Rini Basu

Abstract Horror Thriller

3.3  

Rini Basu

Abstract Horror Thriller

তারকব্রহ্ম

তারকব্রহ্ম

3 mins
129


এই ঘটনাটি আমার দাদুর মুখে শোনা। দাদুর জন্ম কলকাতায় হলেও তাঁর দেশের বাড়ি ছিল অবিভক্ত বাংলার এক অখ্যাত গ্রামে। সেই বাড়িতে থাকতেন দাদুর নিঃসন্তান ও বিপত্নীক জেঠামশাই। সারাদিন পুজোআর্চা করেই সাত্ত্বিক মানুষটির দিন কাটতো। তাঁর দেখাশোনার দায়িত্বে ছিল বাড়ির পুরোনো চাকর ভোলা। গ্রামের বাড়িতে একটা পুরোনো কৃষ্ণ মন্দির ছিল। মন্দিরের বিগ্রহ তারকব্রহ্ম নামে পূজিত হতেন। দূর দুরান্ত থেকে ভক্তরা পুজো দিতে আসতেন। সবাই আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করতো যে অতি জাগ্রত দেবতা তারকব্রহ্ম যাবতীয় বিপদআপদ থেকে ভক্তদের উদ্ধার করেন। কথাটা যে কতটা সত্যি ছিল সেটা আমার দাদুর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই জানা যাবে।


দাদু তখন সবে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছেন। দাদুর বাবা, অর্থাৎ আমার প্ৰমাতামহ, দাদুকে মাসখানেকের জন্য দেশের বাড়িতে ঘুরে আসতে বললেন। দাদুও সানন্দে রাজি হয়ে গেলেন। ভাবলেন যে গ্রামের মাঠে ঘুড়ি উড়িয়ে, ফুটবল খেলে আর পুকুরের জলে সাঁতার কেটে বেশ হই হই করে কাটবে। তাছাড়া খাওয়া দাওয়ার সুখ তো আছেই। বাগান ভর্তি অগুনতি ফলের গাছ - আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, জামরুল আতা, ইত্যাদি। কত খাবে খাও না! এ ছাড়া নিজেদের পুকুরের টাটকা মাছ, বাড়িতে পোষা দেশি মুরগীর ডিম, বাড়ির গোরুর সদ্য দোয়া ফেনা ওঠা গরম দুধ, এসবের স্বাদই আলাদা। 


ভারী আনন্দে একটা মাস কেটে গেল। বিদায়ের দিন এগিয়ে এলো। গ্রামের বাড়ি থেকে নিকটতম রেল স্টেশন দশ মাইল দূরে। এই দশ মাইল গোরুর গাড়িতে করে যেতে হয়। সকালে যাত্রা শুরু করলে স্টেশনে পৌঁছতে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে যায়। পঞ্জিকা দেখে স্থির হলো যে রবিবার সকাল আটটায় যাত্রা শুরু হবে। এর দুদিন আগে দাদুর জেঠামশাই তাঁর এক পরিচিত গোরুর গাড়ির গাড়োয়ানের সঙ্গে কথা বলে রাখলেন। তার নাম মাধব। সে বললো যে যাবার দিন সে সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যেই গাড়ি নিয়ে চলে আসবে।


যাবার আগের দিন, অর্থাৎ শনিবার সন্ধ্যায় খেলাধুলা সেরে বাড়িতে ঢুকতেই তাঁর জেঠামশাই বললেন,


"কিরে, সঙ্গে করে ও কাকে নিয়ে এলি?"


দাদু অবাক হয়ে বললেন,


"কই, কেউ আমার সঙ্গে আসেনি তো?"


"উঁহু, আমি স্পষ্ট দেখলাম তোর পিছন থেকে সাঁৎ করে কেউ গাছের আড়ালে সরে গেল। অবশ্য তারকব্রহ্ম থাকতে বাড়ির মধ্যে যার তার ঢোকার সাহস হবে না।"


দাদু অবশ্য পিছন ফিরে কাউকেই দেখতে পেলেন না। তাঁর জেঠা বললেন,


"শোন, আজ রাতে তুই আমার কাছে শুবি। আর পঞ্জিকা অনুযায়ী কাল সকাল আটটা পনেরো পর্যন্ত যাত্রার শুভক্ষণ থাকবে। তার আগেই তুই বেরিয়ে পড়বি। শরীরটা যদি ভালো থাকতো তাহলে আমি নিজে গিয়ে তোকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসতাম।"


কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক। আসার পথে মাধবের গাড়ির চাকা খুলে যাওয়ায় তার পৌঁছতেই সাড়ে আটটা বেজে গেল। বারবেলা পড়ে যাওয়ায় জেঠা একটু দোনোমোনো করতে লাগলেন। কিন্তু দাদু এসব কুসংস্কারকে প্রশ্রয় দিতে রাজি হলেন না। তিনি জেঠাকে প্রণাম করে গোরুর গাড়িতে উঠে পড়লেন। জেঠা তাঁর মাথায় ঠাকুরের নাম জপ করে দিয়ে বললেন,


"পথে যদি কোনো বিপদ আসে তাহলে তারকব্রহ্মর নাম জপ করবি। তাহলেই বিপদ কেটে যাবে।"


যাত্রা শুরু হলো। একেই তো দেরিতে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তার ওপর রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় স্টেশনে পৌঁছনোর অনেক আগেই অন্ধকার নেমে এলো। গোরুর গাড়ি ঢিকিস ঢিকিস করে বন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলতে লাগলো আর দাদু আধা ঘুমন্ত অবস্থায় ছইয়ের ভেতর শুয়ে রইলেন। 


হঠাৎ গোরুগুলো কেমন যেন অস্থির হয়ে উঠলো। তাদের গলায় বাঁধা ঘন্টিগুলো অস্বাভাবিক জোরে জোরে বাজতে লাগলো। সেই আওয়াজে দাদুর ঘুম ভেঙে গেল। গলা আর বুকের ওপরে তিনি এক ভীষণ চাপ অনুভব করতে লাগলেন। চোখ খুলে তিনি দেখলেন যে এক ভয়ংকর প্রেতমূর্তি তাঁর বুকের ওপরে বসে তাঁর গলা টিপে ধরেছে। ওই অবস্থাতেও তাঁর জেঠার বলা কথাগুলো মনে পড়ে গেল। তিনি কোনোমতে গুঙিয়ে গুঙিয়ে বলতে লাগলেন,


"তারকব্রহ্ম! তারকব্রহ্ম! তারকব্রহ্ম!"


আশ্চর্যের ব্যাপার, তারকব্রহ্মর নাম শুনতেই সেই মূর্তি দাদুকে ছেড়ে দিয়ে পিছু হটতে লাগলো। শেষে সে গোরুর গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে অন্ধকারের মধ্যে মিলিয়ে গেল। মাধব অজ্ঞান হয়ে বাইরে পড়ে ছিল। দাদু তার মুখেচোখে জল ছিটিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে আনলেন। সে বললো যে অন্ধকারের মধ্যে ওই ভীষণ প্রেতমূর্তিকে দেখে সে ভয়ে জ্ঞান হারিয়েছিল। এরপর তারকব্রহ্মর নাম জপ করতে করতে বাকি পথটুকু তাঁরা নিরাপদেই পেরিয়ে গিয়েছিলেন।


পরে দাদুর মুখে এই ঘটনার কথা শুনে তাঁর জেঠামশাই বলেছিলেন যে শনিবার সন্ধ্যায় ওই প্রেতের ছায়াই তিনি দাদুর পিছনে দেখেছিলেন। কিন্তু বাড়িতে তারকব্রহ্মর মন্দির থাকায় সে ভিতরে ঢুকতে পারেনি। পরের দিন যাত্রার আগে জেঠা সেই প্রেতের অশুভ উপস্থিতি অনুভব করতে পেরেছিলেন। সেই জন্যই তিনি দাদুকে তারকব্রহ্মর নাম জপ করার কথা বলেছিলেন। আর তাঁর কথামতো চলে দাদু সত্যিই মহাবিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract