NISHA KAMILA

Horror

4.6  

NISHA KAMILA

Horror

ভূত অদ্ভূত

ভূত অদ্ভূত

4 mins
548


ভূত বলতেই আমরা বুঝি বিচিত্র কোনো কিছু, হয়তো সেটা অলৌকিক কিছু। ভূত বলতেই শিরদাঁরা দিয়ে মৃদু শিহরণ বেয়ে যাওয়া। 

তনিমা আর রিয়া দুই বন্ধু। দুজনেই একই স্কুলের মাধ্যমিকের ছাত্রী । পরীক্ষা শেষ হয়ে সবে গরমের ছুটি পড়েছে। দুজনেই খুব মেধাবী ছাত্রী তবে কেউই ভূতের অস্তিত্ব সম্বন্ধে বিশ্বাস করতে নারাজ। তবে গরমের ছুটি পড়ার সাথে সাথে দুজনেরই একঘেয়ে লাগতে লাগলো। তাই দুজনেই ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করলো। ঘুরতে যাওয়ার কথা আসতেই প্রথমে চলে এলো সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণের কথা। আর সমুদ্র সৈকত মানেই প্রথমেই চলে এলো দিঘা সমুদ্রে ভ্রমণের কথা। ঠিক হলো খুব তাড়াতাড়ি তারা সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণে যাবে। সঠিক দিনে নির্দিষ্ট সময়ে দুজনেই প্রস্তুত হলো। কিন্তু ঠিক সেই সময়ে হলো এক বিপদ, তাদের বেরোনোর কিছুক্ষণ আগে থেকেই শুরু হলো তুমুল ঝড় বৃষ্টি। সে কি ভীষণ বৃষ্টি। সৃষ্টিকর্তা যেনো খুব রেগে গিয়ে এই ঘটনা ঘটাচ্ছেন। তনিমা খুব ভয় পেয়ে গেলো এবারে বুঝি আর তাদের দিঘা যাওয়া হলো না। তনিমা তখনই রিয়াকে ফোন করতে গেলো কিন্তু কি আশ্চর্য! রিয়া ঠিক সেই সময় তনিমা দের বাড়িতে চলে আসে। 

তনিমা বলে ওঠে - তুই এই ঝড় জলের মধ্যে কী ভাবে এলি এখানে? 


রিয়া বলে - ওমা তা আসব না কেনো? তোকে কথা দিয়েছি আর তাছাড়া এটা আমাদের প্রথম সমুদ্র দর্শন না এসে আর থাকতে পারলাম না। 

তারা দুজন আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লো। তখনকার দিঘা আর এখনকার দিঘার মধ্যে অনেক তফাত। তখনকার দিঘার জুনপুট বলতে ঝাউবন আর ঝোপ ঝাড় এর সমারোহ। আর সাথে সাথে পুরোনো দিনের কিছু পোড়োবাড়ি। তবে কাছাকাছি মানুষের বসবাস ছিলো না বললেই চলে। দুই বন্ধু সেখানে গিয়ে কিছু জেলে দের দেখতে পেলো এবং তাদের জিজ্ঞাসা করলো সেখানে থাকার জায়গা আছে কিনা। কিন্তু খুব অদ্ভূত ভাবে জেলেরা উত্তর দিলো তারা কেউই সন্ধ্যার পর সেখানে থাকে না। তারা দুজনেই শুনে খুব অবাক হলো। জেলেরা তাদেরও সাবধান করে দিলো যে তারাও যাতে সন্ধ্যার পর সেখানে না থাকে। তারা তাদের কথা শুনলো না সেটা দেখে জেলেরাও বিরক্তি বোধ করলো তারা আর কথা না বলে নিজেদের কাজ করতে লাগলো। 


দুই বন্ধু তে মিলে চারিদিক টা ভালো করে ঘুরে দেখতে লাগলো। এইভাবেই ঘুরতে ঘুরতে তারা একটা পোড়োবাড়ি দেখতে পেলো। যদিও তখনও দিনের আলো ছিলো। বাড়ির কাছে যেতেই তারা কোনো কিছুর একটা মিষ্টি গন্ধ পেলো। কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক তনিমা সেখানে থাকতে রাজি হচ্ছিল না। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার রিয়া জেদ ধরলো যে সে সেখানেই থাকবে। তাই শেষ পর্যন্ত জোর করেই তারা দুজন ঠিক করলো সেই বাড়িতেই থাকবে। বাড়ির কাছে যেতেই তারা একজন কালো লোক কে দেখতে পেলো সে বাগানের কাজ করছিলো তাই দুজনেই সহজে বুঝতে পারলো যে তিনি হলেন ওই বাড়ির মালি। তারা তার কাছে সেখানে থাকার অনুমতি চাইতে গেলো কিন্তু মালি সেটা শুনে বেশ ভয় পেয়ে গেলো এবং তাদেরকে সেই বাড়িতে থাকতে মানা করলো কিন্তু রিয়া সেটা শুনতে নারাজ। তাই শেষ পর্যন্ত মালি তাদের ঘরের চাবি দিয়ে দিলো এবং বারবার সাবধান করে দিলো। ঘরটা বেশ পুরোনো দিনের ছিল তবে ভেতরটা কিন্তু বেশ পরিষ্কার। তখন রাত হয়ে এসেছে। মালি তাদের রাতের খাবার দিয়ে নিজের বাড়ি চলে গেলো। বাড়ির চারপাশের পরিবেশ টা কিন্তু বেশ সুন্দর বাতাসে একটা মিষ্টি সুগন্ধ আর চারপাশে বিভিন্ন ধরণের গাছ। রাত হয়ে এসেছিল তাই তারা তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। সারাদিনের ক্লান্তির জন্য খুব তাড়াতাড়ি তারা ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু মাঝরাতে কিছু একটা ভীষণ শব্দে তনিমার ঘুম ভেঙে গেল। তনিমা উঠে গেলো কী ঘটলো সেটা দেখতে। কিন্তু সে যা দেখলো সেটা সে নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছিল না। সে দেখলো যে রিয়া বাড়ির করিকাঠে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সে কি ভয়ানক দৃশ্য! রিয়ার চোখ দুটো যেনো ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। আর তার হাত দুটো যেনো তনিমার দিকেই এগিয়ে আসছে। তনিমা তখন সেই দৃশ্য দেখে অজ্ঞান হয়ে গেল। সকালে তার যখন জ্ঞান ফিরল সে দেখলো যে সে সেই বাড়ির খাটেই শুয়ে আছে এবং বেশ কিছুজন জেলে তাকে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। সে রিয়াকে কোথাও দেখতে পেলো না এবং অবাক হয়ে সেই মালিকে জিজ্ঞাসা করলো তার বন্ধু কোথায় কিন্তু মালির উত্তরে সে তো অবাক। মালি বললো যে সে তো একাই এসেছিলো তার সাথে তো আর কেউ আসেনি। কিন্তু সত্যি টা কি সেটা জানার জন্য সে রিয়ার বাড়িতে একটা চিঠি লিখলো খুব তাড়াতাড়ি সেই চিঠির উত্তরে তার বন্ধু রিয়া বললো যে সেইদিন ঝড় হচ্ছিলো বলে সে কোথাও বের হয়নি আর সে ভাবলো যে ঝড়ের জন্য হয়তো তনিমাও ট্রেনের টিকিট ক্যান্সেল করে দিয়েছে। সেটা শুনে তো তনিমা অবাক। সে পুরো ব্যাপার টা মালির কাছে জানতে চাইলো। 


মালি বললো বেশ কিছু বছর আগে সেই বাড়িতে এক দম্পতি বসবাস করতে এসেছিল কিন্তু পারিবারিক ঝামেলার জন্য সেই বউটি আত্মহত্যা করেছিলো। আর তারপর থেকেই ওই বাড়িতে যেই যায় সেই ওই ঘটনাটি দেখতে পায়। তারপরেই তনিমা বাড়ি ফিরে এসেছিলো। কিন্তু সে এখনো ভাবে তার বন্ধুর রূপ ধরে তবে সেইদিন কে এসেছিল তার কাছে? সেটা এখনো রহস্য হয়ে তার মনের মধ্যেই থেকে গেছে। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror