জড়িয়ে রেখে কি লাভ?" অনর্গল একমনে কথাটা বলে থামল প্রমিতা, প্রতীমের স্ত্রী। 


উল্টো দিকের স্রোতা মানুষটা কিছুক্ষন বোবা হয়ে তাকিয়ে থাকল মাত্র। মানে, ওই যে আরশির সামনে দাঁড়িয়ে যাকে এতক্ষন মনের ভাবটা বোঝানোর চেষ্টা করছিল প্রমিতা, সেই মানুষটাই।


অনেক রাত করে ফেরে প্রতীম অফিস থেকে। আজও তার অন্যথা হয়নি। নৈশভোজ সেরে ওই আবার সোফায় গা এলিয়ে বসে খবরের চ্যানেল চালিয়ে দিল লোকটা। উফ্, বিরক্ত লাগে প্রমিতার। দু'দণ্ড কথা নেই, ভাব-ভালোবাসা নেই, উষ্ণতা নেই, এই এক বছরে স্ত্রীয়ের বন্ধ্যত্বের খবরে নিজেকে একটু একটু করে একেবারে সরিয়ে নিয়েছে লোকটা। প্রথমদিকে একে-অপরকে আঁকড়ে থাকলেও, আজকাল কেমন যেন যন্ত্রতাড়িত, আবেগহীন হয়ে পড়েছে ওদের জীবনটা। প্রমিতার মাঝেমধ্যে মনে হয়, প্রতীম অন্য কোনও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে না তো? বিশ্বাসঘাতকতা হচ্ছে না তো তার সাথে? দমবন্ধ লাগে ওর।


"আমি আর এই সম্পর্ক টানতে পারব না প্রতীম। সব পরিশ্রমই বিফলে যাচ্ছে। না তো আমি কোনোদিন মা হতে পারব, না তুমি আমাকে নিয়ে সুখী থাকতে পারবে। এই নাম-মাত্র বৈবাহিক সম্পর্কে জড়িয়ে থাকার কোনও মানে হয় না!" চোখ বন্ধ করে কথাগুলো বলে থামল প্রমিতা। 


সোফার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলেছে, যাতে প্রতীমের চোখাচোখি না হতে হয়। কিন্তু এ কী? লোকটার কোনও হেলদোল নেই কেন? নির্বিকারভাবে একই অবস্থায় বসে টিভি দেখে যাচ্ছে! রেগে গিয়ে প্রতীমের সামনাসামনি এসে প্রমিতা বুঝল, সব কথা বিফলে গেল! লোকটা হাঁ করে ঘুমোচ্ছে, সামনে দর্শকবিহীন বোকা-বাক্স বকে চলেছে। আর বকে চলেছে সে...


"ধুত্তর!" প্রবল আক্রোশে প্রমিতা সরে যেতে গিয়েও হাল্কা স্পর্শে পেছন ফিরে তাকাল। আরে, প্রতীমের হাতটা... কপালটা এত গরম, গা পুড়ে যাচ্ছে যে জ্বরে! লোকটা আসার পর থেকে একবারের জন্যও তো মুখ ফুটে বলেনি নিজের অসুখের কথা? গত কয়েক মাসে অবশ্য কীই বা বলেছে ওরা পরস্পরকে?


ঘুমন্ত অবস্থায় অস্ফুটে বলে ওঠে প্রতীম, 

"কে, মা?"


"না, আমি" কেঁপে ওঠে প্রমিতার ঠোঁটযুগল।


"ওহ্, তোমার ছোঁয়ায় মনে হলো মা হাত রাখলো মাথায়" স্মিত হাসি লেগে থাকে প্রতীমের মুখে।


অবাক হয়ে প্রমিতা তাকায়, মাস চারেক আগে দেওয়ালে টাঙানো শাশুড়িমায়ের ছবিটার দিকে, তারপর প্রতীমের মুখের দিকে। লোকটা এক পৃথিবী যন্ত্রণা বুকে চেপে রেখে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে দিনের পর দিন, আর এ কী স্বার্থান্বেষী, আত্মবিধ্বংসী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছিল সে?


হঠাৎ বুকটা ধড়াস করে ওঠে প্রমিতার। মান-অভিমানের সংঘর্ষ কবে তার কাছে মানবিকতার উর্ধ্বে চলে গেল, বুঝতেও পারল না সে? ভাগ্যিস আজ প্রতীম ঘুমিয়ে পড়ে ভুলভাল বকে ফেলেছিল! না হলে তো সে ভুলতেই বসেছিল যে তার স্বামীই তার প্রথম সন্তান-স্বরূপ, তার হাতে নিজের হৃদয়কে আত্মসমর্পণ করেছে অক্লেশে, সেই কবেই। এর জন্য চাই না কোনও আলাদা উষ্ণতার প্রকাশ অথবা তৃতীয় নবব্যক্তির আগমন। এই পরিপূর্ণতার বন্ধন যে চিরনবীন, আজন্মমৃত্যুর! বহুদিন পর, এই সাধারণ একটা কেজো দিনের শেষে, দৈববলে এই দম্পতি এক অটুট আলিঙ্গনে আবদ্ধ হলো, নিশ্চুপে। বিবাহের সপ্তম পাক বুঝি আজ যথার্থভাবে পূর্ণ হলো!



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract