STORYMIRROR

Rini Basu

Comedy Drama Romance

4  

Rini Basu

Comedy Drama Romance

বিবাহ প্রস্তাব

বিবাহ প্রস্তাব

10 mins
267

হাসির নাটক

কুশীলব :
মহিম বাঁড়ুজ্যে - অবস্থাপন্ন ব্যবসায়ী
মৃণালিনী দেবী - তাঁর স্ত্রী
মলয় - তাঁর ছেলে
মালিনী তথা মিলি - তাঁর মেয়ে
কুমুদ রঞ্জন চাটুজ্যে - পাশের পাড়ার অবস্থাপন্ন ব্যবসায়ী
কাদম্বিনী দেবী - তাঁর স্ত্রী
কমলেশ - তাঁর ছেলে
কেতকী তথা কিটি - তাঁর মেয়ে

প্রথম দৃশ্য
(কলিং বেলের আওয়াজ)
মৃণালিনী:
"ভর সন্ধ্যেবেলা আবার কে জ্বালাতে এলো?"
মহিম:
"বকবক না করে দরজাটা খুলে দিলেই তো পারো!"
মৃণালিনী:
"কেন, সেটা তো তুমিও দিতে পারো।"
মহিম:
"বাড়িতে একগন্ডা কাজের লোক থাকতে আমি দরজা খুলবো কেন?"
মৃণালিনী:
"আমিই বা খুলবো কেন?"
(আবার কলিং বেলের আওয়াজ)
মহিম:
ধুত্তেরি! এ তো মহা জ্বালা! যাই আমিই দরজা খুলি!"
(মহিম দরজা খুলতে চাটুজ্যে পরিবারের চারজন প্রবেশ করলো।)
মহিম: (একান্তে)
"ওরে বাবা! এ যে দেখি চাটুজ্যে পরিবার! একেবারে সদলবলে এসে হাজির হয়েছে! এদের চা জলখাবারের পেছনে এখন একগাদা টাকা খরচ করতে হবে!"
(মুখে)
"আরে চাটুজ্যে মশাই যে! কি সৌভাগ্য আমার। আসুন আসুন! এতোদিনে আমাদের কথা মনে পড়লো?"
কুমুদ:
"রোজই আসবো আসবো ভাবি, তা আসার সময় আর হয়ে ওঠে না।"
মৃণালিনী:
"তা সবাই মিলে এতো সেজেগুজে চললেন কোথায়? বিয়েবাড়ি বুঝি?"
কাদম্বিনী:
"না না, বিয়েবাড়ি নয়, আপনাদের বাড়িতেই আসার জন্য সেজেছি।"
মৃণালিনী: (একান্তে)
"মা মেয়ে মেকআপ করে মুখখানা সাদা করে ফেলেছে! কি জঘন্য যে লাগছে!"
(মুখে)
"আপনাদের মা মেয়েকে ভারী সুন্দর দেখাচ্ছে।"
কাদম্বিনী:
"হেঁ হেঁ। তা আপনার ছেলে মেয়েকে দেখছি না যে? কোথাও গেছে বুঝি?"
মৃণালিনী:
"না না, ওরা বাড়িতেই আছে। কেন, কিছু দরকার আছে নাকি?"
কাদম্বিনী: (ছেলে কমলেশকে দেখিয়ে)
"আমার ছেলে কমলেশের বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছি। ভাবছিলাম আপনার মেয়ের সঙ্গে ওর বিয়ে দিলে কেমন হয়?"
মৃণালিনী:
"খুব ভালো হয়। খুবই ভালো হয়।"
মহিম:
"পাল্টি ঘরে এমন সম্বন্ধ পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার।"
কুমুদ: (একটু কেশে)
"ইয়ে, আপনার মেয়ে আবার অন্য কাউকে পছন্দ করে রাখেনি তো? আজকালকার মেয়েদের ব্যাপারে কিছুই বলা যায় না।"
মৃণালিনী:
"সে কথা তো আপনার ছেলে সম্পর্কেও বলা যায় দাদা?"
মহিম:
"আঃ! তুমি চুপ করো তো! আমার স্ত্রীর কথায় কিছু মনে করবেন না। আমার মেয়ে মিলি খুবই ভালো। ছেলেদের দিকে ও ফিরেই তাকায় না।"
কাদম্বিনী:
"তাই নাকি? তাহলে ডাকুন দেখি আপনার মেয়েকে? ওর সঙ্গে একটু কথা বলা যাক।"
মৃণালিনী:
"আমি এক্ষুনি ওকে নিয়ে আসছি।"
(মৃণালিনীর প্রস্থান)
কিটি: (একান্তে)
"হয়ে গেল! মেকআপ শেষ করে সেই নেকুপুষু মামনি কখন আসবে কে জানে! আজকের সিরিয়ালগুলো বোধহয় একটাও দেখা হবে না!"
কমলেশ: (একান্তে)
"মালিনীর ছবি দেখে তো বেশ ভালোই লেগেছিলো। সামনাসামনি কেমন দেখতে হবে কে জানে?"
মহিম:
"বুঝলেন কুমুদবাবু, আমার তো একটাই মেয়ে। কাছাকাছি বিয়ে হলে ভালোই হবে।"
কুমুদ:
"সে তো বটেই। একটাই মেয়ে যখন, তার বিয়েতে নিশ্চয়ই ভালোই খরচ করবেন।"
মহিম:
"সে আর বলতে! আমার মেয়েকে আমি রাজকন্যার মতো বিয়ে দেবো।"
কুমুদ:
"খুব ভালো। আমার ছেলেও রাজপুত্রের কম নয়। দুজনকে খুবই মানাবে। সেই জন্যই তো আমি পারিবারিক বিবাদ ভুলে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আপনার কাছে এসেছি। ভালো কথা, যে জমির মালিকানা নিয়ে বহু বছর ধরে আমাদের মধ্যে মামলা চলছে, আশা করি বিয়ের পর সে জমি আমরাই পাবো।"
মহিম:
"ও নিয়ে আপনি কিচ্ছু ভাববেন না। জমিটা পেলে তো আমি মেয়েকেই দিতাম। আপনাদের পরিবারে ওর বিয়ে হলে আমি মামলা তুলে নেবো। তখন সেই জমি ওরই হবে।"
কুমুদ:
"জেনে সুখী হলাম। আমি কথা দিচ্ছি ও জমি আপনার মেয়ে জামাইয়ের নামেই লিখে দেবো।"
মহিম:
"বহু বছরের সমস্যার কতো সহজেই সমাধান হয়ে গেল।"
কুমুদ:
"সবই ঈশ্বরের কৃপা।"
(মিলি ও তার ভাই মলয়ের প্রবেশ)
মহিম:
"এই যে! তোরা এসে গেছিস? আয়, বোস। এটি আমার ছেলে মলয় আর এই আমার মেয়ে মালিনী। ওকে আমরা মিলি বলে ডাকি। হ্যাঁ রে, তোদের মা এলো না যে?"
মলয়:
"মা তো রান্নার মাসির সঙ্গে কথা বলছে। সবার জন্য চা করতে হবে না?"
কাদম্বিনী : (একান্তে)
"এ মা! শুধু চা? কি কঞ্জুস রে!"
(মুখে)
"তোমার নাম মিলি? বাঃ, বেশ সুন্দর নাম। চেহারাটিও ভারী মিষ্টি। তা মিলি, তোমরা বরং নিজেদের মধ্যে একটু আলাপ পরিচয় করো। আমরা অন্য ঘরে বসে কথা বলি। কি বলেন দাদা?"
মহিম:
"বেশ তো, কথা বলুক না। আমার আপত্তি নেই। চলুন আমরা বরং লাইব্রেরীতে গিয়ে বসি।"
(মহিম, কুমুদ ও কাদম্বিনীর প্রস্থান)
কিটি:
"হাই মিলি। আমি কিটি। আর এ আমার দাদা কমলেশ। নাইস টু মিট ইউ।"
মিলি:
"সেম হিয়ার। এ আমার ভাই মলয়।"
কিটি ও কমলেশ:
"হাই মলয়।"
কমলেশ:
"মিলি তুমি নিশ্চয়ই জানো আমরা কেন এখানে এসেছি?"
মিলি:
"মোটেই না। তোমরা কেন এসেছো সেটা আমি কি করে জানবো? আমি কি জ্যোতিষী নাকি?"
কমলেশ:
"কেন, তোমার মা তোমাকে কিছু বলেননি?"
মিলি:
"বলেছিলো হয়তো, কানে ইয়ারপড থাকায় শুনতে পাইনি।"
কিটি:
"কোয়াইট পসিবল। এ ব্যাপারটা আমার সঙ্গেও প্রায়ই হয়।"
মলয়:
"কিটি, ইউ আর সো কিউট!"
কিটি:
"ওঃ ইউ নটি! থ্যাংক ইউ!"
মলয়:
"এই, আমার সঙ্গে ডেটে যাবে?"
কিটি:
"ওয়েল, আমার আপত্তি নেই।"
কমলেশ: (একান্তে)
"লে হালুয়া! আমার বিয়ের সম্বন্ধ করতে এসে এরাই তো ছক করতে শুরু করে দিলো দেখছি!"
(মুখে)
"কি হচ্ছে কিটি? নিজেকে কন্ট্রোল কর!"
কিটি:
"কেন, আমরা কথা বললে তোদের অসুবিধা হচ্ছে বুঝি?"
কমলেশ:
"তা নয়, কিন্তু..."
মলয়:
"আমায় মনে হয় ওরা একা কথা বলতে চায়। চলো, আমরা বরং ওদিকে গিয়ে বসি।"
কিটি:
"হ্যাঁ, সেটাই ভালো হবে। তাহলে আমরাও নিজেদের মতো করে কথা বলতে পারবো।"
(মলয় আর কিটি ঘরের অন্যদিকের চেয়ারে গিয়ে বসলো।)
কমলেশ:
"মিলি, তাহলে তুমি জানোনা যে আমরা এখানে কেন এসেছি, তাই তো?"
মিলি:
"বললাম তো। এ ব্যাপারে আমার কোনো আইডিয়া নেই।"
কমলেশ:
"আমার মনে হয় তুমি একটু বুদ্ধি খরচ করলেই বুঝতে পারবে।"
মিলি:
"আমার বুদ্ধি একটু কম। তুমিই বুদ্ধি ধার দাও নাহয়।"
কমলেশ:
"আসলে কি জানো মিলি, এটা বুদ্ধি নয়, ফিলিংসের ব্যাপার। তোমার ফিলিংস থাকলে ঠিকই ব্যাপারটা ধরতে পারতে।"
মিলি:
"তার মানে তুমি বলতে চাও যে আমার কোনো ফিলিংস নেই? আমি হার্টলেস? যাও তোমার সঙ্গে কথা বলবো না!"
(ক্যামেরা এবার মলয় আর কিটিকে দেখাবে)
মলয়:
"তাহলে বলো কিটি, কবে কোথায় আমরা মিট করবো?
কিটি:
"মার্কেট প্লেসের নতুন ফুড জয়েন্টটা বেশ ভালো বলে শুনেছি। ওখানেই যাওয়া যাক।"
মলয়:
"গুড আইডিয়া। আমারও ওখানে যাবার ইচ্ছে আছে। ওটাই তাহলে ঠিক রইলো।"
কিটি:
"ওকে। এবার তাহলে ডেটটা ঠিক করে ফেলা যাক, কি বলো?"
মলয়:
"সামনের রোববারই যাওয়া যায়। অবশ্য যদি ওইদিন তুমি ফ্রি থাকো।"
কিটি:
"তোমার জন্য আমি সব সময় ফ্রি। আর সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটা হলে কেমন হয়?"
মলয়:
"সাড়ে পাঁচটায় তো চড়া রোদ্দুর থাকবে। ওটা বরং ছ'টা করো।"
কিটি:
"বেশ, তাহলে ছ'টাই হোক।"
(ক্যামেরা আবার মিলি আর কমলেশকে দেখাবে)
কমলেশ:
"কি কান্ড! তুমি হার্টলেস এ কথা আমি কখন বললাম? কিন্তু তোমাকেও তো বুঝতে হবে যে তোমার বাবা আমাদের জমি জবরদখল করার পরেও আমরা তোমাদের বাড়িতে কেন এসেছি!"
মিলি:
"কি বাজে বকছো? আমার বাবা আবার কবে তোমাদের জমি দখল করলো?"
কমলেশ:
"নীল পুকুরের পাশের জমিটা তোমার বাবা জবর দখল করে রাখেননি?"
মিলি:
"বললেই হলো? ওই জমিটা বাবার নিঃসন্তান পিসি, মানে আমার পিসিঠাকুমা তাকে লিখে দিয়েছিলো। আমি তো জানি ওই জমি তোমার বাবাই জবরদখল করার চেষ্টা করছেন।"
কমলেশ:
"শাট আপ! আমার বাবার নামে একদম মিথ্যে কথা বলবে না! ওই জমি আমার ঠাকুর্দার ছিলো।"
মিলি:
"মিথ্যে কথা! তোমরা বহুদিন ধরে ওই জমি হাতানোর চেষ্টা করছো। গায়ের জোরে না পেরে শেষে কোর্টে গেছো। কিন্তু সেখানেও সুবিধে করতে পারছো না। রিয়েলি, ইউ আর ডিসগাস্টিং!"
কমলেশ:
"আমি না! তুমি ডিসগাস্টিং! তোমার বাবা ডিসগাস্টিং! তোমার পুরো ফ্যামিলি ডিসগাস্টিং!"
মিলি:
"আমরা ডিসগাস্টিং তো আমাদের বাড়িতে এসেছো কেন? চলে গেলেই তো পারো!"
কমলেশ (উঠে দাঁড়িয়ে):
"হ্যাঁ, চলেই যাবো! তোমাদের বাড়িতে থাকার আমার কোনো ইচ্ছে নেই! কিটি! বাবা মাকে ডাক! আমরা এক্ষুনি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো!"
কিটি:
"কেন দাদা? কি হয়েছে?"
কমলেশ:
"সে সব পরে বলবো। আগে এখান থেকে বেরোতে হবে।"
(মহিম, মৃণালিনী, কুমুদ ও কাদম্বিনীর প্রবেশ)
কুমুদ:
"কি ব্যাপার? এখানে এতো চেঁচামেচি হচ্ছে কেন?"
কাদম্বিনী:
"কমলেশের চিৎকার শুনে আমরা চলে আসতে বাধ্য হলাম। কি হয়েছে রে কমল?"
কমলেশ:
"এই বাড়িতে আমরা চূড়ান্ত অপমানিত হয়েছি। এখানে আর এক মুহূর্ত থাকতে চাই না।"
মহিম:
"কি হয়েছে বাবা? কে তোমাকে অপমান করলো?"
মৃণালিনী:
"মাথা ঠান্ডা করো বাবা। গেরস্ত বাড়ি থেকে না খেয়ে চলে গেলে তাদের অকল্যাণ হয়।"
কাদম্বিনী:
"খাওয়াটা বড়ো কথা নয়। এক কাপ চা আমাদের না খেলেও চলবে। কিন্তু ঘটনাটা কি সেটা জানা দরকার।"
কমলেশ:
"সেটা পরে বলবো। আগে এখান থেকে চলো!"
(চাটুজ্যে পরিবারের প্রস্থান)
মহিম:
"কি হয়েছিল রে মিলি? কমলেশ অমন রেগেমেগে চলে গেল কেন?"
মিলি:
"ছেলেটা যেমন অসভ্য তেমনই অভদ্র! ব্যাটা বলে কিনা যে নীল পুকুরের পাশের জমিটা নাকি ওদের। তুমি সেটা জবরদখল করে রেখেছো!"
মহিম:
"কি? ও এই কথা বলেছে? তাহলে ওকে তাড়িয়ে দিয়ে ভালোই করেছিস।"
মৃণালিনী:
"হতচ্ছাড়ার সাহস কতো! আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চায়?"
মিলি:
"তার মানে?"
মহিম:
"চাটুজ্যেরা তো বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছিলো। ওরা কমলেশের সঙ্গে তোর বিয়ে দিতে চায়।"
মিলি:
"ওমা! এ কথা আগে বলোনি কেন?"
মৃণালিনী:
"তোর ঘরে গিয়ে বললাম তো!"
মিলি:
"আমি তো তখন হেডফোনে গান শুনছিলাম। তোমার কথা কিছুই শুনতে পাইনি!"
মৃণালিনী:
"বোঝো ব্যাপার! এ যে কান থাকতেও কালা!"
মিলি:
"ওরা বোধহয় এখনো বাড়ি থেকে বেরোয়নি। এক্ষুনি ওদের ফিরিয়ে আনো!"
মহিম:
"তার মানে? তুইই তো ওকে তাড়ালি।"
মিলি:
"তখন তো জানতাম না যে কমলেশ আমায় বিয়ে করতে চায়। তুমি এখুনি ওদের ডেকে আনো বাবা। নইলে আমি বিষ খেয়ে মরবো!"
মলয়:
"মিলির সঙ্গে আমিও বিষ খাবো!"
মৃণালিনী:
"বালাই ষাট! ওগো তুমি আর দেরি কোরো না। যাও, ওদের ফিরিয়ে নিয়ে এসো!"
মহিম:
"হ্যাঁ হ্যাঁ, এক্ষুনি যাচ্ছি! আমার হয়েছে যতো জ্বালা!"
(মহিমের প্রস্থান। একটু পরেই চাটুজ্যে পরিবারের সঙ্গে তার পুনঃপ্রবেশ।)
কাদম্বিনী:
"কি যে হচ্ছে কিছুই তো বুঝতে পারছি না। একবার যেতে বলে, তার দু মিনিট পর আবার ফিরে আসতে বলে! বুড়ো বয়সে এতো দৌড়ঝাঁপ সহ্য হয় না বাপু!"
কুমুদ:
"আমারও তো কিছুই মাথায় ঢুকছে না! পিং পং বলের মতো একবার ওদিকে যাচ্ছি, একবার এদিকে আসছি! কি ব্যাপার বলুন তো মশাই?"
মৃণালিনী:
"সব কিছু কি আর আমরাই জানি ছাই? আপনার ছেলের সঙ্গে আমার মেয়ের কোনো তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে গন্ডগোল হয়েছিলো। এখন মিলি কমলেশের সঙ্গে কথা বলে সেটা মিটমাট করে নিতে চাইছে।"
কুমুদ:
"সে তো খুবই ভালো কথা। ওদের বিয়ে হলে ওই জমিটার ব্যাপারেও একটা নিষ্পত্তি হবে।"
মহিম:
"সে তো বটেই। যাই হোক, ওরা বরং নিজেদের মধ্যে কথা বলুক। আমরা বাগানে গিয়ে বসি।"
কাদম্বিনী:
"হ্যাঁ, সেই ভালো।"
(বাঁড়ুজ্যে ও চাটুজ্যে দম্পতির প্রস্থান)
মিলি: (লাজুক হেসে)
"সত্যি, আমার মোটেই অমন ঝগড়া করা উচিত হয়নি। বিয়ের কথাটা যদি আগে জানতাম তাহলে এটা হতো না। আই এ্যাম রিয়েলি সরি!"
কমলেশ:
"ইটস অল রাইট। আমারও সাবজুডিস ব্যাপারে তর্ক করা উচিত হয়নি। (কিটিকে) এই, তোরা ওদিকে গিয়ে বোস তো! আমরা নিজেদের মধ্যে একটু কথা বলি?"
কিটি:
"জানি তো, এখন আমরা কাবাব মে হাড্ডি হয়ে গেছি।"
মলয়:
"বাদ দাও। চলো ওদিকে গিয়ে বসি। ওদের মতো আমাদেরও একটু প্রাইভেসি দরকার।"
(মলয় আর কিটি ঘরের অন্যদিকের চেয়ারে গিয়ে বসলো।)
কমলেশ:
"যাই হোক, সব কিছু মিটমাট যখন হয়েই গেল, তখন তোমাকে একটা সত্যি কথা বলি। আই লাইক ইউ মিলি।"
মিলি:
"সেম হিয়ার। সেই ডগ শোয়ের দিন থেকেই তোমাকে ভালো লাগে।"
কমলেশ:
"রিয়েলি? কোন ডগ শোয়ের কথা বলছো?"
মিলি:
"গত বছর শীতকালে যেটা হয়েছিলো।"
কমলেশ:
"হ্যাঁ। ওই শো-টার কথা আমারও মনে আছে। আমার কুকুর টমি ওখানে পার্ট নিয়েছিলো। তুমিও গিয়েছিলে বুঝি?"
মিলি:
"হ্যাঁ। আমার ডগি জিমি ওই শো-তে পার্টিসিপেট করেছিলো।"
কমলেশ:
"ও! আর ওখানেই তুমি আমাকে প্রথম দেখেছিলে?"
মিলি (লাজুক হেসে):
"হ্যাঁ।"
(ক্যামেরা এবার কিটি আর মলয়কে দেখায়)
কিটি:
"এই, ডেটের দিন তুমি কি রঙের শার্ট পরবে? আমিও তাহলে সেম কালারের ড্রেস পরবো।"
মলয়:
"রং মিলন্তি? আই লাইক দ্যাট! কি রং তোমার পছন্দ বলো?"
কিটি:
"আমার ফেভারিট কালার ব্ল্যাক। আমার একটা দারুণ ব্ল্যাক গাউন আছে।"
মলয়:
"ওয়াও! ব্ল্যাক তো আমারও ফেভারিট কালার! আমি তাহলে ব্ল্যাক শার্ট পরে আসবো।"
কিটি:
"ইউ আর এ ডার্লিং। আই লাইক ইউ!"
মলয়:
"ফর মি ইট ওয়াজ লাভ এ্যাট ফার্স্ট সাইট।"
কিটি:
"সত্যি?"
মলয়:
"হ্যাঁ। উইল ইউ ম্যারি মি কিটি?"
কিটি:
"ইয়েস ডার্লিং। আমি তোমার সঙ্গে জীবন কাটাতে রাজি!"
(ক্যামেরা এবার মিলি আর কমলেশকে দেখায়)
মিলি:
"তোমার মনে আছে নিশ্চয়ই, ওই ডগ শো-টায় আমার ডগি জিমি জিতেছিলো।"
কমলেশ:
"উঁহু! তুমি ভুল করছো। ওই শো-তে আমার কুকুর টমি জিতেছিলো।"
মিলি:
"মোটেই না! তুমি ভুল করছো। জিমি জিতেছিলো।"
কমলেশ:
"না! টমি জিতেছিলো!"
মিলি:
"না না না! জিমি জিতেছিলো!"
কমলেশ:
"মানছি না, মানবো না! টমি জিতেছিলো, এ্যান্ড দ্যাটস ফাইনাল!"
মিলি:
"নো, ইটস নট ফাইনাল! তুমি আমার জিমিকে ইনসাল্ট করেছো! আমি সেটা কিছুতেই সহ্য করবো না!"
কমলেশ:
"আমিও টমির ইনসাল্ট সহ্য করবো না!"
মিলি:
"জিমি জার্মান শেফার্ড। বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোমার পেছনে লেলিয়ে দেবো।"
কমলেশ:
"টমি ডোবারম্যান। তোমার জিমিকে চিবিয়ে খাবে।"
মিলি:
"জিমি তোমাদের সবাইকে চিবিয়ে খাবে। দাঁড়াও, জিমিকে ডাকছি! কুকুর লেলিয়ে তোমাদের বাড়ি থেকে তাড়াবো!"
কমলেশ:
"কি! বাড়িতে ডেকে এনে কুত্তা লেলিয়ে দেবে? বারবার এই অপমান সহ্য হয় না। কিটি! চলে আয়! আমরা এক্ষুনি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো!"
কিটি:
"ওহ নো! তোরা আবার ঝগড়া শুরু করলি?"
(বাঁড়ুজ্যে ও চাটুজ্যে দম্পতির পুনঃপ্রবেশ)
মহিম:
"অনেক হয়েছে! নিজেদের মধ্যে তোমরা অনেক কথা বলেছো! বাকি কথা বিয়ের পরেই হোক, কি বলেন চাটুজ্যে মশাই?"
কুমুদ:
"এ ব্যাপারে আমি আপনার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত।"
কমলেশ:
"কিন্তু বাবা..."
কুমুদ:
"চোপ! আর কোনো কথা নয়!"
মিলি:
"কিন্তু তাই বলে..."
মহিম:
"আর একটাও কথা নয়!"
কাদম্বিনী:
"ঠিক বলেছেন দাদা। ওরা বিয়ের পরেই বাকি কথা বলুক।"
মৃণালিনী:
"মনের মতো জামাই পেয়েছি। কি আনন্দের কথা!
মলয়:
"যাচ্চলে! আমাদের বিয়ের কথা তো কেউ বলছেই না! আমি আর কিটি কি বানের জলে ভেসে এসেছি নাকি?"
কিটি:
"সত্যি! আমাদের কথা কেউ ভাবছেই না!"
মহিম:
"বোঝো ব্যাপার! তোরাও ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিস?"
কুমুদ:
"তাহলে তো জোড়া বিয়ের আসর বসাতে হয়।"
মৃণালিনী:
"উঃ! আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে!"
কাদম্বিনী:
"আমিও খুব খুশি হয়েছি।"
কমলেশ:
"তাহলে আমরাই বা গোমড়া মুখে থাকি কেন? ঝগড়া তো চলতেই থাকবে। তাই বলে নিজেদের বিয়েতে আনন্দ করবো না?"
মিলি:
"নিশ্চয়ই! অন্তত এই ব্যাপারে আমি তোমার সঙ্গে একমত!
কমলেশ :
"তবে যাই বলো, বিয়েতে বিরিয়ানিটা কিন্তু মাস্ট। তার সঙ্গে চিকেন চাপ।"
মিলি :
"ধুস, ওটা বড্ড কমন হয়ে গেল। আমার পছন্দ বাসন্তী পোলাও। তার সঙ্গে কচি পাঁঠার মাংস।"
কমলেশ :
"নো! বিরিয়ানি!"
মিলি :
"নেভার, বাসন্তী পোলাও!"
কমলেশ :
"বিরিয়ানি!"
মিলি :
"বাসন্তী পোলাও...এ্যান্ড দ্যাটস ফাইনাল!"
(ঝগড়ার মুকাভিনয় চলতে থাকে, বাকিরা উলুধ্বনি দিতে দিতে ওদের মাথায় পুষ্পবৃষ্টি করতে থাকে, আর একপাশে মলয় ও কিটির প্রেমালাপ চলতে থাকে।)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy